আলস্য পেরিয়ে সরব হয়েছে নাট্যাঙ্গন

  • Update Time : ০৪:০৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১
  • / 203

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অচলায়তন পেরিয়ে সচল হয়েছে রাজধানীর নাট্যমঞ্চগুলো। মহামারী পরিস্থিতির উন্নতির সমান্তরালে পুনরায় গতিশীল হয়েছে থিয়েটার। নাট্যকর্মীদের মাঝে বইছে স্বস্তির সুবাতাস। সব মিলিয়ে মঞ্চকর্মী কিংবা নাট্যপ্রেমী দর্শকরা অতিবাহিত করছেন সুন্দরতম সময়। প্রতিদিনই মঞ্চে থাকছে নাটকের প্রদর্শনী। অলসতা পেরিয়ে পুনরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মঞ্চের অভিনয়শিল্পী থেকে নেপথ্যের কুশীলবরা। সেই সুবাদে পুরনো প্রযোজনার সঙ্গে দর্শকরা উপভোগ করছেন মঞ্চে আসা নতুন নাটক।

শনিবার ছিল তেমনই এক দিন। হেমন্তের এই সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের তিনটি নাটক। মহিলা সমিতি মিলনায়তনে দর্শকরা দেখেছেন নাট্যম রেপার্টরীর নতুন প্রযোজনা ‘কোথায় জলে মরাল চলে’। অন্যদিকে শিল্পকলা জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে পরিবেশিত হয়েছে লোক নাট্যদলের বহুল আলোচিত প্রযোজনা ‘কঞ্জুস’। এছাড়া নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চের প্রযোজনা ‘বহিপীর’।

গৌতম বুদ্ধের জীবন ও দর্শননির্ভর নাটক কোথায় জলে মরাল চলে। মোহন রাকেশ রচিত ‘লেহরো কা রাজহংস’ অবলম্বনে নাটকটির অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক। আইরিন পারভীন লোপা নির্দেশিত নাট্যম রেপার্টরী প্রযোজিত নাটকটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হয় শনিবার। প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো সামাজিক ও রাজনৈতিক চিত্র মেলে ধরা হয়েছে প্রযোজনাটিতে। নাটকের ঘটনাপ্রবাহে উঠে এসেছে ২৩০০ বছর আগেকার কপিলাবস্তু রাজ্যের কথা। রাজকীয় সেই বিলাস-বৈভব আকৃষ্ট করতে পারেনি গৌতম বুদ্ধের মনকে।

May be an image of 1 person

মানবজীবনের হতাশা, দুঃখ, জরা-ব্যাধি প্রভৃতির চিন্তা তাকে আকুল করে তোলে। সংসার সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়লে তার পিতা যশোধরা নামে সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন। কিন্তু রাজকীয় ঐশ্বর্যকে উপেক্ষা করে এবং সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে গৃহত্যাগ করেন গৌতম বুদ্ধ। পরবর্তীতে ১২ বছরের দীর্ঘ তপস্যা শেষে নির্বাণ লাভের পর স্বভূমিতে ফিরে আসেন গৌতম বুদ্ধ। তাকে একবার দেখার জন্য ব্যাকুল থাকে কপিলাবস্তুর সকলে। তার কাছে দীক্ষা নেয়ার জন্য অধীর শত-সহস্র অনুগামী। অন্যদিকে রাজকুমার নন্দর ভবনে বইছে অন্য হাওয়া। নন্দ নিজে বুদ্ধের সান্নিধ্য পেতে চাইলেও তার স্ত্রী সুন্দরীর এ ব্যাপারে কোন আকর্ষণ নেই। এই পরিস্থিতিতে স্বামী নন্দর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ একটুও শিথিল হতে দেবে না সে। ওই রাতেই নন্দের বাসভবনে কামোৎসবের আয়োজন করে সুন্দরী। সেখানে কপিলাবস্তুর অভিজাত সম্প্রদায়ের সকলে আমন্ত্রিত হয়। সুন্দরীর তত্ত্বাবধানে সেজে ওঠে কপিলাবস্তুর রাজভবন। শুরু হয় জাগতিক মোহ আর অপার্থিব বোধের সংঘাত। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সংগীতা চৌধুরী, শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, খুরশীদ আলম, ফকরুজ্জামান, শাকিল আহমেদ, শরিফুল ইসলাম শিমুল, দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বলসহ অনেকে।

ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্যা মাইজার’ অবলম্বনে লোক নাট্যদলের প্রযোজনা কঞ্জুস। ১৯৮৭ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হওয়া নাটকটির রূপান্তর করেছেন তারিক আনাম খান। নির্দেশনা দিয়েছেন লোক নাট্যদলের অধিকর্তা লিয়াকত আলী লাকী। নাটকটির ৭২৪তম মঞ্চায়ন হলো শনিবার। প্রযোজনাটিতে মেলে ধরা হয়েছে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতি। উর্দু ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে বিশেষ ভাষায় কথা বলে এই জনগোষ্ঠী। তাদের জীবনধারার আবহ তৈরি করার জন্য এ নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে পুরনো দিনের জনপ্রিয় সব হিন্দি গান। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কঞ্জুস বা হাড়কিপ্টে হায়দার আলী খানের বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের ঘরে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলি বেগম। কোন এককালে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে তার মেয়ে লাইলির সঙ্গে পরিচয় হয় বদিউজ্জামানের। প্রেমের দাম দিতে গিয়ে বদি মিয়া হায়দার আলী খানের খাস চাকর হয়ে যায়। এদিকে হায়দার আলী খানের ছেলে কাযিম আলী খান প্রেমে পড়ে পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগমের। কাযিমের সঙ্গে মর্জিনার প্রেম যখন তুঙ্গে তখন হায়দার আলীর চোখ পড়ে মর্জিনার ওপর। গোলাপজান ঘটকের মাধ্যমে লাইলির সঙ্গে হায়দার আলীর বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাকে। কাযিম তার আব্বা হুজুরের এ হেন আচরণে তিক্ত-বিরক্ত হয়। কাযিম হাড়কিপ্টে হায়দার আলীর টাকা খসানোর মতলব আঁটে। এভাবেই হাসি-খুশি ও মিলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বদেশ রঞ্জন দাসগুপ্ত, জিয়াউদ্দিন শিপন, রুবেল শংকর, আজিজুর রহমান সুজন, আবু বকর বকশী, মাসউদ সুমন, ইশিতা চাকি, জুলফিকার আলী বাবু, খাদিজা মোস্তারী মাহিন, প্রিয়াংকা বিশ্বাস ও শাহরিয়ার কামাল।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত ঢাকা থিয়েটার মঞ্চ প্রযোজিত বহিপীর নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আফরিন হুদা তোড়া। সূর্যাস্ত আইনে জমিদারি হারানোর ঘটনাকে উপজীব্য করে এগিয়েছে নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহাদুল আমিন, নূরুল আলম, সাফায়েত দুর্জয়, আফরিন হুদা তোড়া, অরনিকা শ্রাবণী অথৈ, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আলস্য পেরিয়ে সরব হয়েছে নাট্যাঙ্গন

Update Time : ০৪:০৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অচলায়তন পেরিয়ে সচল হয়েছে রাজধানীর নাট্যমঞ্চগুলো। মহামারী পরিস্থিতির উন্নতির সমান্তরালে পুনরায় গতিশীল হয়েছে থিয়েটার। নাট্যকর্মীদের মাঝে বইছে স্বস্তির সুবাতাস। সব মিলিয়ে মঞ্চকর্মী কিংবা নাট্যপ্রেমী দর্শকরা অতিবাহিত করছেন সুন্দরতম সময়। প্রতিদিনই মঞ্চে থাকছে নাটকের প্রদর্শনী। অলসতা পেরিয়ে পুনরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মঞ্চের অভিনয়শিল্পী থেকে নেপথ্যের কুশীলবরা। সেই সুবাদে পুরনো প্রযোজনার সঙ্গে দর্শকরা উপভোগ করছেন মঞ্চে আসা নতুন নাটক।

শনিবার ছিল তেমনই এক দিন। হেমন্তের এই সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের তিনটি নাটক। মহিলা সমিতি মিলনায়তনে দর্শকরা দেখেছেন নাট্যম রেপার্টরীর নতুন প্রযোজনা ‘কোথায় জলে মরাল চলে’। অন্যদিকে শিল্পকলা জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে পরিবেশিত হয়েছে লোক নাট্যদলের বহুল আলোচিত প্রযোজনা ‘কঞ্জুস’। এছাড়া নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চের প্রযোজনা ‘বহিপীর’।

গৌতম বুদ্ধের জীবন ও দর্শননির্ভর নাটক কোথায় জলে মরাল চলে। মোহন রাকেশ রচিত ‘লেহরো কা রাজহংস’ অবলম্বনে নাটকটির অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক। আইরিন পারভীন লোপা নির্দেশিত নাট্যম রেপার্টরী প্রযোজিত নাটকটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হয় শনিবার। প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো সামাজিক ও রাজনৈতিক চিত্র মেলে ধরা হয়েছে প্রযোজনাটিতে। নাটকের ঘটনাপ্রবাহে উঠে এসেছে ২৩০০ বছর আগেকার কপিলাবস্তু রাজ্যের কথা। রাজকীয় সেই বিলাস-বৈভব আকৃষ্ট করতে পারেনি গৌতম বুদ্ধের মনকে।

May be an image of 1 person

মানবজীবনের হতাশা, দুঃখ, জরা-ব্যাধি প্রভৃতির চিন্তা তাকে আকুল করে তোলে। সংসার সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়লে তার পিতা যশোধরা নামে সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন। কিন্তু রাজকীয় ঐশ্বর্যকে উপেক্ষা করে এবং সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে গৃহত্যাগ করেন গৌতম বুদ্ধ। পরবর্তীতে ১২ বছরের দীর্ঘ তপস্যা শেষে নির্বাণ লাভের পর স্বভূমিতে ফিরে আসেন গৌতম বুদ্ধ। তাকে একবার দেখার জন্য ব্যাকুল থাকে কপিলাবস্তুর সকলে। তার কাছে দীক্ষা নেয়ার জন্য অধীর শত-সহস্র অনুগামী। অন্যদিকে রাজকুমার নন্দর ভবনে বইছে অন্য হাওয়া। নন্দ নিজে বুদ্ধের সান্নিধ্য পেতে চাইলেও তার স্ত্রী সুন্দরীর এ ব্যাপারে কোন আকর্ষণ নেই। এই পরিস্থিতিতে স্বামী নন্দর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ একটুও শিথিল হতে দেবে না সে। ওই রাতেই নন্দের বাসভবনে কামোৎসবের আয়োজন করে সুন্দরী। সেখানে কপিলাবস্তুর অভিজাত সম্প্রদায়ের সকলে আমন্ত্রিত হয়। সুন্দরীর তত্ত্বাবধানে সেজে ওঠে কপিলাবস্তুর রাজভবন। শুরু হয় জাগতিক মোহ আর অপার্থিব বোধের সংঘাত। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সংগীতা চৌধুরী, শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, খুরশীদ আলম, ফকরুজ্জামান, শাকিল আহমেদ, শরিফুল ইসলাম শিমুল, দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বলসহ অনেকে।

ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্যা মাইজার’ অবলম্বনে লোক নাট্যদলের প্রযোজনা কঞ্জুস। ১৯৮৭ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হওয়া নাটকটির রূপান্তর করেছেন তারিক আনাম খান। নির্দেশনা দিয়েছেন লোক নাট্যদলের অধিকর্তা লিয়াকত আলী লাকী। নাটকটির ৭২৪তম মঞ্চায়ন হলো শনিবার। প্রযোজনাটিতে মেলে ধরা হয়েছে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতি। উর্দু ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে বিশেষ ভাষায় কথা বলে এই জনগোষ্ঠী। তাদের জীবনধারার আবহ তৈরি করার জন্য এ নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে পুরনো দিনের জনপ্রিয় সব হিন্দি গান। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কঞ্জুস বা হাড়কিপ্টে হায়দার আলী খানের বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের ঘরে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলি বেগম। কোন এককালে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে তার মেয়ে লাইলির সঙ্গে পরিচয় হয় বদিউজ্জামানের। প্রেমের দাম দিতে গিয়ে বদি মিয়া হায়দার আলী খানের খাস চাকর হয়ে যায়। এদিকে হায়দার আলী খানের ছেলে কাযিম আলী খান প্রেমে পড়ে পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগমের। কাযিমের সঙ্গে মর্জিনার প্রেম যখন তুঙ্গে তখন হায়দার আলীর চোখ পড়ে মর্জিনার ওপর। গোলাপজান ঘটকের মাধ্যমে লাইলির সঙ্গে হায়দার আলীর বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাকে। কাযিম তার আব্বা হুজুরের এ হেন আচরণে তিক্ত-বিরক্ত হয়। কাযিম হাড়কিপ্টে হায়দার আলীর টাকা খসানোর মতলব আঁটে। এভাবেই হাসি-খুশি ও মিলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বদেশ রঞ্জন দাসগুপ্ত, জিয়াউদ্দিন শিপন, রুবেল শংকর, আজিজুর রহমান সুজন, আবু বকর বকশী, মাসউদ সুমন, ইশিতা চাকি, জুলফিকার আলী বাবু, খাদিজা মোস্তারী মাহিন, প্রিয়াংকা বিশ্বাস ও শাহরিয়ার কামাল।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত ঢাকা থিয়েটার মঞ্চ প্রযোজিত বহিপীর নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আফরিন হুদা তোড়া। সূর্যাস্ত আইনে জমিদারি হারানোর ঘটনাকে উপজীব্য করে এগিয়েছে নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহাদুল আমিন, নূরুল আলম, সাফায়েত দুর্জয়, আফরিন হুদা তোড়া, অরনিকা শ্রাবণী অথৈ, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।