বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতি এ আমাদের কেমন সম্মান?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:২২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
  • / ১৪৭ Time View
linkedin sharing button
রহমান মৃধা:

বাসা বিক্রি করতে নোটিস দিয়েছি। আগে বাসায় ছিলাম চার জন, এখন থাকি তিন জন। ছেলে জনাথান বাসা থেকে মুভ করেছে। বর্তমানে প্রতিমাসে বাসার জন্য মর্গেজসহ খরচ পঁচিশ হাজার ক্রোনার (দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা)। তাই খরচ কমাতে এমনটি সিদ্ধান্তে এসেছি।

তবে পড়েছি নতুন বিপদে। কোথায় এবং কখন নতুন বাসা কিনব সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। প্রতিদিন খোঁজ খবর নিচ্ছি। এটা পছন্দ তো সেটা পছন্দ নয়। এখন যদি হঠাৎ বাসা বিক্রি হয়ে যায় তখন কী হবে? পড়েছি সে ভাবনায়!

সুইডেনে বাসা কেনা, বাসা ছাড়া, বাড়ি কেনা, বাড়ি ছাড়া নতুন কিছু না। আমি নিজে অনেকবার বাসা, বাড়ি কিনেছি এবং ছেড়েছি। অতীতের তুলনায় এবার কাজটি সহজ হবার কথা। কথায় বলে প্রাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট। কিন্তু এবার কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছি না।

অনেকে ভাবতে পারে এটা কোন ব্যাপার হলো? আমি নিয়মিত লিখি নানা বিষয়ের ওপর। ভাবলাম দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম নিয়ে লিখলে ক্ষতি কী। তাছাড়া শেয়ার ভ্যালুর একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মুভ করেছি বহুবার। এমন কি এক দেশ থেকে আরেক দেশে মুভ করেছি। এ সত্বেও এবারের মুভমেন্ট বেশ জটিলতার সৃষ্টি করেছে। কারণ মুভ করার আগে কিছু ক্রাইটেরিয়া প্রথমেই সেট করেছি মনের মধ্যে।

মনের অজান্তে ডিমান্ড বা চাহিদার মান একটু ঊর্ধ্বে তুলেছি, যার ফলে মনের ওপর চাপ বেড়েছে। অতীতে মুভ করা কঠিন হলেও সহজ করে চিন্তা করেছি। যেমন সুইডেনে পড়াশোনা করতে আসাটা পুরো জীবনের জন্য একটি বিরাট পরিবর্তন ছিল, তারপরও এমনটি মনে হয়নি।

আবার চাকরিতে বদলি হয়েছি, মুভ করতে হবে। ছেলে-মেয়ে টেনিস খেলে বিশ্বজুড়ে; বিধায় যোগাযোগ যেন এয়ারপোর্টের সাথে ভালো থাকে, স্কুল যেন কাছে হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো খেয়াল রেখে মুভ করেছি।

এখন বিষয়টি হয়েছে অন্য রকম। এখন কোন অজুহাত নয়, শুধুমাত্র আমার আর আমার সহধর্মীনির দিকগুলো ভেবে আমাদের এক্সপেক্টেশন কী, তার ওপর বেজ করে মুভ করতে হবে। এটাই হয়েছে অতীতের তুলনায় ভিন্ন আর এটাই জটিলতার কারণ।

আমার সহধর্মীনি মারিয়া কাজ নিয়েছে স্টকহোম শহরের বাইরে। যদিও অতীতের চেয়ে কম সময়ে সে বাসা থেকে কাজে যাওয়া আসা করতে পারছে। তাকে গাড়ি ব্যবহার করতে হয় কিন্তু সে এটা পছন্দ করছে না পরিবেশ দুষিত হবে এই ভেবে।

অন্যদিকে যদি সে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে তবে তাকে কাজে যেতে আসতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। অথচ গাড়িতে লাগছে মাত্র চল্লিশ মিনিট। মারিয়ার পাবলিক ট্রাভেল খরচ মাসে এক হাজার সুইডিশ ক্রোনার। গাড়ির পিছে খরচ মাসে ছয় হাজার ক্রোনার। বছরের শেষে ট্যাক্স রিডাকশন ফেরত পাবে ছয় হাজারের ২০% সময় সেভ হবার কারণে।

অন্যদিকে গাড়ির কারণে পরিবেশ যে পরিমাণ দুষিত হবে সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে, তবে কিছু করা হচ্ছে না। তাছাড়া গাড়ি অতীতে যেমন দরকার ছিল এখন তেমনটি নয়, যদি কাজের কারণে ব্যবহার না করা হয়। আমাদের প্লান বাসা কিনব যা বর্তমানের চেয়ে সব দিক দিয়ে মনপূত হবে, একই সাথে খরচ হবে কম।

অন্যবারের তুলনায় একটি বিষয় অ্যাড করেছি সেটা হলো বাসার সামনে এবং পেছনে থাকতে হবে সি-ভিউ এবং ন্যাচার। এতদিন মুভ করেছি প্রয়োজনের তাগিদে আর এবার মুভ করছি বিলাসিতার কারণে। এটাই হচ্ছে আমার সমস্যার মূল কারণ।

সমস্যা জেনেছি এখন সমস্যা আর সমস্যা নেই, কীভাবে তার সমাধান করব সেটাই এখন এক্টিভিটিস। আমার শখ সাগরকে সামনে রেখে বাইরের পরিবেশে গাছপালার নিচে রান্না করা, বারবিকিউ করা। গাড়ি থাকবে তবুও ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেখানে ট্রাফিক থাকবে না আবার সব কিছু হাঁটার দূরত্বের মধ্যে থাকতে হবে।

এদিকে সময় কম কারণ বাসা যদি তিন মাসের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় তখন উঠব কোথায়? আবার হুট করে যদি সব কিছু যাচাই বাছাই না করে কিনি তবে নতুন করে আবারও মুভ করতে হতে পারে।

এদিকে রয়েছে অল্টারনেটিভ প্লান সেটা হলো যদি পানির ধারে বাসা কেনা সম্ভব না হয় তবে একটি সামার হাউজ কিনব সুইডেন বা স্পেনে। এখন কথায় বলে “cut your coat according to your cloth” মানে আয় বুঝে ব্যয় কর।

এ বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিয়েছি আমাদের ঋণ নেয়ার লিমিট কত। চলছে পোজেক্টের কাজ, সময় আছে হাতে দুই মাস, কী মনে হয় সমাধান করতে পারব কি? ও ভালো কথা করোনার কারণে এমনও হতে পারে বাসা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না বা যে টাকা চেয়েছি সেটাতে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তখন ব্রোকারকে কোন ফি দিতে হবে না।

কিন্তু যদি ব্রোকার বিক্রি করতে পারে আর অন্যদিকে আমি যদি কিনতে না পারি তখন জরিমানা দিতে হবে ৭০ হাজার ক্রোনার যা চুক্তিতে রয়েছে। হয়ত অনেকেই ভাবতে পারে মানুষের খাবার নেই, ওষুধ নেই, কত সমস্যা। আর আপনি সমস্যা তৈরি করছেন? খুবই যুক্তিপূর্ণ, সেই কারণেই লিখাটি শেয়ার করা।

এখন ভাবুন রাজ পরিবারের সমস্যাগুলো নিয়ে বা আমার মত কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন নানা সমস্যায় জড়িত যা হয়ত অন্ন, বস্ত্র নিয়ে নয়, হতে পারে ভালোবাসার সমস্যা, বিলাসবহুল জীবনের সমস্যা। যেমন অনেকে সারা রাত নেশা আর জুয়ায় মেতে আছে, দিন ভরে ঘুমোচ্ছে, মাসের পর মাস বছরের পর বছর।

