ইমরান খানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায়

  • Update Time : ১০:১৮:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
  • / 155

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ 

পাকিস্তানে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপ সাংবিধানিক কি না সে প্রশ্নের রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। এরপরই জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

কিন্তু ডেপুটি স্পিকারের এ রায়কে অসাংবিধানিক বলে অবহিত করে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হন বিরোধীরা।

অবশেষে বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরির সেই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সঙ্গে জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তাছাড়া ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব ও ভোট আয়োজনের কথা ছিল সেটিও করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার এ অনাস্থা ভোট হবে।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত রায় দেওয়ার কথা থাকলেও এ রায় দিতে দেরি হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে চতুর্থ দিনের মতো মামলাটির স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি পাশাপাশি এই বেঞ্চে ছিলেন, বিচারপতি ইজাজুল আহসান, বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার,বিচারপতি মুনিব আখতার ও বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল।

শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির দেওয়া আদেশে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ লঙ্ঘিত হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ।

তিনি আরও বলেন, পার্লামেন্টে ডেপুটি স্পিকারের যে আদেশে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হয় তা ভ্রান্ত ছিল, এটি পরিষ্কার হয়েছে।

এখন কিভাবে এগোতে হবে পিএমএল-এন এর আইনজীবী ও পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান আদালতকে তার নির্দেশনা দেবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি।

“জাতীয় স্বার্থের দিকটি আমাদের দেখতে হবে,” বলেন তিনি। বৃহস্পতিবারই আদালত এ বিষয়ে একটি রায় দেবে বলে তখনই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সকালে বিচারপতি আখতার ও বিচারপতি মান্দোখেল ডেপুটি স্পিকারের আদেশ ও এরপর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া নিয়ে হওয়া সুয়োমোটো মামলাটির শুনানি শুরু করেছিলেন।

শুনানির শুরুতে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবী ব্যারিস্টার আলি জাফর বক্তব্য দেন । অধিবেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ বিশেষ সুবিধা ভোগ করে থাকে বলে জানান তিনি।

এ সময় প্রধান বিচারপতি এ ঘটনায় জাতীয় পরিষদের কার্যবিবরণী পার্লামেন্টের বাইরে কোনো প্রভাব ফেলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত যদি পার্লামেন্টের বাইরে প্রভাব ফেলে, তাহলে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

শুনানিতে বেঞ্চের বিচারপতি মাজহার আলম জানতে চান, পার্লামেন্টে কোনো অসাংবিধানিক ঘটনা ঘটলে তার সাংবিধানিক দায়মুক্তি আছে কি না। বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল জানতে চান, পার্লামেন্টে কোনো অসাংবিধানিক ঘটনা ঘটলে তার সমাধান আছে কি না।
উত্তরে আইনজীবী জাফর বলেন, পার্লামেন্টকেই বিষয়টির সমাধান করতে হবে। আর সমাধান হলো জনগণের কাছে যাওয়া।

শুনানি চলাকালে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিচারপতি মান্দোখেল জানিয়েছেন, পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব ডেপুটি স্পিকার বাতিল করে দিলেও ওই রায়ে তার স্বাক্ষর নেই, আছে স্পিকারের স্বাক্ষর।

শুনানিতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পক্ষে তাদের আইনজীবী নাইম বুখারি যুক্তিতর্ক করার সময় বিষয়টি নজরে আনেন বিচারপতি মান্দোখেল।

তার কথার জবাব দিয়ে বুখারি বলেন, সম্ভবত বিচারপতিকে যে নথি দেওয়া হয়েছে, তা ‘আসল’ নয়।

এ সময় বিচারপতি মান্দোখেল বলেন, পার্লামেন্টারি কমিটি বৈঠকের যে কার্যবিবরণী বুখারি আদালতে জমা দিয়েছেন, তাতে প্রমাণিত হয় না যে সেখানে ডেপুটি স্পিকার উপস্থিত ছিলেন।

এরপর পার্লামেন্টারি কমিটির মিটিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন কি না সেকথা জানতে চেয়ে মান্দোখেল বলেন, তার স্বাক্ষরও রেকর্ডে নেই।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল উল্লেখ করেন যে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঈদ ইউসুফ এর নামও রেকর্ডে নেই।

ওই রায়কে কেন্দ্রকে সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেখানে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং সংবাদমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ইমরান খানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায়

Update Time : ১০:১৮:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ 

পাকিস্তানে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপ সাংবিধানিক কি না সে প্রশ্নের রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। এরপরই জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

কিন্তু ডেপুটি স্পিকারের এ রায়কে অসাংবিধানিক বলে অবহিত করে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হন বিরোধীরা।

অবশেষে বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরির সেই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সঙ্গে জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তাছাড়া ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব ও ভোট আয়োজনের কথা ছিল সেটিও করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার এ অনাস্থা ভোট হবে।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত রায় দেওয়ার কথা থাকলেও এ রায় দিতে দেরি হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে চতুর্থ দিনের মতো মামলাটির স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি পাশাপাশি এই বেঞ্চে ছিলেন, বিচারপতি ইজাজুল আহসান, বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার,বিচারপতি মুনিব আখতার ও বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল।

শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির দেওয়া আদেশে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ লঙ্ঘিত হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ।

তিনি আরও বলেন, পার্লামেন্টে ডেপুটি স্পিকারের যে আদেশে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হয় তা ভ্রান্ত ছিল, এটি পরিষ্কার হয়েছে।

এখন কিভাবে এগোতে হবে পিএমএল-এন এর আইনজীবী ও পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান আদালতকে তার নির্দেশনা দেবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি।

“জাতীয় স্বার্থের দিকটি আমাদের দেখতে হবে,” বলেন তিনি। বৃহস্পতিবারই আদালত এ বিষয়ে একটি রায় দেবে বলে তখনই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সকালে বিচারপতি আখতার ও বিচারপতি মান্দোখেল ডেপুটি স্পিকারের আদেশ ও এরপর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া নিয়ে হওয়া সুয়োমোটো মামলাটির শুনানি শুরু করেছিলেন।

শুনানির শুরুতে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবী ব্যারিস্টার আলি জাফর বক্তব্য দেন । অধিবেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ বিশেষ সুবিধা ভোগ করে থাকে বলে জানান তিনি।

এ সময় প্রধান বিচারপতি এ ঘটনায় জাতীয় পরিষদের কার্যবিবরণী পার্লামেন্টের বাইরে কোনো প্রভাব ফেলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত যদি পার্লামেন্টের বাইরে প্রভাব ফেলে, তাহলে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

শুনানিতে বেঞ্চের বিচারপতি মাজহার আলম জানতে চান, পার্লামেন্টে কোনো অসাংবিধানিক ঘটনা ঘটলে তার সাংবিধানিক দায়মুক্তি আছে কি না। বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল জানতে চান, পার্লামেন্টে কোনো অসাংবিধানিক ঘটনা ঘটলে তার সমাধান আছে কি না।
উত্তরে আইনজীবী জাফর বলেন, পার্লামেন্টকেই বিষয়টির সমাধান করতে হবে। আর সমাধান হলো জনগণের কাছে যাওয়া।

শুনানি চলাকালে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিচারপতি মান্দোখেল জানিয়েছেন, পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব ডেপুটি স্পিকার বাতিল করে দিলেও ওই রায়ে তার স্বাক্ষর নেই, আছে স্পিকারের স্বাক্ষর।

শুনানিতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পক্ষে তাদের আইনজীবী নাইম বুখারি যুক্তিতর্ক করার সময় বিষয়টি নজরে আনেন বিচারপতি মান্দোখেল।

তার কথার জবাব দিয়ে বুখারি বলেন, সম্ভবত বিচারপতিকে যে নথি দেওয়া হয়েছে, তা ‘আসল’ নয়।

এ সময় বিচারপতি মান্দোখেল বলেন, পার্লামেন্টারি কমিটি বৈঠকের যে কার্যবিবরণী বুখারি আদালতে জমা দিয়েছেন, তাতে প্রমাণিত হয় না যে সেখানে ডেপুটি স্পিকার উপস্থিত ছিলেন।

এরপর পার্লামেন্টারি কমিটির মিটিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন কি না সেকথা জানতে চেয়ে মান্দোখেল বলেন, তার স্বাক্ষরও রেকর্ডে নেই।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল উল্লেখ করেন যে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঈদ ইউসুফ এর নামও রেকর্ডে নেই।

ওই রায়কে কেন্দ্রকে সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেখানে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং সংবাদমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।