ঠেকানো গেল না ইমরান খানকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৯ Time View

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া সফরকে কেন্দ্র করে জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। তিনি এজন্য সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। যদিও উভয় পক্ষই সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত করার পর একের পর এক মামলা দিয়ে ইমরান খানকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বে কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মামলার রেকর্ড। সরকারি গোপন নথি ফাঁসের মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রথমে তোশাখানা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই মামলা নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে থাকলেও তাকে খালাস দেওয়া হয়। তোশাখানা মামলা আদালতে বাতিল হওয়ার পর ইমরান খানকে সাইফার (সরকারি গোপন নথি) মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর দুর্নীতি থেকে শুরু করে অবৈধ বিয়ের মামলায় আরো কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত বছরের ৯ মে সামরিক স্থাপনায় হামলা এবং সহিংসতাকে কেন্দ্র করে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এমনকি মূল নেতারাও কেউ বাদ যাননি। অভিযোগ আছে, যারা সামরিক বাহিনীর কথা শুনেছে তারাই কেবল গ্রেফতার করা হয়নি।

ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ খাইবার পাখতুনখাওয়ার নেতা পারভেজ খট্টাক আলাদা দল গঠন করেন। যদিও সেই পারভেজ খট্টাক পিটিআই সমর্থিত নেতার কাছে বড় ব্যবধান হেরেছেন। ইমরান খানকে কেবল কারাগারেই পাঠানো হয়নি, তার বক্তব্য এবং বিবৃতিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। পিটিআই সমর্থিত সাংবাদিককে বিদেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। অনেক সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাসা থেকে। ইমরান খানকে কারাগারে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এমনকি প্রথমে তার বাথরুমেও সিসিটিভি বসানো হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর সেখান থেকে আদিয়ালা জেলে স্থানান্তর করা হয়। তাকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

আদালতের নির্দেশে স্ত্রী বুশরা বিবি এবং কিছু আইনজীবী সাক্ষাত্ করার অনুমতি পান। ইমরান খান কারাগার থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ইমরান খানকে যখন নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়, তখন বিদেশে অবস্থান করা নওয়াজ শরিফকে দেশে এনে একের পর এক মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। এর আগে নওয়াজ শরিফকে আজীবনের জন্য সরকারি অফিসে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়। ইমরান খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে আদালত কৌশলী রায় দেয়। আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়, পাঁচ বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের এক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর হবে। ফলে ইমরান খান নির্বাচন করতে অযোগ্যই থাকেন। এতকিছুর পরও পশ্চিমা বিশ্ব সরকারের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়নি।

এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই একটা কানাঘুষা ছিল যে, দিন শেষে জিতবেন নওয়াজ শরিফই। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে বলছিলেন যে, শরিফের দিকে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সুনজর আছে। কিন্তু সমস্ত জল্পনা-কল্পনাকে ছাপিয়ে পিটিআই সমর্থিতদের এমন সাফল্য তথা জয় অপ্রত্যাশিত। পিটিআই প্রার্থীরা ‘ক্রিকেট ব্যাট’ প্রতীকের অধীনে নির্বাচন করতে পারবে না, নির্বাচন কমিশন এরকম একটা আইন জারি করায় এই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, দলীয় প্রতীক না থাকা মানে সেটি কোনো স্বীকৃত দল নয়। সেই নিরিখে বর্তমানে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন হচ্ছে সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দল। কিন্তু কারাবন্দি ইমরান খানকে দমিয়ে রাখা যায়নি। তার সমর্থিতরাই এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিজয়ী। অনেকের ধারণা, শেষ পর্যন্ত ইমরান খানের বিরুদ্ধে সব মামলা হয়তো জামিন, বাতিল বা প্রত্যাহার হবে। ইতিমধ্যে গতকালই ১২টি মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদেও হয়তো আবার দেখা যেতে দেশটির জনপ্রিয় এই নেতাকে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ঠেকানো গেল না ইমরান খানকে