গত এক বছর যাবত গোটা বিশ্বের মানুষ যে ভোগান্তি এবং ত্যাগ স্বীকার করছে করোনা মহামারীতে, তারাই জানে সে যন্ত্রণা এবং বেদনার দাহ্য। আপনজনকে হারানোর বেদনা সব সময় পিঁড়াদায়ক; যা ঘটেছিল ১৯৭১ সালে।

আমরা স্বাধীন হলাম ঠিকই কিন্তু হারালাম রাশেদ ভাইকে। প্রিয় ভাই জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করলেন অথচ উপভোগ করতে পারলেন না। আজ আমরা যারা বেঁচে আছি তারা “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলব না” গানটি মনে করিয়ে দেয় তাদের কথা।

গতকাল একটি দেয়ালে সাত বীরশ্রেষ্ঠদের ছবির পাশে জুতোর বিজ্ঞাপন দেখলাম, আমার বলার কিছু ছিল না, দূরপরবাস থেকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম! ১৯৮৪ সালে গ্রামে বিদ্যুৎ এল তবে চলে গেল হৃদয় অন্ধকার করে আমার ছোট ভাই সেলিম।

এ বছরে (২০২০ সাল) কোভিড-১৯ এসে ভয় আর আতঙ্কের সঙ্গে কেড়ে নিল লাখো মানুষের প্রাণ। শুধু নিজের জায়গা থেকে যদি আমরা দেখি মনে হবে, আমার সমস্যাই সবচেয়ে জটিল কিন্তু ভাবুন অন্যকে নিয়েও।

আপনি বা আমি জানি না কী সমস্যা নিয়ে অন্যরা জ্বলে পুড়ে মরছে! আমার ভুবনে দুঃখের মেলা তুমি দেখাও সহানুভূতি, আমি হলাম ভুক্তভোগী তুমি দিলে সান্ত্বনা। এমনটিই হবার কথা কারণ মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতি এ আমাদের কেমন সম্মান?

Update Time : ১১:২২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
linkedin sharing button
রহমান মৃধা:

বাসা বিক্রি করতে নোটিস দিয়েছি। আগে বাসায় ছিলাম চার জন, এখন থাকি তিন জন। ছেলে জনাথান বাসা থেকে মুভ করেছে। বর্তমানে প্রতিমাসে বাসার জন্য মর্গেজসহ খরচ পঁচিশ হাজার ক্রোনার (দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা)। তাই খরচ কমাতে এমনটি সিদ্ধান্তে এসেছি।

তবে পড়েছি নতুন বিপদে। কোথায় এবং কখন নতুন বাসা কিনব সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। প্রতিদিন খোঁজ খবর নিচ্ছি। এটা পছন্দ তো সেটা পছন্দ নয়। এখন যদি হঠাৎ বাসা বিক্রি হয়ে যায় তখন কী হবে? পড়েছি সে ভাবনায়!

সুইডেনে বাসা কেনা, বাসা ছাড়া, বাড়ি কেনা, বাড়ি ছাড়া নতুন কিছু না। আমি নিজে অনেকবার বাসা, বাড়ি কিনেছি এবং ছেড়েছি। অতীতের তুলনায় এবার কাজটি সহজ হবার কথা। কথায় বলে প্রাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট। কিন্তু এবার কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছি না।

অনেকে ভাবতে পারে এটা কোন ব্যাপার হলো? আমি নিয়মিত লিখি নানা বিষয়ের ওপর। ভাবলাম দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম নিয়ে লিখলে ক্ষতি কী। তাছাড়া শেয়ার ভ্যালুর একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মুভ করেছি বহুবার। এমন কি এক দেশ থেকে আরেক দেশে মুভ করেছি। এ সত্বেও এবারের মুভমেন্ট বেশ জটিলতার সৃষ্টি করেছে। কারণ মুভ করার আগে কিছু ক্রাইটেরিয়া প্রথমেই সেট করেছি মনের মধ্যে।

মনের অজান্তে ডিমান্ড বা চাহিদার মান একটু ঊর্ধ্বে তুলেছি, যার ফলে মনের ওপর চাপ বেড়েছে। অতীতে মুভ করা কঠিন হলেও সহজ করে চিন্তা করেছি। যেমন সুইডেনে পড়াশোনা করতে আসাটা পুরো জীবনের জন্য একটি বিরাট পরিবর্তন ছিল, তারপরও এমনটি মনে হয়নি।

আবার চাকরিতে বদলি হয়েছি, মুভ করতে হবে। ছেলে-মেয়ে টেনিস খেলে বিশ্বজুড়ে; বিধায় যোগাযোগ যেন এয়ারপোর্টের সাথে ভালো থাকে, স্কুল যেন কাছে হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো খেয়াল রেখে মুভ করেছি।

এখন বিষয়টি হয়েছে অন্য রকম। এখন কোন অজুহাত নয়, শুধুমাত্র আমার আর আমার সহধর্মীনির দিকগুলো ভেবে আমাদের এক্সপেক্টেশন কী, তার ওপর বেজ করে মুভ করতে হবে। এটাই হয়েছে অতীতের তুলনায় ভিন্ন আর এটাই জটিলতার কারণ।

আমার সহধর্মীনি মারিয়া কাজ নিয়েছে স্টকহোম শহরের বাইরে। যদিও অতীতের চেয়ে কম সময়ে সে বাসা থেকে কাজে যাওয়া আসা করতে পারছে। তাকে গাড়ি ব্যবহার করতে হয় কিন্তু সে এটা পছন্দ করছে না পরিবেশ দুষিত হবে এই ভেবে।

অন্যদিকে যদি সে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে তবে তাকে কাজে যেতে আসতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। অথচ গাড়িতে লাগছে মাত্র চল্লিশ মিনিট। মারিয়ার পাবলিক ট্রাভেল খরচ মাসে এক হাজার সুইডিশ ক্রোনার। গাড়ির পিছে খরচ মাসে ছয় হাজার ক্রোনার। বছরের শেষে ট্যাক্স রিডাকশন ফেরত পাবে ছয় হাজারের ২০% সময় সেভ হবার কারণে।

অন্যদিকে গাড়ির কারণে পরিবেশ যে পরিমাণ দুষিত হবে সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে, তবে কিছু করা হচ্ছে না। তাছাড়া গাড়ি অতীতে যেমন দরকার ছিল এখন তেমনটি নয়, যদি কাজের কারণে ব্যবহার না করা হয়। আমাদের প্লান বাসা কিনব যা বর্তমানের চেয়ে সব দিক দিয়ে মনপূত হবে, একই সাথে খরচ হবে কম।

অন্যবারের তুলনায় একটি বিষয় অ্যাড করেছি সেটা হলো বাসার সামনে এবং পেছনে থাকতে হবে সি-ভিউ এবং ন্যাচার। এতদিন মুভ করেছি প্রয়োজনের তাগিদে আর এবার মুভ করছি বিলাসিতার কারণে। এটাই হচ্ছে আমার সমস্যার মূল কারণ।

সমস্যা জেনেছি এখন সমস্যা আর সমস্যা নেই, কীভাবে তার সমাধান করব সেটাই এখন এক্টিভিটিস। আমার শখ সাগরকে সামনে রেখে বাইরের পরিবেশে গাছপালার নিচে রান্না করা, বারবিকিউ করা। গাড়ি থাকবে তবুও ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেখানে ট্রাফিক থাকবে না আবার সব কিছু হাঁটার দূরত্বের মধ্যে থাকতে হবে।

এদিকে সময় কম কারণ বাসা যদি তিন মাসের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় তখন উঠব কোথায়? আবার হুট করে যদি সব কিছু যাচাই বাছাই না করে কিনি তবে নতুন করে আবারও মুভ করতে হতে পারে।

এদিকে রয়েছে অল্টারনেটিভ প্লান সেটা হলো যদি পানির ধারে বাসা কেনা সম্ভব না হয় তবে একটি সামার হাউজ কিনব সুইডেন বা স্পেনে। এখন কথায় বলে “cut your coat according to your cloth” মানে আয় বুঝে ব্যয় কর।

এ বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিয়েছি আমাদের ঋণ নেয়ার লিমিট কত। চলছে পোজেক্টের কাজ, সময় আছে হাতে দুই মাস, কী মনে হয় সমাধান করতে পারব কি? ও ভালো কথা করোনার কারণে এমনও হতে পারে বাসা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না বা যে টাকা চেয়েছি সেটাতে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তখন ব্রোকারকে কোন ফি দিতে হবে না।

কিন্তু যদি ব্রোকার বিক্রি করতে পারে আর অন্যদিকে আমি যদি কিনতে না পারি তখন জরিমানা দিতে হবে ৭০ হাজার ক্রোনার যা চুক্তিতে রয়েছে। হয়ত অনেকেই ভাবতে পারে মানুষের খাবার নেই, ওষুধ নেই, কত সমস্যা। আর আপনি সমস্যা তৈরি করছেন? খুবই যুক্তিপূর্ণ, সেই কারণেই লিখাটি শেয়ার করা।

এখন ভাবুন রাজ পরিবারের সমস্যাগুলো নিয়ে বা আমার মত কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন নানা সমস্যায় জড়িত যা হয়ত অন্ন, বস্ত্র নিয়ে নয়, হতে পারে ভালোবাসার সমস্যা, বিলাসবহুল জীবনের সমস্যা। যেমন অনেকে সারা রাত নেশা আর জুয়ায় মেতে আছে, দিন ভরে ঘুমোচ্ছে, মাসের পর মাস বছরের পর বছর।

গত এক বছর যাবত গোটা বিশ্বের মানুষ যে ভোগান্তি এবং ত্যাগ স্বীকার করছে করোনা মহামারীতে, তারাই জানে সে যন্ত্রণা এবং বেদনার দাহ্য। আপনজনকে হারানোর বেদনা সব সময় পিঁড়াদায়ক; যা ঘটেছিল ১৯৭১ সালে।

আমরা স্বাধীন হলাম ঠিকই কিন্তু হারালাম রাশেদ ভাইকে। প্রিয় ভাই জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করলেন অথচ উপভোগ করতে পারলেন না। আজ আমরা যারা বেঁচে আছি তারা “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলব না” গানটি মনে করিয়ে দেয় তাদের কথা।

গতকাল একটি দেয়ালে সাত বীরশ্রেষ্ঠদের ছবির পাশে জুতোর বিজ্ঞাপন দেখলাম, আমার বলার কিছু ছিল না, দূরপরবাস থেকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম! ১৯৮৪ সালে গ্রামে বিদ্যুৎ এল তবে চলে গেল হৃদয় অন্ধকার করে আমার ছোট ভাই সেলিম।

এ বছরে (২০২০ সাল) কোভিড-১৯ এসে ভয় আর আতঙ্কের সঙ্গে কেড়ে নিল লাখো মানুষের প্রাণ। শুধু নিজের জায়গা থেকে যদি আমরা দেখি মনে হবে, আমার সমস্যাই সবচেয়ে জটিল কিন্তু ভাবুন অন্যকে নিয়েও।

আপনি বা আমি জানি না কী সমস্যা নিয়ে অন্যরা জ্বলে পুড়ে মরছে! আমার ভুবনে দুঃখের মেলা তুমি দেখাও সহানুভূতি, আমি হলাম ভুক্তভোগী তুমি দিলে সান্ত্বনা। এমনটিই হবার কথা কারণ মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com