মহাকাশযান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে নমুনা, উদ্বিগ্ন নাসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:৪৬:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০
  • / ১৫৫ Time View

তথ্য প্রযুক্তি ডেস্কঃ পৃথিবী থেকে কয়েক কোটি কিলোমিটার দূরের একটি গ্রহাণু থেকে পাথরের খণ্ড সংগ্রহ করার জন্য একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ওই মহাকাশযানটি এতো বেশি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে ফেলেছে যে এখন তা মহাকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। খবর বিবিসির।

সৌরমণ্ডল কীভাবে গঠিত হয়েছিল তার রহস্য জানার জন্য এই গ্রহাণু থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নাসার মহাকাশযান অসিরিস-রেক্সের কর্মকর্তারা বলছেন, নভোযানটি চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেন্নু নামের একটি গ্রহাণুতে অবতরণ করে। ওই যানটি প্রস্তরখণ্ড সংগ্রহের কাজ সম্ভবত খুব ভালভাবেই সম্পন্ন করেছিল।

তারা বলছেন, নভোযানটি যেসব ছবি পাঠিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি পাথরখণ্ডের বেরিয়ে থাকার কারণে নমুনা সংগ্রহের একটি দিকের দরজা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে এবং সেখান থেকে নমুনার অংশ ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।

মিশন টিম জানিয়েছে, যে যন্ত্র দিয়ে পাথরের খণ্ডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল, হয়ত পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় কিছু প্রস্তরখণ্ড সেই যন্ত্রের ঢাকনার মাঝখানে আটকে পড়েছে। এর ফলে প্রস্তরখণ্ডগুলো যন্ত্র থেকে আবার মহাকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

নাসার বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন, এসব প্রস্তরখণ্ডগুলো নিরাপদে একটি ক্যাপসুলে ঢোকানো যায় কিনা। মিশনের প্রধান ডান্তে লওরেত্তা বলেন, যেসব পাথরখণ্ডের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তার একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশই বেরিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নভোযানটি আনুমানিক প্রায় ৪০০ গ্রাম ওজনের পাথরের খণ্ড সংগ্রহ করেছিল বলে তারা মনে করছেন। মহাকাশযানটি এর থেকে বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে পারতো না। প্রস্তুরখণ্ডগুলোর টুকরো ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

নাসার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী প্রশাসক টমাস জারবুশেন বলেন, সময় এখন মহার্ঘ। নাসা এখন প্রাণপণ চেষ্টা করছে ভেতরে যতটুকু রয়েছে, তা যেন হারিয়ে না যায়। সেগুলোর বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তারা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন।

অসিরিস-রেক্স মিশনের ২০২৩ সালে এসব প্রস্তরখণ্ড পৃথিবীতে নিয়ে আসার কথা। নভোযানের যে অংশে পাথরের টুকরোগুলো সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে সেটি নভোযানের ভেতরে নিরাপদে ঢোকানোর চেষ্টা করা হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশযানটি ঠিক কী পরিমাণ পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল, এর ফলে তা আর সঠিকভাবে জানা সম্ভব হবে না।

টমাস জারবুশেন বলেন, ‌‌‘আমাদের সংগ্রহ ক্যাপসুলটাকে দ্রুত নিরাপদে ভেতরে ঢোকানোর জন্য কাজ করতে হচ্ছে কিন্তু সেটা যদি আমরা খুব তাড়াতাড়ি করতে পারি তাহলেও আমাদের হাতে যথেষ্ট নমুনা এসে পৌঁছাবে। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন কারণ এই পাথরগুলো আমরা মনে করছি বিজ্ঞানীদের হাতে ঐতিহাসিক মুহূর্তের চাবি এনে দেবে।’

বেন্নু গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২০ কোটি মাইল দূরে এবং অসিরিস-রেক্স মঙ্গলবার বেন্নুর বুকে নামে। গ্রহাণুর পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহের সময় প্রচুর ধুলা ও পাথরের টুকরো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে একটি ঝড় তৈরি করা হয়েছিল বলে জানান ডান্তে লওরেত্তা।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সৌরমণ্ডল কীভাবে তৈরি হয়েছিল এই মিশনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে আলোকপাত করতে পারবেন। ২০২৩ সালে নভোযানটি পৃথিবীতে ফিরে আসার পর পাথরের নমুনাগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য অধীর আগ্রহে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করছেন।

বেন্নু গ্রহাণুর পাথরের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সৌরমণ্ডল গঠনের অজানা রহস্য। এই নভোযানটি নাসা পাঠিয়েছিল ২০১৬ সালে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

