ক্রিকেটারদের উত্তাল সমুদ্রযাত্রা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিল বিসিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:২৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জুলাই ২০২২
  • / ১৭১ Time View

 

একই ফেরিতে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা পৌঁছায় বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। তাদের কিছুই হয়নি। কারণ তারা এমন সমুদ্র ভ্রমণে অভ্যস্ত। তাই আটলান্টিকের ঢেউ ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের টলাতে পারেনি; কিন্তু বাংলাদেশের শরিফুল, নাসুম এবং নুরুল হাসান সোহানসহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটার অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমিসহ সমুদ্র ভ্রমণের সবরকম অসুস্থতা তাদের গ্রাস করে।

উত্তাল সমুদ্রে আটলান্টিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ফেরি ভ্রমণে ক্রিকেটারদের অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারা দেশে এ নিয়ে সাড়া পড়ে যায়।

অনেকে এমনও বলতে থাকেন, মৃত্যুফাঁদে পতিত হয়েছিলেন টাইগার ক্রিকেটাররা। সেই বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে টিম বাংলাদেশ পরদিন প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামতে পারবে কি না? সে সংশয়ও দেখা দিয়েছিল অনেকের মনে। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে ভক্ত ও সমর্থকদের মনে একটা প্রশ্ন এখনো আছে, তাহলো পদ্মা-মেঘনায় ফেরি-লঞ্চে পার হতে অনভ্যস্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আটলান্টিকে ফেরিতে পাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা করা হলো কেন? অনভ্যস্ত ক্রিকেটাররা ওই সমুদ্র যাত্রায় আরো গুরুতর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, ঢেউয়ের তোড়ে তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতে পারে। এমন চিন্তার উদ্রেক কেন ঘটেনি বোর্ড কর্তাদের মনে?

No description available.

বিকল্প ব্যবস্থায় সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা কি নেয়া যেত না ক্রিকেটারদের? মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা আসলেও আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবির অবস্থান তুলে ধরেছেন।

বিসিবি প্রধান নির্বাহী উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অনেক কথার ভিড়ে জানিয়েছেন, ‘আসলে ফেরিতে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার ব্যাপারে বিসিবিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের যেহেতু ফেরিতে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, সে কারণে বিসিবির পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল।’

‘কিন্তু ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড অপারগতা প্রকাশ করেছে অন্য কারণে। তারা জানিয়েছে কোভিড ও অন্য সব কারণে অনেক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। আর বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমান চলাচলও সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এখানে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে খুব ছোট ছোট বিমান যাতায়াত করে।’

‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড আরও জানায়, যে ফেরিতে করে বাংলাদেশ দল আটলান্টিক পাড়ি দেবে, সেটা অনেকটা ক্রুজ শিপের মত। এটা নিয়মিত চলাচল করে এবং বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, আইসিসির অফিসিয়াল, টিভি ক্রু ও ধারাভাষ্যকাররা একইসাথে যাবেন। এই বিষয়টা নিশ্চিত করার পর আমাদেরও আলোচনা থামিয়ে দিতে হয়। কারণ দুই দল একইসঙ্গে ট্রাভেল করছে। তখন বিষয়টা মেনে নিতে হয়। যখন আমাদের দল কোনো দেশে যাবে, যাবতীয় সব দায়িত্ব ওই বোর্ডেরই। যেমন কোনো বিদেশি দল আসলে আমাদের ওপর নির্ভর করতে হয়।’

বিসিবি সিইও আরও জানান, ‘আবহাওয়ার অবস্থা দেখে ফেরি যাত্রাও একদিন পিছিয়েছে। এ ধরনের ভ্রমণে কিছু মোশন সিকনেস হয়। এটার ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে, কি কি গাইডলাইন মানতে হবে আগে বলা হয়েছে। এটা যে একদম অস্বাভাবিক কিছু তা কিন্তু না। সমুদ্রে নড়াচড়ার সময় এসব সমস্যা হয়। শুধু বাংলাদেশের দলের খেলোয়াড়রাই অসুস্থ হয়েছেন তা না। বাজে আবহাওয়ার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দেরও একইরকম অবস্থা হয়েছে। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের এই অভিজ্ঞতা নেই তাই তাদের প্রতিক্রিয়া বেশি ছিল, এটাই স্বাভাবিক। এটাই আমাদের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে যার কারণে আপনারা উদ্বেগ জানাচ্ছেন।’

পুরো বিষয়টিতে বিসিবির দায় নেই। এটা পুরোপুরি স্বাগতিক বোর্ডের বিষয়। একথা জানিয়ে নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের দেশ হলে ভিন্ন ব্যাপার হত। আমরা সফরকারী দলকে আগে প্রাধান্য দিতাম। ওদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের ভেন্যুগুলো এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে। ওদেরও কিছু লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ থাকে। করোনা পরিস্থিতির পর এই পরিস্থিতি ওদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং হয়েছে।’

‘এসব কারণেই হয়ত এমন হচ্ছে। আমরা অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব এবং আমাদের কনসার্ন জানাব, যেন ভবিষ্যতে এমন না হয়। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে- ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখেই আমাদের ফিউচার ট্যুর প্ল্যান বা এ দলের প্ল্যান করে থাকি। এক্ষেত্রে বোর্ড টু বোর্ড সুসম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা বিষয় হল আর সাথে সাথে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম, এ বিষয়টা ঠিক হবে না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’

