দিনাজপুরে ৪০ এতিম নববধূর যৌতুকবিহীন বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হুইপ ও জেলা প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:১১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২
  • / ১৬৮ Time View

দিনাজপুর সংবাদদাতা:

দিনাজপুরে ৪০ জন এতিম নববধূর যৌতুকবিহীন বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাব নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সংগঠনটির স্থায়ী প্রকল্প শিশু নিকেতন (এতিমখানা) এর ৪০ জন নিবাসী মেয়ের একসঙ্গে বিবাহোত্তর বিদায় অনুষ্ঠান শুক্রবার ২৭ মে দুপুরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
একের পর এক লাল বেনারসি শাড়ি, লাল উড়নার ঘোমটা, নাকের নোলক পরে একে একে ৪০ জন নববধূ ও তাদের হলুদ রঙের পাঞ্জাবি আর পায়জামা মাথায় টিকলি পরে তাদের ৪০ বর (স্বামী) হাত ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে দিনাজপুরের দ্য গ্রিন ভিউ কমিউনিটি সেন্টার।

এ সময় দিনাজপুর সদর আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং জেলা প্রশাসক খালিদ মাহমুদ জাকিসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত হতে থাকে নববধূ এবং বরকে বিয়ের সাজে সাজিয়ে নববধূ এবং বরকে পাশাপাশি বসিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখী-সমৃদ্ধ কামনা করেন। এবং তাদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাদেরকে সংবর্ধিত করা হয়েছে তারা একসময় দিনাজপুর শিশু নিকেতন এতিমখানায় বড় হয়েছে।
এদিন তাদের এই বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া ৪০ জন এতিম মেয়ে যৌতুক বিহীন ভাবে বিভিন্ন পেশার বরদের হাতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

শিশু নিকেতন হোম (এতিমখানা) বড় হওয়া ডলি, শাহনাজ, পিংকি, রাইসা, রামিশা আজ বধূ সেজে বরের ঘরে চলে যাচ্ছে। জীবনের ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারালেও আজ তারা স্বামীর ঘরে নতুন বাবা-মা সংসার স্বামী এবং স্বামীর আত্মীয়স্বজনকে কাছে পেয়ে তারা তাদের ছোটবেলার যে মা-বাবাকে হারিয়েছিল সেই কথাটি আজ ভুলে গিয়ে।

নববধূ ডলি আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে আমার বিয়ে হয়েছে আমার স্বামী এবং আমার স্বামীর পরিবারের লোকেরা আমাকে অত্যন্ত ভালোবেসে। আমিও তাদের নিজের পরিবারের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছি কারণ ছোটবেলায় যেহেতু আদর-ভালোবাসা তেমন পাইনি আজ স্বামীর বাড়িতে গিয়ে সেই না পাওয়া ভালোবাসা পেয়ে আজ অনেক খুশি হয়েছি।
বর আবু রায়হান বলেন, আমি জীবনে মনে মনে যাকে চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী এতিম খানায় মানুষ হলেও তার ব্যবহার এবং অন্যান্য গুনে আমি মুগ্ধ হয়েই তাকে ভালবাসা দিচ্ছি। বাকি জীবন যেন তাকে নিয়েই চলতে পারি। অনেক ভালো আছি আপনাদের দোয়া প্রত্যাশা করছি।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির বলেন, আমাদের সমাজে যারা অসহায় এতিম রয়েছেন তাদেরকে মূল স্রোতের সাথে একত্রিত করে। তাদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি তাদেরকে দক্ষ করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যা সমাজের ও দেশের জন্য শুভ ও কল্যাণকর।
প্রসঙ্গত: ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর শিশু নিকেতন এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক এতিম মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

দিনাজপুরে ৪০ এতিম নববধূর যৌতুকবিহীন বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হুইপ ও জেলা প্রশাসক

Update Time : ১০:১১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২

দিনাজপুর সংবাদদাতা:

দিনাজপুরে ৪০ জন এতিম নববধূর যৌতুকবিহীন বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাব নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সংগঠনটির স্থায়ী প্রকল্প শিশু নিকেতন (এতিমখানা) এর ৪০ জন নিবাসী মেয়ের একসঙ্গে বিবাহোত্তর বিদায় অনুষ্ঠান শুক্রবার ২৭ মে দুপুরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
একের পর এক লাল বেনারসি শাড়ি, লাল উড়নার ঘোমটা, নাকের নোলক পরে একে একে ৪০ জন নববধূ ও তাদের হলুদ রঙের পাঞ্জাবি আর পায়জামা মাথায় টিকলি পরে তাদের ৪০ বর (স্বামী) হাত ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে দিনাজপুরের দ্য গ্রিন ভিউ কমিউনিটি সেন্টার।

এ সময় দিনাজপুর সদর আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং জেলা প্রশাসক খালিদ মাহমুদ জাকিসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত হতে থাকে নববধূ এবং বরকে বিয়ের সাজে সাজিয়ে নববধূ এবং বরকে পাশাপাশি বসিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখী-সমৃদ্ধ কামনা করেন। এবং তাদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাদেরকে সংবর্ধিত করা হয়েছে তারা একসময় দিনাজপুর শিশু নিকেতন এতিমখানায় বড় হয়েছে।
এদিন তাদের এই বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া ৪০ জন এতিম মেয়ে যৌতুক বিহীন ভাবে বিভিন্ন পেশার বরদের হাতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

শিশু নিকেতন হোম (এতিমখানা) বড় হওয়া ডলি, শাহনাজ, পিংকি, রাইসা, রামিশা আজ বধূ সেজে বরের ঘরে চলে যাচ্ছে। জীবনের ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারালেও আজ তারা স্বামীর ঘরে নতুন বাবা-মা সংসার স্বামী এবং স্বামীর আত্মীয়স্বজনকে কাছে পেয়ে তারা তাদের ছোটবেলার যে মা-বাবাকে হারিয়েছিল সেই কথাটি আজ ভুলে গিয়ে।

নববধূ ডলি আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে আমার বিয়ে হয়েছে আমার স্বামী এবং আমার স্বামীর পরিবারের লোকেরা আমাকে অত্যন্ত ভালোবেসে। আমিও তাদের নিজের পরিবারের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছি কারণ ছোটবেলায় যেহেতু আদর-ভালোবাসা তেমন পাইনি আজ স্বামীর বাড়িতে গিয়ে সেই না পাওয়া ভালোবাসা পেয়ে আজ অনেক খুশি হয়েছি।
বর আবু রায়হান বলেন, আমি জীবনে মনে মনে যাকে চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী এতিম খানায় মানুষ হলেও তার ব্যবহার এবং অন্যান্য গুনে আমি মুগ্ধ হয়েই তাকে ভালবাসা দিচ্ছি। বাকি জীবন যেন তাকে নিয়েই চলতে পারি। অনেক ভালো আছি আপনাদের দোয়া প্রত্যাশা করছি।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির বলেন, আমাদের সমাজে যারা অসহায় এতিম রয়েছেন তাদেরকে মূল স্রোতের সাথে একত্রিত করে। তাদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি তাদেরকে দক্ষ করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যা সমাজের ও দেশের জন্য শুভ ও কল্যাণকর।
প্রসঙ্গত: ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর শিশু নিকেতন এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক এতিম মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।