ঋণখেলাপিদের ছাড়ের সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:২০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৫৫ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়েছে।

বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট দায়ের করা হয়েছে বলে রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় জানিয়েছেন।

মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এ রিট দায়ের করেন। অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

গত ১৮ জুলাই ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে।

আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। খেলাপি ঋণ নবায়ন করার পর আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিনই এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আব্দুর রউফ তালুকদার নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেওয়ার পাঁচ কার্যদিবসের মাথায় বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো ইচ্ছাকৃত বা অভ্যাসবসত ঋণখেলাপির ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া যাবে না। কোনো খেলাপি ঋণ সাধারণত তিনবার নবায়ন করা যাবে। তবে ঋণ আদায়ের স্বার্থে খেলাপি ঋণ চার দফায়ও নবায়ন করা যাবে। চার বারের বেশি নবায়ন করা যাবে না। বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী তিনবারের বেশি নবায়নের সুযোগ নেই। তবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে তিনবারের বেশি নবায়নের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ ব্যবহার করে কোনো কোনো ঋণ ১৭ দফাও নবায়ন করা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ১০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণ গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৬ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। ১০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণ ৭ বছরের জন্য এবং ৫০০ কোটি টাকা ও এর বেশি অংকের ঋণ সর্বোচ্চ ৮ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।
চলমান ও তলবি ঋণের ৫০ কোটি টাকার কম ৫ বছরের জন্য, ৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ ৬ বছরের জন্য, ৩০০ কোটি টাকা ও এর বেশি ব্যাংকের ঋণ ৭ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।

কৃষিঋণ প্রথম দফায় তিন বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। দ্বিতীয় ও পরবর্তী সময়ে প্রতি দফায় আড়াই বছরের জন্য করা যাবে। ঋণের অংক বিবেচনায় ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রেস পিরিয়ড সর্বোচ্চ ৬ মাস হবে। তবে গ্রাহকের ক্ষতি বিবেচনায় গ্রেস পিরিয়ড সর্বোচ্চ এক বছর করা যাবে।

সার্কুলারে বিভিন্ন ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের হারও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের স্থিতি ১০০ টাকার কম হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৭ শতাংশ বা মোট ঋণের সাড়ে ৪ শতাংশ এর মধ্যে যেটি কম, তা ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে।

১০০ কোটি টাকা বা এর বেশি থেকে ৫০০ কোটি টাকার কম পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৬ শতাংশ ও মোট বকেয়ার সাড়ে ৩ শতাংশের মধ্যে যেটি কম তা ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ঋণখেলাপিদের ছাড়ের সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

Update Time : ০৩:২০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়েছে।

বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট দায়ের করা হয়েছে বলে রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় জানিয়েছেন।

মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এ রিট দায়ের করেন। অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

গত ১৮ জুলাই ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে।

আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫ থেকে ৮ বছরে। এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। খেলাপি ঋণ নবায়ন করার পর আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিনই এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আব্দুর রউফ তালুকদার নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেওয়ার পাঁচ কার্যদিবসের মাথায় বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো ইচ্ছাকৃত বা অভ্যাসবসত ঋণখেলাপির ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া যাবে না। কোনো খেলাপি ঋণ সাধারণত তিনবার নবায়ন করা যাবে। তবে ঋণ আদায়ের স্বার্থে খেলাপি ঋণ চার দফায়ও নবায়ন করা যাবে। চার বারের বেশি নবায়ন করা যাবে না। বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী তিনবারের বেশি নবায়নের সুযোগ নেই। তবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে তিনবারের বেশি নবায়নের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ ব্যবহার করে কোনো কোনো ঋণ ১৭ দফাও নবায়ন করা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ১০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণ গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৬ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। ১০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার কম মেয়াদি ঋণ ৭ বছরের জন্য এবং ৫০০ কোটি টাকা ও এর বেশি অংকের ঋণ সর্বোচ্চ ৮ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।
চলমান ও তলবি ঋণের ৫০ কোটি টাকার কম ৫ বছরের জন্য, ৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ ৬ বছরের জন্য, ৩০০ কোটি টাকা ও এর বেশি ব্যাংকের ঋণ ৭ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।

কৃষিঋণ প্রথম দফায় তিন বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। দ্বিতীয় ও পরবর্তী সময়ে প্রতি দফায় আড়াই বছরের জন্য করা যাবে। ঋণের অংক বিবেচনায় ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রেস পিরিয়ড সর্বোচ্চ ৬ মাস হবে। তবে গ্রাহকের ক্ষতি বিবেচনায় গ্রেস পিরিয়ড সর্বোচ্চ এক বছর করা যাবে।

সার্কুলারে বিভিন্ন ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্টের হারও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের স্থিতি ১০০ টাকার কম হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৭ শতাংশ বা মোট ঋণের সাড়ে ৪ শতাংশ এর মধ্যে যেটি কম, তা ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে।

১০০ কোটি টাকা বা এর বেশি থেকে ৫০০ কোটি টাকার কম পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৬ শতাংশ ও মোট বকেয়ার সাড়ে ৩ শতাংশের মধ্যে যেটি কম তা ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে।