রাণীনগরে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন ॥ দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৭:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
  • / ১৩৬ Time View

মোঃ আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গহেলাপুর আকন্দপাড়া গ্রামে সরকারি রাস্তার পাশে অপরিকল্পিত ভাবে এক ব্যক্তি পুকুর খনন করায় প্রতিবছর বর্ষার পানিতে ভাঙছে সরকারি রাস্তা ও হুমকির মুখে পড়েছে পাড়ে থাকা বাড়ি-ঘর। গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করলেও পুকুরের মালিক তা কর্নপাত করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি খাস দেড় থেকে ২ শতক জমি অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে মাত্র ১৬ শতক জমির পাটক্ষেতকে পুকুর তৈরী করলেও ভাঙতে ভাঙতে তা এখন প্রায় ২ বিঘা জমির পরিমানে দাড়িয়েছে। এতে করে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার ৫ টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে।

এদিকে ওই পুকুর মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ খাস জমি উদ্ধার ও সরকারি রাস্তা স্থায়ীভাবে মেরামত করার দাবি জানিয়ে গ্রামবাসীদের পক্ষে ৫০ জনের স্বাক্ষতির একটি লিখিত অভিযোগ গত ৫ মে রাণীনগরের ইউএনও বরাবর দেওয়া হলেও প্রায় এক মাসেও তার কোন প্রতিকার মেলেনি। দ্রুত এ ঘটনার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর গ্রামের বাজারের ব্রিজের মোড় থেকে ঈদগাহ মাঠ হয়ে সরকারি ইট সোলিং এর একটি রাস্তা সুবিশাল মাঠের মধ্যে গিয়ে মিশে গেছে। একমাত্র এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের আকন্দপাড়ার ৯০ পরিবার, পালপাড়ার ৭৫ পরিবার, হিন্দুপাড়ার ৭০ পরিবারসহ পাশের কচুয়া ও ঝিনা গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে। শুধু তাই নয় গ্রামের শতভাগ মানুষ একমাত্র ওই রাস্তাটি ব্যবহার করে রিকসাভ্যান, পাওয়ার ট্রলী, হালের গরু, কৃষি সরঞ্জাম এর মাধ্যমে বিশাল মাঠে বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি চাষাবাদ করে ফসল ঘরে তুলে থাকে।

এমত অবস্থায় গহেলাপুর আকন্দপাড়ার বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার প্রামানিক প্রায় ১০-১২ বছর আগে তার বাড়ির সামনে ও একই পাড়ার মোফাজ্জল আকন্দের বাড়ির দক্ষিণে ও সিরাজুল ইসলামের বাড়ির উত্তরে এবং সরকারি রাস্তার সংলগ্ন পূর্ব দিকে দেড় থেকে ২ শতক খাস জমি জবর দখল করে প্রায় ১৫-১৬ শতক পাট ও পাতি চাষের জমি অপরিকল্পিত ভাবে খনন করে পুকুর করেন। পুকুর খননের সময় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বাঁধা দিলেও পুকুর খননকারী আব্দুস ছাত্তার কারো কোন কথা কর্ণপাত না করে সরকারি নীতিমালা লংঘন করে গভীর গর্তের মাধ্যমে মাছ চাষ করে আসছেন। এতে করে প্রতিবছর বর্ষার পানিতে ভাঙছে সরকারি রাস্তা ও হুমকির মুখে পড়েছে পাড়ে থাকা বাড়ি-ঘর। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই এলাকাবাসী।

ওই গ্রামের ভুক্তভোগী তছলিম উদ্দিন বলেন, তার পুকুরের নিজস্ব কোন পাড় নেই। অন্যের জমিতে পুকুরের পাড় করে ব্যবহার করছেন। বাঁধা দিলেও তিনি তা শুননেন না। গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, বর্ষা এলেই আমাদের আর দুর্ভোগের সীমা থাকে না। ওই পুকুরের পাড় ভেঙ্গে রাস্তা ভেঙ্গে পড়ে তখন আর রিকসা ভ্যান তো দুরে থাক হেটে পর্যন্ত মাঠে যাওয়া যায় না। ওই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন আমার বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। একই ভাবে বর্ষায় বৃষ্টির পানির কারনে একই গ্রামের মোফাজ্জল আকন্দের বাড়িও হুমকির মুখে রয়েছে।

অভিযোগকারীদের প্রধান মাহমদুুন নবী, রেজাউল ইসলাম বলেন, সরকারি রাস্তাটিও প্রতিবছর ভাঙঘনের কারনে ওই এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ওই একমাত্র রাস্তা দিয়ে গ্রামের মানুষ মাঠ থেকে ফসল ঘরে তোলেন। প্রতিবছর ওই রাস্তা ধসে পুকুরে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় ওই রাস্তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে পুকুর মালিককে পুকুরের পাড় সংস্কারসহ রাস্তা মেরামত করে দেওয়ার জন্য বার বার বলা হলেও তিনি তা কর্ণপাত করেন না। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ভাবে অর্থ সংগ্রহ (চাঁদা তুলে) নিজেরাই রাস্তা মেরামত করে কোন ভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। অনেক বলার পর ওই পুকুর মালিক এবার পুকুরের কাঁদা দিয়ে কোনভাবে পাড় বেধেঁছেন। বর্ষা এলইে তা আবার পুকুরের মধ্যে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমরা গ্রামবাসির পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ ইউএনও বরাবর দিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগের প্রায় এক মাসেও তার কোন প্রতিকার মেলেনি।

এ ব্যাপারে পুকুর খননকারী আব্দুস ছাত্তার প্রামানিক বলেন, এবার আমি পাড় বেধেঁ দিয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, প্রতিদিনতো অনেক চিঠি বা অভিযোগ আসে। সব কি মনে রাখা সম্ভব। যখন অভিযোগ আসে তখন সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ইসু করে দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে দেওয়া হয়। এই অভিযোগের বিষয়টি আমার মনে নেই তবে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

রাণীনগরে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন ॥ দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ

Update Time : ০৭:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

মোঃ আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গহেলাপুর আকন্দপাড়া গ্রামে সরকারি রাস্তার পাশে অপরিকল্পিত ভাবে এক ব্যক্তি পুকুর খনন করায় প্রতিবছর বর্ষার পানিতে ভাঙছে সরকারি রাস্তা ও হুমকির মুখে পড়েছে পাড়ে থাকা বাড়ি-ঘর। গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করলেও পুকুরের মালিক তা কর্নপাত করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি খাস দেড় থেকে ২ শতক জমি অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে মাত্র ১৬ শতক জমির পাটক্ষেতকে পুকুর তৈরী করলেও ভাঙতে ভাঙতে তা এখন প্রায় ২ বিঘা জমির পরিমানে দাড়িয়েছে। এতে করে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার ৫ টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে।

এদিকে ওই পুকুর মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ খাস জমি উদ্ধার ও সরকারি রাস্তা স্থায়ীভাবে মেরামত করার দাবি জানিয়ে গ্রামবাসীদের পক্ষে ৫০ জনের স্বাক্ষতির একটি লিখিত অভিযোগ গত ৫ মে রাণীনগরের ইউএনও বরাবর দেওয়া হলেও প্রায় এক মাসেও তার কোন প্রতিকার মেলেনি। দ্রুত এ ঘটনার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর গ্রামের বাজারের ব্রিজের মোড় থেকে ঈদগাহ মাঠ হয়ে সরকারি ইট সোলিং এর একটি রাস্তা সুবিশাল মাঠের মধ্যে গিয়ে মিশে গেছে। একমাত্র এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের আকন্দপাড়ার ৯০ পরিবার, পালপাড়ার ৭৫ পরিবার, হিন্দুপাড়ার ৭০ পরিবারসহ পাশের কচুয়া ও ঝিনা গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে। শুধু তাই নয় গ্রামের শতভাগ মানুষ একমাত্র ওই রাস্তাটি ব্যবহার করে রিকসাভ্যান, পাওয়ার ট্রলী, হালের গরু, কৃষি সরঞ্জাম এর মাধ্যমে বিশাল মাঠে বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি চাষাবাদ করে ফসল ঘরে তুলে থাকে।

এমত অবস্থায় গহেলাপুর আকন্দপাড়ার বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার প্রামানিক প্রায় ১০-১২ বছর আগে তার বাড়ির সামনে ও একই পাড়ার মোফাজ্জল আকন্দের বাড়ির দক্ষিণে ও সিরাজুল ইসলামের বাড়ির উত্তরে এবং সরকারি রাস্তার সংলগ্ন পূর্ব দিকে দেড় থেকে ২ শতক খাস জমি জবর দখল করে প্রায় ১৫-১৬ শতক পাট ও পাতি চাষের জমি অপরিকল্পিত ভাবে খনন করে পুকুর করেন। পুকুর খননের সময় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বাঁধা দিলেও পুকুর খননকারী আব্দুস ছাত্তার কারো কোন কথা কর্ণপাত না করে সরকারি নীতিমালা লংঘন করে গভীর গর্তের মাধ্যমে মাছ চাষ করে আসছেন। এতে করে প্রতিবছর বর্ষার পানিতে ভাঙছে সরকারি রাস্তা ও হুমকির মুখে পড়েছে পাড়ে থাকা বাড়ি-ঘর। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই এলাকাবাসী।

ওই গ্রামের ভুক্তভোগী তছলিম উদ্দিন বলেন, তার পুকুরের নিজস্ব কোন পাড় নেই। অন্যের জমিতে পুকুরের পাড় করে ব্যবহার করছেন। বাঁধা দিলেও তিনি তা শুননেন না। গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, বর্ষা এলেই আমাদের আর দুর্ভোগের সীমা থাকে না। ওই পুকুরের পাড় ভেঙ্গে রাস্তা ভেঙ্গে পড়ে তখন আর রিকসা ভ্যান তো দুরে থাক হেটে পর্যন্ত মাঠে যাওয়া যায় না। ওই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন আমার বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। একই ভাবে বর্ষায় বৃষ্টির পানির কারনে একই গ্রামের মোফাজ্জল আকন্দের বাড়িও হুমকির মুখে রয়েছে।

অভিযোগকারীদের প্রধান মাহমদুুন নবী, রেজাউল ইসলাম বলেন, সরকারি রাস্তাটিও প্রতিবছর ভাঙঘনের কারনে ওই এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ওই একমাত্র রাস্তা দিয়ে গ্রামের মানুষ মাঠ থেকে ফসল ঘরে তোলেন। প্রতিবছর ওই রাস্তা ধসে পুকুরে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় ওই রাস্তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে পুকুর মালিককে পুকুরের পাড় সংস্কারসহ রাস্তা মেরামত করে দেওয়ার জন্য বার বার বলা হলেও তিনি তা কর্ণপাত করেন না। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ভাবে অর্থ সংগ্রহ (চাঁদা তুলে) নিজেরাই রাস্তা মেরামত করে কোন ভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। অনেক বলার পর ওই পুকুর মালিক এবার পুকুরের কাঁদা দিয়ে কোনভাবে পাড় বেধেঁছেন। বর্ষা এলইে তা আবার পুকুরের মধ্যে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমরা গ্রামবাসির পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ ইউএনও বরাবর দিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগের প্রায় এক মাসেও তার কোন প্রতিকার মেলেনি।

এ ব্যাপারে পুকুর খননকারী আব্দুস ছাত্তার প্রামানিক বলেন, এবার আমি পাড় বেধেঁ দিয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, প্রতিদিনতো অনেক চিঠি বা অভিযোগ আসে। সব কি মনে রাখা সম্ভব। যখন অভিযোগ আসে তখন সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ইসু করে দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে দেওয়া হয়। এই অভিযোগের বিষয়টি আমার মনে নেই তবে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।