স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগ্যতা কেন স্নাতক নয় : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:৪৫:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
  • / ১৮২ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের (সরকারি ও বেসরকারি) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েটের (ডিগ্রি পাসের নিচে নয়) বিধান কেন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া সারাদেশের বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস কেন করা হবে না তা জানতেও চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চালাতে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীর সংজ্ঞাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং উচ্চ ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফয়েজ আহমেদ, জহির উদ্দিন লিমন। তাদের সঙ্গে ছিলেন নিগার সুলতানা।

এর আগে গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইডস ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নিগার সুলতানার পক্ষে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন এই রিট করেন।

রিটে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েটের (ডিগ্রি পাসের নিচে নয়) বিধান করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রুটের বিবাদীরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং উচ্চ ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

রিটের বিষয়ে আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন বলেন, একটি হাইস্কুলের শিক্ষক হতে হলে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। কেউ কেউ দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেই শিক্ষকদের পরিচালনার ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস অথবা গ্র্যাজুয়েট হওয়া দরকার।

রিটে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নয় বলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বিধান চালু হলো। তাহলে কেন সরকারি ও বেসকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে না।

জহির উদ্দিন লিমন বলেন, ‘আমার নিজের স্কুল থেকে লেখাপড়া করে আসা শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও সরকারের বিভিন্ন দফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু ওই স্কুল থেকে গত ৫ বছর ধরে কোনো শিক্ষার্থী ‘এ’ প্লাস গ্রেড পাচ্ছে না। তার কারণ বা নেপথ্যে কী সমস্যা সেটা খুঁজে বের করার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন লোক কমিটিতে থাকা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমসাময়িক বিষয়সহ সব বিষয় দেশের উন্নয়নের সঙ্গে যেখানে দিন দিন আরও উন্নতির দিকে যাওয়ার কথা, সেখানে এসব স্কুলের শিক্ষার মান কমছে নাকি বাড়ছে তার কোনো খোঁজ-খবর রাখতে পারছে না মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সদস্যরা। অনেকাংশে দেখা গেছে, কোনো কোনো মাধ্যমিক স্কুল কমিটির সভাপতি বা অন্যান্য দায়িত্ব প্রাপ্তদের অক্ষর জ্ঞানও নেই।’

উল্লেখ্য, স্নাতক (পাস) ও অনার্স-মাস্টার্স কলেজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস নির্ধারণ করা আছে। অন্যদিকে, গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তি ছাড়া (ডিগ্রি পাসের নিচে নয়) ফাজিল (স্নাতক) মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না বলেও অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস করার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পর যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করায় গত ৪ নভেম্বর দুটি আবেদন করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগ্যতা কেন স্নাতক নয় : হাইকোর্ট

Update Time : ০২:৪৫:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের (সরকারি ও বেসরকারি) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েটের (ডিগ্রি পাসের নিচে নয়) বিধান কেন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া সারাদেশের বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস কেন করা হবে না তা জানতেও চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চালাতে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীর সংজ্ঞাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং উচ্চ ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফয়েজ আহমেদ, জহির উদ্দিন লিমন। তাদের সঙ্গে ছিলেন নিগার সুলতানা।

এর আগে গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইডস ফাউন্ডেশনের আইনজীবী নিগার সুলতানার পক্ষে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন এই রিট করেন।

রিটে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েটের (ডিগ্রি পাসের নিচে নয়) বিধান করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রুটের বিবাদীরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং উচ্চ ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

রিটের বিষয়ে আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন বলেন, একটি হাইস্কুলের শিক্ষক হতে হলে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। কেউ কেউ দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেই শিক্ষকদের পরিচালনার ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস অথবা গ্র্যাজুয়েট হওয়া দরকার।

রিটে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নয় বলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বিধান চালু হলো। তাহলে কেন সরকারি ও বেসকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে না।

জহির উদ্দিন লিমন বলেন, ‘আমার নিজের স্কুল থেকে লেখাপড়া করে আসা শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও সরকারের বিভিন্ন দফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু ওই স্কুল থেকে গত ৫ বছর ধরে কোনো শিক্ষার্থী ‘এ’ প্লাস গ্রেড পাচ্ছে না। তার কারণ বা নেপথ্যে কী সমস্যা সেটা খুঁজে বের করার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন লোক কমিটিতে থাকা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমসাময়িক বিষয়সহ সব বিষয় দেশের উন্নয়নের সঙ্গে যেখানে দিন দিন আরও উন্নতির দিকে যাওয়ার কথা, সেখানে এসব স্কুলের শিক্ষার মান কমছে নাকি বাড়ছে তার কোনো খোঁজ-খবর রাখতে পারছে না মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সদস্যরা। অনেকাংশে দেখা গেছে, কোনো কোনো মাধ্যমিক স্কুল কমিটির সভাপতি বা অন্যান্য দায়িত্ব প্রাপ্তদের অক্ষর জ্ঞানও নেই।’

উল্লেখ্য, স্নাতক (পাস) ও অনার্স-মাস্টার্স কলেজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস নির্ধারণ করা আছে। অন্যদিকে, গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তি ছাড়া (ডিগ্রি পাসের নিচে নয়) ফাজিল (স্নাতক) মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না বলেও অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস করার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পর যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করায় গত ৪ নভেম্বর দুটি আবেদন করা হয়।