কৃষ্ণচূড়ার রঙে সেজেছে নগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:০১:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১
  • / ৭৮৮ Time View
মো: আনিসুল ইসলাম:
বৈশাখের আকাশে ফুটন্ত সূর্য, রোদ্দুরে তপ্ত প্রকৃতি, হঠাৎ হঠাৎ মৃদু গরম হওয়া। করোনার থাবায় ভয়ার্ত রাজধানী লকডাউনের খপ্পরে। জনমানুষ শূন্য পথঘাট। জনজীবনে শঙ্কা-উৎকণ্ঠা থাকলে প্রকৃতি চলছে তার আপন মহিমায়। তাইতো লকডাউনের রাজধানী সেজেছে নানা রঙ ও রূপে। ফুলে-মুকুলে সেজেছে তার চিরচেনা রূপে। করোনার মধ্যেই প্রায় দূষণহীন নগরীর আনাচে-কানাচে উঁকি মারছে গ্রীষ্মের নানা রঙের ফুল।
.
এ ঋতুতে কখনও কালবৈশাখীর রুদ্র তাণ্ডব, কখনও রোদের খড়তাপ। একই সঙ্গে গাছগাছালিতে নানা জাতের পাখিদের কিচির মিচিরও প্রকৃতিতে প্রাণ ফেরার কথাই জানান দিচ্ছে। প্রকৃতি যেন বলছে, ছুঁয়ে যাও আমায়। এমন রুক্ষ গ্রীষ্মে প্রকৃতি সাজছে বাহারি ফুলে। যে ফুল কেড়ে নেয় পথিকের মন। তাই গাছে গাছে ফুটেছে রক্তিম লাল কৃষ্ণচূড়া।
.
এবার করোনার মন খারাপ সময়ে নিরবে সৌন্দর্য্য বিলাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। ঝলমলে রঙের খেলা আর কখনো কখনো বাতাসে সোঁদা গন্ধে আপন ছন্দ তুলে ধরেছে প্রকৃতি। কংক্রিটের ছাই রঙের ঢাকাকে রূপসী করে তুলতে কৃষ্ণচূড়ার অবদানই সবচেয়ে দৃশ্যমান।
.
এখন ঢাকার প্রায় এলাকার অলিগলিতে এই গাছের দেখা মেলে। তবে বিমানবন্দর, সংসদ ভবন, রমনা, হাইকোর্ট প্রাঙ্গন, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুন চোখে পড়ে। কৃষ্ণচূড়ার এই মায়াবী আহ্বান পথচারী সব বয়সের মানুষের হৃদয়কে আন্দোলিত করে। কেননা- দুঃখ, যন্ত্রণা, বঞ্চনা, হতাশা ও সংশয়ে ভরা আমাদের যাপিত জীবনে ফুল ও বৃক্ষ আনন্দ আর প্রেমের এক অফুরান উৎস। কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণ-বৈচিত্র লক্ষণীয়। গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ এবং হালকা হলুদের এক দীর্ঘ বর্ণালীতে বিস্তৃত এর পাপড়ির রং।
.
No description available.
.
প্রথম ফোটার উচ্ছ্বাস আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসলেও বর্ষার শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার গাছ থেকে ফুলের রেশ হারিয়ে যায় না। শুধু ফুল নয়— পাতার ঐশ্বর্যেও কৃষ্ণচূড়া অনন্য। এই পাতার সবুজ রং এবং সুক্ষ্ণ আকৃতি অতিশয় আকর্ষণীয়। গ্রীষ্মের খেয়ালি হাওয়ায় নম্র, নমনীয় পাতাদের নৃত্য বড়ই দৃষ্টি শোভন। কৃষ্ণচূড়ার কচি ফলেরা পাতার মতোই সবুজ। তাই পাতার ভিড়ে সহজে তাদের দেখা যায় না। শীতের হাওয়ায় পাতা ঝরে গেলেই ফল চোখে পড়ে। পাকা ফল গাঢ় ধূসর। পাতাহীন কৃষ্ণচূড়ার শাখায় তখন ফল ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
.
বসন্তে আবার কৃষ্ণচূড়ার দিন ফেরে। একে একে ফিরে আসে পাতার সবুজ, প্রস্ফুটনের বহুবর্ণের দীপ্তি নিঃশব্দে ঝরে পরে বির্বণ ফলেরা। কৃষ্ণচূড়া ফিরে পায় তার দৃষ্টি নন্দন শোভা। গ্রীষ্মের তাপদাহে ক্লান্ত নয়নে প্রশান্তির বার্তাবাহক এই কৃষ্ণচূড়া। উচু আসনে লাল- বসনে রানীর বেশধারী কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতির মাঝে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে যেন। ডালে ডালে চোখ- ধাঁধানো রঙের ঔজ্জ্বল্য ছড়ায় রক্তলাল কৃষ্ণচাড়া।
.
দীর্ঘ, প্রসারিত গাছে ফুলের প্রাচুর্য্য লাল হয়ে ওঠে আকাশে-বাতাসে। এ যেন লাল রঙের এক মায়াবী ক্যানভাস, যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা। বাঙ্গালি কবিতা, সাহিত্য, গান ও বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা নানা ভঙ্গিমায় উঠে এসেছে।
.
কবি শামসুর রহমান লিখেছেন-” আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/কেমন নিবিড় হয়ে।
কখনো মিছিলো কখনো বা/একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়- ফুল নয়, ওরা/শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদবুদ,স্থৃতিগন্ধে ভরপুর।
.
কৃষ্ণচূড়া এক ধরনের বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার ইংরেজি নাম ফ্লেম ট্রি (Flame Tree) এবং বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix Regia)। এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ। আমাাদের দেশে সাধারণত বসন্তকালে এ ফুল ফোটে। ফুটুক না কৃষ্ণচূড়া,ছুঁয়ে দিক মন জেগে উঠুক ভালোবাসার বন্ধন।

Please Share This Post in Your Social Media

কৃষ্ণচূড়ার রঙে সেজেছে নগরী

Update Time : ১২:০১:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১
মো: আনিসুল ইসলাম:
বৈশাখের আকাশে ফুটন্ত সূর্য, রোদ্দুরে তপ্ত প্রকৃতি, হঠাৎ হঠাৎ মৃদু গরম হওয়া। করোনার থাবায় ভয়ার্ত রাজধানী লকডাউনের খপ্পরে। জনমানুষ শূন্য পথঘাট। জনজীবনে শঙ্কা-উৎকণ্ঠা থাকলে প্রকৃতি চলছে তার আপন মহিমায়। তাইতো লকডাউনের রাজধানী সেজেছে নানা রঙ ও রূপে। ফুলে-মুকুলে সেজেছে তার চিরচেনা রূপে। করোনার মধ্যেই প্রায় দূষণহীন নগরীর আনাচে-কানাচে উঁকি মারছে গ্রীষ্মের নানা রঙের ফুল।
.
এ ঋতুতে কখনও কালবৈশাখীর রুদ্র তাণ্ডব, কখনও রোদের খড়তাপ। একই সঙ্গে গাছগাছালিতে নানা জাতের পাখিদের কিচির মিচিরও প্রকৃতিতে প্রাণ ফেরার কথাই জানান দিচ্ছে। প্রকৃতি যেন বলছে, ছুঁয়ে যাও আমায়। এমন রুক্ষ গ্রীষ্মে প্রকৃতি সাজছে বাহারি ফুলে। যে ফুল কেড়ে নেয় পথিকের মন। তাই গাছে গাছে ফুটেছে রক্তিম লাল কৃষ্ণচূড়া।
.
এবার করোনার মন খারাপ সময়ে নিরবে সৌন্দর্য্য বিলাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। ঝলমলে রঙের খেলা আর কখনো কখনো বাতাসে সোঁদা গন্ধে আপন ছন্দ তুলে ধরেছে প্রকৃতি। কংক্রিটের ছাই রঙের ঢাকাকে রূপসী করে তুলতে কৃষ্ণচূড়ার অবদানই সবচেয়ে দৃশ্যমান।
.
এখন ঢাকার প্রায় এলাকার অলিগলিতে এই গাছের দেখা মেলে। তবে বিমানবন্দর, সংসদ ভবন, রমনা, হাইকোর্ট প্রাঙ্গন, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুন চোখে পড়ে। কৃষ্ণচূড়ার এই মায়াবী আহ্বান পথচারী সব বয়সের মানুষের হৃদয়কে আন্দোলিত করে। কেননা- দুঃখ, যন্ত্রণা, বঞ্চনা, হতাশা ও সংশয়ে ভরা আমাদের যাপিত জীবনে ফুল ও বৃক্ষ আনন্দ আর প্রেমের এক অফুরান উৎস। কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণ-বৈচিত্র লক্ষণীয়। গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ এবং হালকা হলুদের এক দীর্ঘ বর্ণালীতে বিস্তৃত এর পাপড়ির রং।
.
No description available.
.
প্রথম ফোটার উচ্ছ্বাস আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসলেও বর্ষার শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার গাছ থেকে ফুলের রেশ হারিয়ে যায় না। শুধু ফুল নয়— পাতার ঐশ্বর্যেও কৃষ্ণচূড়া অনন্য। এই পাতার সবুজ রং এবং সুক্ষ্ণ আকৃতি অতিশয় আকর্ষণীয়। গ্রীষ্মের খেয়ালি হাওয়ায় নম্র, নমনীয় পাতাদের নৃত্য বড়ই দৃষ্টি শোভন। কৃষ্ণচূড়ার কচি ফলেরা পাতার মতোই সবুজ। তাই পাতার ভিড়ে সহজে তাদের দেখা যায় না। শীতের হাওয়ায় পাতা ঝরে গেলেই ফল চোখে পড়ে। পাকা ফল গাঢ় ধূসর। পাতাহীন কৃষ্ণচূড়ার শাখায় তখন ফল ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
.
বসন্তে আবার কৃষ্ণচূড়ার দিন ফেরে। একে একে ফিরে আসে পাতার সবুজ, প্রস্ফুটনের বহুবর্ণের দীপ্তি নিঃশব্দে ঝরে পরে বির্বণ ফলেরা। কৃষ্ণচূড়া ফিরে পায় তার দৃষ্টি নন্দন শোভা। গ্রীষ্মের তাপদাহে ক্লান্ত নয়নে প্রশান্তির বার্তাবাহক এই কৃষ্ণচূড়া। উচু আসনে লাল- বসনে রানীর বেশধারী কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতির মাঝে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে যেন। ডালে ডালে চোখ- ধাঁধানো রঙের ঔজ্জ্বল্য ছড়ায় রক্তলাল কৃষ্ণচাড়া।
.
দীর্ঘ, প্রসারিত গাছে ফুলের প্রাচুর্য্য লাল হয়ে ওঠে আকাশে-বাতাসে। এ যেন লাল রঙের এক মায়াবী ক্যানভাস, যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা। বাঙ্গালি কবিতা, সাহিত্য, গান ও বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা নানা ভঙ্গিমায় উঠে এসেছে।
.
কবি শামসুর রহমান লিখেছেন-” আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/কেমন নিবিড় হয়ে।
কখনো মিছিলো কখনো বা/একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়- ফুল নয়, ওরা/শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদবুদ,স্থৃতিগন্ধে ভরপুর।
.
কৃষ্ণচূড়া এক ধরনের বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার ইংরেজি নাম ফ্লেম ট্রি (Flame Tree) এবং বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix Regia)। এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ। আমাাদের দেশে সাধারণত বসন্তকালে এ ফুল ফোটে। ফুটুক না কৃষ্ণচূড়া,ছুঁয়ে দিক মন জেগে উঠুক ভালোবাসার বন্ধন।