নওগাঁর রাণীনগরে মুজিব বর্ষের সরকারি ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪
  • / 31

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে নওগাঁর রাণীনগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর সরকারি ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হচ্ছে হাত বদল। যেন ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব চলছে। এমন কান্ড উপজেলার ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সম্প্রতি কালিগ্রাম মুন্সিপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আশ্রয়ণের ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সরেজমিনে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েক দফায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর ভূমি ও গৃহহীনদের মুজিব বর্ষের উপহার হিসাবে দেন। কিন্তু রাণীনগরে এই প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই অনৈতিকভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন যাদের জমি ও বাড়ি আছে সেইসব ব্যক্তিরা। বরাদ্দপ্রাপ্তদের নিজের জমি ও বাড়ি থাকায় সেখানে বসবাস না করে উদ্বোধনের কিছুদিন পর হতে শুরু হয় ঘর ক্রয়-বিক্রয়। এই ক্রয়-বিক্রয়ে অনেকে যারা বৈধ্য উপায়ে ঘর পায়নি, তারা নিরুপায় হয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘর ক্রয় করে বসবাস করছে। আবার কেউ অল্প দামে ঘর কিনে রাখছে বেশী দামে বিক্রয়ের আশায়। এ যেন শুরু হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব।

অভিযোগে জানা যায়, ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১নং ঘর বিক্রয় করেন বেনো হোসেন, ক্রয় করেন আজিজার। ৩৫নং ঘর ফেকরুল বিক্রয় করেন, ডাকাহার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলীর কাছে এবং একই ঘর ইউনুছ আলী আবারও বিক্রয় করেন দুলালের নিকট। ৩৭নং ঘর আলম বিক্রয় করেন শরিফুলের কাছে। উপকারভোগী নারগিসের থেকে ৩০নং ঘর ক্রয় করেন আশরাফুল। বক্তব্যের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন বাড়ি পাইনি তবে নারগিস আমাকে বসবাসের জন্য বাড়িটি থাকতে দিয়েছে। ক্রয় করেছেন কিনা প্রশ্নে বলেন, কাগজ করে নিয়েছি তবে কোন টাকা দেয়নি।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ডাকাহার গ্রামের রহমান কবিরাজ গ্রামের মধ্যে তার ছাঁদ দেওয়া পাঁকা বাড়ি আছে, তবু ১টি ঘর কিনে রেখেছেন। আশ্রয়ণের সহ-সভাপতি ডাবওয়ালা হাচিন আলীর গ্রামের মধ্যে জমি-বাড়ি থাকার পরও তার মার নামে ১টি ঘর, নিজের নামে ১টি ঘর ও স্ত্রীর নামে ১টি ঘরসহ মোট ৩টি ঘর বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন। মায়ের ঘর বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের নিকট দামাদামী চলছে। এই আশ্রয়ণের ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মূলহোতা তিনি বলে জানান স্থানীয় লোকজন। তবে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পে ৫৯টি ঘরের মধ্যে ২০টি ঘর ব্যাতিত সকলই ক্রয়-বিক্রয় (হাত বদল) হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতে বঙ্গবন্ধু কন্যার মুজিব বর্ষের মূল উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেছেন সচেতন মহল।

অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি ঘর ভূমিহীনরা পায় না, যাদের ঘর আছে তারা পায়। তাই প্রশাসনের কাছে আমার দাবি- অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে প্রযোজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা এবং সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘরগুলো দেওয়া হউক।

অসহায় ভূমিহীন বয়জেষ্ঠ্য নারী সেফালী বেগম বলেন, মারা গেলে মাটি দেওয়ার মত জায়গাও আমার নেই, ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। ধরার কোন লোক নেই, তাই সরকারি ঘর আমাকে দেওয়া হয়নি। আশ্রয়ণে যারা সরকারি বাড়িগুলো পেয়েছে তারা বাড়িটিতে কিছুদিন বসবাস করেন। তারপর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করে চলে যায়।

একডালা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী জানান, মুজিব বর্ষের ঘরগুলো নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও বিক্রয় করা থেকে আটকানো যাচ্ছে না। অর্ধেক ঘরই হাতবদল হয়ে গেছে। আমি আইনশৃংঙ্খলা ও মাসিক মিটিংয়ে ঘর বেচা-কেনার বিষয়ে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি। তিনি বলেন, এই আশ্রয়ণের কমিটির কয়েকজন নেতারা এসবের সঙ্গে জড়িত।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

