একটি বিড়ালের আত্মকাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:০৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অগাস্ট ২০২০
  • / ৩৩৬ Time View
শেখ ফরিদ:
.
বিড়াল টির নাম টিকু, বাকি সব বিড়ালের তুলনায় সে অনেক টা দুর্বল। তিন দিন আগে বাজারের ডাস্টবিনে পড়ে থাকা একটা ছোট ছোট রুটির টুকরো খেয়েছে। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত কিছু খেতে পায়না, টিকু খুবই ক্ষুধার্ত। পেট পিঠের সাথে লেগে গেছে। তখন সে এক গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকলো। দেখলো গৃহস্থের ছোট ছেলে ভাত খাচ্ছে।
.
বিড়ালটি একটু দূর থেকে ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি যে খাচ্ছে তা দেখছে। কিছুক্ষণ পর মনে হয় ছেলেটির ক্ষুধা মিটে গেছে,তাই সে আর খাচ্ছে না। বাকি খাবার গুলো নষ্ট করে প্লেটে রেখে উঠে চলে গেল। টিকু তখন তাড়াতাড়ি করে ওখানে গিয়ে অবশিষ্ট খাবার গুলো খেতে লাগলো। আর তখনই গৃহস্তের স্ত্রী ছলে আসলো। সে বিড়ালকে খেতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠল, হায়… হায়…. বিড়াল সব খেয়ে ফেললো…।
.
তখন তার হাতের কাছে একটি লাঠি ছিল, তাড়াতাড়ি করে লাঠিটি তোলে বিড়ালের দিকে ছুঁড়ে মারলো। টিকু তখন দৌড়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, কিন্তু লাঠিটা গিয়ে পড়ে তার পিছনের এক পা’য়ে। পা’টা ভেঙে যায়, কোনরকমে টিকু ভাঙ্গা পা নিয়ে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে সে যদি কোন বিড়ালের সামনে পড়তো, তাকে নিয়ে বিড়াল গুলো মজা করত। আরে টিকু ! কোন বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ছিস। তাকে ল্যাংড়া টিকু বলে সব সময় গালি দিত। সব সময়ই বাকি বিড়ালগুলো তাকে জ্বালাতন করত। সে দুর্বল বলে। টিকু এই গ্রামে খুবই অসহায় হয়ে পড়ে। টিকুর গায়ের রং ছিল কালো।
.
একদিন কোত্থেকে একটা কালো বিড়াল এসে, এক গৃহস্থের বাড়ি থেকে একটা মুরগির বাচ্চা চুরি করে। গৃহস্থ তাকে ধরতে পারিনি। শুধু দেখেছে একটা কালো বিড়াল মুরগির বাচ্চা নিয়ে পালাচ্ছে। তারপর থেকেই গৃহস্থের কালো বিড়ালের উপর ক্ষোভ। একদিন টিকু ওই বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। গৃহস্ত তখন তাকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠল,( কালো বিড়াল বলে)। তারমধ্যে একটা লাঠি নিয়ে কিজে দৌড়ানি টা দিলো…..।
.
টিকু কোনরকমে ঝোপঝাড়ে ঢুকে পালালো। টিকুর ওই গ্রামে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পরলো। টিকু ঠিক করে নিলো সে আর এই গ্রামে থাকবে না। (গ্রাম থেকে অনেক দূরে ছিল জঙ্গল)। টিকু জঙ্গলে যাবার সিদ্ধান্ত নিল, ওই দিন রাতেই জঙ্গলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল টিকু।
.
সারারাত হাঁটার পরে, পরের দিন সকাল পেরিয়ে দুপুরের দিকে সে জঙ্গলে পৌঁছালো। একা একা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, সে জঙ্গলে বাঘ, শিয়াল, সহ হিংস্র প্রাণীরাও থাকে। কোন মানুষ সেখানে যায় না সহযে। টিকু কিছুক্ষণ পর সামনে একটা গাছের ডালে দেখল, একটা বুড়ো কাক বসে আছে। কাকটাও তাকে দেখেছে। কাকটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলল। এই যে মশাই, এর আগে তো জঙ্গলে দেখিনি ! নতুন আসলে নাকি। টিকু বলল হ্যাঁ, আমি এই জঙ্গলে আজি এসেছি।
.
