স্বদেশীদের উদ্ভাবনে আমরা আনন্দিত হই না কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:১৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০২০
  • / ২৫৯ Time View
জাহিদ হাসানঃ
মানবজাতি আজ এক দুঃসময় পার করছে। করোনার থাবায় জনজীবন বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে ৬ মাস হয়ে গেছে, কবে আসবে করোনার ভ্যাকসিন? আদৌ আসবে কিনা ভ্যাকসিন?
.
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বসে নেই, আহত বাঘের মত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশেই নভেল করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করতে পারার ঘোষণা দিয়েছে দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।
.
জাপানের বিজ্ঞানীরা, চীনের বিজ্ঞানীরা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যখন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্ভাবনার কথা জানালো, শুরু থেকেই আমরা উল্লাস করে বেড়ালাম, অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়ে ফেসবুকের নিউজফিড সয়লাব করে ফেললাম। ভাবটা এমন, এই ভ্যাকসিন আমাদের দেশের জন্য তৈরি হচ্ছে, সবার আগে আমরা পাবো! অথচ আজ দেশেরই একটি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কথা যখন ঘোষণা করলো, তখন আমরা নির্বিকার হয়ে গেলাম।
.
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেওয়া হলো। কী অদ্ভুত আমরা! আমরা এমন কেন? বিদেশে কোনো বাঙালি এমন ঘোষণা দিলে হয়তো আমরা অভিনন্দন জানাতাম, গর্বে বুক ফুলে উঠতো। দেশের মাটিতে বসে একটি প্রতিষ্ঠান এমন ঘোষণা দিয়েছে, এজন্য কী আমরা পাত্তা দিচ্ছি না? আমাদের আত্মবিশ্বাস এতো তলানিতে নেমে গেল? আমি যখন লেখাটা লিখছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ১৪৯টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে, সেখানে ১৫০তম তালিকায় যদি বাংলাদেশের নাম ঢুকে তাতে ক্ষতি কী?
.
আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিনটি সফল হবে কিনা, আদৌও সম্ভব কিনা, সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পরে করা যাবে। আরও কিছুটা সময় দিতে হবে তাদের। চেষ্টা তো করছে তারা, দেখা যাক না কী হয়। ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন তো আর সফল হবে না, সেখানে না হয় আমাদের দেশেরটাও হলো না, তাতে আমার পরিতাপ হবে না। আমরা যে সাহস করে ঘোষণাটা দিতে পেরেছি, এটা কী কোনো অংশে কম?
.
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। উক্তিটি এরকম- “যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না।” আফসোস, এই উক্তির কার্যকারিতা থেকে আজও সরে আসতে পারিনি আমরা। এমনটা হলে আমাদের অধঃপতন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এই ভ্যাকসিনের পিছনে লেগে থাকা মানুষদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আপনাদের চেষ্টা ও পরিশ্রম স্বার্থক হোক। মানব জাতি মুক্তি পাক। এই আঁধার কেটে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
.
লেখকঃ শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
.
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

স্বদেশীদের উদ্ভাবনে আমরা আনন্দিত হই না কেন?

Update Time : ০৯:১৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০২০
জাহিদ হাসানঃ
মানবজাতি আজ এক দুঃসময় পার করছে। করোনার থাবায় জনজীবন বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে ৬ মাস হয়ে গেছে, কবে আসবে করোনার ভ্যাকসিন? আদৌ আসবে কিনা ভ্যাকসিন?
.
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বসে নেই, আহত বাঘের মত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশেই নভেল করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করতে পারার ঘোষণা দিয়েছে দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।
.
জাপানের বিজ্ঞানীরা, চীনের বিজ্ঞানীরা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যখন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্ভাবনার কথা জানালো, শুরু থেকেই আমরা উল্লাস করে বেড়ালাম, অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়ে ফেসবুকের নিউজফিড সয়লাব করে ফেললাম। ভাবটা এমন, এই ভ্যাকসিন আমাদের দেশের জন্য তৈরি হচ্ছে, সবার আগে আমরা পাবো! অথচ আজ দেশেরই একটি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কথা যখন ঘোষণা করলো, তখন আমরা নির্বিকার হয়ে গেলাম।
.
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেওয়া হলো। কী অদ্ভুত আমরা! আমরা এমন কেন? বিদেশে কোনো বাঙালি এমন ঘোষণা দিলে হয়তো আমরা অভিনন্দন জানাতাম, গর্বে বুক ফুলে উঠতো। দেশের মাটিতে বসে একটি প্রতিষ্ঠান এমন ঘোষণা দিয়েছে, এজন্য কী আমরা পাত্তা দিচ্ছি না? আমাদের আত্মবিশ্বাস এতো তলানিতে নেমে গেল? আমি যখন লেখাটা লিখছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ১৪৯টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে, সেখানে ১৫০তম তালিকায় যদি বাংলাদেশের নাম ঢুকে তাতে ক্ষতি কী?
.
আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিনটি সফল হবে কিনা, আদৌও সম্ভব কিনা, সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পরে করা যাবে। আরও কিছুটা সময় দিতে হবে তাদের। চেষ্টা তো করছে তারা, দেখা যাক না কী হয়। ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন তো আর সফল হবে না, সেখানে না হয় আমাদের দেশেরটাও হলো না, তাতে আমার পরিতাপ হবে না। আমরা যে সাহস করে ঘোষণাটা দিতে পেরেছি, এটা কী কোনো অংশে কম?
.
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। উক্তিটি এরকম- “যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না।” আফসোস, এই উক্তির কার্যকারিতা থেকে আজও সরে আসতে পারিনি আমরা। এমনটা হলে আমাদের অধঃপতন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এই ভ্যাকসিনের পিছনে লেগে থাকা মানুষদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আপনাদের চেষ্টা ও পরিশ্রম স্বার্থক হোক। মানব জাতি মুক্তি পাক। এই আঁধার কেটে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
.
লেখকঃ শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
.