হরতালের প্রভাব নেই যান চলাচলে, যথাসময়ে ছাড়ছে ট্রেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৪০:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৬০ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সকাল থেকেই রাজধানীতে সড়কে যানবাহনের চাপ থাকে। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই সঙ্গে কমলাপুর থেকেও ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটেনি। ভোর থেকেই যথাসময়ে প্লাটফর্ম ছেড়ে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে প্রতিটি ট্রেন। ফলে এদিন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের তেমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না রাজধানীতে।

আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলীগামী ৮ নম্বর গাড়িতে বাংলামোটর এসে নামেন আনোয়ারুল ইসলাম নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, গতকাল সংঘর্ষের কারণে ধারণা করেছিলাম, হরতালে গাড়ি চলবে না। এ অফিসে কীভাবে যাবো তা নিয়ে কিছুটা সংশয়েই ছিলাম। কিন্তু সব বাসই চলাচল করছে। তবে কিছুদূর পরপর পুলিশের উপস্থিতি দেখেছি।

গাবতলী এক্সপ্রেস বাসের চালক সুজন বলেন, হরতাল হলে কী হবে, আমাদের তো বাস নিয়ে বের হতেই হবে। মানুষ কি চলাচল করবে না; এ ছাড়া আমাদের বলা হয়েছে যেন বাস বন্ধ না রাখি।

সিএনজি চালক রহিম ব্যাপারী বলেন, গাড়ি না চালালে খাব কীভাবে; হরতাল হোক বা যাই হোক আমাদের তো পেটই চলে এটা দিয়ে। তাই সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে নামছি। এখন বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

এদিন সকাল ৭ টার দিকে রাজধানীর কাওরানবাজার মোড়ে প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক যান চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। নিত্যদিনের মতোই সড়কে প্রাইভেটকার, সিএনজি, অ্যাম্বুল্যান্স, পিকআপ ও যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে। তবে সড়কে নিত্যদিনের মতো গণপরিবহন চললেও বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। তারা বলছেন, যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তারা সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন।

যদিও আগেই ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছিল, হরতালের মধ্যে বাস চলবে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন রোববার রাস্তায় হয়তো গণপরিবহনের দেখা খুব একটা মিলবে না। কারণে আগের দিন শনিবার বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে ট্রেনের শিডিউলেও কোন বিপর্যয় ঘটেনি। রোববার সরেজমিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, ভোর থেকেই যথাসময়ে প্লাটফর্ম ছেড়ে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে প্রতিটি ট্রেন। শিডিউল বিপর্যয় হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন চলাচলও ছিল স্বাভাবিক।

জানতে চাইলে জামালপুরগামী তিস্তা ট্রেনের স্টাফ অনিক বলেন, সকাল থেকে কোনো ট্রেন দেরিতে ছাড়েনি। হরতালে প্রভাব এতে পড়েনি। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় টিকিটের যাত্রী ছাড়া আজ স্ট্যান্ডিং যাত্রী কম।

রাজধানীর রামপুরা থেকে আসা আকরাম হোসেন নামের এক যাত্রীর জানান, পরিবার নিয়ে তিনি জামালপুর যাবেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ট্রেন ছিল। কিন্তু যথাসময়ে আসতে না পারায় ট্রেন মিস হয়ে যায়। ভেবেছিলাম টাইমলি আসতে পারবো। কিন্তু রাস্তায় বাস না থাকায় সিএনজি দিয়ে এসেছি। কিন্তু তাও ট্রেন মিস হয়ে গেছে। এখন পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি।

এর আগে, শনিবার দুপুরে সহিংস মহাসমাবেশ থেকে রোববার দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর সন্ধ্যার দিকে এক বিবৃতির মাধ্যমে একই সময়ে হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশও। তবে তাদের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে গণপরিবহন চালানোর ঘোষণা দেয় ঢাকা বাস মালিক সমিতি।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, হরতালের দিন ঢাকা শহর ও শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে বাস ও মিনিবাস চলবে। জনবিরোধী এ হরতালে মালিক-শ্রমিকরা সাড়া দেবে না। ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করছে। মালিক-শ্রমিকরা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা শহর ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত রাখবে। তবে যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে আন্তঃজেলা রুটের গাড়ি চলাচল করবে।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্বাভাবিক চলাফেরা করা জনগণের মৌলিক অধিকার। জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও বলা হয়, দেশের জনগণের জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান বাংলাদেশ পুলিশের আইনি দায়িত্ব। পুলিশ জনগণকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নাগরিকদের চলাফেরার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হলে বা আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে স্থানীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

হরতালের প্রভাব নেই যান চলাচলে, যথাসময়ে ছাড়ছে ট্রেন

Update Time : ০৯:৪০:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সকাল থেকেই রাজধানীতে সড়কে যানবাহনের চাপ থাকে। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই সঙ্গে কমলাপুর থেকেও ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটেনি। ভোর থেকেই যথাসময়ে প্লাটফর্ম ছেড়ে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে প্রতিটি ট্রেন। ফলে এদিন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের তেমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না রাজধানীতে।

আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলীগামী ৮ নম্বর গাড়িতে বাংলামোটর এসে নামেন আনোয়ারুল ইসলাম নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, গতকাল সংঘর্ষের কারণে ধারণা করেছিলাম, হরতালে গাড়ি চলবে না। এ অফিসে কীভাবে যাবো তা নিয়ে কিছুটা সংশয়েই ছিলাম। কিন্তু সব বাসই চলাচল করছে। তবে কিছুদূর পরপর পুলিশের উপস্থিতি দেখেছি।

গাবতলী এক্সপ্রেস বাসের চালক সুজন বলেন, হরতাল হলে কী হবে, আমাদের তো বাস নিয়ে বের হতেই হবে। মানুষ কি চলাচল করবে না; এ ছাড়া আমাদের বলা হয়েছে যেন বাস বন্ধ না রাখি।

সিএনজি চালক রহিম ব্যাপারী বলেন, গাড়ি না চালালে খাব কীভাবে; হরতাল হোক বা যাই হোক আমাদের তো পেটই চলে এটা দিয়ে। তাই সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে নামছি। এখন বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

এদিন সকাল ৭ টার দিকে রাজধানীর কাওরানবাজার মোড়ে প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক যান চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। নিত্যদিনের মতোই সড়কে প্রাইভেটকার, সিএনজি, অ্যাম্বুল্যান্স, পিকআপ ও যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে। তবে সড়কে নিত্যদিনের মতো গণপরিবহন চললেও বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। তারা বলছেন, যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তারা সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন।

যদিও আগেই ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছিল, হরতালের মধ্যে বাস চলবে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন রোববার রাস্তায় হয়তো গণপরিবহনের দেখা খুব একটা মিলবে না। কারণে আগের দিন শনিবার বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে ট্রেনের শিডিউলেও কোন বিপর্যয় ঘটেনি। রোববার সরেজমিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, ভোর থেকেই যথাসময়ে প্লাটফর্ম ছেড়ে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে প্রতিটি ট্রেন। শিডিউল বিপর্যয় হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন চলাচলও ছিল স্বাভাবিক।

জানতে চাইলে জামালপুরগামী তিস্তা ট্রেনের স্টাফ অনিক বলেন, সকাল থেকে কোনো ট্রেন দেরিতে ছাড়েনি। হরতালে প্রভাব এতে পড়েনি। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় টিকিটের যাত্রী ছাড়া আজ স্ট্যান্ডিং যাত্রী কম।

রাজধানীর রামপুরা থেকে আসা আকরাম হোসেন নামের এক যাত্রীর জানান, পরিবার নিয়ে তিনি জামালপুর যাবেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ট্রেন ছিল। কিন্তু যথাসময়ে আসতে না পারায় ট্রেন মিস হয়ে যায়। ভেবেছিলাম টাইমলি আসতে পারবো। কিন্তু রাস্তায় বাস না থাকায় সিএনজি দিয়ে এসেছি। কিন্তু তাও ট্রেন মিস হয়ে গেছে। এখন পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি।

এর আগে, শনিবার দুপুরে সহিংস মহাসমাবেশ থেকে রোববার দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর সন্ধ্যার দিকে এক বিবৃতির মাধ্যমে একই সময়ে হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশও। তবে তাদের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে গণপরিবহন চালানোর ঘোষণা দেয় ঢাকা বাস মালিক সমিতি।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, হরতালের দিন ঢাকা শহর ও শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে বাস ও মিনিবাস চলবে। জনবিরোধী এ হরতালে মালিক-শ্রমিকরা সাড়া দেবে না। ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করছে। মালিক-শ্রমিকরা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা শহর ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত রাখবে। তবে যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে আন্তঃজেলা রুটের গাড়ি চলাচল করবে।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্বাভাবিক চলাফেরা করা জনগণের মৌলিক অধিকার। জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও বলা হয়, দেশের জনগণের জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান বাংলাদেশ পুলিশের আইনি দায়িত্ব। পুলিশ জনগণকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নাগরিকদের চলাফেরার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হলে বা আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে স্থানীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।