কাকটি বলল, আগে কোথায় ছিলে, হঠাৎ জঙ্গলে আশার প্রয়োজন-ই বা মনে করলে কেনো। টিকু বলল, আমি আগে দুরের একটা গ্রামে থাকতাম। তখন কাঁদো কাঁদো মুখে গ্রামের সকল সমস্যার কথা কাক কে বললো। কাকটি তখন বলল, হুম ভাই, মানুষগুলো খুব অহংকারী, সবকিছুই তাদের নিজের মনে করে। আমিও আগে একটা গ্রামে ছিলাম। আমি জানি মানুষ কেমন। সৃষ্টিকর্তা তো আমাকে কাক, তোমাকে বিড়াল বানিয়েছে।
.
আমাদের তো কাজ কর্ম করার ক্ষমতা নেই। আমারা কোন খাদ্য তৈরি করে খেতে পারি না। মানুষের তৈরি করা খাদ্যই আমাদের চুরি করে খেতে হয়। দেখা যায় মানুষের কিছু গৃহপালিত পশু পাখি থাকে, হাঁস, মুরগি, কবুতর, গরু, ছাগল, এদের জন্য তো মানুষ নিজেই খাদ্য তৈরি করে খাওয়ায়। তাদের কাছে মানুষের স্বার্থ আছে বলেই মানুষ তাদের খাওয়ায়। আমরা গৃহপালিত নই। আমরা তো তাদের মতো প্রাণী। আমরাও তো বাঁচতে চাই।
.
আমাদের একটু খাবার দিলেই তো আর চুরি করি না। আমরা তো আর মানুষের মতো পেটুক নই, আমরা একটু খেলেই যথেষ্ট। আমাদের একটু দিলে তাদেরই বা কি ক্ষতি হয়।
.
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

একটি বিড়ালের আত্মকাহিনী

Update Time : ০৫:০৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অগাস্ট ২০২০
শেখ ফরিদ:
.
বিড়াল টির নাম টিকু, বাকি সব বিড়ালের তুলনায় সে অনেক টা দুর্বল। তিন দিন আগে বাজারের ডাস্টবিনে পড়ে থাকা একটা ছোট ছোট রুটির টুকরো খেয়েছে। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত কিছু খেতে পায়না, টিকু খুবই ক্ষুধার্ত। পেট পিঠের সাথে লেগে গেছে। তখন সে এক গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকলো। দেখলো গৃহস্থের ছোট ছেলে ভাত খাচ্ছে।
.
বিড়ালটি একটু দূর থেকে ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি যে খাচ্ছে তা দেখছে। কিছুক্ষণ পর মনে হয় ছেলেটির ক্ষুধা মিটে গেছে,তাই সে আর খাচ্ছে না। বাকি খাবার গুলো নষ্ট করে প্লেটে রেখে উঠে চলে গেল। টিকু তখন তাড়াতাড়ি করে ওখানে গিয়ে অবশিষ্ট খাবার গুলো খেতে লাগলো। আর তখনই গৃহস্তের স্ত্রী ছলে আসলো। সে বিড়ালকে খেতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠল, হায়… হায়…. বিড়াল সব খেয়ে ফেললো…।
.
তখন তার হাতের কাছে একটি লাঠি ছিল, তাড়াতাড়ি করে লাঠিটি তোলে বিড়ালের দিকে ছুঁড়ে মারলো। টিকু তখন দৌড়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, কিন্তু লাঠিটা গিয়ে পড়ে তার পিছনের এক পা’য়ে। পা’টা ভেঙে যায়, কোনরকমে টিকু ভাঙ্গা পা নিয়ে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে সে যদি কোন বিড়ালের সামনে পড়তো, তাকে নিয়ে বিড়াল গুলো মজা করত। আরে টিকু ! কোন বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ছিস। তাকে ল্যাংড়া টিকু বলে সব সময় গালি দিত। সব সময়ই বাকি বিড়ালগুলো তাকে জ্বালাতন করত। সে দুর্বল বলে। টিকু এই গ্রামে খুবই অসহায় হয়ে পড়ে। টিকুর গায়ের রং ছিল কালো।
.
