চীন-ভুটান সম্পর্কের চাপে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:২১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • / ১০০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

চীনের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, ততই চাপে পড়ছে ভারত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। সেখানে তিনি ডোকলাম সমস্যার সমাধানে তারা ভারতের সঙ্গে চীনকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। বিরোধপূর্ণ সীমান্তটি নিয়ে ভুটানের অবস্থানের এ পরিবর্তন ভারতকে অনেকটা চাপে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেলজিয়ামের সংবাদপত্র ‘লা লিব্রেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লোটে শেরিং বলেন, ‘ডোকলাম সমস্যা সমাধানের দায় শুধু ভুটানের নয়। এখানে তিনটি দেশ রয়েছে। সেই দেশের কেউই বড় বা ছোট নয়। সবাই সমান। আমরা প্রস্তুত। অন্য দুই দেশ রাজি হলেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ভুটান চীনের দিকে হেলে পড়েছে খানিকটা। ডোকলাম নিয়ে এ অবস্থান তারই প্রতিফলন। ডোকলামের বাটাং লা এলাকায় ভারত, ভুটান ও চীন-তিন দেশেরই সীমান্ত রয়েছে। এই এলাকার উত্তরে চীনের চুম্বি উপত্যকা। পশ্চিম প্রান্তে ভারতের সিকিম। দক্ষিণ ও পূর্বে ভুটানের অবস্থান। চীনের দাবি, প্রকৃত ত্রিদেশীয় সীমান্ত বাটাং লার সাত কিলোমিটার দক্ষিণে জিপমোচি শৃঙ্গ ও ঝাম্পেরি পাহাড়ি অঞ্চল। চীনের এই দাবি ভারত কখনো মানেনি। শুধু তাই নয়, ওই অঞ্চল চীনের নয়, ভুটানের-এই দাবিও ভারত জোরের সঙ্গে জানিয়ে আসছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কৌশলগত কারণে চীনের কাছে ডোকলাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই ২০১৭ সালে সৃষ্টি হয়েছিল ডোকলাম সংকট। ওই এলাকা বরাবর চীন পাকা সড়ক তৈরির চেষ্টা করলে ভারতীয় সেনাবাহিনী রুখে দাঁড়িয়েছিল। উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ডোকলামে। ভারতীয় বাহিনীর প্রতিরোধে চীন শেষ পর্যন্ত পিছু হটে। ডোকলাম মালভূমি নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যদি চীনের আধিপত্য তৈরি হয় তাহলে বিষয়টি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। পরে ভারত দাবি করে, ভুটানের দিকে অবৈধভাবে ঢুকে চীন অনেক নির্মাণকাজ চালাচ্ছে।

তবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে ‘অবৈধ নির্মাণকাজের’ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ভুটানের জমিতে কেউ কোনো রকম অবৈধ নির্মাণকাজ চালাচ্ছে না। আমাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত কোথায় ও কতটা, তা আমরা ভালো করেই জানি।’

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার, চীনকে উপেক্ষা করে তারা কিছু করতে চাইছে না।

ডোকলাম-পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ ভুটানের ভূরাজনৈতিক উপলব্ধিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে। চীন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। চীনের সঙ্গে এখনো তাদের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ভারতের প্রতি সব দিক থেকে নির্ভরশীল হলেও চীনের প্রবল উপস্থিতি তারা উপেক্ষা করতে পারছে না। সেই কারণে ত্রিদেশীয় সীমান্ত সমাধানে তিন পক্ষের সহমত হওয়ার ওপর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং জোর দিয়েছেন।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অশ্বিনী রায় বলেন, ‘এই অঞ্চলের প্রতিটা দেশই বোঝে যে চীন-ভারত সম্পর্কের ওপরেই নির্ভর করছে তারা নিজেরা কতটা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারবে। গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক ভারতের থেকে অনেক উন্নত। তারা বেশ আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই এই অঞ্চলে কাজ করে, তারই ফল এখন দেখা যাচ্ছে নানা দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে।’

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ভারত নিজেই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। বেকারত্ব রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় পার্শ্ববর্তী দেশকে আর্থিক সহযোগিতা করা তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভুটানসহ অনেক দেশের চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সীমান্ত বিরোধের অবসানে ভুটান ও চীন চুক্তিবদ্ধ হয় ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে। দুই দেশ এই বিষয়ে যে চুক্তি করে, তাকে ‘তিন পদক্ষেপ রোডম্যাপ’ বলে উল্লেখ করা হয়। এর লক্ষ্য পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করা।

