ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনেরা
স্বৈরশাসন ঠেকাতে কার্যকরী পন্থা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন
- Update Time : ০১:৩৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
- / 22
জাতীয় সংসদে দলগুলোর ভোটের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হলে সেই নির্বাচন স্বৈরশাসন ঠেকাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এই পদ্ধতি প্রণয়নের দাবি উঠেছে। এটার বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনী’ বিষয়ে এক ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন। সমাজ গবেষণা কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো রওনক জাহান বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব প্রস্তাব এসেছে, বেশির ভাগই কাঠামোগত পরিবর্তন কিংবা কাঠামোর পরিবর্তন। ভাবতে হবে, আমাদের এখানে স্বৈরতন্ত্রের যে উত্থান হয়েছে, সেটি কি কাঠামোর অভাবের কারণে? স্বৈরতন্ত্রের জন্য আমাদের সংবিধান কি দায়ী? নাকি আমাদের লংটার্ম কোনো প্র্যাকটিস, কিছু নর্মস? অনেক স্বৈরতান্ত্রিক শাসক মিলিটারি শাসক, তারা তো সংবিধানকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। আবার অনেক স্বৈরতান্ত্রিক শাসক আছেন, যারা সংবিধানের কিছু কাঠামোকে রেখে কাঠামোর যে স্পিরিট, সেটাকে তারা নষ্ট করেছিলেন।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে স্পিরিটটা ছিল, সেটাকে নষ্ট করে দিয়ে তারা তখন সেটাকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কাঠামো ও নতুন আইনের দিকে যতটা মনোযোগ দিচ্ছি, তার চেয়ে আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার গত ৫০ বছরে যেসব অগণতান্ত্রিক প্র্যাকটিস হয়েছে, নর্ম হয়েছে—এগুলোকে আমরা কী করে পরিবর্তন করতে পারব। আমরা কাঠামো ও পদ্ধতি পাল্টাচ্ছি, কিন্তু আসলে একজন এক ব্যক্তির কাছে সব সময় ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে রয়েছে।’
রওনক জাহান বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে এত কথা বলছি, সেখানে কিন্তু আমাদের রাজনীতির সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার নিয়ে তেমন কথা হচ্ছে না। কিন্তু আসলে যদি আমরা দেশটাকে গণতান্ত্রিক করতে চাই, তাহলে কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র আনতে হবে। তা না হলে আমরা কখনই গণতান্ত্রিক হতে পারব না। শুধু কিছু আরপিও দিয়ে বাধ্যবাধকতা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক করা যাবে না। সে জন্য আমার মনে হয় প্রধান যে দায়িত্ব, সেটা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, ‘যে সংস্কারই করা হোক না কেন, সবকিছু নির্ভর করে তা সত্যিকারভাবে বাস্তবায়ন করার ওপর। আর তা কার্যকর করবে রাজনৈতিক দল, যারা পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত হবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শুধু কাঠামোগত পরিবর্তন আনলেই হবে না। যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না ঘটে এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে যদি ঐকমত্য সৃষ্টি না হয়, তাহলে এগুলো টেকসই হবে না। আমাদের রাজনীতিবিদেরা অতীতে অনেক অঙ্গীকার করেছেন কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। রাজনীতিবিদেরা যদি কথা না রাখেন, তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি পরিবর্তন না হয় এবং তাদের মধ্যে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে আমরা যতই কাঠামোগত সংস্কার করি এগুলো টেকসই হবে না।’
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। প্রবন্ধে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সরকারের মেয়াদ হ্রাস (৫ বছর থেকে ৪ বছর), সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ ও আনুপাতিক নির্বাচনের প্রবর্তনসহ ১১টি রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবের পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি তাজুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান এম এম আকাশের সঞ্চালনায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহকারী সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন আলোচনায় অংশ নেন।