মহাকাশযান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে নমুনা, উদ্বিগ্ন নাসা

Update Time : ০৩:৪৬:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০

তথ্য প্রযুক্তি ডেস্কঃ পৃথিবী থেকে কয়েক কোটি কিলোমিটার দূরের একটি গ্রহাণু থেকে পাথরের খণ্ড সংগ্রহ করার জন্য একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ওই মহাকাশযানটি এতো বেশি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে ফেলেছে যে এখন তা মহাকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। খবর বিবিসির।

সৌরমণ্ডল কীভাবে গঠিত হয়েছিল তার রহস্য জানার জন্য এই গ্রহাণু থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নাসার মহাকাশযান অসিরিস-রেক্সের কর্মকর্তারা বলছেন, নভোযানটি চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেন্নু নামের একটি গ্রহাণুতে অবতরণ করে। ওই যানটি প্রস্তরখণ্ড সংগ্রহের কাজ সম্ভবত খুব ভালভাবেই সম্পন্ন করেছিল।

তারা বলছেন, নভোযানটি যেসব ছবি পাঠিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি পাথরখণ্ডের বেরিয়ে থাকার কারণে নমুনা সংগ্রহের একটি দিকের দরজা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে এবং সেখান থেকে নমুনার অংশ ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।

মিশন টিম জানিয়েছে, যে যন্ত্র দিয়ে পাথরের খণ্ডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল, হয়ত পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় কিছু প্রস্তরখণ্ড সেই যন্ত্রের ঢাকনার মাঝখানে আটকে পড়েছে। এর ফলে প্রস্তরখণ্ডগুলো যন্ত্র থেকে আবার মহাকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

নাসার বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন, এসব প্রস্তরখণ্ডগুলো নিরাপদে একটি ক্যাপসুলে ঢোকানো যায় কিনা। মিশনের প্রধান ডান্তে লওরেত্তা বলেন, যেসব পাথরখণ্ডের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তার একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশই বেরিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নভোযানটি আনুমানিক প্রায় ৪০০ গ্রাম ওজনের পাথরের খণ্ড সংগ্রহ করেছিল বলে তারা মনে করছেন। মহাকাশযানটি এর থেকে বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে পারতো না। প্রস্তুরখণ্ডগুলোর টুকরো ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

নাসার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী প্রশাসক টমাস জারবুশেন বলেন, সময় এখন মহার্ঘ। নাসা এখন প্রাণপণ চেষ্টা করছে ভেতরে যতটুকু রয়েছে, তা যেন হারিয়ে না যায়। সেগুলোর বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তারা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন।

অসিরিস-রেক্স মিশনের ২০২৩ সালে এসব প্রস্তরখণ্ড পৃথিবীতে নিয়ে আসার কথা। নভোযানের যে অংশে পাথরের টুকরোগুলো সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে সেটি নভোযানের ভেতরে নিরাপদে ঢোকানোর চেষ্টা করা হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশযানটি ঠিক কী পরিমাণ পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল, এর ফলে তা আর সঠিকভাবে জানা সম্ভব হবে না।

টমাস জারবুশেন বলেন, ‌‌‘আমাদের সংগ্রহ ক্যাপসুলটাকে দ্রুত নিরাপদে ভেতরে ঢোকানোর জন্য কাজ করতে হচ্ছে কিন্তু সেটা যদি আমরা খুব তাড়াতাড়ি করতে পারি তাহলেও আমাদের হাতে যথেষ্ট নমুনা এসে পৌঁছাবে। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন কারণ এই পাথরগুলো আমরা মনে করছি বিজ্ঞানীদের হাতে ঐতিহাসিক মুহূর্তের চাবি এনে দেবে।’

বেন্নু গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২০ কোটি মাইল দূরে এবং অসিরিস-রেক্স মঙ্গলবার বেন্নুর বুকে নামে। গ্রহাণুর পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহের সময় প্রচুর ধুলা ও পাথরের টুকরো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে একটি ঝড় তৈরি করা হয়েছিল বলে জানান ডান্তে লওরেত্তা।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সৌরমণ্ডল কীভাবে তৈরি হয়েছিল এই মিশনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে আলোকপাত করতে পারবেন। ২০২৩ সালে নভোযানটি পৃথিবীতে ফিরে আসার পর পাথরের নমুনাগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য অধীর আগ্রহে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করছেন।

বেন্নু গ্রহাণুর পাথরের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সৌরমণ্ডল গঠনের অজানা রহস্য। এই নভোযানটি নাসা পাঠিয়েছিল ২০১৬ সালে।