ভুটান জানিয়েছে, সীমান্ত বিরোধ নিরসনে ১৯৮৮ সালের যৌথ ইশতেহার এবং ১৯৯৮ সালে ভুটান-চীন সীমান্ত শান্তি, স্থিতাবস্থা ও সুস্থিতি রক্ষার চুক্তির আলোকে এই অনুচুক্তি বা বোঝাপড়ায় পৌঁছানো হয়েছে।

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে চীনের কুনমিংয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞ কমিটির দশম আলোচনায় তিন পদক্ষেপ রোডম্যাপ চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়।

চীনের সঙ্গে ভুটানের সীমান্ত ৪০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। অনুচুক্তি বাস্তবায়ন করে চীন ডোকলামে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করলে ভারতের ঘাড়ে তারা নিঃশ্বাস ফেলবে। এ নিয়ে ভারত চাপে ছিল আগে থেকেই। এবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে ভারতকে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পরপরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভুটানে সরকারি সফর করেছেন। এ সফরের সময় তিনি ভুটানের রাজা জিগমে খেশার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দরজির সঙ্গেও বৈঠক করেন।

ভারত যে ভুটানের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে চাপে পড়েছে, তা লক্ষ করা গেছে ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত চীন নেতৃত্বাধীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে। ওই অনুষ্ঠানের ফাঁকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফুর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হলেও তার সঙ্গে করমর্দন করেননি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

ওই বৈঠকে রাজনাথ সিং স্পষ্ট বলেছেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। চলমান সম্পর্কেরও উন্নতি হবে না।’ লি শাংফু চীনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই সংঘর্ষের পর এই প্রথম চীনের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতে এলেন। দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যেও এটাই ছিল প্রথম বৈঠক।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ওই বৈঠকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা নতুনভাবে শুরু করার এক প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। ভারত তা খারিজ করে জানায়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওই প্রস্তাব বিবেচিত হতে পারে, তার আগে নয়।

বৈঠকের পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনাথ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়েছেন-এলএসি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির একমাত্র শর্ত। সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় থাকলেই সম্পর্কের উন্নতি হওয়া সম্ভবপর।

২০২০ সালের জুন মাসে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ধারাবাহিকভাবে এ কথা চীনকে বলে আসছে। ওই সংঘর্ষে ১৮ জন ভারতীয় জওয়ান ও ৫ চীনা সেনাসদস্য নিহত হন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

চীন-ভুটান সম্পর্কের চাপে ভারত

Update Time : ০১:২১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

চীনের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, ততই চাপে পড়ছে ভারত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। সেখানে তিনি ডোকলাম সমস্যার সমাধানে তারা ভারতের সঙ্গে চীনকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। বিরোধপূর্ণ সীমান্তটি নিয়ে ভুটানের অবস্থানের এ পরিবর্তন ভারতকে অনেকটা চাপে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেলজিয়ামের সংবাদপত্র ‘লা লিব্রেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লোটে শেরিং বলেন, ‘ডোকলাম সমস্যা সমাধানের দায় শুধু ভুটানের নয়। এখানে তিনটি দেশ রয়েছে। সেই দেশের কেউই বড় বা ছোট নয়। সবাই সমান। আমরা প্রস্তুত। অন্য দুই দেশ রাজি হলেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ভুটান চীনের দিকে হেলে পড়েছে খানিকটা। ডোকলাম নিয়ে এ অবস্থান তারই প্রতিফলন। ডোকলামের বাটাং লা এলাকায় ভারত, ভুটান ও চীন-তিন দেশেরই সীমান্ত রয়েছে। এই এলাকার উত্তরে চীনের চুম্বি উপত্যকা। পশ্চিম প্রান্তে ভারতের সিকিম। দক্ষিণ ও পূর্বে ভুটানের অবস্থান। চীনের দাবি, প্রকৃত ত্রিদেশীয় সীমান্ত বাটাং লার সাত কিলোমিটার দক্ষিণে জিপমোচি শৃঙ্গ ও ঝাম্পেরি পাহাড়ি অঞ্চল। চীনের এই দাবি ভারত কখনো মানেনি। শুধু তাই নয়, ওই অঞ্চল চীনের নয়, ভুটানের-এই দাবিও ভারত জোরের সঙ্গে জানিয়ে আসছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কৌশলগত কারণে চীনের কাছে ডোকলাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই ২০১৭ সালে সৃষ্টি হয়েছিল ডোকলাম সংকট। ওই এলাকা বরাবর চীন পাকা সড়ক তৈরির চেষ্টা করলে ভারতীয় সেনাবাহিনী রুখে দাঁড়িয়েছিল। উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ডোকলামে। ভারতীয় বাহিনীর প্রতিরোধে চীন শেষ পর্যন্ত পিছু হটে। ডোকলাম মালভূমি নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যদি চীনের আধিপত্য তৈরি হয় তাহলে বিষয়টি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। পরে ভারত দাবি করে, ভুটানের দিকে অবৈধভাবে ঢুকে চীন অনেক নির্মাণকাজ চালাচ্ছে।

তবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে ‘অবৈধ নির্মাণকাজের’ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ভুটানের জমিতে কেউ কোনো রকম অবৈধ নির্মাণকাজ চালাচ্ছে না। আমাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত কোথায় ও কতটা, তা আমরা ভালো করেই জানি।’

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার, চীনকে উপেক্ষা করে তারা কিছু করতে চাইছে না।

ডোকলাম-পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ ভুটানের ভূরাজনৈতিক উপলব্ধিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে। চীন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। চীনের সঙ্গে এখনো তাদের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ভারতের প্রতি সব দিক থেকে নির্ভরশীল হলেও চীনের প্রবল উপস্থিতি তারা উপেক্ষা করতে পারছে না। সেই কারণে ত্রিদেশীয় সীমান্ত সমাধানে তিন পক্ষের সহমত হওয়ার ওপর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং জোর দিয়েছেন।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অশ্বিনী রায় বলেন, ‘এই অঞ্চলের প্রতিটা দেশই বোঝে যে চীন-ভারত সম্পর্কের ওপরেই নির্ভর করছে তারা নিজেরা কতটা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারবে। গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক ভারতের থেকে অনেক উন্নত। তারা বেশ আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই এই অঞ্চলে কাজ করে, তারই ফল এখন দেখা যাচ্ছে নানা দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে।’

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ভারত নিজেই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। বেকারত্ব রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় পার্শ্ববর্তী দেশকে আর্থিক সহযোগিতা করা তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভুটানসহ অনেক দেশের চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সীমান্ত বিরোধের অবসানে ভুটান ও চীন চুক্তিবদ্ধ হয় ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে। দুই দেশ এই বিষয়ে যে চুক্তি করে, তাকে ‘তিন পদক্ষেপ রোডম্যাপ’ বলে উল্লেখ করা হয়। এর লক্ষ্য পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করা।

ভুটান জানিয়েছে, সীমান্ত বিরোধ নিরসনে ১৯৮৮ সালের যৌথ ইশতেহার এবং ১৯৯৮ সালে ভুটান-চীন সীমান্ত শান্তি, স্থিতাবস্থা ও সুস্থিতি রক্ষার চুক্তির আলোকে এই অনুচুক্তি বা বোঝাপড়ায় পৌঁছানো হয়েছে।

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে চীনের কুনমিংয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞ কমিটির দশম আলোচনায় তিন পদক্ষেপ রোডম্যাপ চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়।

চীনের সঙ্গে ভুটানের সীমান্ত ৪০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। অনুচুক্তি বাস্তবায়ন করে চীন ডোকলামে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করলে ভারতের ঘাড়ে তারা নিঃশ্বাস ফেলবে। এ নিয়ে ভারত চাপে ছিল আগে থেকেই। এবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে ভারতকে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পরপরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভুটানে সরকারি সফর করেছেন। এ সফরের সময় তিনি ভুটানের রাজা জিগমে খেশার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দরজির সঙ্গেও বৈঠক করেন।

ভারত যে ভুটানের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে চাপে পড়েছে, তা লক্ষ করা গেছে ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত চীন নেতৃত্বাধীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে। ওই অনুষ্ঠানের ফাঁকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফুর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হলেও তার সঙ্গে করমর্দন করেননি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

ওই বৈঠকে রাজনাথ সিং স্পষ্ট বলেছেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। চলমান সম্পর্কেরও উন্নতি হবে না।’ লি শাংফু চীনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই সংঘর্ষের পর এই প্রথম চীনের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতে এলেন। দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যেও এটাই ছিল প্রথম বৈঠক।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ওই বৈঠকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা নতুনভাবে শুরু করার এক প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। ভারত তা খারিজ করে জানায়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওই প্রস্তাব বিবেচিত হতে পারে, তার আগে নয়।

বৈঠকের পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনাথ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়েছেন-এলএসি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির একমাত্র শর্ত। সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় থাকলেই সম্পর্কের উন্নতি হওয়া সম্ভবপর।

২০২০ সালের জুন মাসে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ধারাবাহিকভাবে এ কথা চীনকে বলে আসছে। ওই সংঘর্ষে ১৮ জন ভারতীয় জওয়ান ও ৫ চীনা সেনাসদস্য নিহত হন।