শ্রীলঙ্কানকে বাঁচানোর চেষ্টাকারীকে মেডেল দেবে পাকিস্তান

  • Update Time : ০৩:০২:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১
  • / 141

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যার সময় তাকে বাঁচানোর চেষ্টাকারী এক ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ওই শ্রীলঙ্কান নাগরিককে হত্যার সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন সেই ব্যক্তি।

রোববার (৫ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই ঘোষণা দেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই। নিহত ওই শ্রীলঙ্কান নাগরিক শিয়ালকোটে একটি কারখানার ম্যানেজার হিসবে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার রোমহর্ষক এই ঘটনা ঘটে।

নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রীলঙ্কান নাগরিককে বাঁচানোর চেষ্টাকারী ওই ব্যক্তির নাম মালিক আদনান। তিনি ওই একই কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপদাপন্ন ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় তাকে সাহসিকতার পদক দেওয়ার ঘোষণা দেন ইমরান খান।

সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঞ্জাবের শিয়ালকোটের রাজকো ইন্ডাস্ট্রিজ নামের শ্রীলঙ্কার একটি কারখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রিয়ান্থা কুমারা। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শুক্রবার তার কারখানায় হামলা চালায় একদল উত্তেজিত জনতা। সেখানে শত শত মানুষ তাকে প্রথমে বেধড়ক মারপিট, পরে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রিয়াঙ্কা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিয়ালকোটের ওয়াজিরাবাদ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শত শত মানুষ। এক পর্যায়ে তাদের এই বিক্ষোভে যোগ দেন প্রিয়াঙ্কার কারখানার কর্মীরাও। শত শত মানুষের এই বিক্ষোভ দেখে ভয়েই কারখানার ছাদে চলে যান তিনি। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি; সেখান থেকে তাকে টেনে-হেঁচড়ে নিচে নামিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়।

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রিয়াঙ্কাকে নিচে নামিয়ে আনার সময় ব্লাসফেমিবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় সহকর্মীরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও পারেননি। বরং তার পা ধরে টেনে-হেঁচড়ে ভবনের নিচে নেওয়া হয়। পরে লঙ্কান এই ব্যবস্থাপককে ভবনে নিচে নামিয়ে আনার পর কিল-ঘুষি, লাথি, পাথর নিক্ষেপ, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। একপর্যায়ে তার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই পাঞ্জাবের এই ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। আর রোববার টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, ‘পুরো জাতির পক্ষ থেকে আমি মালিক আদনানের নৈতিক শক্তি ও সাহসকে স্যালুট জানাই। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে প্রিয়ান্থাকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন তিনি। এই চেষ্টায় তিনি তার নিজের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদনান যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, সে জন্য তাকে ‘তমঘা-ই-সুজাত’ পদক দেওয়া হবে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


শ্রীলঙ্কানকে বাঁচানোর চেষ্টাকারীকে মেডেল দেবে পাকিস্তান

Update Time : ০৩:০২:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যার সময় তাকে বাঁচানোর চেষ্টাকারী এক ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ওই শ্রীলঙ্কান নাগরিককে হত্যার সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন সেই ব্যক্তি।

রোববার (৫ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই ঘোষণা দেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই। নিহত ওই শ্রীলঙ্কান নাগরিক শিয়ালকোটে একটি কারখানার ম্যানেজার হিসবে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার রোমহর্ষক এই ঘটনা ঘটে।

নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রীলঙ্কান নাগরিককে বাঁচানোর চেষ্টাকারী ওই ব্যক্তির নাম মালিক আদনান। তিনি ওই একই কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপদাপন্ন ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় তাকে সাহসিকতার পদক দেওয়ার ঘোষণা দেন ইমরান খান।

সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঞ্জাবের শিয়ালকোটের রাজকো ইন্ডাস্ট্রিজ নামের শ্রীলঙ্কার একটি কারখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রিয়ান্থা কুমারা। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শুক্রবার তার কারখানায় হামলা চালায় একদল উত্তেজিত জনতা। সেখানে শত শত মানুষ তাকে প্রথমে বেধড়ক মারপিট, পরে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রিয়াঙ্কা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিয়ালকোটের ওয়াজিরাবাদ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শত শত মানুষ। এক পর্যায়ে তাদের এই বিক্ষোভে যোগ দেন প্রিয়াঙ্কার কারখানার কর্মীরাও। শত শত মানুষের এই বিক্ষোভ দেখে ভয়েই কারখানার ছাদে চলে যান তিনি। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি; সেখান থেকে তাকে টেনে-হেঁচড়ে নিচে নামিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়।

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রিয়াঙ্কাকে নিচে নামিয়ে আনার সময় ব্লাসফেমিবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় সহকর্মীরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও পারেননি। বরং তার পা ধরে টেনে-হেঁচড়ে ভবনের নিচে নেওয়া হয়। পরে লঙ্কান এই ব্যবস্থাপককে ভবনে নিচে নামিয়ে আনার পর কিল-ঘুষি, লাথি, পাথর নিক্ষেপ, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। একপর্যায়ে তার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই পাঞ্জাবের এই ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। আর রোববার টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, ‘পুরো জাতির পক্ষ থেকে আমি মালিক আদনানের নৈতিক শক্তি ও সাহসকে স্যালুট জানাই। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে প্রিয়ান্থাকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন তিনি। এই চেষ্টায় তিনি তার নিজের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদনান যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, সে জন্য তাকে ‘তমঘা-ই-সুজাত’ পদক দেওয়া হবে।’