লামায় বিষ বৃক্ষ রোপণ : ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য ও ফসলী জমি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:০২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১৪২ Time View

বিপ্লব দাশ,লামা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামা উপজেলায় বৃষের চারা রোপন করছে পুঁজিবাদী কোম্পানীগুলো।শীতের শুরুর দিকে এখানে তামাকের চাষ শুরু হয়। তামাক চাষের ব্যাবস্থাপনার কারনে বেশ কয়েকটি নামি দামী টোবাকো কোম্পানি গুলো এখানে কৃষকদের লোনের সুবিধা দেখিয়ে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্ভুদ্ধ করে যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭ হাজার একর ফসলি জমিতে চলছে মরণব্যাধি ক্যান্সারেরমত রোগের বিষবৃক্ষ তামাকের চাষ। এ চাষের জন্য কোম্পানীগুলোর পক্ষ থেকে আগে ভাগেই অর্থ, সার, বীজ, পলিথিন, কীটনাশকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চাষিদের প্রদান করা হয়েছে।

রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত এসব চাষী মৌসুম শুরুর আগেই চড়া মূল্যে ফসলি জমিগুলো অগ্রিম লাগিয়ত নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সবজি চাষিরা।

স্থানীয় কৃষক মো:জয়নাল বিডি সমাচারকে জানান ১ একর প্রতি টোবাকো কোম্পানিগুলো আমাদের ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দেন, প্রথম ধাপে চারা রোপনের সময় এবং ২য় ধাপে জমিতে সার প্রয়োগের সময় সার বাবত।

সমীক্ষায় উঠে আসে এতে ৬-৭ মাস মাঠে কৃষকের পুরো পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এক সাথে তারা টাকাটা হাতে পাচ্ছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই ৬-৭ মাসের মধ্যে ঐ কৃষকের পরীবারের সদস্যরা তামাক পাতার পরিচর্যা ও চাষে বিসাক্ত রাসায়নিক কিটনাসকের প্রত্যক্ষ ব্যাবহারের সাথে জড়িত থাকায় তারা নানা রকম শারীরিক অসুস্থতার স্বীকার হচ্ছেন।

জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও তামাক কোম্পানীগুলো তাদের রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত চাষিকে ইতিমধ্যে বীজ, পলিথিন, কীটনাশক, সার ও ঋণ প্রদান করেছেন। আর কৃষকরা তাদের ফসলি জমি, স্কুলের আশপাশ, মাতামুহুরী নদীর চর ও নদীর দুই ধারসহ বিভিন্ন স্থানের জমিতে তৈরি করেছে বীজতলা।এর মধ্যে কেউ কেউ বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে জমিতে রোপণ করছেন।

কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন বিডি সমাচারকে জানান, গত সপ্তাহের প্রতিবেদন অনুসারে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬৮০ হেক্টর অর্থাৎ ১ হাজার ৬’শ ৭৯ একর জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে।তবে রেজিস্ট্রেশনকৃত চাষীর সংখ্যা ও জমির পরিমাণ প্রকৃত কত তা কৌশলগত কারণে এড়িয়ে যাচ্ছে কোম্পানীগুলো। ধারণা করা হচ্ছে এর পরিমান আরও বেশি হতে পারে।

লামা পৌরসভা এলাকার হরিণঝিরি,কলিঙ্গাবিল, ছাগল খাইয়া, সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, সাবেক বিলছড়ি, মাতামুহুরী নদীর রাজবাড়ী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সর্বত্রই তামাকের চাষ চলছে।

তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট ও পরিবেশের মারাতক ক্ষতি হয় বলে মতামত পরিবেশবাদীদের।এছাড়া চিকিস্যৎকদের মতে তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে ফুসফুসের মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে মানব দেহ।সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চ এপ্রিল মাসের দিকে রোপীত তামাকের নীল বিষে আক্রান্ত হবে এলাকার পরিবেশ। উৎপাদিত এসব তামাকের দ্রব্য সারাদেশে ছড়িয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে মানুষকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডা.মহি উদ্দিন মাজেদ চৌধুরী বিডি সমাচারকে বলেন,তামাকজাত দ্রব্য সেবনে ফুসফুস,মুখগহবর,খাদ্যনালীতে প্রাণঘাতী ক্যান্সার ও মুখ,খাদ্যনালী এবং শ্বাসতন্ত্র দীর্ঘ মিয়াদী সিওপিডি রোগে আক্রন্ত হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

লামায় বিষ বৃক্ষ রোপণ : ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য ও ফসলী জমি

Update Time : ০৩:০২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

বিপ্লব দাশ,লামা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামা উপজেলায় বৃষের চারা রোপন করছে পুঁজিবাদী কোম্পানীগুলো।শীতের শুরুর দিকে এখানে তামাকের চাষ শুরু হয়। তামাক চাষের ব্যাবস্থাপনার কারনে বেশ কয়েকটি নামি দামী টোবাকো কোম্পানি গুলো এখানে কৃষকদের লোনের সুবিধা দেখিয়ে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্ভুদ্ধ করে যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭ হাজার একর ফসলি জমিতে চলছে মরণব্যাধি ক্যান্সারেরমত রোগের বিষবৃক্ষ তামাকের চাষ। এ চাষের জন্য কোম্পানীগুলোর পক্ষ থেকে আগে ভাগেই অর্থ, সার, বীজ, পলিথিন, কীটনাশকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চাষিদের প্রদান করা হয়েছে।

রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত এসব চাষী মৌসুম শুরুর আগেই চড়া মূল্যে ফসলি জমিগুলো অগ্রিম লাগিয়ত নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সবজি চাষিরা।

স্থানীয় কৃষক মো:জয়নাল বিডি সমাচারকে জানান ১ একর প্রতি টোবাকো কোম্পানিগুলো আমাদের ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দেন, প্রথম ধাপে চারা রোপনের সময় এবং ২য় ধাপে জমিতে সার প্রয়োগের সময় সার বাবত।

সমীক্ষায় উঠে আসে এতে ৬-৭ মাস মাঠে কৃষকের পুরো পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এক সাথে তারা টাকাটা হাতে পাচ্ছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই ৬-৭ মাসের মধ্যে ঐ কৃষকের পরীবারের সদস্যরা তামাক পাতার পরিচর্যা ও চাষে বিসাক্ত রাসায়নিক কিটনাসকের প্রত্যক্ষ ব্যাবহারের সাথে জড়িত থাকায় তারা নানা রকম শারীরিক অসুস্থতার স্বীকার হচ্ছেন।

জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও তামাক কোম্পানীগুলো তাদের রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত চাষিকে ইতিমধ্যে বীজ, পলিথিন, কীটনাশক, সার ও ঋণ প্রদান করেছেন। আর কৃষকরা তাদের ফসলি জমি, স্কুলের আশপাশ, মাতামুহুরী নদীর চর ও নদীর দুই ধারসহ বিভিন্ন স্থানের জমিতে তৈরি করেছে বীজতলা।এর মধ্যে কেউ কেউ বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে জমিতে রোপণ করছেন।

কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন বিডি সমাচারকে জানান, গত সপ্তাহের প্রতিবেদন অনুসারে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬৮০ হেক্টর অর্থাৎ ১ হাজার ৬’শ ৭৯ একর জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে।তবে রেজিস্ট্রেশনকৃত চাষীর সংখ্যা ও জমির পরিমাণ প্রকৃত কত তা কৌশলগত কারণে এড়িয়ে যাচ্ছে কোম্পানীগুলো। ধারণা করা হচ্ছে এর পরিমান আরও বেশি হতে পারে।

লামা পৌরসভা এলাকার হরিণঝিরি,কলিঙ্গাবিল, ছাগল খাইয়া, সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, সাবেক বিলছড়ি, মাতামুহুরী নদীর রাজবাড়ী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সর্বত্রই তামাকের চাষ চলছে।

তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট ও পরিবেশের মারাতক ক্ষতি হয় বলে মতামত পরিবেশবাদীদের।এছাড়া চিকিস্যৎকদের মতে তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে ফুসফুসের মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে মানব দেহ।সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চ এপ্রিল মাসের দিকে রোপীত তামাকের নীল বিষে আক্রান্ত হবে এলাকার পরিবেশ। উৎপাদিত এসব তামাকের দ্রব্য সারাদেশে ছড়িয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে মানুষকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডা.মহি উদ্দিন মাজেদ চৌধুরী বিডি সমাচারকে বলেন,তামাকজাত দ্রব্য সেবনে ফুসফুস,মুখগহবর,খাদ্যনালীতে প্রাণঘাতী ক্যান্সার ও মুখ,খাদ্যনালী এবং শ্বাসতন্ত্র দীর্ঘ মিয়াদী সিওপিডি রোগে আক্রন্ত হয়।