মীরসরাইয়ে বেজা’র জমিতে অবৈধ দীঘি খনন

  • Update Time : ০৫:৪৯:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২
  • / 144

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চলের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) অধিগ্রহণকৃত জমিতে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে দীঘি খননের অভিযোগ উঠেছে একশ্রেণির প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এসব দীঘি খননের ফলে বনের কেওড়া বাগান উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে সংরক্ষিত বন পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

সরজমিনে দেখা যায়, বিশাল এই জায়গা চরনিলক্ষী মৌজার ওপর অবস্থিত। যা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর জন্য অধিগ্রহণ করা হলেও সেটি এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এখানে ফসলি জমিসহ কেওড়া বাগান কেটে দীর্ঘসময় ধরে একশ্রেণির প্রভাবশালীরা রাতের আঁধারে এই দীঘি খনন করে আসছে। তারা আরও জানায়, ১৯৭৬ সালের ২৪শে জানুয়ারি ‘চরনিলক্ষী সোনালী সমবায় কৃষি খামার সমিতি লিমিটেড’ সদস্যদের মাঝে সরকার ৫৫৬ একর জায়গা বন্দোবস্ত দেয়। ওই জায়গার অন্তর্ভুক্তির মধ্যে ৪৫ একর সম্পত্তি জবর-দখল করে দীঘি খনন করছে। সমিতির সদস্য কামাল উদ্দিন ও সানা উল্ল্যাহ নামে দু’জন জানান, দীর্ঘদিন আগে থেকে এখানে বন ধ্বংস করে মৎস্য প্রকল্প করা হয়েছে।স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে বনের গাছপালা উপড়ে ফেলে খালি করা হচ্ছে। তারপর সময়-সুযোগ বুঝে নিশ্চিত করা হচ্ছে দখল।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল জানান, দীর্ঘদিন এ জায়গাগুলো আমরা ভোগ দখলে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করে। তা আমরা সাদরে গ্রহণ করি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো এই- আমরা যে জায়গা বেজা কর্তৃপক্ষকে ছেড়ে দিলাম সে জায়গায় এখন কিছু প্রভাবশালী চক্র জবরদখল করে মাছ চাষের আওতায় আনছে। প্রশাসন ও বেজা কর্তৃপক্ষের নীরবতায় আমরা খুবই হতাশ। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক উদ্যোগের জন্য আমরা থানায় চলতি বছরের ৩রা ফেব্রুয়ারি আলী হায়দার টিপু, গোফরান, আব্দুর রহিমসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু কোনো প্রকার প্রতিকার পাইনি।

এদিকে, স্থানীয় চট্টগ্রাম-১ এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গত ফেব্রুয়ারিতে মাসিক সমন্বয় সভায় বেজা কর্তৃপক্ষকে বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে আমরা জমি ছেড়ে দিয়েছি, সে জায়গায় এখন শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠবে। কোনো দুষ্কৃতকারী যেন মাছ চাষ কিংবা অবৈধ জবরদখল না করে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত আলী হায়দার টিপু জানান, আমি কোনো দীঘি খনন করছি না। ওইখানে আমার কোনো দীঘি নেই। যারা দীঘি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান তিনি। এ বিষয়ে উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লা বলেন, যেখানে মৎস্য প্রকল্প করা হচ্ছে, সেটি এখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য বেজা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বেজা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারেন। জোরারগঞ্জ থানার ওসি মামুন বলেন, আমরা সমস্ত ঘটনা তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট প্রেরণ করেছি। মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অধিগ্রহণকৃত জমিতে কেউ কোনো প্রকার দীঘি খনন করতে পারবে না।
যে বা যারা দীঘি খনন করেছে সেটা অবৈধ হয়েছে তা আমরা দখল করবো ভেঙে দেবো এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মীরসরাইয়ে বেজা’র জমিতে অবৈধ দীঘি খনন

Update Time : ০৫:৪৯:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চলের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) অধিগ্রহণকৃত জমিতে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে দীঘি খননের অভিযোগ উঠেছে একশ্রেণির প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এসব দীঘি খননের ফলে বনের কেওড়া বাগান উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে সংরক্ষিত বন পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

সরজমিনে দেখা যায়, বিশাল এই জায়গা চরনিলক্ষী মৌজার ওপর অবস্থিত। যা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর জন্য অধিগ্রহণ করা হলেও সেটি এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এখানে ফসলি জমিসহ কেওড়া বাগান কেটে দীর্ঘসময় ধরে একশ্রেণির প্রভাবশালীরা রাতের আঁধারে এই দীঘি খনন করে আসছে। তারা আরও জানায়, ১৯৭৬ সালের ২৪শে জানুয়ারি ‘চরনিলক্ষী সোনালী সমবায় কৃষি খামার সমিতি লিমিটেড’ সদস্যদের মাঝে সরকার ৫৫৬ একর জায়গা বন্দোবস্ত দেয়। ওই জায়গার অন্তর্ভুক্তির মধ্যে ৪৫ একর সম্পত্তি জবর-দখল করে দীঘি খনন করছে। সমিতির সদস্য কামাল উদ্দিন ও সানা উল্ল্যাহ নামে দু’জন জানান, দীর্ঘদিন আগে থেকে এখানে বন ধ্বংস করে মৎস্য প্রকল্প করা হয়েছে।স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে বনের গাছপালা উপড়ে ফেলে খালি করা হচ্ছে। তারপর সময়-সুযোগ বুঝে নিশ্চিত করা হচ্ছে দখল।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল জানান, দীর্ঘদিন এ জায়গাগুলো আমরা ভোগ দখলে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করে। তা আমরা সাদরে গ্রহণ করি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো এই- আমরা যে জায়গা বেজা কর্তৃপক্ষকে ছেড়ে দিলাম সে জায়গায় এখন কিছু প্রভাবশালী চক্র জবরদখল করে মাছ চাষের আওতায় আনছে। প্রশাসন ও বেজা কর্তৃপক্ষের নীরবতায় আমরা খুবই হতাশ। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক উদ্যোগের জন্য আমরা থানায় চলতি বছরের ৩রা ফেব্রুয়ারি আলী হায়দার টিপু, গোফরান, আব্দুর রহিমসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু কোনো প্রকার প্রতিকার পাইনি।

এদিকে, স্থানীয় চট্টগ্রাম-১ এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গত ফেব্রুয়ারিতে মাসিক সমন্বয় সভায় বেজা কর্তৃপক্ষকে বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে আমরা জমি ছেড়ে দিয়েছি, সে জায়গায় এখন শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠবে। কোনো দুষ্কৃতকারী যেন মাছ চাষ কিংবা অবৈধ জবরদখল না করে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত আলী হায়দার টিপু জানান, আমি কোনো দীঘি খনন করছি না। ওইখানে আমার কোনো দীঘি নেই। যারা দীঘি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান তিনি। এ বিষয়ে উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লা বলেন, যেখানে মৎস্য প্রকল্প করা হচ্ছে, সেটি এখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য বেজা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বেজা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারেন। জোরারগঞ্জ থানার ওসি মামুন বলেন, আমরা সমস্ত ঘটনা তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট প্রেরণ করেছি। মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অধিগ্রহণকৃত জমিতে কেউ কোনো প্রকার দীঘি খনন করতে পারবে না।
যে বা যারা দীঘি খনন করেছে সেটা অবৈধ হয়েছে তা আমরা দখল করবো ভেঙে দেবো এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।