৭৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আগামীকাল: প্রকৌশল সংস্থার শীর্ষপদগুলোতে প্রকৌশলীদের পদায়ন চায় আইইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:০১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪
  • / ২০ Time View

দেশের প্রাচীন পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থার কাজ কারিগরি বিষয় সংশ্লিষ্ট বিধায় প্রকৌশল সংস্থাসমূহের চেয়ারম্যান, কোম্পানীগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বোপরি সংস্থাসমূহের শীর্ষপদগুলোতে প্রকৌশলীর অভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, রাজউক ও বিসিআইসি-এর শীর্ষ পদে ইতোপূর্বে প্রকৌশলী থাকলেও বর্তমানে অপ্রকৌশলীকে পদায়ন করা হয়েছে। তাই প্রকৌশল সংস্থা এবং কোম্পানীসমূহে সার্বিক গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থা, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানীসমূহ, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন কোম্পানীসমূহ এবং মেট্রোরেল সহ অন্যান্য প্রকৌশল নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ সহ সর্বোপরি শীর্ষপদগুলোতে অপ্রকৌশলী ব্যক্তিদের স্থলে প্রকৌশলীদের পদায়ন করতে হবে।  

সোমবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৭৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আইইবির মুখ্য পাত্র সম্মানি সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস. এম. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু লিখিত বক্তব্যে এই দাবি জানান।  

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর এমপি। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিবলু, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ, ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার কাজী খায়রুল বাশার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, ইঞ্জিনিয়ার অমিত কুমার চক্রবর্তী এবং ইঞ্জিনিয়ার রনক আহসানসহ আইইবির বিভিন্ন বিভাগ, কেন্দ্র এবং উপকেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ।

দেশের প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়নে আইইবি সাংবাদিকদের সামনে কয়েকটি দাবি আইইবি তুলে ধরেন। 

•প্রকৌশলীদের পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করাঃ  

দেশের অধিকাংশ সংস্থায় কর্মরত প্রকৌশলীগণ ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব পালনে ভারাক্রান্ত। পদ শূণ্য থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হতে পদোন্নতি না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চলতি দায়িত্ব, অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের অনুমোদিত পদের অধিক পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে, একইপদে ২০ বছরের অধিক চাকুরীকালে পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রকৌশল কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে সংস্থাগুলোর কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রকৌশলীগণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রকৌশল সংস্থাসমূহে কর্মরত প্রকৌশলীদের ফিডার পদে চাকুরীর শর্ত পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী ধাপের পদোন্নতি বা গ্রেড প্রদান করা হলে প্রকৌশলীগণ একদিকে যেমন ন্যায্য অধিকার প্রাপ্ত হবেন অন্যদিকে তাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে, দেশের উন্নয়ন তড়ান্বিত হবে। প্রকৌশল সংস্থাসমূহের অর্গানোগ্রাম যুগোপযোগী করা হলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

•পলিটেকনিক শিক্ষকদের বর্তমান চাকুরী কাঠামো পরিবর্তনঃ 

পলিটেকনিক শিক্ষকদের প্রধান দাবী বর্তমান চাকুরী কাঠামো- জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর-ইনস্ট্রাকটর-চীফ ইনস্ট্রাকটর- উপাধ্যক্ষ- অধ্যক্ষ পরিবর্তন করে প্রভাষক অধ্যাপক চাকুরী কাঠামো বাস্তবায়ন করা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি লংঘন করে মহাপরিচালকসহ পরিচালকের সকল পদগুলো অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাগণ দখল করে নিয়েছে, অকারিগরি লোক দ্বারা কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদেরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিয়োগ বিধি মোতাবেক কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা উক্ত পদগুলো পূরণের দাবী জানাচ্ছি।

•বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থাসমূহকে বিসিএস ক্যাডারভূক্তকরণঃ 

 ক. “আমার গ্রাম আমার শহর” বাস্তবায়নে এলজিইডি’র প্রকৌশলীগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এলজিইডি এখন পর্যন্ত ক্যাডারভূক্ত না হওয়ায় মেধাবী নবীন প্রকৌশলীগণ এলজিইডি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাই দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো ও সম্পদের উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে এলজিইডি’কে ক্যাডারভূক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি ।

খ.“ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০” বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীগণসহ ওয়াটার সেক্টরে কর্মরত সকল প্রকৌশলীগণ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ পানি সম্পদ উন্নয়নে কর্মরত প্রকৌশলীগণের জন্য “বিসিএস পানি সম্পদ প্রকৌশল ক্যাডার” সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।

গ. ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পর এখন ‘উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় বিসিএস আইসিটি ক্যাডার বাস্তবায়ন করা জরুরী এবং ২০০৬ সাল থেকে বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের বন্ধকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। 

ঘ.বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হলো বস্ত্র ও গার্মেন্টসসমূহ। এক্ষেত্রে দেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি’কে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে “টেক্সটাইল ক্যাডার” প্রবর্তনের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। 

ঙ. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের “সিনিয়র সার্ভিস পুল” অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায়, উপ-সচিব পদের ৩০% প্রকৌশল সংস্থার জন্য সংরক্ষণের দাবী জানাচ্ছি।

•প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রকৌশল উইং সৃষ্টিঃ 

প্রকৌশলীগণ দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রকৌশলীদের কোনো পদচারণা নেই। এজন্য দেশ গড়ার কারিগর প্রকৌশলীদের মনে এক প্রকার হতাশা বিরাজমান রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কয়েকটি উইং রয়েছে যার মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান কর্মকান্ড মনিটরিং করা হয়ে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকৌশল উইং গঠন করে তাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের নিয়োগ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড মনিটরিং ও সমন্বয় করার ব্যবস্থা করা হলে প্রকল্পগুলো সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহজে ও যথাযথভাবে ওয়াকিবহাল হতে পারবেন। এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথ মানে ও যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও ভিশন-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান- ২১০০ বাস্তবায়ন সহজতর হবে। 

•বিভিন্ন প্রকল্পে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) নিয়োগঃ 

আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করছি বিভিন্ন বড়-বড় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পে কারিগরি জ্ঞানহীন একটি বিশেষ ক্যাডারের চাকুরীরত বা অবসর প্রাপ্ত সদস্যদের পিডি হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। কারিগরি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পে কারিগরি শিক্ষা ও জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগের কারণে প্রকল্পের গতি ব্যাহত হবে। কারিগরী জ্ঞানহীন বা প্রকৌশল কাজে চর্চাবিহীন বক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য। 

•বিউবো’র নিয়ন্ত্রণাধীন সকল বিদ্যুৎ সেক্টরকে সমন্বিত করাঃ 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা কর্তৃক প্রতি ৬ মাস পূর্তি পূর্ব বিউবো’র সকল শ্রেনীর চাকুরির ক্ষেত্রে অত্যাবশকীয় (Essential Service Ordinance) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিমাত্রায় শব্দ দূষণ, প্রতিনিয়ত বিদ্যুতায়িত হওয়া ও বৈদ্যুতিক কাজে বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে বিধায় তাদেরকে ঝুঁকি ভাতা প্রদানের জন্য জোর অনুরোধ জানাছি। কাজের গতি বৃদ্ধি (Speed up) ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিউবো’র নিয়ন্ত্রণাধীন সকল বিদ্যুৎ সেক্টরকে একই আম্রেলাভুক্ত (Integrated System) করার আহ্বান জানাচ্ছি।

উল্লেখ যে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’ স্লোগানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে আইইবির সদস্য সংখ্যা প্রায় সত্তর হাজার। 

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি নানান কর্মসূচি পালন করবে। আইইবির সদর দফতরে সকাল ৮টায় জাতীয় পতাকা ও আইইবি পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সকাল সাড়ে টায় কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে৷ আইইবির ১৮ টি কেন্দ্র, ৩৪ টি উপকেন্দ্র ও ১৪ টি ওভারসীজ চ্যাপ্টারে একসময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