একদিন কোত্থেকে একটা কালো বিড়াল এসে, এক গৃহস্থের বাড়ি থেকে একটা মুরগির বাচ্চা চুরি করে। গৃহস্থ তাকে ধরতে পারিনি। শুধু দেখেছে একটা কালো বিড়াল মুরগির বাচ্চা নিয়ে পালাচ্ছে। তারপর থেকেই গৃহস্থের কালো বিড়ালের উপর ক্ষোভ। একদিন টিকু ওই বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। গৃহস্ত তখন তাকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠল,( কালো বিড়াল বলে)। তারমধ্যে একটা লাঠি নিয়ে কিজে দৌড়ানি টা দিলো…..।
.
টিকু কোনরকমে ঝোপঝাড়ে ঢুকে পালালো। টিকুর ওই গ্রামে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পরলো। টিকু ঠিক করে নিলো সে আর এই গ্রামে থাকবে না। (গ্রাম থেকে অনেক দূরে ছিল জঙ্গল)। টিকু জঙ্গলে যাবার সিদ্ধান্ত নিল, ওই দিন রাতেই জঙ্গলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল টিকু।
.
সারারাত হাঁটার পরে, পরের দিন সকাল পেরিয়ে দুপুরের দিকে সে জঙ্গলে পৌঁছালো। একা একা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, সে জঙ্গলে বাঘ, শিয়াল, সহ হিংস্র প্রাণীরাও থাকে। কোন মানুষ সেখানে যায় না সহযে। টিকু কিছুক্ষণ পর সামনে একটা গাছের ডালে দেখল, একটা বুড়ো কাক বসে আছে। কাকটাও তাকে দেখেছে। কাকটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলল। এই যে মশাই, এর আগে তো জঙ্গলে দেখিনি ! নতুন আসলে নাকি। টিকু বলল হ্যাঁ, আমি এই জঙ্গলে আজি এসেছি।
.
কাকটি বলল, আগে কোথায় ছিলে, হঠাৎ জঙ্গলে আশার প্রয়োজন-ই বা মনে করলে কেনো। টিকু বলল, আমি আগে দুরের একটা গ্রামে থাকতাম। তখন কাঁদো কাঁদো মুখে গ্রামের সকল সমস্যার কথা কাক কে বললো। কাকটি তখন বলল, হুম ভাই, মানুষগুলো খুব অহংকারী, সবকিছুই তাদের নিজের মনে করে। আমিও আগে একটা গ্রামে ছিলাম। আমি জানি মানুষ কেমন। সৃষ্টিকর্তা তো আমাকে কাক, তোমাকে বিড়াল বানিয়েছে।
.
আমাদের তো কাজ কর্ম করার ক্ষমতা নেই। আমারা কোন খাদ্য তৈরি করে খেতে পারি না। মানুষের তৈরি করা খাদ্যই আমাদের চুরি করে খেতে হয়। দেখা যায় মানুষের কিছু গৃহপালিত পশু পাখি থাকে, হাঁস, মুরগি, কবুতর, গরু, ছাগল, এদের জন্য তো মানুষ নিজেই খাদ্য তৈরি করে খাওয়ায়। তাদের কাছে মানুষের স্বার্থ আছে বলেই মানুষ তাদের খাওয়ায়। আমরা গৃহপালিত নই। আমরা তো তাদের মতো প্রাণী। আমরাও তো বাঁচতে চাই।
.
আমাদের একটু খাবার দিলেই তো আর চুরি করি না। আমরা তো আর মানুষের মতো পেটুক নই, আমরা একটু খেলেই যথেষ্ট। আমাদের একটু দিলে তাদেরই বা কি ক্ষতি হয়।
.