হাইমচরে আমনের বাম্পার ফলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:৩৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১
  • / ১৫৯ Time View

শরীফ মো: মাছুম বিল্লাহ

হাইমচরে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ধান কাটা শেষ হবে বলে ধারণা করছেন উপজেলা কৃষি অফিস। তবে সময়মতো রোদ-বৃষ্টি থাকায় উপজেলার চরাঞ্চলসহ আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙ্গা, কৃষ্ণপুর, আলগী উত্তর ইউনিয়নের লামচরী, নয়ানী ও ভিঙ্গুলিয়ায় অনেক অনাবাদি জমিতে আবাদ হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আনন্দে রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার হাইমচরে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪০৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৪২০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

উপজেলার পূর্বচর কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক সাইজুদ্দিন বেপারী বলেন, এবার ৮ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে ন্যায্যমূল্য পেলে ধানের ভর্তুকি দিতে হবে না।

একই গ্রামের কৃষক মাহমুদউল্লাহ গাজী বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি সঠিক বাজার মূল্য পেলে লাভবান হওয়া যাবে।

উপজেলার আলগী উত্তর ইউনিয়নের আমন চাষি আব্দুল কাদির বলেন, ৬ কিয়ার জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। কৃষক সংকট থাকায় ধান কাটতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে ৫/৭ দিনের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শেষ করে ঘরে তোলা যাবে।

No description available.

হাইমচরের সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন মেঘনা একতা যুব সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি কামরুল ইসলাম বাবু পাটওয়ারী বলেন, একসময় ভিঙ্গুলিয়ার যেসব জমিতে আমন ধান চাষ করা যায়নি, এ বছর সেসব জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিয়ার (বিঘা) প্রতি ১৯-২০ মণ ধান হবে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।

একই এলাকার কৃষক জামাল উদ্দিন ও আব্দুস সোবহান জানান, কিছুটা ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে। যদি ইঁদুরের উপদ্রব না থাকতো তাহলে আমন ধানের ফলন আরও ভালো হতো। ১১-১২ বিঘা জমি চাষ করে ৪১-৪২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদেও চাষাবাদে লাভ হবে আমরা আশাবাদী।

কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে এখন পাকা ধানের সমারোহ। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। আগামী ১২/১৫ দিনের মধ্যে উপজেলার সকল কৃষকের ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করছেন উপজেলা কৃষি অফিসার দেবব্রত সরকার।

বাজারে এবার ধানের দাম ভালো। তাই বিগত সময়ের লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশাবাদী কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেকেই ফলন নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কেটে গেছে।

এ বছর ফসলের ক্ষেতে রোগ কিংবা পোকার কোনো আক্রমণও ছিল না। তাই একদিকে যেমন উৎপাদন ভালো হয়েছে, অন্যদিকে বাজার দাম নিয়েও আগাম খুশি এখানকার কৃষকরা।

এ দিকে কৃষি বিভাগ বলছে, ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে আগামীতে ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে।

ধান চাষি আহমাদুল্লাহ ছৈয়াল বলেন, ধান পেকে গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটবো। এবার ফলন অনেক ভালোর দিকে। তাই একর প্রতি ২০-২৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশা রাখছি।

চরভৈরবী ইউনিয়নের জালিয়ার চর এলাকার ধান চাষি মোঃ খলিলুর রহমান বিডি সমাচার কে কে বলেন, গত বছরের তুলনায় ধানের ফলন অনেক ভালো। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু করবো। তবে কিছুটা ধানে পোকা আক্রমণ করলেও তাতে তেমন ক্ষতি হবে না। কারণ এবার ধানের ফলন হয়েছে ভালো হয়েছে, বাজারে দামও অনেক ভালো। আশা করি, লাভবান হতে পারবো।

দক্ষিণ পাড়া বগুলা গ্রামের কৃষক শাজাহান বেপারী বিডি সমাচার কে জানান, ৫ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। এ বছর ধানের ফলন অনেক ভালো। আগামী ৮/১০ দিনের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই কাজ শুরু করবো। বাজার দাম ভালো পেলে, বিগত বছরের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবো।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি দেবব্রত সরকার বলেন, দুই দফায় প্রকৃতিক দুর্যোগে এবার ফলনের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা হেক্টর প্রতি ৩ মেট্রিক টন উৎপাদন হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের আমন আবাদে আরও আগ্রহ বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, হাইমচর উপজেলায় বিভিন্ন ফসলের উপর কৃষকদের জন্য রবি প্রণোদনা খুব শীগ্রই প্রদান করা হবে। যা ৬৩০ বিঘা জমিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রণোদনা আসবে, সেগুলো আমরা যথাযথ বন্টন করতে পারবো।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

হাইমচরে আমনের বাম্পার ফলন

Update Time : ০১:৩৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১

শরীফ মো: মাছুম বিল্লাহ

হাইমচরে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ধান কাটা শেষ হবে বলে ধারণা করছেন উপজেলা কৃষি অফিস। তবে সময়মতো রোদ-বৃষ্টি থাকায় উপজেলার চরাঞ্চলসহ আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙ্গা, কৃষ্ণপুর, আলগী উত্তর ইউনিয়নের লামচরী, নয়ানী ও ভিঙ্গুলিয়ায় অনেক অনাবাদি জমিতে আবাদ হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আনন্দে রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার হাইমচরে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪০৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৪২০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

উপজেলার পূর্বচর কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক সাইজুদ্দিন বেপারী বলেন, এবার ৮ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে ন্যায্যমূল্য পেলে ধানের ভর্তুকি দিতে হবে না।

একই গ্রামের কৃষক মাহমুদউল্লাহ গাজী বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি সঠিক বাজার মূল্য পেলে লাভবান হওয়া যাবে।

উপজেলার আলগী উত্তর ইউনিয়নের আমন চাষি আব্দুল কাদির বলেন, ৬ কিয়ার জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। কৃষক সংকট থাকায় ধান কাটতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে ৫/৭ দিনের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শেষ করে ঘরে তোলা যাবে।

No description available.

হাইমচরের সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন মেঘনা একতা যুব সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি কামরুল ইসলাম বাবু পাটওয়ারী বলেন, একসময় ভিঙ্গুলিয়ার যেসব জমিতে আমন ধান চাষ করা যায়নি, এ বছর সেসব জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিয়ার (বিঘা) প্রতি ১৯-২০ মণ ধান হবে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।

একই এলাকার কৃষক জামাল উদ্দিন ও আব্দুস সোবহান জানান, কিছুটা ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে। যদি ইঁদুরের উপদ্রব না থাকতো তাহলে আমন ধানের ফলন আরও ভালো হতো। ১১-১২ বিঘা জমি চাষ করে ৪১-৪২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদেও চাষাবাদে লাভ হবে আমরা আশাবাদী।

কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে এখন পাকা ধানের সমারোহ। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। আগামী ১২/১৫ দিনের মধ্যে উপজেলার সকল কৃষকের ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করছেন উপজেলা কৃষি অফিসার দেবব্রত সরকার।

বাজারে এবার ধানের দাম ভালো। তাই বিগত সময়ের লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশাবাদী কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেকেই ফলন নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কেটে গেছে।

এ বছর ফসলের ক্ষেতে রোগ কিংবা পোকার কোনো আক্রমণও ছিল না। তাই একদিকে যেমন উৎপাদন ভালো হয়েছে, অন্যদিকে বাজার দাম নিয়েও আগাম খুশি এখানকার কৃষকরা।

এ দিকে কৃষি বিভাগ বলছে, ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে আগামীতে ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে।

ধান চাষি আহমাদুল্লাহ ছৈয়াল বলেন, ধান পেকে গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটবো। এবার ফলন অনেক ভালোর দিকে। তাই একর প্রতি ২০-২৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশা রাখছি।

চরভৈরবী ইউনিয়নের জালিয়ার চর এলাকার ধান চাষি মোঃ খলিলুর রহমান বিডি সমাচার কে কে বলেন, গত বছরের তুলনায় ধানের ফলন অনেক ভালো। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু করবো। তবে কিছুটা ধানে পোকা আক্রমণ করলেও তাতে তেমন ক্ষতি হবে না। কারণ এবার ধানের ফলন হয়েছে ভালো হয়েছে, বাজারে দামও অনেক ভালো। আশা করি, লাভবান হতে পারবো।

দক্ষিণ পাড়া বগুলা গ্রামের কৃষক শাজাহান বেপারী বিডি সমাচার কে জানান, ৫ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। এ বছর ধানের ফলন অনেক ভালো। আগামী ৮/১০ দিনের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই কাজ শুরু করবো। বাজার দাম ভালো পেলে, বিগত বছরের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবো।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি দেবব্রত সরকার বলেন, দুই দফায় প্রকৃতিক দুর্যোগে এবার ফলনের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা হেক্টর প্রতি ৩ মেট্রিক টন উৎপাদন হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের আমন আবাদে আরও আগ্রহ বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, হাইমচর উপজেলায় বিভিন্ন ফসলের উপর কৃষকদের জন্য রবি প্রণোদনা খুব শীগ্রই প্রদান করা হবে। যা ৬৩০ বিঘা জমিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রণোদনা আসবে, সেগুলো আমরা যথাযথ বন্টন করতে পারবো।