Please Share This Post in Your Social Media

ক্রিকেটারদের উত্তাল সমুদ্রযাত্রা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিল বিসিবি

Update Time : ১২:২৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জুলাই ২০২২

 

একই ফেরিতে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা পৌঁছায় বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। তাদের কিছুই হয়নি। কারণ তারা এমন সমুদ্র ভ্রমণে অভ্যস্ত। তাই আটলান্টিকের ঢেউ ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের টলাতে পারেনি; কিন্তু বাংলাদেশের শরিফুল, নাসুম এবং নুরুল হাসান সোহানসহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটার অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমিসহ সমুদ্র ভ্রমণের সবরকম অসুস্থতা তাদের গ্রাস করে।

উত্তাল সমুদ্রে আটলান্টিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ফেরি ভ্রমণে ক্রিকেটারদের অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারা দেশে এ নিয়ে সাড়া পড়ে যায়।

অনেকে এমনও বলতে থাকেন, মৃত্যুফাঁদে পতিত হয়েছিলেন টাইগার ক্রিকেটাররা। সেই বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে টিম বাংলাদেশ পরদিন প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামতে পারবে কি না? সে সংশয়ও দেখা দিয়েছিল অনেকের মনে। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে ভক্ত ও সমর্থকদের মনে একটা প্রশ্ন এখনো আছে, তাহলো পদ্মা-মেঘনায় ফেরি-লঞ্চে পার হতে অনভ্যস্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আটলান্টিকে ফেরিতে পাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা করা হলো কেন? অনভ্যস্ত ক্রিকেটাররা ওই সমুদ্র যাত্রায় আরো গুরুতর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, ঢেউয়ের তোড়ে তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতে পারে। এমন চিন্তার উদ্রেক কেন ঘটেনি বোর্ড কর্তাদের মনে?

No description available.

বিকল্প ব্যবস্থায় সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা কি নেয়া যেত না ক্রিকেটারদের? মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা আসলেও আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবির অবস্থান তুলে ধরেছেন।

বিসিবি প্রধান নির্বাহী উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অনেক কথার ভিড়ে জানিয়েছেন, ‘আসলে ফেরিতে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার ব্যাপারে বিসিবিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের যেহেতু ফেরিতে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, সে কারণে বিসিবির পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল।’

‘কিন্তু ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড অপারগতা প্রকাশ করেছে অন্য কারণে। তারা জানিয়েছে কোভিড ও অন্য সব কারণে অনেক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। আর বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমান চলাচলও সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এখানে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে খুব ছোট ছোট বিমান যাতায়াত করে।’

‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড আরও জানায়, যে ফেরিতে করে বাংলাদেশ দল আটলান্টিক পাড়ি দেবে, সেটা অনেকটা ক্রুজ শিপের মত। এটা নিয়মিত চলাচল করে এবং বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, আইসিসির অফিসিয়াল, টিভি ক্রু ও ধারাভাষ্যকাররা একইসাথে যাবেন। এই বিষয়টা নিশ্চিত করার পর আমাদেরও আলোচনা থামিয়ে দিতে হয়। কারণ দুই দল একইসঙ্গে ট্রাভেল করছে। তখন বিষয়টা মেনে নিতে হয়। যখন আমাদের দল কোনো দেশে যাবে, যাবতীয় সব দায়িত্ব ওই বোর্ডেরই। যেমন কোনো বিদেশি দল আসলে আমাদের ওপর নির্ভর করতে হয়।’

বিসিবি সিইও আরও জানান, ‘আবহাওয়ার অবস্থা দেখে ফেরি যাত্রাও একদিন পিছিয়েছে। এ ধরনের ভ্রমণে কিছু মোশন সিকনেস হয়। এটার ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে, কি কি গাইডলাইন মানতে হবে আগে বলা হয়েছে। এটা যে একদম অস্বাভাবিক কিছু তা কিন্তু না। সমুদ্রে নড়াচড়ার সময় এসব সমস্যা হয়। শুধু বাংলাদেশের দলের খেলোয়াড়রাই অসুস্থ হয়েছেন তা না। বাজে আবহাওয়ার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দেরও একইরকম অবস্থা হয়েছে। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের এই অভিজ্ঞতা নেই তাই তাদের প্রতিক্রিয়া বেশি ছিল, এটাই স্বাভাবিক। এটাই আমাদের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে যার কারণে আপনারা উদ্বেগ জানাচ্ছেন।’

পুরো বিষয়টিতে বিসিবির দায় নেই। এটা পুরোপুরি স্বাগতিক বোর্ডের বিষয়। একথা জানিয়ে নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের দেশ হলে ভিন্ন ব্যাপার হত। আমরা সফরকারী দলকে আগে প্রাধান্য দিতাম। ওদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের ভেন্যুগুলো এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে। ওদেরও কিছু লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ থাকে। করোনা পরিস্থিতির পর এই পরিস্থিতি ওদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং হয়েছে।’

‘এসব কারণেই হয়ত এমন হচ্ছে। আমরা অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব এবং আমাদের কনসার্ন জানাব, যেন ভবিষ্যতে এমন না হয়। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে- ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখেই আমাদের ফিউচার ট্যুর প্ল্যান বা এ দলের প্ল্যান করে থাকি। এক্ষেত্রে বোর্ড টু বোর্ড সুসম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা বিষয় হল আর সাথে সাথে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম, এ বিষয়টা ঠিক হবে না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’