নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৭:৪৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০
  • / ১৪৮ Time View
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
.

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে সাংবাদিক মো. ইলিয়াসকে (৫২) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আট জনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে।

মো. ইলিয়াসের স্ত্রী বিলকিস বাদী হয়ে রোববার রাতেই বন্দর থানা মামলাটি করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে পুলিশ এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে।

রোববার (১১ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের জিওধারা চৌরাস্তায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় সাংবাদিক ইলিয়াসকে। তিনি ওই এলাকার মজিবর মিয়ার ছেলে, স্থানীয় দৈনিক বিজয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে কর্মত ছিলেন ইলিয়াস।

ঘটনাস্থল থেকে আসামি তুষারকে আকট করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। পরে অভিযান চালিয়ে মিনা ও মিসির আলী নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- হাসনাত আহমেদ তুর্জয় (২৪), মাসুদ (৩৬), সাগর (২৬), পাভেল (২৫) ও হজরত আলী (৫০)। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত জামান মিয়ার দুই ছেলে তুষার ও তুর্যের অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করেছিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস। এ ঘটনায় আটকও হয়েছিল তারা। এর জের ধরেই ইলিয়াসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

আসামি তুষার ও তার ভাই তূর্য এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের পাশাপাশি মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করতে তাদের একটি সন্ত্রাসী বাহিনীও রয়েছে। তাদের বাবা এলাকায় ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকের ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে। তার মৃত্যুর পর দুই ভাই মিলে বাবার মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

দৈনিক বিজয় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ সেন্টু বলেন, মাদক ব্যবসায়ী তুষার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সাংবাদিক ইলিয়াছকে টার্গেট করে তারা। সেই থেকে ইলিয়াছের প্রতি মাদক ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচার দাবি জানান তিনি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী তাওলাদ হোসেন জানান, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম দৈনিক বিজয়ের সংবাদকর্মী ইলিয়াকে রোববার রাত আটটার দিকে জিওধারা চৌরাস্তা এলাকায় একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী তুষার ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে ইলিয়াছকে মারধরের পর শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দ্রুতপালিয়ে যায় তারা। পরে গুরুতর অবস্থায় ইলিয়াকে সদর হাসাপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান।

তাওলাদ হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তুষার ইলিয়াছকে বাবা মা তুলে গালিগালাজ করে বুকে একটা ঘুষি দেয়। আর বলতে থাকে, তুই কতো বড় সাংবাদিক হইছিস? আমি এখন তোরে দেখাইয়া দিব। এই বলে ইলয়াছকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে একটা অন্ধকার স্থানে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর কাছে গিয়ে দেখি ইলিয়াছের গায়ের শার্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তার বুকে ও পেটে তিন চার জায়গায় ছুরিকাঘাতের ক্ষত। সেই ক্ষত স্থানগুলো দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে তার স্ত্রীকে ফোন করে খবর দেই। তারা আসলে আমিসহ এলাকাবাসী ইলিয়াছকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ডাক্তার গোলাম মোস্তফা ইমন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় আট জনকে আসামি করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে তিনজন গ্রেফতার এবং বাকিরা পলাতক রয়েছেন। অবৈধ সংযোগের বিষয় নিয়ে বিরোধের একটি বিষয় প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিস্তারিত তদন্তের পর হত্যার মূল কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৩

Update Time : ০৭:৪৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
.

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে সাংবাদিক মো. ইলিয়াসকে (৫২) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আট জনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে।

মো. ইলিয়াসের স্ত্রী বিলকিস বাদী হয়ে রোববার রাতেই বন্দর থানা মামলাটি করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে পুলিশ এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে।

রোববার (১১ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের জিওধারা চৌরাস্তায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় সাংবাদিক ইলিয়াসকে। তিনি ওই এলাকার মজিবর মিয়ার ছেলে, স্থানীয় দৈনিক বিজয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে কর্মত ছিলেন ইলিয়াস।

ঘটনাস্থল থেকে আসামি তুষারকে আকট করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। পরে অভিযান চালিয়ে মিনা ও মিসির আলী নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- হাসনাত আহমেদ তুর্জয় (২৪), মাসুদ (৩৬), সাগর (২৬), পাভেল (২৫) ও হজরত আলী (৫০)। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত জামান মিয়ার দুই ছেলে তুষার ও তুর্যের অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করেছিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস। এ ঘটনায় আটকও হয়েছিল তারা। এর জের ধরেই ইলিয়াসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

আসামি তুষার ও তার ভাই তূর্য এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের পাশাপাশি মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করতে তাদের একটি সন্ত্রাসী বাহিনীও রয়েছে। তাদের বাবা এলাকায় ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকের ব্যবসা করতেন বলে জানা গেছে। তার মৃত্যুর পর দুই ভাই মিলে বাবার মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

দৈনিক বিজয় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ সেন্টু বলেন, মাদক ব্যবসায়ী তুষার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সাংবাদিক ইলিয়াছকে টার্গেট করে তারা। সেই থেকে ইলিয়াছের প্রতি মাদক ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচার দাবি জানান তিনি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী তাওলাদ হোসেন জানান, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম দৈনিক বিজয়ের সংবাদকর্মী ইলিয়াকে রোববার রাত আটটার দিকে জিওধারা চৌরাস্তা এলাকায় একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী তুষার ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে ইলিয়াছকে মারধরের পর শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দ্রুতপালিয়ে যায় তারা। পরে গুরুতর অবস্থায় ইলিয়াকে সদর হাসাপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান।

তাওলাদ হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তুষার ইলিয়াছকে বাবা মা তুলে গালিগালাজ করে বুকে একটা ঘুষি দেয়। আর বলতে থাকে, তুই কতো বড় সাংবাদিক হইছিস? আমি এখন তোরে দেখাইয়া দিব। এই বলে ইলয়াছকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে একটা অন্ধকার স্থানে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর কাছে গিয়ে দেখি ইলিয়াছের গায়ের শার্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তার বুকে ও পেটে তিন চার জায়গায় ছুরিকাঘাতের ক্ষত। সেই ক্ষত স্থানগুলো দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে তার স্ত্রীকে ফোন করে খবর দেই। তারা আসলে আমিসহ এলাকাবাসী ইলিয়াছকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ডাক্তার গোলাম মোস্তফা ইমন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় আট জনকে আসামি করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে তিনজন গ্রেফতার এবং বাকিরা পলাতক রয়েছেন। অবৈধ সংযোগের বিষয় নিয়ে বিরোধের একটি বিষয় প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিস্তারিত তদন্তের পর হত্যার মূল কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।