ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২১ Time View

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। সরকারের এ ঋণ গ্রহণ মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বাণিজিক ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করেছে ১৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। এতে নিট ঋণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেখানে ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি ছিল ১২০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ কমে যাওয়া, আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। অবশ্য ঋণের সবই নেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তারা আরও বলছেন, সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ না বেড়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা কমছে। এর মধ্যে আবার ডলারের উচ্চ দরের কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারের খরচ অনেক বেড়েছে। আবার আশানুরূপ বিদেশি ঋণও আসছে না। যে কারণে প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকারকে কিছু ঋণ নিতে হচ্ছে। অবশ্য সরকারের এ ঋণ চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় খুব কম।

সঞ্চয়পত্রের চেয়ে এখন ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদহার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার বিল বন্ডের সুদ আয়ের বিপরীতে কোনো কর দিতে হয় না। এখানে কেনারও নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। যে কারণে এখন বিনিয়োগকারীদের অনেকে সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা তুলে বিল ও বন্ডে রাখছেন। ফলে অন্য সব ব্যবস্থার চেয়ে এখানে সুদহার বাড়ছে।

বর্তমানে ৯১, ১৮২ ও ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১.৩৫ শতাংশ থেকে ১১.৫০ শতাংশ। এছাড়া ২ থেকে ২০ বছর মেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগ করে ১২ শতাংশ থেকে ১২.২৫ শতাংশ সুদ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে সাধারণ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সুদ নিতে পারছে সর্বোচ্চ ১৩.৫৫ শতাংশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আলোচ্য সময়ে সরকারের ব্যাংকঋণের নিট পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

Update Time : ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। সরকারের এ ঋণ গ্রহণ মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বাণিজিক ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করেছে ১৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। এতে নিট ঋণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেখানে ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ স্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি ছিল ১২০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ কমে যাওয়া, আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। অবশ্য ঋণের সবই নেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তারা আরও বলছেন, সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ না বেড়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা কমছে। এর মধ্যে আবার ডলারের উচ্চ দরের কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সরকারের খরচ অনেক বেড়েছে। আবার আশানুরূপ বিদেশি ঋণও আসছে না। যে কারণে প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকারকে কিছু ঋণ নিতে হচ্ছে। অবশ্য সরকারের এ ঋণ চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় খুব কম।

সঞ্চয়পত্রের চেয়ে এখন ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদহার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার বিল বন্ডের সুদ আয়ের বিপরীতে কোনো কর দিতে হয় না। এখানে কেনারও নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। যে কারণে এখন বিনিয়োগকারীদের অনেকে সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা তুলে বিল ও বন্ডে রাখছেন। ফলে অন্য সব ব্যবস্থার চেয়ে এখানে সুদহার বাড়ছে।

বর্তমানে ৯১, ১৮২ ও ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১.৩৫ শতাংশ থেকে ১১.৫০ শতাংশ। এছাড়া ২ থেকে ২০ বছর মেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগ করে ১২ শতাংশ থেকে ১২.২৫ শতাংশ সুদ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে সাধারণ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সুদ নিতে পারছে সর্বোচ্চ ১৩.৫৫ শতাংশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আলোচ্য সময়ে সরকারের ব্যাংকঋণের নিট পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে।