ভেঙে ফেলা হচ্ছে পেরুর ‘দ্যা ওয়াল অব শেম’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:৪৩:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১০৮ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার এমন উদাহরণ হয়তো বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায়না। যেমনটা রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে। রীতিমতো দেয়াল তৈরি করে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে ধনী-গরিবকে। যা দ্যা ওয়াল অব শেম নামে পরিচিত। লিমা শহরে অবস্থিত চার দশক আগে নির্মিত সেই দেয়াল এবার ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সমাজে ধনী-গরিবের বিভাজন যুগ যুগান্তরের। যদিও দুই শ্রেণির সেই বিভাজনে দৃশ্যমান কোনো সীমারেখা নেই। আশির দশকে সিমেন্ট, পাথর আর কাঁটাতার দিয়ে তৈরি করা হয় বিভাজনের তেমনই এক দেয়াল ‘দ্যা ওয়াল অব শেম’ বা লজ্জার প্রাচীর।

মাওবাদীদের উত্থানের সময় জমির দখল ও নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাতে পেরুর লিমার লা মোলিনা জেলায় নেয়া হয়েছিল এই প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ। তিন মিটার উচ্চতার এই দেয়ালটির দৈর্ঘ্য সাড়ে চার কিলোমিটার।

এই সময় দেয়াল পার করা অনুমতি ছিল না লা মোলিনা জেলার দরিদ্র বাসিন্দাদের। সামাজিক বৈষম্য প্রকটভাবে ফুটিয়ে তোলা দেয়ালটি নিয়ে চার দশকের আইনি লড়াই শেষে সেই লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে লাতিন দেশটি। এরই মধ্যে ভাঙা শুরু হয়েছে ধনী-গরিবকে আলাদা করে রাখা প্রাচীরটি।

লা ফ্লোরিডা দে ভিলা মারিয়া দেল ত্রিউনফোর প্রেসিডেন্ট জুলিও সিজার ক্যারিওন বলেন, এটি চরম বৈষম্যমূলক। আমরা পেরুভিয়ানরা মনে করি সবাই এক। একটি প্রাচীর দিয়ে আমাদের বিভক্ত করা হয়েছে। অন্য কোনো দেশে এমন নজির নেই। এটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় এখন দেয়ালটি তুলে নেয়া হচ্ছে।

দেয়ালের একপাশে বাস উঁচু শ্রেণির, যেখানে বিলাসবহুল বাড়ি, সুইমিংপুলসহ রয়েছে আধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা। অন্যপাশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যারা নুন্যতম মৌলিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।

দেশটির সাংবিধানিক আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গুস্তাভো গুতিরেজ বলেন, সাংবিধানিক আদালতের রায় প্রমাণ করে, দেয়ালটি অসাংবিধানিক। লা মেলিনা পৌরসভার কর্মীরা সেটি অপসারণ শুরু করেছে। প্রতিবেশীদের মাঝে এমন বিভাজনের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। এটি দুটি গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে আলাদা করে দেয়।

এ বিষয়ে পেরুর বাসিন্দারা বলছেন, এই বিভাজন রেখা মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে দেশটি।

তবে আদালতের নির্দেশ মেনে দেয়াল ভেঙে ফেলা হলেও ধনী-দরিদ্রের অদৃশ্য প্রাচীর আদৌও ভাঙবে কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ভেঙে ফেলা হচ্ছে পেরুর ‘দ্যা ওয়াল অব শেম’

Update Time : ০৩:৪৩:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার এমন উদাহরণ হয়তো বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায়না। যেমনটা রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে। রীতিমতো দেয়াল তৈরি করে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে ধনী-গরিবকে। যা দ্যা ওয়াল অব শেম নামে পরিচিত। লিমা শহরে অবস্থিত চার দশক আগে নির্মিত সেই দেয়াল এবার ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সমাজে ধনী-গরিবের বিভাজন যুগ যুগান্তরের। যদিও দুই শ্রেণির সেই বিভাজনে দৃশ্যমান কোনো সীমারেখা নেই। আশির দশকে সিমেন্ট, পাথর আর কাঁটাতার দিয়ে তৈরি করা হয় বিভাজনের তেমনই এক দেয়াল ‘দ্যা ওয়াল অব শেম’ বা লজ্জার প্রাচীর।

মাওবাদীদের উত্থানের সময় জমির দখল ও নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাতে পেরুর লিমার লা মোলিনা জেলায় নেয়া হয়েছিল এই প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ। তিন মিটার উচ্চতার এই দেয়ালটির দৈর্ঘ্য সাড়ে চার কিলোমিটার।

এই সময় দেয়াল পার করা অনুমতি ছিল না লা মোলিনা জেলার দরিদ্র বাসিন্দাদের। সামাজিক বৈষম্য প্রকটভাবে ফুটিয়ে তোলা দেয়ালটি নিয়ে চার দশকের আইনি লড়াই শেষে সেই লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে লাতিন দেশটি। এরই মধ্যে ভাঙা শুরু হয়েছে ধনী-গরিবকে আলাদা করে রাখা প্রাচীরটি।

লা ফ্লোরিডা দে ভিলা মারিয়া দেল ত্রিউনফোর প্রেসিডেন্ট জুলিও সিজার ক্যারিওন বলেন, এটি চরম বৈষম্যমূলক। আমরা পেরুভিয়ানরা মনে করি সবাই এক। একটি প্রাচীর দিয়ে আমাদের বিভক্ত করা হয়েছে। অন্য কোনো দেশে এমন নজির নেই। এটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় এখন দেয়ালটি তুলে নেয়া হচ্ছে।

দেয়ালের একপাশে বাস উঁচু শ্রেণির, যেখানে বিলাসবহুল বাড়ি, সুইমিংপুলসহ রয়েছে আধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা। অন্যপাশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যারা নুন্যতম মৌলিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।

দেশটির সাংবিধানিক আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গুস্তাভো গুতিরেজ বলেন, সাংবিধানিক আদালতের রায় প্রমাণ করে, দেয়ালটি অসাংবিধানিক। লা মেলিনা পৌরসভার কর্মীরা সেটি অপসারণ শুরু করেছে। প্রতিবেশীদের মাঝে এমন বিভাজনের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। এটি দুটি গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে আলাদা করে দেয়।

এ বিষয়ে পেরুর বাসিন্দারা বলছেন, এই বিভাজন রেখা মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে দেশটি।

তবে আদালতের নির্দেশ মেনে দেয়াল ভেঙে ফেলা হলেও ধনী-দরিদ্রের অদৃশ্য প্রাচীর আদৌও ভাঙবে কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।