ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন বিএফআইইউ প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:০২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২
  • / ২১৪ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সুইস ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য আদালতে দাখিল করার ঘটনায় হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।

পরে আদালত তাকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

বুধবার (৩১ আগস্ট) সকালে হাইকোর্টে হাজির হন প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। এর আগে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করেন হাইকোর্ট।

আদালত এসময় বলেন, “শুধু তথ্য চাওয়াটাই সমাধান না; এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে মানি লন্ডারিং ঠেকানো যাবেনা। আমরা চাই দেশের টাকা দেশেই ফিরে আসুক। বিএফআইইউ যেভাবে রিপোর্ট দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

সুইস ব্যাংকের তথ্য পেতে কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হবে কিনা তা জানতে চান আদালত।

বিএফআইইউ প্রধান জানান, ২০১৭ থেকে এখন পর্যন্ত ৯৮৩টি রিপোর্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

চিঠি চালাচালির বাইরে আর কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে বিএফআইইউ তা ২৬ অক্টোবরের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পরে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, “এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ফরওয়ার্ডিং আকারে দিতে হয়। প্রতিবেদনে স্বাক্ষর দিতে হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে। কিন্তু প্রতিবেদনে এসবের কিছুর বালাই নেই। আমি বলেছি এটা একটা উদাসীন রিপোর্ট। আদালত ভর্ৎসনা করেছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ কারণে বিএফইউআইয়ের প্রধানকে হাজির হতে বলেছেন।

“আদালত যেভাবে চেয়েছিলেন বিএফআইইউ থেকে সেভাবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। তিনি প্রতিবেদনে বলেছেন, রেসপন্স টু বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা আদালতে বলেছি এটা তো রেসপন্স হয় না। এটা তো দুই বন্ধুর বিষয় না। এটা আদালতের আদেশ। তারা প্রতিবেদন দেবে। কিন্তু বিএফআইইউ বলেছে, জবাব তো হবে না। এটা ওনার লিখিত ব্যাখ্যা হবে। তাদের দাখিল জবাবে ঘাটতি আছে, একারণে তলব করেছেন।”

এর আগে গত ১৪ আগস্ট বিএফআইইউ প্রতিবেদন দিয়ে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউয়ের কাছে চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৭ জুন এফআইইউয়ের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।

অর্থপাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ বিদেশি এফআইইউর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এসব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডব্লিউ)। ২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউর সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ।

ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর এ একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার বিষয়ে তথ্য জানাতে সর্বশেষ গত ১৭ জুনও চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

গত ১০ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি বলে জানান ঢাকায় নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশিরা কত টাকা জমা রেখেছে, ওই তথ্য প্রতি বছর সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক দিয়ে থাকে। ওই অর্থ অবৈধ পথে আয় করা হয়েছে কিনা, এটি আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন বিএফআইইউ প্রধান

Update Time : ০৩:০২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সুইস ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য আদালতে দাখিল করার ঘটনায় হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।

পরে আদালত তাকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

বুধবার (৩১ আগস্ট) সকালে হাইকোর্টে হাজির হন প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। এর আগে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করেন হাইকোর্ট।

আদালত এসময় বলেন, “শুধু তথ্য চাওয়াটাই সমাধান না; এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে মানি লন্ডারিং ঠেকানো যাবেনা। আমরা চাই দেশের টাকা দেশেই ফিরে আসুক। বিএফআইইউ যেভাবে রিপোর্ট দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

সুইস ব্যাংকের তথ্য পেতে কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হবে কিনা তা জানতে চান আদালত।

বিএফআইইউ প্রধান জানান, ২০১৭ থেকে এখন পর্যন্ত ৯৮৩টি রিপোর্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

চিঠি চালাচালির বাইরে আর কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে বিএফআইইউ তা ২৬ অক্টোবরের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পরে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, “এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ফরওয়ার্ডিং আকারে দিতে হয়। প্রতিবেদনে স্বাক্ষর দিতে হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে। কিন্তু প্রতিবেদনে এসবের কিছুর বালাই নেই। আমি বলেছি এটা একটা উদাসীন রিপোর্ট। আদালত ভর্ৎসনা করেছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ কারণে বিএফইউআইয়ের প্রধানকে হাজির হতে বলেছেন।

“আদালত যেভাবে চেয়েছিলেন বিএফআইইউ থেকে সেভাবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। তিনি প্রতিবেদনে বলেছেন, রেসপন্স টু বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা আদালতে বলেছি এটা তো রেসপন্স হয় না। এটা তো দুই বন্ধুর বিষয় না। এটা আদালতের আদেশ। তারা প্রতিবেদন দেবে। কিন্তু বিএফআইইউ বলেছে, জবাব তো হবে না। এটা ওনার লিখিত ব্যাখ্যা হবে। তাদের দাখিল জবাবে ঘাটতি আছে, একারণে তলব করেছেন।”

এর আগে গত ১৪ আগস্ট বিএফআইইউ প্রতিবেদন দিয়ে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউয়ের কাছে চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৭ জুন এফআইইউয়ের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।

অর্থপাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ বিদেশি এফআইইউর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এসব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডব্লিউ)। ২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউর সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ।

ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর এ একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার বিষয়ে তথ্য জানাতে সর্বশেষ গত ১৭ জুনও চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

গত ১০ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি বলে জানান ঢাকায় নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশিরা কত টাকা জমা রেখেছে, ওই তথ্য প্রতি বছর সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক দিয়ে থাকে। ওই অর্থ অবৈধ পথে আয় করা হয়েছে কিনা, এটি আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।