আল্লাহ কি দুনিয়ার জীবনেই দেখিয়ে নিবেন!! মন কিছুতেই ভাল করতে পারছি না !!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:০৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০
  • / ২৪৯ Time View
মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ সামি:
গত মার্চ মাসে লক ডাউনের পর থেকে ২৯ মে পর্যন্ত এক রকম অবস্থার মধ্যে কেটে গেছে, কিন্তু গত ৩০ মে থেকে ফেসবুকে যে পরিমাণ আমার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য গ্রুপের বন্ধু-বান্ধবদের বাবা, মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজন এমনকি নিজেরা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তা দেখে আর মনকে কোন ভাবেই ভালো করতে পারছি না।
.
আক্রান্তের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর লাইনও। বাদ যাচ্ছে না কোন পেশার মানুষ। যাদেরকে আমরা সর্বোচ্চ সচেতন নাগরিক বলতে পা্রি । এপর্যন্ত মারা গেছেন ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, শিক্ষক, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবী কর্মীসহ সাধারণ আমজনতাও। মনকে কোন ভাবেই স্থির করতে পারছিনা যখন দেখি খুব কাছের বন্ধু বান্ধব বা পরিচিত জন আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। এই লাইন আর কত দীর্ঘ হবে, একমাত্র আল্লাহ ভাল জানেন?
.
মন আরো বেশি ভারী হয়ে যায়, যখন দেখি মানুষ মারা যাওয়ার পর দাফনের জন্যে এলাকার মানুষ সহযোগিতা তো দূরে থাক লাশ এলাকায় পর্যন্ত ডুকতে দেয় না। এলাকার মানুষের আর কি বলব, মৃত্যুর ভয়তো সবারই আছে !! এলাকার মানুষ ভয়ে এগুলো করছে যদিও উচিৎ না কিন্তু একান্ত আপনজন যারা, তাদের সাথের সম্পর্কটা ?? প্রতিদিনই কম-বেশি খবরে আসছে মৃত ব্যক্তির লাশ ফেলে স্বজনরা উদাও, তখন আরও বেশি মর্মাহত হই!!
.
এমনই একটি সংবাদ পড়লাম, ফেনীর সোনাগাজীতে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ (জ্বর-শ্বাসকষ্ট) নিয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির । মৃত্যুর পূর্বেই ঘরে আবদ্ধ করে রেখে দেয় এবং মারা যাওয়ার আগে ডাকাডাকি করেছিলেন কেউ সায়তো দেয়ইনি বরং মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা মরদেহ রেখে পালিয়ে যান। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন, মেয়ে ও জামাই কেউই মরদেহ দাফনে এগিয়ে না আসায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। কোন মৃত্যুকেই এখন আর কেউ স্বাভাবিক মনে করতে পারছে না, যেভাবেই মারা যাক কেউ কাছে আসতে চায় না, আর সামান্য উপসর্গ থাকলেতো কথাই নেই!! হায়রে দুনিয়ার মধুর সম্পর্ক !!!
.
আল্লাহ কি দুনিয়ার জীবনেই দেখিয়ে নিবেন!! ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি হাশরের মাঠে নাকি মানুষগুলো কোন এক আতংকে এত চিন্তিত থাকবে যে কেউ কারো পরিচয় দিবে না। কোরআন পড়ে তাই-ই মিলাতে চেষ্টা করলাম, মিলেও যাচ্ছে। ”সেদিন প্রত্যেক মানুষ আপন চিন্তায় বিভোর থাকবে। সেদিন মানুষ তার অতি-নিকটাত্মীয়কে দেখলেও মুখ লুকাবে এবং পালিয়ে বেড়াবে”। [ইবন কাসীর] এ সম্পর্কে সুরা আবাসায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, (আয়াত ৩৩-৩৭) ৩৩। অতঃপর যখন (কিয়ামতের) ধ্বংস-ধ্বনি এসে পড়বে। ৩৪। সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে, ৩৫। এবং তার মাতা ও তার পিতা হতে, ৩৬। তার পত্নী ও তার সন্তান হতে। ৩৭।
.
সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে। এ সম্পর্কে সূরা মা’আরিজ এ আরো বলেন, আর সুহৃদ সুহৃদের খবর নেবে না (১০)। এই আয়াতগুলোর বর্ণনা দেখে মনে হচ্ছে যে, আল্লাহ আমাদের প্রতি হয়তো অসন্তুষ্ট হয়ে গেছেন, তাই দুনিয়াতে সামান্য কিছু হলেও দেখিয়ে দিচ্ছেন।
.
টিভি দেখা অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছি, শুধু অনলাইন পত্রিকা, বিবিসি নিউজ আর ফেসবুকে একটু খোজ-খবর রাখার চেষ্টা করছি, তাতেই মন ভারী হয়ে যাচ্ছে। ইহজাগতিক এমন কোন শক্তি কি আছে আজ যে, এই মহামারি থেকে বিশ্বের মানুষকে বাচাবে? উত্তরটা হবে নিশ্চয় না। তবে একমাত্র আল্লাই পারেন আমাদেরকে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে। কোরআনের বহু জায়গায় উল্লেখ আছে, একমাত্র আল্লাহই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
.
ক্ষমা প্রসংগে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু (২ঃ৩৭)। তাই আমাদের উচিৎ অন্যায়, অত্যাচার, ব্যবিচার, জুলুম, নির্যাতন, মিথ্যা, হিংসা, পরনিন্দা, সুদ-ঘুষসহ যাবতীয় অন্যায় কাজ পরিহার করে নিজেকে একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে দীনের পথে ফিরে আসা।
.
ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি করে নফল ইবাদত, দান- খয়রাত, তওবা ইস্তিগফার এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহার্য্য প্রার্থনা করা, আল্লাহ যেন আমাদের দেশকে এবং দেশের সকল মানুষকে এই মহামারি থেকে রক্ষা করেন। নিজে সচেতন থাকি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, অপরকে মেনে চলতে পরামর্শ দেই। হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

আল্লাহ কি দুনিয়ার জীবনেই দেখিয়ে নিবেন!! মন কিছুতেই ভাল করতে পারছি না !!

Update Time : ১২:০৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০
মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ সামি:
গত মার্চ মাসে লক ডাউনের পর থেকে ২৯ মে পর্যন্ত এক রকম অবস্থার মধ্যে কেটে গেছে, কিন্তু গত ৩০ মে থেকে ফেসবুকে যে পরিমাণ আমার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য গ্রুপের বন্ধু-বান্ধবদের বাবা, মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজন এমনকি নিজেরা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তা দেখে আর মনকে কোন ভাবেই ভালো করতে পারছি না।
.
আক্রান্তের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর লাইনও। বাদ যাচ্ছে না কোন পেশার মানুষ। যাদেরকে আমরা সর্বোচ্চ সচেতন নাগরিক বলতে পা্রি । এপর্যন্ত মারা গেছেন ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, শিক্ষক, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবী কর্মীসহ সাধারণ আমজনতাও। মনকে কোন ভাবেই স্থির করতে পারছিনা যখন দেখি খুব কাছের বন্ধু বান্ধব বা পরিচিত জন আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। এই লাইন আর কত দীর্ঘ হবে, একমাত্র আল্লাহ ভাল জানেন?
.
মন আরো বেশি ভারী হয়ে যায়, যখন দেখি মানুষ মারা যাওয়ার পর দাফনের জন্যে এলাকার মানুষ সহযোগিতা তো দূরে থাক লাশ এলাকায় পর্যন্ত ডুকতে দেয় না। এলাকার মানুষের আর কি বলব, মৃত্যুর ভয়তো সবারই আছে !! এলাকার মানুষ ভয়ে এগুলো করছে যদিও উচিৎ না কিন্তু একান্ত আপনজন যারা, তাদের সাথের সম্পর্কটা ?? প্রতিদিনই কম-বেশি খবরে আসছে মৃত ব্যক্তির লাশ ফেলে স্বজনরা উদাও, তখন আরও বেশি মর্মাহত হই!!
.
এমনই একটি সংবাদ পড়লাম, ফেনীর সোনাগাজীতে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ (জ্বর-শ্বাসকষ্ট) নিয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির । মৃত্যুর পূর্বেই ঘরে আবদ্ধ করে রেখে দেয় এবং মারা যাওয়ার আগে ডাকাডাকি করেছিলেন কেউ সায়তো দেয়ইনি বরং মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা মরদেহ রেখে পালিয়ে যান। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন, মেয়ে ও জামাই কেউই মরদেহ দাফনে এগিয়ে না আসায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। কোন মৃত্যুকেই এখন আর কেউ স্বাভাবিক মনে করতে পারছে না, যেভাবেই মারা যাক কেউ কাছে আসতে চায় না, আর সামান্য উপসর্গ থাকলেতো কথাই নেই!! হায়রে দুনিয়ার মধুর সম্পর্ক !!!
.
আল্লাহ কি দুনিয়ার জীবনেই দেখিয়ে নিবেন!! ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি হাশরের মাঠে নাকি মানুষগুলো কোন এক আতংকে এত চিন্তিত থাকবে যে কেউ কারো পরিচয় দিবে না। কোরআন পড়ে তাই-ই মিলাতে চেষ্টা করলাম, মিলেও যাচ্ছে। ”সেদিন প্রত্যেক মানুষ আপন চিন্তায় বিভোর থাকবে। সেদিন মানুষ তার অতি-নিকটাত্মীয়কে দেখলেও মুখ লুকাবে এবং পালিয়ে বেড়াবে”। [ইবন কাসীর] এ সম্পর্কে সুরা আবাসায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, (আয়াত ৩৩-৩৭) ৩৩। অতঃপর যখন (কিয়ামতের) ধ্বংস-ধ্বনি এসে পড়বে। ৩৪। সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে, ৩৫। এবং তার মাতা ও তার পিতা হতে, ৩৬। তার পত্নী ও তার সন্তান হতে। ৩৭।
.
সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে। এ সম্পর্কে সূরা মা’আরিজ এ আরো বলেন, আর সুহৃদ সুহৃদের খবর নেবে না (১০)। এই আয়াতগুলোর বর্ণনা দেখে মনে হচ্ছে যে, আল্লাহ আমাদের প্রতি হয়তো অসন্তুষ্ট হয়ে গেছেন, তাই দুনিয়াতে সামান্য কিছু হলেও দেখিয়ে দিচ্ছেন।
.
টিভি দেখা অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছি, শুধু অনলাইন পত্রিকা, বিবিসি নিউজ আর ফেসবুকে একটু খোজ-খবর রাখার চেষ্টা করছি, তাতেই মন ভারী হয়ে যাচ্ছে। ইহজাগতিক এমন কোন শক্তি কি আছে আজ যে, এই মহামারি থেকে বিশ্বের মানুষকে বাচাবে? উত্তরটা হবে নিশ্চয় না। তবে একমাত্র আল্লাই পারেন আমাদেরকে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে। কোরআনের বহু জায়গায় উল্লেখ আছে, একমাত্র আল্লাহই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
.
ক্ষমা প্রসংগে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু (২ঃ৩৭)। তাই আমাদের উচিৎ অন্যায়, অত্যাচার, ব্যবিচার, জুলুম, নির্যাতন, মিথ্যা, হিংসা, পরনিন্দা, সুদ-ঘুষসহ যাবতীয় অন্যায় কাজ পরিহার করে নিজেকে একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে দীনের পথে ফিরে আসা।
.
ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি করে নফল ইবাদত, দান- খয়রাত, তওবা ইস্তিগফার এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহার্য্য প্রার্থনা করা, আল্লাহ যেন আমাদের দেশকে এবং দেশের সকল মানুষকে এই মহামারি থেকে রক্ষা করেন। নিজে সচেতন থাকি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, অপরকে মেনে চলতে পরামর্শ দেই। হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।