অবশেষে চা-চপ-সমুচা-সিঙ্গারা নিয়ে মুখ খুললো ঢাবি প্রশাসন
- Update Time : ০৯:৩৫:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
- / 176
নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘১০ টাকায় এক কাপ চা, একটা সিঙ্গারা, একটা চপ এবং একটি সমুচা পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানতে পারলে গিনেস বুকে রেকর্ড হবে।’ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নবীন শিক্ষার্থীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান এ কথা বলেন। এরপরই সেটি দেশজুড়ে ভাইরাল হয়। অবশেষে দীর্ঘ আড়াই বছর পর এ বিষয়ে মুখ খুলেছে ঢাবি প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে টিএসসিতে নবীন শিক্ষার্থীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপাচার্য মহোদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তিনি ক্যাম্পাসের মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক গৌরবময় অধ্যায়ের কথাও বলেন। আর্থিক সঙ্গতি, পারিবারিক পেশা, জাতি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও জন্মস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতাভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
সহজ, সরল, সাধারণ ও সাবলীল জীবনাচারের গুরুত্বের কথাও উপাচার্য বলেন।
অনুষ্ঠান স্থল টিএসসি’র গৌরবময় ভূমিকাও প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে। তিনি নবাগত শিক্ষার্থীদের সাথে হাস্যরসে ক্যাফেটেরিয়ার সাধারণ, স্বল্পমূল্যের খাবার মেন্যু ও সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার অবারিত সেবাকার্যক্রমের কথাগুলোও বলেন। বস্তুত সর্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্য হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের নিজেদের জীবনে এসবের প্রতিফলনের পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সেদিন যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাবিহীন এক সাংবাদিক অনাহূতভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে উপাচার্যের বক্তব্যের মূল অংশ কাটছাট করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বাক্য ও শব্দ অবলোপন করে ক্যাফেটেরিয়ার বিভিন্ন খাবার আইটেমের মূল্যমান সংক্রান্ত বক্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে ১৫-২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল করে। উক্ত সাংবাদিক অবশ্য পরে সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে উপাচার্য বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। প্রসঙ্গত, টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার খাবার মেন্যুর নজিরবিহীন স্বল্পমূল্য বিষয়ে উপাচার্যের মন্তব্য ‘বিবিসি বাংলা’ পরিচালিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সত্য প্রমাণিত হয়।
দেশের কোন কোন দায়িত্বশীল মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত খণ্ডিত বক্তব্য ব্যঙ্গ বিদ্রুপ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করাকে অনাকাঙ্খিত বলা হয়েছে এ বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, সম্প্রতি দুটি বিষয় বিশেষভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। বিষয়গুলো ইতঃপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ‘ব্যঙ্গ বিদ্রুপ’ রূপে উপস্থাপন করেছেন। তখন সেটিকে বৃহত্তর সমাজের কিছু মানুষের ভিন্ন রুচি ও ভিন্ন মূল্যবোধ হিসেবে ধরে আমলে নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি, কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহলও বিভিন্নভাবে সেসব যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছেন, যা খুবই অনাকাক্সিক্ষত। বস্তুত কিছু অসাধুচক্র কোনো অপতথ্য বার বার ব্যবহার করে সেটিকে তথ্যে পরিণত করতে চায়; যা জনমনে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে।
করোনা মহামারিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়নি; কোভিড-১৯ টেস্টিং কার্যক্রম শুরু করে বেশ বিলম্বে; কিছুদিন পর আবার ল্যাব বন্ধ করে দেয়; এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডজনেরও অধিক আরটি-পিসিআর মেশিন থাকা সত্ত্বেও সেসব দিয়ে জাতির মহাদুর্যোগে সেবাকার্যক্রম পরিচালনা না করে বসে আছে। এ বক্তব্যটি বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছিল। প্রকৃত ঘটনা হলো কোনো বিলম্ব ছাড়াই ১৯ মার্চ ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী, জিন প্রকৌশলী ও প্রাণরসায়নবিদদের নিয়ে প্রথম ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ গঠন করে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করে কোভিড মহামারি প্রতিরোধে কতিপয় সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতার প্রস্তাবনা দেয়।
কোভিড-১৯ টেস্ট এর জন্য হাসপাতাল বা ডেডিকেটেড ল্যাবের ন্যায় কোনো ল্যাব ও প্রশিক্ষিত জনবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। তিনটি বিভাগের ল্যাবে পঠন-পাঠন ও নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ০১ (এক) টি করে মোট ০৩ (তিন) টি RT-PCR মেশিন ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যগুলো Conventional PCR মেশিন; সেগুলো কোভিড টেস্ট করার উপযোগী নয়। যাহোক, উল্লিখিত কমিটির মাধ্যমে বিভাগগুলো থেকে ৩টি RT-PCR মেশিন এনে CARS ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে বায়োসেফ্টি নিশ্চিত করে তিন সপ্তাহে তৈরি করা হলো COVID-19 Testing ল্যাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার পর ৫ মে ২০২০ এর উদ্বোধন করা হয়।
প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন শিক্ষক দ্বারা এটি পরিচালিত হতে থাকে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে, ঈদের ছুটির সময়ে ল্যাব পরিচালনায় লোকবলের ঘাটতি পড়ে গেল; কয়েকজন শিক্ষার্থী-স্বেচ্ছাসেবক করোনা সংক্রমিত হলেন এবং RNA Contamination নিরসনে ল্যাব জীবাণুমুক্ত (disinfect) করা প্রয়োজন হলো। অর্থ-সংশ্লেষণ ও বিভাগীয় ল্যাব কার্যক্রম পরিচালনার বিষয় এসবের সাথে জড়িত থাকলেও, মুখ্য নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়ে টেস্টিং কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল; ল্যাব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। প্রায় দশদিন পর যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে, জনবল সংগ্রহ করে, পুনরায় টেস্টিং সেবাকার্যক্রম শুরু হয়; যা এখনো চলমান। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঘটনাক্রমে, টেস্টিং কার্যক্রমের সাময়িক স্থগিতের কারণ হিসেবে ল্যাব পরিচালনায় স্বেচ্ছাসেবক-লোকবল ঘাটতি ও RNA Contamination নিরসন সংক্রান্ত মূল কারণ চাপা পড়ে যায়; অর্থ-সংশ্লেষণের বিষয়টি শীর্ষে উঠে আসে।
বর্তমানে এ ল্যাবটিকে ভাইরোলজি বিষয়ে উচ্চতর গবেষণনার জন্য বায়োলজিক্যাল হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস এ্যান্ড হেল্থ রিসার্চ ল্যাবরেটরি নামে একটি স্বতন্ত্র ল্যাবে রূপান্তর করা হয়েছে। এ ল্যাবে টেস্টিং এর পাশাপাশি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংও করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, কোভিড টেস্টের গুণগত মান ও দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রদান মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাবটি শীর্ষস্থানীয় বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অক্সফোর্ড বা জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে টিকা/ঔষধ আবিষ্কার বা টেস্টিং কিট উদ্ভাবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারেনি। তবে এর কারণ বোধকরি অনেকেই জানেন। উপাচার্যের সিনেট অভিভাষণে-এর প্রতিফলন থাকে।
সমালোচনার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধাশীল। একইসঙ্গে, কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনার রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায় তাহলে দেশের আইন যে তার প্রতিকার দেয় সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
অতি সম্প্রতি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ব্যঙ্গচিত্র ও খণ্ডিত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা হেয় প্রতিপন্ন না হয় সেজন্য আলোচ্য বিষয়টির স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন হলো। বিভ্রান্তিকর ও খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করে কোনো বিশেষ মহল যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে এবং মানহানি না ঘটাতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।