জাতিসংঘের আদালতে গাজায় গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৬৫ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু করেছে জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)।

বৃহস্পতিবার থেকে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ওই আদালতে শুনানি শুরু হয়।

ইসরায়েল সরকারের অন্যতম মুখপাত্র আইলন লেভি বলেছেন, শুনানিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথমবারের মতো তার সরকারের ডানপন্থী মন্ত্রীদের গাজা স্থায়ীভাবে দখল করার আহ্বানকে জনসমক্ষে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

লেভি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার তোলা অযৌক্তিক ও মিথ্যা মানহানির দাবিকে দূর করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে হাজির হবে ইসরায়েল। কারণ, প্রিটোরিয়া হামাসের ধর্ষক প্রশাসনকে রাজনৈতিক এবং আইনি সহায়তা দিচ্ছে।

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ তুলে নৃশংস হামলা বন্ধের দাবিতে গত ডিসেম্বরের শেষে আইসিজেতে মামলাটি দায়ের করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ২৩ হাজার বেসামরিক মানুষ হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে, যেখানে ১০ হাজারের বেশি শিশু। এই মামলার আবেদনপত্রের সঙ্গে ৮৪ পৃষ্ঠার একটি নথি সংযুক্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা দাবি করেছে, ইসরায়েল ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।

জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনকে ভিত্তি করে মামলাটি দায়ের করে বলা হয়েছে, গাজায় অভিযান চালানো ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি গণহত্যা এবং এ সম্পর্কিত অপরাধে সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ রয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর মামলার আবেদন জমা দেওয়ার দিন আইসিজেকে দ্রুত এ বিষয়ে শুনানির অনুরোধ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১১ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন বিশ্ব আদালত। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের দাবিতে এই মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরও লেগে যেতে পারে। কলম্বিয়া ও ব্রাজিল গতকাল বুধবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, মরক্কোসহ ওআইসির ৫৭টি সদস্য দেশও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মালয়েশিয়া, জর্ডান, তুরস্ক, বলিভিয়াও আছে এই তালিকায়। এ ছাড়া, বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও এই মামলায় প্রিটোরিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

অন্যদিকে, গণহত্যা মামলার বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি এই মামলাকে ‘ভিত্তিহীন ও যোগ্যতাহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা যেমন—ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ইস্যুতে নীরবতা পালন করছে।

এ দিকে, এই মামলা সমর্থনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে উঠেছে দ্বিচারিতার অভিযোগ। কেবল এক মাস আগেই আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার অভিযোগে বিস্তারিত তথ্য পেশ করেছিল যুক্তরাজ্য। সূত্র:বিবিসি,আলজাজিরা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

জাতিসংঘের আদালতে গাজায় গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

Update Time : ০২:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু করেছে জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)।

বৃহস্পতিবার থেকে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ওই আদালতে শুনানি শুরু হয়।

ইসরায়েল সরকারের অন্যতম মুখপাত্র আইলন লেভি বলেছেন, শুনানিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথমবারের মতো তার সরকারের ডানপন্থী মন্ত্রীদের গাজা স্থায়ীভাবে দখল করার আহ্বানকে জনসমক্ষে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

লেভি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার তোলা অযৌক্তিক ও মিথ্যা মানহানির দাবিকে দূর করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে হাজির হবে ইসরায়েল। কারণ, প্রিটোরিয়া হামাসের ধর্ষক প্রশাসনকে রাজনৈতিক এবং আইনি সহায়তা দিচ্ছে।

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ তুলে নৃশংস হামলা বন্ধের দাবিতে গত ডিসেম্বরের শেষে আইসিজেতে মামলাটি দায়ের করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ২৩ হাজার বেসামরিক মানুষ হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে, যেখানে ১০ হাজারের বেশি শিশু। এই মামলার আবেদনপত্রের সঙ্গে ৮৪ পৃষ্ঠার একটি নথি সংযুক্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা দাবি করেছে, ইসরায়েল ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।

জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনকে ভিত্তি করে মামলাটি দায়ের করে বলা হয়েছে, গাজায় অভিযান চালানো ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি গণহত্যা এবং এ সম্পর্কিত অপরাধে সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ রয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর মামলার আবেদন জমা দেওয়ার দিন আইসিজেকে দ্রুত এ বিষয়ে শুনানির অনুরোধ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১১ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন বিশ্ব আদালত। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের দাবিতে এই মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরও লেগে যেতে পারে। কলম্বিয়া ও ব্রাজিল গতকাল বুধবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, মরক্কোসহ ওআইসির ৫৭টি সদস্য দেশও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মালয়েশিয়া, জর্ডান, তুরস্ক, বলিভিয়াও আছে এই তালিকায়। এ ছাড়া, বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও এই মামলায় প্রিটোরিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

অন্যদিকে, গণহত্যা মামলার বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি এই মামলাকে ‘ভিত্তিহীন ও যোগ্যতাহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা যেমন—ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ইস্যুতে নীরবতা পালন করছে।

এ দিকে, এই মামলা সমর্থনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে উঠেছে দ্বিচারিতার অভিযোগ। কেবল এক মাস আগেই আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার অভিযোগে বিস্তারিত তথ্য পেশ করেছিল যুক্তরাজ্য। সূত্র:বিবিসি,আলজাজিরা।