নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছালো শিক্ষার্থীরা, প্রসংশায় পঞ্চমুখ জাককানইবি প্রশাসন
- Update Time : ০৬:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১
- / 257
মো: শুভ ইসলাম, জাককানইবি:
শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে প্রসংশায় পঞ্চমুখ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) প্রশাসন।
গত ২৪ জুন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে আংশিক লকডাউন দেওয়াতে চলমান সকল পরীক্ষা স্থগিত করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে সারা বাংলাদেশে শার্টডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এমন্ত অবস্থায় ক্যম্পাসে আসা সকল শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভাগীয় শহর গুলোতে বাসের ব্যবস্থা করে দেয় জাককানইবি প্রশাসন।
২৮ জুন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা ভাস্কর্যের সামনে থেকে সারা দেশের বিভাগীয় শহর গুলোতে শিক্ষার্থীদের কে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৫ বাস ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট,খুলনা, বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এবং সবগুলো বাস কোনো সমস্যা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের কি বিভাগীয় শহর পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। এত ভালো একটা উদ্যোগ নেওয়াতে প্রশংসা জোয়ারে ভাসছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর এ এইচ এম মুস্তফিজুর রহমান।নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারায় খুশি সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জাককানইবি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ইমু বলেন যে,”আটকে থাকা পরীক্ষাগুলোতে স্বশরীরে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে দেশের সব প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে এসেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিক প্রচেষ্টা স্বত্তেও সরকার কর্তৃক ঘোষিত লকডাউনে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়। এমন পরিস্থিতিতে পুনরায় বাড়ি ফিরে যাওয়া নিয়েও তৈরি হয় শঙ্কা। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ফিরে গিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। এমন শিক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় উপাচার্য, পরিবহন প্রশাসন, প্রক্টর অফিস, সকল বিভাগ/দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই প্রশংসার দাবিদার। শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। পারস্পরিক আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় গড়ে উঠে একটি গতিশীল ও আধুনিক ক্যাম্পাস। এভাবেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস”।
শুধু বাড়ি ফেরা ই নয় শিক্ষার্থীদের কাছে এবারের এ ভ্রমণ ছিলো এক অন্য রকমের আনন্দ ভ্রমন যা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষেও স্মৃতির পাতায় রয়ে যাবে৷ এত সুন্দর এবং আনন্দে বাড়ি ফেরা নিয়ে কিছু নজরুলীয়ান দের অনুভূতি তুলে ধরা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয় ১১ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম সুমাইয়া জাহান বলেন,”অনিশ্চয়তায় ছিলাম কিভাবে বাড়ি ফেরা যায় যেহেতু লকডাউন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো একটা ডিসিশান নেয় যে,তাদের সন্তানদের নিজস্ব বাসে করে নিজস্ব বিভাগে পাঠিয়ে দেয়।এতে করে সকলেরই ভোগান্তি কমেছে।আশা রাখছি সকল খারাপ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী দিনগুলোতেও তাদের প্রিয় সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের সাথে এভাবেই থাকবেন”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী নাইমুল আলম পাট্টোয়ারি বলেন “নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাড়িতে যাব, এই ব্যাপারটা অনেকের কাছেই স্বপ্নের মত ছিল। কোনো শিক্ষার্থী এমনকি আমিও কখনো ভাবি নাই এই ব্যাপারটি আমার/ আমাদের সাথে ঘটতে পারে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি, গত ২৮ জুন ২০২১ তারিখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে এই অদ্ভূত ব্যাপারটিই ঘটে থাকে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়িতে পোঁছে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়িতে যাওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম যা ভাষায় বর্ণনা করার মত নয়। এই ভ্রমণটি আমার জীবনে সবসময়ই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কখনো মন খারাপ থাকলে এই ভ্রমণটির কথা মনে পড়লে হয়তো মনটা খুশিতে ভরে উঠবে!”।
বিশ্ববিদ্যালয়েন ১২তম ব্যাচের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী দিয়াব হাসান ইমন বলেন, “আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর অভিভাবক প্রফেসর ড.এ.এইচ.এম. মোস্তাফিজুর রহমান স্যারকে। স্যার এর কারনে আমি মাত্র ১০০ টাকা দিয়া বাড়িতে পৌছাতে সক্ষম হই। আমাদের জন্য খুব সৌভাগ্যের বিষয় হল আমরা প্রফেসর ড. এ.এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান স্যার এর মতো অসাধারণ একজন মানুষকে আমাদের উপাচার্য হিসেবে পেয়েছি”
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের ব্যবস্থাপরা বিভাগের শিক্ষার্থীর মো: তাসমিম আহমেদ বলেন, “আমি প্রথমে ধন্যবাদ দিব আমাদের মাননীয় উপাচার্য ডক্টর এইচএমএম মোস্তাফিজুর রহমান স্যার কে আমাদেরকে সুস্থ-সুন্দর ভাবে এবং নিরাপদ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনের মাধ্যমে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আসলে প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদেরকে বাস দিয়ে সহযোগিতা না করত তাহলে এই শাটডাউনের আমাদের বাসায় যাওয়াটা আসলেই অনেক কষ্ট হতো। আমি আসার সময় দেখেছি রাস্তায় কোন যানবাহনে চলাচল করছিল না। ময়মনসিং থেকে ঢাকায় যেতে কমপক্ষে এক হাজার টাকার মতো খরচ হতো এত টাকা বহন করা ও আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এইজন্য আমি ডিসিশন নিয়েছি এই শাটডাউন আমি ক্যাম্পাসেই থাকবো। আবারো অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে এতোটুকু সহযোগিতা করার জন্য”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন,”বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলমান থাকা অবস্থায় ময়মনসিংহে লকডাউনের কারণে চলমান সকল পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়।অন্যদিকে বাস-ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছাত্র -ছাত্রীরা বাড়িতে ফিরতে পারছিল না।এমতাবস্থায় আমাদের জাককানইবি প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গতকাল সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পের নিজ বাসে করে বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেয়।জাককানইবি এর প্রশাসনের এটি ছিল যথাসময়ে অসাধারণ সিদ্ধান্ত। ধন্যবাদ প্রশাসনকে তাদের যথাসময়ে এতো সুন্দর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব বলেন “ক্যাম্পাসে পরিক্ষা দিতে এসে যখন শাটডাউনের কারণে আমার বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত। তখনই শ্রদ্ধেয় উপাচার্য ডক্টর এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান স্যারের শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত আসে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পাঠানোর। শাটডাউনের কারণে আমার বাড়ি চাঁদপুর যেতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে যেত যা আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি এবং ভেঙে ভেঙে আসতে হবে;যা এই করোনা পরিস্থিতিতে বিপজ্জনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আসায় আমার খরচ হয়েছে মাত্র দুইশত টাকা।
ধন্যবাদ জানাতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এমন মহতী উদ্যোগ নেয়ার জন্য। আরো ধন্যবাদ জানাতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগকে। তাদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের বাসে সিট পেতে সমস্যা হয়নি “।