কৃষকদের বিক্ষোভের হুমকি, বন্ধ দিল্লির সীমান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:৪৯:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে আবার দিল্লি এসে বিক্ষোভ করতে চাইছেন কৃষকেরা। সেজন্য হরিয়ানার সঙ্গে দিল্লির সীমানা সিল করে দেয়া হয়েছে।

কৃষকদের দাবি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন করতে হবে। সেই আইন অনুসারে প্রতিবছর প্রধান ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করতে হবে সরকারকে। কৃষকদের ঋণ মাফ করতে হবে। কৃষকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

২০২১ সালে কৃষকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের যাবতীয় অবরোধ সরিয়ে দিয়ে দিল্লি সীমান্তে এসে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাদের সেই প্রতিবাদ এক বছর স্থায়ী হয়েছিল। সেসময় কৃষকদের দাবি মেনে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় মোদী সরকার। এবার তাই কৃষকদের দিল্লির সীমানায় আসতে দিতেই রাজি নয় সরকার।

এবার দুইশটি কৃষক সংগঠন দিল্লি চল-র ডাক দিয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে তাদের সেই যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ১৩ ফেব্রুয়ারি। কৃষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আলোচনা ভেস্তে গেলে দিল্লি অভিযান করার ব্যাপারে কৃষক সংগঠনগুলি বদ্ধপরিকর। আর তাদের থামাবার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে, হরিয়ানা ও কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লির সিঙ্ঘু, টিকরি ও গাজিয়াবাদ সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে রাস্তায় বড় বড় পাথর ও সিমেন্টের চাঙড় ফেলা হয়েছে। তার সামনে সিমেন্ট দিয়ে মোটা মোটা লোহার পেরেক বসানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যাবতীয় প্রতিবাদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লিতে কোনো ট্রাক্টর ঢুকতে দেয়া হবে না। ট্রাকে করে মানুষকেও ঢুকতে দেয়া হবে না বলে প্রশাসন জানিয়েছে। এমনকি বিয়ে ও শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের জন্যও অনুমতি নিতে হবে। সেখানেও কোনো লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে আসা গাড়িগুলি খুব ভালো করে তল্লাশি করে দেখা হবে। দিল্লিতে প্রচুর লোহার ব্যারিকেডও লাগানো হয়েছে। প্রচুর জলকামান রাখা হয়েছে। কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কৃষকেরা যাতে কোনোভাবে দিল্লিতে ঢুকতে না পারে, তার জন্য পুলিশ একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে।

হরিয়ানায় সব পেট্রোল পাম্পকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ট্রাক্টরে ১০ লিটারের বেশি ডিজেল দেয়া যাবে না। হরিয়ানায় দুইটি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেল হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কৃষকদের এখানে আটক করে রাখা হবে। পাঞ্জাব থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রচুর জায়গায় রাস্তা আটকে দেয়া হচ্ছে।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মান বলেছেন, পাকিস্তানের সীমান্তেও এতটা কড়াকড়ি থাকে না, যতটা কৃষকদের আটকাতে করা হয়েছে।

সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীকে একমাত্র কৃষকদের আন্দোলনের সামনে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। চাপের মুখে পড়ে তাকে সংসদে পাশ করা তিনটি কৃষি আইনকে বাতিল করতে হয়েছিল। দিল্লির সীমানায় যাবতীয় চাপ অগ্রাহ্য করে এক বছর ধরে আন্দোলন করেছিলেন কৃষকেরা। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে কৃষকেরা যাতে দিল্লিতে ওই ধরনের আন্দোলন আবার না করতে পারে, তার জন্য মোদী সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, পিটিআই, এএনআই

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কৃষকদের বিক্ষোভের হুমকি, বন্ধ দিল্লির সীমান্ত

Update Time : ০৬:৪৯:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে আবার দিল্লি এসে বিক্ষোভ করতে চাইছেন কৃষকেরা। সেজন্য হরিয়ানার সঙ্গে দিল্লির সীমানা সিল করে দেয়া হয়েছে।

কৃষকদের দাবি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন করতে হবে। সেই আইন অনুসারে প্রতিবছর প্রধান ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করতে হবে সরকারকে। কৃষকদের ঋণ মাফ করতে হবে। কৃষকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

২০২১ সালে কৃষকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের যাবতীয় অবরোধ সরিয়ে দিয়ে দিল্লি সীমান্তে এসে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাদের সেই প্রতিবাদ এক বছর স্থায়ী হয়েছিল। সেসময় কৃষকদের দাবি মেনে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় মোদী সরকার। এবার তাই কৃষকদের দিল্লির সীমানায় আসতে দিতেই রাজি নয় সরকার।

এবার দুইশটি কৃষক সংগঠন দিল্লি চল-র ডাক দিয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে তাদের সেই যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ১৩ ফেব্রুয়ারি। কৃষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আলোচনা ভেস্তে গেলে দিল্লি অভিযান করার ব্যাপারে কৃষক সংগঠনগুলি বদ্ধপরিকর। আর তাদের থামাবার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে, হরিয়ানা ও কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লির সিঙ্ঘু, টিকরি ও গাজিয়াবাদ সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে রাস্তায় বড় বড় পাথর ও সিমেন্টের চাঙড় ফেলা হয়েছে। তার সামনে সিমেন্ট দিয়ে মোটা মোটা লোহার পেরেক বসানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যাবতীয় প্রতিবাদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লিতে কোনো ট্রাক্টর ঢুকতে দেয়া হবে না। ট্রাকে করে মানুষকেও ঢুকতে দেয়া হবে না বলে প্রশাসন জানিয়েছে। এমনকি বিয়ে ও শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের জন্যও অনুমতি নিতে হবে। সেখানেও কোনো লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে আসা গাড়িগুলি খুব ভালো করে তল্লাশি করে দেখা হবে। দিল্লিতে প্রচুর লোহার ব্যারিকেডও লাগানো হয়েছে। প্রচুর জলকামান রাখা হয়েছে। কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কৃষকেরা যাতে কোনোভাবে দিল্লিতে ঢুকতে না পারে, তার জন্য পুলিশ একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে।

হরিয়ানায় সব পেট্রোল পাম্পকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ট্রাক্টরে ১০ লিটারের বেশি ডিজেল দেয়া যাবে না। হরিয়ানায় দুইটি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেল হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কৃষকদের এখানে আটক করে রাখা হবে। পাঞ্জাব থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রচুর জায়গায় রাস্তা আটকে দেয়া হচ্ছে।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মান বলেছেন, পাকিস্তানের সীমান্তেও এতটা কড়াকড়ি থাকে না, যতটা কৃষকদের আটকাতে করা হয়েছে।

সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীকে একমাত্র কৃষকদের আন্দোলনের সামনে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। চাপের মুখে পড়ে তাকে সংসদে পাশ করা তিনটি কৃষি আইনকে বাতিল করতে হয়েছিল। দিল্লির সীমানায় যাবতীয় চাপ অগ্রাহ্য করে এক বছর ধরে আন্দোলন করেছিলেন কৃষকেরা। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে কৃষকেরা যাতে দিল্লিতে ওই ধরনের আন্দোলন আবার না করতে পারে, তার জন্য মোদী সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, পিটিআই, এএনআই