Update Time : ১০:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া সফরকে কেন্দ্র করে জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। তিনি এজন্য সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। যদিও উভয় পক্ষই সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত করার পর একের পর এক মামলা দিয়ে ইমরান খানকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বে কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মামলার রেকর্ড। সরকারি গোপন নথি ফাঁসের মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রথমে তোশাখানা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই মামলা নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে থাকলেও তাকে খালাস দেওয়া হয়। তোশাখানা মামলা আদালতে বাতিল হওয়ার পর ইমরান খানকে সাইফার (সরকারি গোপন নথি) মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর দুর্নীতি থেকে শুরু করে অবৈধ বিয়ের মামলায় আরো কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত বছরের ৯ মে সামরিক স্থাপনায় হামলা এবং সহিংসতাকে কেন্দ্র করে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এমনকি মূল নেতারাও কেউ বাদ যাননি। অভিযোগ আছে, যারা সামরিক বাহিনীর কথা শুনেছে তারাই কেবল গ্রেফতার করা হয়নি।

ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ খাইবার পাখতুনখাওয়ার নেতা পারভেজ খট্টাক আলাদা দল গঠন করেন। যদিও সেই পারভেজ খট্টাক পিটিআই সমর্থিত নেতার কাছে বড় ব্যবধান হেরেছেন। ইমরান খানকে কেবল কারাগারেই পাঠানো হয়নি, তার বক্তব্য এবং বিবৃতিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। পিটিআই সমর্থিত সাংবাদিককে বিদেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। অনেক সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাসা থেকে। ইমরান খানকে কারাগারে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এমনকি প্রথমে তার বাথরুমেও সিসিটিভি বসানো হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর সেখান থেকে আদিয়ালা জেলে স্থানান্তর করা হয়। তাকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

আদালতের নির্দেশে স্ত্রী বুশরা বিবি এবং কিছু আইনজীবী সাক্ষাত্ করার অনুমতি পান। ইমরান খান কারাগার থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ইমরান খানকে যখন নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়, তখন বিদেশে অবস্থান করা নওয়াজ শরিফকে দেশে এনে একের পর এক মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। এর আগে নওয়াজ শরিফকে আজীবনের জন্য সরকারি অফিসে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়। ইমরান খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে আদালত কৌশলী রায় দেয়। আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়, পাঁচ বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের এক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর হবে। ফলে ইমরান খান নির্বাচন করতে অযোগ্যই থাকেন। এতকিছুর পরও পশ্চিমা বিশ্ব সরকারের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়নি।

এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই একটা কানাঘুষা ছিল যে, দিন শেষে জিতবেন নওয়াজ শরিফই। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে বলছিলেন যে, শরিফের দিকে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সুনজর আছে। কিন্তু সমস্ত জল্পনা-কল্পনাকে ছাপিয়ে পিটিআই সমর্থিতদের এমন সাফল্য তথা জয় অপ্রত্যাশিত। পিটিআই প্রার্থীরা ‘ক্রিকেট ব্যাট’ প্রতীকের অধীনে নির্বাচন করতে পারবে না, নির্বাচন কমিশন এরকম একটা আইন জারি করায় এই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, দলীয় প্রতীক না থাকা মানে সেটি কোনো স্বীকৃত দল নয়। সেই নিরিখে বর্তমানে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন হচ্ছে সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দল। কিন্তু কারাবন্দি ইমরান খানকে দমিয়ে রাখা যায়নি। তার সমর্থিতরাই এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিজয়ী। অনেকের ধারণা, শেষ পর্যন্ত ইমরান খানের বিরুদ্ধে সব মামলা হয়তো জামিন, বাতিল বা প্রত্যাহার হবে। ইতিমধ্যে গতকালই ১২টি মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদেও হয়তো আবার দেখা যেতে দেশটির জনপ্রিয় এই নেতাকে।