নওগাঁর রাণীনগরে মুজিব বর্ষের সরকারি ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব

Update Time : ০৪:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে নওগাঁর রাণীনগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর সরকারি ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হচ্ছে হাত বদল। যেন ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব চলছে। এমন কান্ড উপজেলার ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সম্প্রতি কালিগ্রাম মুন্সিপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আশ্রয়ণের ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সরেজমিনে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েক দফায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর ভূমি ও গৃহহীনদের মুজিব বর্ষের উপহার হিসাবে দেন। কিন্তু রাণীনগরে এই প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই অনৈতিকভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন যাদের জমি ও বাড়ি আছে সেইসব ব্যক্তিরা। বরাদ্দপ্রাপ্তদের নিজের জমি ও বাড়ি থাকায় সেখানে বসবাস না করে উদ্বোধনের কিছুদিন পর হতে শুরু হয় ঘর ক্রয়-বিক্রয়। এই ক্রয়-বিক্রয়ে অনেকে যারা বৈধ্য উপায়ে ঘর পায়নি, তারা নিরুপায় হয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘর ক্রয় করে বসবাস করছে। আবার কেউ অল্প দামে ঘর কিনে রাখছে বেশী দামে বিক্রয়ের আশায়। এ যেন শুরু হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব।

অভিযোগে জানা যায়, ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১নং ঘর বিক্রয় করেন বেনো হোসেন, ক্রয় করেন আজিজার। ৩৫নং ঘর ফেকরুল বিক্রয় করেন, ডাকাহার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলীর কাছে এবং একই ঘর ইউনুছ আলী আবারও বিক্রয় করেন দুলালের নিকট। ৩৭নং ঘর আলম বিক্রয় করেন শরিফুলের কাছে। উপকারভোগী নারগিসের থেকে ৩০নং ঘর ক্রয় করেন আশরাফুল। বক্তব্যের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন বাড়ি পাইনি তবে নারগিস আমাকে বসবাসের জন্য বাড়িটি থাকতে দিয়েছে। ক্রয় করেছেন কিনা প্রশ্নে বলেন, কাগজ করে নিয়েছি তবে কোন টাকা দেয়নি।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ডাকাহার গ্রামের রহমান কবিরাজ গ্রামের মধ্যে তার ছাঁদ দেওয়া পাঁকা বাড়ি আছে, তবু ১টি ঘর কিনে রেখেছেন। আশ্রয়ণের সহ-সভাপতি ডাবওয়ালা হাচিন আলীর গ্রামের মধ্যে জমি-বাড়ি থাকার পরও তার মার নামে ১টি ঘর, নিজের নামে ১টি ঘর ও স্ত্রীর নামে ১টি ঘরসহ মোট ৩টি ঘর বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন। মায়ের ঘর বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের নিকট দামাদামী চলছে। এই আশ্রয়ণের ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মূলহোতা তিনি বলে জানান স্থানীয় লোকজন। তবে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পে ৫৯টি ঘরের মধ্যে ২০টি ঘর ব্যাতিত সকলই ক্রয়-বিক্রয় (হাত বদল) হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতে বঙ্গবন্ধু কন্যার মুজিব বর্ষের মূল উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেছেন সচেতন মহল।

অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি ঘর ভূমিহীনরা পায় না, যাদের ঘর আছে তারা পায়। তাই প্রশাসনের কাছে আমার দাবি- অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে প্রযোজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা এবং সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘরগুলো দেওয়া হউক।

অসহায় ভূমিহীন বয়জেষ্ঠ্য নারী সেফালী বেগম বলেন, মারা গেলে মাটি দেওয়ার মত জায়গাও আমার নেই, ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। ধরার কোন লোক নেই, তাই সরকারি ঘর আমাকে দেওয়া হয়নি। আশ্রয়ণে যারা সরকারি বাড়িগুলো পেয়েছে তারা বাড়িটিতে কিছুদিন বসবাস করেন। তারপর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করে চলে যায়।

একডালা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী জানান, মুজিব বর্ষের ঘরগুলো নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও বিক্রয় করা থেকে আটকানো যাচ্ছে না। অর্ধেক ঘরই হাতবদল হয়ে গেছে। আমি আইনশৃংঙ্খলা ও মাসিক মিটিংয়ে ঘর বেচা-কেনার বিষয়ে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি। তিনি বলেন, এই আশ্রয়ণের কমিটির কয়েকজন নেতারা এসবের সঙ্গে জড়িত।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।