৭৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আগামীকাল: প্রকৌশল সংস্থার শীর্ষপদগুলোতে প্রকৌশলীদের পদায়ন চায় আইইবি

Update Time : ০১:০১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

দেশের প্রাচীন পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থার কাজ কারিগরি বিষয় সংশ্লিষ্ট বিধায় প্রকৌশল সংস্থাসমূহের চেয়ারম্যান, কোম্পানীগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বোপরি সংস্থাসমূহের শীর্ষপদগুলোতে প্রকৌশলীর অভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, রাজউক ও বিসিআইসি-এর শীর্ষ পদে ইতোপূর্বে প্রকৌশলী থাকলেও বর্তমানে অপ্রকৌশলীকে পদায়ন করা হয়েছে। তাই প্রকৌশল সংস্থা এবং কোম্পানীসমূহে সার্বিক গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থা, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানীসমূহ, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন কোম্পানীসমূহ এবং মেট্রোরেল সহ অন্যান্য প্রকৌশল নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ সহ সর্বোপরি শীর্ষপদগুলোতে অপ্রকৌশলী ব্যক্তিদের স্থলে প্রকৌশলীদের পদায়ন করতে হবে।  

সোমবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৭৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আইইবির মুখ্য পাত্র সম্মানি সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস. এম. মঞ্জুরুল হক মঞ্জু লিখিত বক্তব্যে এই দাবি জানান।  

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর এমপি। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিবলু, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ, ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার কাজী খায়রুল বাশার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, ইঞ্জিনিয়ার অমিত কুমার চক্রবর্তী এবং ইঞ্জিনিয়ার রনক আহসানসহ আইইবির বিভিন্ন বিভাগ, কেন্দ্র এবং উপকেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ।

দেশের প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়নে আইইবি সাংবাদিকদের সামনে কয়েকটি দাবি আইইবি তুলে ধরেন। 

•প্রকৌশলীদের পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করাঃ  

দেশের অধিকাংশ সংস্থায় কর্মরত প্রকৌশলীগণ ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব পালনে ভারাক্রান্ত। পদ শূণ্য থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হতে পদোন্নতি না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চলতি দায়িত্ব, অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের অনুমোদিত পদের অধিক পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে, একইপদে ২০ বছরের অধিক চাকুরীকালে পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রকৌশল কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে সংস্থাগুলোর কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রকৌশলীগণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রকৌশল সংস্থাসমূহে কর্মরত প্রকৌশলীদের ফিডার পদে চাকুরীর শর্ত পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী ধাপের পদোন্নতি বা গ্রেড প্রদান করা হলে প্রকৌশলীগণ একদিকে যেমন ন্যায্য অধিকার প্রাপ্ত হবেন অন্যদিকে তাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে, দেশের উন্নয়ন তড়ান্বিত হবে। প্রকৌশল সংস্থাসমূহের অর্গানোগ্রাম যুগোপযোগী করা হলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

•পলিটেকনিক শিক্ষকদের বর্তমান চাকুরী কাঠামো পরিবর্তনঃ 

পলিটেকনিক শিক্ষকদের প্রধান দাবী বর্তমান চাকুরী কাঠামো- জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর-ইনস্ট্রাকটর-চীফ ইনস্ট্রাকটর- উপাধ্যক্ষ- অধ্যক্ষ পরিবর্তন করে প্রভাষক অধ্যাপক চাকুরী কাঠামো বাস্তবায়ন করা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি লংঘন করে মহাপরিচালকসহ পরিচালকের সকল পদগুলো অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাগণ দখল করে নিয়েছে, অকারিগরি লোক দ্বারা কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদেরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিয়োগ বিধি মোতাবেক কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা উক্ত পদগুলো পূরণের দাবী জানাচ্ছি।

•বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থাসমূহকে বিসিএস ক্যাডারভূক্তকরণঃ 

 ক. “আমার গ্রাম আমার শহর” বাস্তবায়নে এলজিইডি’র প্রকৌশলীগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এলজিইডি এখন পর্যন্ত ক্যাডারভূক্ত না হওয়ায় মেধাবী নবীন প্রকৌশলীগণ এলজিইডি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাই দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো ও সম্পদের উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে এলজিইডি’কে ক্যাডারভূক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি ।

খ.“ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০” বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীগণসহ ওয়াটার সেক্টরে কর্মরত সকল প্রকৌশলীগণ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ পানি সম্পদ উন্নয়নে কর্মরত প্রকৌশলীগণের জন্য “বিসিএস পানি সম্পদ প্রকৌশল ক্যাডার” সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।

গ. ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পর এখন ‘উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় বিসিএস আইসিটি ক্যাডার বাস্তবায়ন করা জরুরী এবং ২০০৬ সাল থেকে বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের বন্ধকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। 

ঘ.বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হলো বস্ত্র ও গার্মেন্টসসমূহ। এক্ষেত্রে দেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি’কে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে “টেক্সটাইল ক্যাডার” প্রবর্তনের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। 

ঙ. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের “সিনিয়র সার্ভিস পুল” অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায়, উপ-সচিব পদের ৩০% প্রকৌশল সংস্থার জন্য সংরক্ষণের দাবী জানাচ্ছি।

•প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রকৌশল উইং সৃষ্টিঃ 

প্রকৌশলীগণ দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রকৌশলীদের কোনো পদচারণা নেই। এজন্য দেশ গড়ার কারিগর প্রকৌশলীদের মনে এক প্রকার হতাশা বিরাজমান রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কয়েকটি উইং রয়েছে যার মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান কর্মকান্ড মনিটরিং করা হয়ে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকৌশল উইং গঠন করে তাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের নিয়োগ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড মনিটরিং ও সমন্বয় করার ব্যবস্থা করা হলে প্রকল্পগুলো সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহজে ও যথাযথভাবে ওয়াকিবহাল হতে পারবেন। এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথ মানে ও যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও ভিশন-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান- ২১০০ বাস্তবায়ন সহজতর হবে। 

•বিভিন্ন প্রকল্পে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) নিয়োগঃ 

আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করছি বিভিন্ন বড়-বড় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পে কারিগরি জ্ঞানহীন একটি বিশেষ ক্যাডারের চাকুরীরত বা অবসর প্রাপ্ত সদস্যদের পিডি হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। কারিগরি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পে কারিগরি শিক্ষা ও জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগের কারণে প্রকল্পের গতি ব্যাহত হবে। কারিগরী জ্ঞানহীন বা প্রকৌশল কাজে চর্চাবিহীন বক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য। 

•বিউবো’র নিয়ন্ত্রণাধীন সকল বিদ্যুৎ সেক্টরকে সমন্বিত করাঃ 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা কর্তৃক প্রতি ৬ মাস পূর্তি পূর্ব বিউবো’র সকল শ্রেনীর চাকুরির ক্ষেত্রে অত্যাবশকীয় (Essential Service Ordinance) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিমাত্রায় শব্দ দূষণ, প্রতিনিয়ত বিদ্যুতায়িত হওয়া ও বৈদ্যুতিক কাজে বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে বিধায় তাদেরকে ঝুঁকি ভাতা প্রদানের জন্য জোর অনুরোধ জানাছি। কাজের গতি বৃদ্ধি (Speed up) ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিউবো’র নিয়ন্ত্রণাধীন সকল বিদ্যুৎ সেক্টরকে একই আম্রেলাভুক্ত (Integrated System) করার আহ্বান জানাচ্ছি।

উল্লেখ যে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’ স্লোগানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে আইইবির সদস্য সংখ্যা প্রায় সত্তর হাজার। 

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি নানান কর্মসূচি পালন করবে। আইইবির সদর দফতরে সকাল ৮টায় জাতীয় পতাকা ও আইইবি পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সকাল সাড়ে টায় কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে৷ আইইবির ১৮ টি কেন্দ্র, ৩৪ টি উপকেন্দ্র ও ১৪ টি ওভারসীজ চ্যাপ্টারে একসময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।