মনে পড়ে করোনার কষ্টের দিন গুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:২৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২
  • / ২৩১ Time View

মহসিন হোসেন:

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাণঘাতী থাবায় আতঙ্কিত ছিল মানুষ।দেশে প্রতিদিন বাড়ছিল করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে বাসা-বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। সারা দেশে ছিল লকডাউন এতেই বিপাকে পড়েছিল মানুষ। চাকরি চলে যাওয়া আর করোনায় আক্রান্ত মানুষের কষ্ট না বলার মতো। বলছি ২০২০ সালে দেশে যখন করোনা আসলো তখনকার অবস্থার কথা।

“নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু কথা” , গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম ২০২০ সালে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে। ছুটি শেষে ঢাকা আসার পরপরই শুরু হলো জ্বর, ঠান্ডা। ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপের দিকে যেতে লাগলো। প্রচণ্ড গলা ব্যথা, আর গলা ফুলে লাল হয়ে গিয়েছিল, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা তো আছেই। ছিল করোনার সব লক্ষণই। মনে হতো গলায় কাটা আটকিয়ে আছে। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে পেশাগত কাজে যেতে হয়েছে অনেক যায়গাতেই। সেখান থেকেও হতে পারি অসুস্থ।

বিভিন্ন ঔষধ সেবন করলাম কিন্তু ভালো হলো না। করোনা টেস্ট করার পর জানলাম অবস্থা বেশি ভালো না, ভালো চিকিৎসা দরকার, তবে হসপিটাল থেকে তখনকার সময় বাসায় উত্তম ছিল। তাই বাসায় চিকিৎসা শুরু করলাম। টেস্ট করার পর ২ সপ্তাহে পরে করোনা নেগেটিভ এসেছে।

তবে এই ১৫ দিনের কষ্ট গুলো শেয়ার করতে গেলে চোঁখের পানি চলে আসবে। তবে এর মাঝে ৩ দিন তো অবস্থা এমন ছিল যে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ৩ দিন রাতে এমন হতো যে আমি ঘুমাবো না,ঘুমালে সকালে আমি হয়ত আর বেঁচে উঠবো না, লাশ পরে থাকবে এভাবেই ৩ দিন গেছে। মৃত্যুর জন্য মানসিক সকল প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। হাটার মতো শক্তি হারিয়ে ছিলাম। দেওয়াল ধরে ধরে হাটছি। যন্ত্রণায় কখনো কাঁদি নাই কিন্তু অটোমেটিক চোঁখের পানি পরতো। কত কষ্ট আর যন্ত্রণায় ছিলাম তা আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। বেশি কষ্ট ছিল গলা ব্যথা।

অপ্রিয় হলেও সত্য হলো ঐ দুঃসময়ে আমার রুমে কেউই পাশে ছিল না। একাই কষ্টের দিনগুলো কাটছে। বাবা- মা গ্রামের বাড়িতে ছিল, তারাও জানতো না এতটাই অসুস্থ ছিলাম। এমন একটা সময়ই ছিল যে নিজের মা মারা গেলেও সন্তান কাছে আসে নাই, লাশ পরে থাকতে দেখে দাপন করেছে অন্য মানুষ।

তবে মোবাইলে খোঁজ খবর নিয়েছেন সবাই। তখন আমার পাশে ছিল মোবাইল। মোবাইল থাকায় একা মনে হয়নি। তবে মাঝে মাঝে মোবাইল ছিল আমার জন্য বিরক্তিকর। কেউ কল দিল বিরক্ত মনে করতাম, গলা এত ব্যথা কথা বলতে কষ্ট হতো। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। বন্ধুরা ,সাংবাদিক, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ,ডাক্তার, বড় ভাই, ছোটভাইসহ সবাই মোবাইলে খোঁজ খবর নিতেন। অনেকেই দোয়া করেছেন, ফেসবুকেও দোয়া চেয়ে পোস্ট করেছেন সকলের প্রতিই কৃতজ্ঞ।

যা হোক চিকিৎসার পরে কষ্টের দিনের ইতি হয়েছে। বাস্তব দুনিয়াটা যে কত কঠিন তা তখন বুঝতে পেরেছি।
দোয়া করি সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

লেখক : সম্পাদক, বিডি সমাচার ২৪ ডটকম।

Please Share This Post in Your Social Media

মনে পড়ে করোনার কষ্টের দিন গুলো

Update Time : ১১:২৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২

মহসিন হোসেন:

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাণঘাতী থাবায় আতঙ্কিত ছিল মানুষ।দেশে প্রতিদিন বাড়ছিল করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে বাসা-বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। সারা দেশে ছিল লকডাউন এতেই বিপাকে পড়েছিল মানুষ। চাকরি চলে যাওয়া আর করোনায় আক্রান্ত মানুষের কষ্ট না বলার মতো। বলছি ২০২০ সালে দেশে যখন করোনা আসলো তখনকার অবস্থার কথা।

“নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু কথা” , গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম ২০২০ সালে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে। ছুটি শেষে ঢাকা আসার পরপরই শুরু হলো জ্বর, ঠান্ডা। ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপের দিকে যেতে লাগলো। প্রচণ্ড গলা ব্যথা, আর গলা ফুলে লাল হয়ে গিয়েছিল, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা তো আছেই। ছিল করোনার সব লক্ষণই। মনে হতো গলায় কাটা আটকিয়ে আছে। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে পেশাগত কাজে যেতে হয়েছে অনেক যায়গাতেই। সেখান থেকেও হতে পারি অসুস্থ।

বিভিন্ন ঔষধ সেবন করলাম কিন্তু ভালো হলো না। করোনা টেস্ট করার পর জানলাম অবস্থা বেশি ভালো না, ভালো চিকিৎসা দরকার, তবে হসপিটাল থেকে তখনকার সময় বাসায় উত্তম ছিল। তাই বাসায় চিকিৎসা শুরু করলাম। টেস্ট করার পর ২ সপ্তাহে পরে করোনা নেগেটিভ এসেছে।

তবে এই ১৫ দিনের কষ্ট গুলো শেয়ার করতে গেলে চোঁখের পানি চলে আসবে। তবে এর মাঝে ৩ দিন তো অবস্থা এমন ছিল যে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ৩ দিন রাতে এমন হতো যে আমি ঘুমাবো না,ঘুমালে সকালে আমি হয়ত আর বেঁচে উঠবো না, লাশ পরে থাকবে এভাবেই ৩ দিন গেছে। মৃত্যুর জন্য মানসিক সকল প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। হাটার মতো শক্তি হারিয়ে ছিলাম। দেওয়াল ধরে ধরে হাটছি। যন্ত্রণায় কখনো কাঁদি নাই কিন্তু অটোমেটিক চোঁখের পানি পরতো। কত কষ্ট আর যন্ত্রণায় ছিলাম তা আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। বেশি কষ্ট ছিল গলা ব্যথা।

অপ্রিয় হলেও সত্য হলো ঐ দুঃসময়ে আমার রুমে কেউই পাশে ছিল না। একাই কষ্টের দিনগুলো কাটছে। বাবা- মা গ্রামের বাড়িতে ছিল, তারাও জানতো না এতটাই অসুস্থ ছিলাম। এমন একটা সময়ই ছিল যে নিজের মা মারা গেলেও সন্তান কাছে আসে নাই, লাশ পরে থাকতে দেখে দাপন করেছে অন্য মানুষ।

তবে মোবাইলে খোঁজ খবর নিয়েছেন সবাই। তখন আমার পাশে ছিল মোবাইল। মোবাইল থাকায় একা মনে হয়নি। তবে মাঝে মাঝে মোবাইল ছিল আমার জন্য বিরক্তিকর। কেউ কল দিল বিরক্ত মনে করতাম, গলা এত ব্যথা কথা বলতে কষ্ট হতো। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। বন্ধুরা ,সাংবাদিক, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ,ডাক্তার, বড় ভাই, ছোটভাইসহ সবাই মোবাইলে খোঁজ খবর নিতেন। অনেকেই দোয়া করেছেন, ফেসবুকেও দোয়া চেয়ে পোস্ট করেছেন সকলের প্রতিই কৃতজ্ঞ।

যা হোক চিকিৎসার পরে কষ্টের দিনের ইতি হয়েছে। বাস্তব দুনিয়াটা যে কত কঠিন তা তখন বুঝতে পেরেছি।
দোয়া করি সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

লেখক : সম্পাদক, বিডি সমাচার ২৪ ডটকম।