সুইজারল্যান্ডের অস্ত্র কিনেও ইউক্রেনে পাঠাতে পারছে না জার্মানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:০১:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
  • / ১৩৫ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এদিকে, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। জার্মানি অস্ত্র সরবরাহ না করায় তাদের ওপর অসন্তোষ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড থেকে কেনা যুদ্ধ-সামগ্রী ইউক্রেনে পাঠাতে চেয়েও পারছে না জার্মানি। কারণ, আমদানির চুক্তি অনুযায়ী অন্য দেশে পাঠানোর আগে সুইজারল্যান্ডের অনুমতি নিতে হবে। সেই অনুমতিই পাচ্ছে না জার্মান সেনাবাহিনী। দুই দুইবার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দুবারই তাতে অসম্মতি জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডের অস্ত্র রফতানি বিষয়ক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ স্টেট সেক্রেটারিয়েট ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (এসইসিও বা সেকো)।

সেকোর মিডিয়া মুখপাত্র মিশায়েল ভ্যুথরিশ জানান, নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার স্বার্থে এবং দেশের যুদ্ধ সামগ্রি সংক্রান্ত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার দায়বদ্ধতার কারণে সুইজারল্যান্ডের পক্ষে অনুমতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

যেদেশে পাঠানো হবে সেই দেশ যাতে অস্ত্রগুলো আবার অন্য কোনো দেশে না পাঠায়- তা নিশ্চিত করতে গ্রহীতা দেশের কাছ থেকে আগাম নন-রিএক্সপোর্ট ডিক্লারেশন, অর্থাৎ প্রাপ্ত অস্ত্র অন্য দেশে রফতানি না করার অঙ্গীকারনামা নেয় সুইজারল্যান্ড। এমন অঙ্গীকারনামা না পেলে তারা অস্ত্র রফতানি করে না। এই আইনটি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত।

মিশায়েল ভ্যুথরিচও সেই আইনের আলোকেই জার্মানির অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করলেন। তার মতে, ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত, তাই সুইজারল্যান্ডের তৈরি করা অস্ত্র আগে সরবরাহ করা হলেও পুনঃরফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জার্মান সেনাবাহিনীকে সেই অস্ত্র সুইজারল্যান্ডে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া আইন অনুযায়ী অসম্ভব।

তবে সুইস সরকারের এ অবস্থান ইউরোপের অন্যান্য দেশে সমালোচনার মুখে পড়েছে। দেশেও সরকারের এই নীতিকে সবাই সমর্থন জানাচ্ছে না। মধ্য-ডানপন্থি দল সেন্টার পার্টির প্রেসিডেন্ট গেরহার্ড প্ফিস্টার মনে করেন, সরকারের উচিত সংবিধানের ১৮৪.৩ ধারা অনুসরণ করে পুনঃরফতানিবিরোধী বিধানকে পাশ কাটিয়ে জার্মানিকে অনুমতি দিয়ে দেওয়া। তিনি মনে করেন, এর ফলে ইউরোপের একটি গণতান্ত্রিক দেশকে সহায়তা করা হবে এবং তাতে সুইজারল্যান্ডের ‘বৃহত্তর স্বার্থ’ রক্ষা করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের এক অংশ আবার ইয়েমেন যুদ্ধে হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহের প্রসঙ্গ টেনে সুইজারল্যান্ডের সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, সৌদি আরবকে অস্ত্র দিলেও ইউক্রেনের বেলায় নিরপেক্ষ থাকা এক ধরনের স্ববিরোধিতা।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

সুইজারল্যান্ডের অস্ত্র কিনেও ইউক্রেনে পাঠাতে পারছে না জার্মানি

Update Time : ১০:০১:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এদিকে, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। জার্মানি অস্ত্র সরবরাহ না করায় তাদের ওপর অসন্তোষ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড থেকে কেনা যুদ্ধ-সামগ্রী ইউক্রেনে পাঠাতে চেয়েও পারছে না জার্মানি। কারণ, আমদানির চুক্তি অনুযায়ী অন্য দেশে পাঠানোর আগে সুইজারল্যান্ডের অনুমতি নিতে হবে। সেই অনুমতিই পাচ্ছে না জার্মান সেনাবাহিনী। দুই দুইবার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দুবারই তাতে অসম্মতি জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডের অস্ত্র রফতানি বিষয়ক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ স্টেট সেক্রেটারিয়েট ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (এসইসিও বা সেকো)।

সেকোর মিডিয়া মুখপাত্র মিশায়েল ভ্যুথরিশ জানান, নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার স্বার্থে এবং দেশের যুদ্ধ সামগ্রি সংক্রান্ত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার দায়বদ্ধতার কারণে সুইজারল্যান্ডের পক্ষে অনুমতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

যেদেশে পাঠানো হবে সেই দেশ যাতে অস্ত্রগুলো আবার অন্য কোনো দেশে না পাঠায়- তা নিশ্চিত করতে গ্রহীতা দেশের কাছ থেকে আগাম নন-রিএক্সপোর্ট ডিক্লারেশন, অর্থাৎ প্রাপ্ত অস্ত্র অন্য দেশে রফতানি না করার অঙ্গীকারনামা নেয় সুইজারল্যান্ড। এমন অঙ্গীকারনামা না পেলে তারা অস্ত্র রফতানি করে না। এই আইনটি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত।

মিশায়েল ভ্যুথরিচও সেই আইনের আলোকেই জার্মানির অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করলেন। তার মতে, ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত, তাই সুইজারল্যান্ডের তৈরি করা অস্ত্র আগে সরবরাহ করা হলেও পুনঃরফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জার্মান সেনাবাহিনীকে সেই অস্ত্র সুইজারল্যান্ডে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া আইন অনুযায়ী অসম্ভব।

তবে সুইস সরকারের এ অবস্থান ইউরোপের অন্যান্য দেশে সমালোচনার মুখে পড়েছে। দেশেও সরকারের এই নীতিকে সবাই সমর্থন জানাচ্ছে না। মধ্য-ডানপন্থি দল সেন্টার পার্টির প্রেসিডেন্ট গেরহার্ড প্ফিস্টার মনে করেন, সরকারের উচিত সংবিধানের ১৮৪.৩ ধারা অনুসরণ করে পুনঃরফতানিবিরোধী বিধানকে পাশ কাটিয়ে জার্মানিকে অনুমতি দিয়ে দেওয়া। তিনি মনে করেন, এর ফলে ইউরোপের একটি গণতান্ত্রিক দেশকে সহায়তা করা হবে এবং তাতে সুইজারল্যান্ডের ‘বৃহত্তর স্বার্থ’ রক্ষা করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের এক অংশ আবার ইয়েমেন যুদ্ধে হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহের প্রসঙ্গ টেনে সুইজারল্যান্ডের সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, সৌদি আরবকে অস্ত্র দিলেও ইউক্রেনের বেলায় নিরপেক্ষ থাকা এক ধরনের স্ববিরোধিতা।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে