স্বাস্থ্যসচেতনতাই করোনার দ্বিতীয় ধাপ ঠেকানোর মূল উপায়

  • Update Time : ০২:২৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০২০
  • / 203
রাশেদা ইসলাম:
বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মাঝে শৈথিল্য এসেছে। অন্যদিকে ঋতু পরিবর্তনে শীতের আগমন অবধারিত। বাংলাদেশসহ আশেপাশের দেশে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। গভীর রাত ও সকালের দিকে ঠাণ্ডা আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে শীতকালে গ্রাম ও শহর অঞ্চলে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। শীত ও বায়ুদূষণে অধিকতর সংক্রমণের আশঙ্কাও দেখা যায়।
.
দূষিত বায়ুর কবলে পড়ে গ্রাম ও নগরে এমনিতেই সারাবছর আমাদের ঠান্ডা, কাশি,জ্বর জারি, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে তারমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব বা ঢেউয়ের আশাঙ্কায় মানুষের উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
.
ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের কারণে পশ্চিমা দেশ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল তথা ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম,ফ্রান্স ও জার্মানিতে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন ঘোষণা করছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকাতেও একই অবস্থা বিরাজমান।এসব দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
.
এদিকে আমাদের দেশেও আসন্ন শীতে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও শীতের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে ভাইরাস সংক্রমণের বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তার কোনো যৌক্তিক তথ্য বা প্রমাণ এখনো দৃশ্যমান কিংবা স্পষ্ট নয়। তবে তাপমাত্রা ওঠানামার সঙ্গে ভাইরাসের বাঁচা-মরার সম্পর্ক না থাকলেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
এছাড়াও শীতকালে বাতাস শুকনো থাকে আর আর্দ্রতা কম থাকার ফলে ড্রপলেট তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মেঘলা বা শীতল আবহাওয়ায় অথবা শিশির পড়ার ফলে বাতাসে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকতে পারে। এতে ড্রপলেটের মধ্যে থাকা ভাইরাসের আয়ু বেড়ে যায়। ভাইরাস যত বেশি বেঁচে থাকে, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও নাগাদ তত বৃদ্ধি পায়। শীতের তীব্রতায় বাড়ে ঠান্ডাজনিত রোগ।এই ঠান্ডাজনিত রোগ গুলো সাধারণত ভাইরাস জনিত কারণে হয়ে থাকে।
.
এদিকে করোনা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হলো ফুসফুস। আর আমাদের দেশে শীতকালে মানুষের ফুসফুস জনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। যেমন হাঁপানি,ফ্লু,ব্রক্ষাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কনজাংটিভাইটিস ও আর্থ্রাইটিস ইত্যাদির প্রকোপে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই। এরমধ্যে করোনার দ্বিতীয় বিপর্যয়ের ঢেউ আমাদের চরম অবস্থায় ইঙ্গিত দিচ্ছে।বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য দুর্ভোগে সবচেয়ে বেশি। মূলত শ্বাসতন্ত্রের উপরের ও নিচের অংশে সংক্রমণে এই ভাইরাস দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটায়।তাই এটা শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের জন্য একটা বাড়তি ফ্যাক্টর হতে পারে। আবার তাপমাত্রা উঠা নামার সাথে ভাইরাসের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও নানা কারণে বাড়তে পারে করোনা সংক্রমণ এমনটাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
.
করোনা ভ্যাকসিন বা সম্পূর্ণ প্রতিষেধক এখনো বাজারে আসেনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বিশ্বজুড়ে। তাই প্রতিরোধব্যবস্থা মূলক সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই ।এ পরিস্থিতিতে শীতকাল কতটা উদ্বেগের হয়ে উঠতে পারে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কোন ভাইরাস ঠান্ডা আবহাওয়া তথা শীত ও শুষ্ক মৌসুমে অন্য সময়ের চেয়ে অধিকতর বিস্তার লাভে সক্ষম।এছাড়াও শীতকালে তাপমাত্রা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে আদ্রতাও কমে যা শ্বাসনালীর স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায় এবং ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।তা ছাড়াও দায়ী জীবাণু গুলো ধুলোবালি, আক্রান্তের হাঁচি- কাশি অথবা দৈনন্দিন খাবার বা ব্যবহার্য জিনিস থেকে শুষ্ক আবহাওয়ায় খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
.
আমাদের দেশে শীতকালে এমনেও নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। তারমধ্যে করোনার প্রকোপ দূরে ঠেলে সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে চাই বাড়তি সচেতনতা ও বাড়তি সর্তকতা। যার ফলে রোগবালাই ও সংক্রমণ থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা যায়। এদিকে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে করোনা চিকিৎসায় বেশি নজর দেয়া হলেও সংক্রমণ ঠেকানো বা প্রতিরোধের বিষয়ে গুরুত্ব কম ছিল।যার ফলে সংক্রমণ একেবারে শূন্য পর্যায়ে কমে না গিয়ে কয়েক মাস যাবত স্থিতিশীল হয়ে রয়েছে। আবার করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে ফলে বর্তমানে সংক্রমণের সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবত করোনা সংক্রমণের হার প্নিম্নমুখী হলেও হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে ফের সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
.
এ অবস্থায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে করোনার দ্বিতীয় প্রকোপের কথা বলছেন। কিন্তু আমাদের জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব শুরু হয়েছে তা বলার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আর শীতকালে বদ্ধ অবস্থা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। শীতকালে ঠান্ডা আটকাতে সব বন্ধ করে রাখার প্রবণতা আছে আমাদের মাঝে। সেটা বাড়িতে যেমন আবার পরিবহন ও গণপরিবহনেও তেমন। তাই। এই বদ্ধ অবস্থায় একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। যার কারণে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।শীতের সময় মানুষের শরীরে আর্দ্রতা কম থাকে এবং শীতে রোদ কম থাকার ফলে শরীরে ভিটামিন ডি এর যোগান কমে যায় যার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশ কমে যায়।
.
যার জন্য ভাইরাস খুব সহজেই আক্রান্ত করতে পারে আমাদের। তাই শীতকাল বা শীতের তীব্রতা পুরোপুরি শুরু হলে তখন আমাদের পক্ষে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব টেকানোর জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়তে পারে আমাদের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং মানুষকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা। শীত মৌসুমে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভাইরাস এড়ানোর মূলে রয়েছে ব্যক্তি সচেতনতা থেকে জনসাধারণ পর্যন্ত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসচেতনতায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অবলম্বন ও মেনে চলা আর তা প্রয়োগ করা। তাহলে সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব।প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োগ এবং কার্যকর করা এখন যেন সময়ের দাবি হয়ে গেছে।
আমাদের সরকার ইতিমধ্যে ”নো মাস্ক,নো সার্ভিস” নীতি গ্রহণ করে করেছে। সরকারের এ নীতিটি খুবই প্রশংসনীয়। তবে বাস্তব প্রেক্ষিতে এই নীতি সম্পূর্ণভাবে পালন করা বা মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি ও যাচাই বাছাই করতে হবে।কেননা এখনো মাস্ক ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সেবা মিলছে।বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানা ও যৌথ প্রতিষ্ঠানে এ অভিযোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই সরকারের দায়িত্ব রত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যক্তিবর্গ, হাসপাতাল ও অফিস-আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জোর নজর দিতে হবে।তাহলে ”নো মাস্ক, নো সার্ভিস” নীতির প্রয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
.
এদিকে আমাদের দেশে বায়ু দূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে বিভিন্ন ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় নানান রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আর বায়ু দূষণ ও করোনা পরিস্থিতি মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো জটিল ও ভয়াবহ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বায়ু দূষণ প্রতিরোধে গাড়ি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়ায় সতর্ক করতে হবে এবং বিভিন্ন রাস্তায় ও ভিড় মোড়ে নিয়মিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে যাতে ধুলাবালি উঠতে না পারে। আর গ্রামগঞ্জে মাটির রাস্তার ঘাস না তোলার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।
.
দুষিত বিভিন্ন বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে আর মৃত জীবজন্তুর দেহ মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর গাছ না‌ কাটতেও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।এসব ছাড়াও বায়ুদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপ খুবই জরুরী শীতকালে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সবার অর্থাৎ নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের বেশি যত্ন নিতে হবে আর সচেতন করতে হবে । ভিটামিন ডি যুক্ত ও সুষম পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ঠান্ডা খাবার,ঠান্ডা বাতাস ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে আর ফাস্টফুড,চর্বিযুক্ত ও রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও খাবারের আগে ভাল করে হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে।কেননা শীতকালে বাতাসে বিভিন্ন ভাইরাসের ছড়াছড়ি থাকে যা সহজে আমাদের হাত-পায়ে মুখে লেগে যায়। আর ঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস জীবাণুনাশক পরিষ্কার রাখতে হবে।নিয়মিত গোসল করা কাপড় পরিষ্কার রাখতে হবে। এদিকে করোনা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।তাই জ্বর কিংবা অন্যান্য কোন লক্ষণ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করাতে হবে।
.
আমাদের গ্রাম অঞ্চলের মানুষ গুলো একটু ধর্মভীরু তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ধর্মীয় গুরু কিংবা ইমাম ও পুরোহিতদের নির্দেশ দিতে হবে এতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো যাবে। এছাড়াও শীতকালে গ্রাম অঞ্চলে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব অনেকাংশে বেড়ে যায় তাই স্থানীয় প্রশাসনের উচিত তা নজরদারিতে রাখা। অন্যদিকে আবার আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রবাসী প্রতিদিন বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন।
.
এক্ষেত্রে তাদের কোয়ারেন্টাইন ও করোনা টেস্টের ওপর সংযুক্ত কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। এছাড়াও ঠান্ডা জনিত ও ভাইরাস সংক্রমণের বিভিন্ন ওষুধের মজুদ ও বৃদ্ধি করতে হবে। অবশেষে মনে রাখতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের একার পক্ষে এটি ঠেকানো বা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার জনসাধারণ তথা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। করোনা মোকাবেলায় আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। আর ব্যক্তিগত পরিছন্নতা ও সাবধানতা আপাতত সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রাথমিক উপায়। নিজের পরিবার পরিজনদের সুরক্ষিত রাখতে নিজ থেকে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং অন্যকে সচেতন হতে উৎসাহিত করতে হবে।আতঙ্ক নয় সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এ ঝুঁকি সামাল দেওয়ার মতো আমাদের প্রতিরোধেযোগ্য প্রস্তুতি জোরদার করতে হবে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ এবং আমাদের জনগণের সচেতনতা আর সবার সর্বাধিক সাবধানতা অবলম্বন ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় করোনার দ্বিতীয় ওয়েব ঠেকাতে এবং এর ঝুঁকি কমাতে পারবে বলে এমনটা আমাদের প্রত্যাশা।
.
লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ,চট্টগ্রাম কলেজ।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


স্বাস্থ্যসচেতনতাই করোনার দ্বিতীয় ধাপ ঠেকানোর মূল উপায়

Update Time : ০২:২৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০২০
রাশেদা ইসলাম:
বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মাঝে শৈথিল্য এসেছে। অন্যদিকে ঋতু পরিবর্তনে শীতের আগমন অবধারিত। বাংলাদেশসহ আশেপাশের দেশে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। গভীর রাত ও সকালের দিকে ঠাণ্ডা আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে শীতকালে গ্রাম ও শহর অঞ্চলে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। শীত ও বায়ুদূষণে অধিকতর সংক্রমণের আশঙ্কাও দেখা যায়।
.
দূষিত বায়ুর কবলে পড়ে গ্রাম ও নগরে এমনিতেই সারাবছর আমাদের ঠান্ডা, কাশি,জ্বর জারি, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে তারমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব বা ঢেউয়ের আশাঙ্কায় মানুষের উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
.
ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের কারণে পশ্চিমা দেশ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল তথা ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম,ফ্রান্স ও জার্মানিতে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন ঘোষণা করছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকাতেও একই অবস্থা বিরাজমান।এসব দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
.
এদিকে আমাদের দেশেও আসন্ন শীতে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও শীতের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে ভাইরাস সংক্রমণের বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তার কোনো যৌক্তিক তথ্য বা প্রমাণ এখনো দৃশ্যমান কিংবা স্পষ্ট নয়। তবে তাপমাত্রা ওঠানামার সঙ্গে ভাইরাসের বাঁচা-মরার সম্পর্ক না থাকলেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
এছাড়াও শীতকালে বাতাস শুকনো থাকে আর আর্দ্রতা কম থাকার ফলে ড্রপলেট তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মেঘলা বা শীতল আবহাওয়ায় অথবা শিশির পড়ার ফলে বাতাসে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকতে পারে। এতে ড্রপলেটের মধ্যে থাকা ভাইরাসের আয়ু বেড়ে যায়। ভাইরাস যত বেশি বেঁচে থাকে, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও নাগাদ তত বৃদ্ধি পায়। শীতের তীব্রতায় বাড়ে ঠান্ডাজনিত রোগ।এই ঠান্ডাজনিত রোগ গুলো সাধারণত ভাইরাস জনিত কারণে হয়ে থাকে।
.
এদিকে করোনা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হলো ফুসফুস। আর আমাদের দেশে শীতকালে মানুষের ফুসফুস জনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। যেমন হাঁপানি,ফ্লু,ব্রক্ষাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কনজাংটিভাইটিস ও আর্থ্রাইটিস ইত্যাদির প্রকোপে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই। এরমধ্যে করোনার দ্বিতীয় বিপর্যয়ের ঢেউ আমাদের চরম অবস্থায় ইঙ্গিত দিচ্ছে।বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য দুর্ভোগে সবচেয়ে বেশি। মূলত শ্বাসতন্ত্রের উপরের ও নিচের অংশে সংক্রমণে এই ভাইরাস দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটায়।তাই এটা শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের জন্য একটা বাড়তি ফ্যাক্টর হতে পারে। আবার তাপমাত্রা উঠা নামার সাথে ভাইরাসের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও নানা কারণে বাড়তে পারে করোনা সংক্রমণ এমনটাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
.
করোনা ভ্যাকসিন বা সম্পূর্ণ প্রতিষেধক এখনো বাজারে আসেনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বিশ্বজুড়ে। তাই প্রতিরোধব্যবস্থা মূলক সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই ।এ পরিস্থিতিতে শীতকাল কতটা উদ্বেগের হয়ে উঠতে পারে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কোন ভাইরাস ঠান্ডা আবহাওয়া তথা শীত ও শুষ্ক মৌসুমে অন্য সময়ের চেয়ে অধিকতর বিস্তার লাভে সক্ষম।এছাড়াও শীতকালে তাপমাত্রা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে আদ্রতাও কমে যা শ্বাসনালীর স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায় এবং ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।তা ছাড়াও দায়ী জীবাণু গুলো ধুলোবালি, আক্রান্তের হাঁচি- কাশি অথবা দৈনন্দিন খাবার বা ব্যবহার্য জিনিস থেকে শুষ্ক আবহাওয়ায় খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
.
আমাদের দেশে শীতকালে এমনেও নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। তারমধ্যে করোনার প্রকোপ দূরে ঠেলে সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে চাই বাড়তি সচেতনতা ও বাড়তি সর্তকতা। যার ফলে রোগবালাই ও সংক্রমণ থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা যায়। এদিকে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে করোনা চিকিৎসায় বেশি নজর দেয়া হলেও সংক্রমণ ঠেকানো বা প্রতিরোধের বিষয়ে গুরুত্ব কম ছিল।যার ফলে সংক্রমণ একেবারে শূন্য পর্যায়ে কমে না গিয়ে কয়েক মাস যাবত স্থিতিশীল হয়ে রয়েছে। আবার করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে ফলে বর্তমানে সংক্রমণের সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবত করোনা সংক্রমণের হার প্নিম্নমুখী হলেও হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে ফের সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
.
এ অবস্থায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে করোনার দ্বিতীয় প্রকোপের কথা বলছেন। কিন্তু আমাদের জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব শুরু হয়েছে তা বলার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আর শীতকালে বদ্ধ অবস্থা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। শীতকালে ঠান্ডা আটকাতে সব বন্ধ করে রাখার প্রবণতা আছে আমাদের মাঝে। সেটা বাড়িতে যেমন আবার পরিবহন ও গণপরিবহনেও তেমন। তাই। এই বদ্ধ অবস্থায় একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। যার কারণে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।শীতের সময় মানুষের শরীরে আর্দ্রতা কম থাকে এবং শীতে রোদ কম থাকার ফলে শরীরে ভিটামিন ডি এর যোগান কমে যায় যার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশ কমে যায়।
.
যার জন্য ভাইরাস খুব সহজেই আক্রান্ত করতে পারে আমাদের। তাই শীতকাল বা শীতের তীব্রতা পুরোপুরি শুরু হলে তখন আমাদের পক্ষে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব টেকানোর জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়তে পারে আমাদের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং মানুষকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা। শীত মৌসুমে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভাইরাস এড়ানোর মূলে রয়েছে ব্যক্তি সচেতনতা থেকে জনসাধারণ পর্যন্ত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসচেতনতায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অবলম্বন ও মেনে চলা আর তা প্রয়োগ করা। তাহলে সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব।প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োগ এবং কার্যকর করা এখন যেন সময়ের দাবি হয়ে গেছে।
আমাদের সরকার ইতিমধ্যে ”নো মাস্ক,নো সার্ভিস” নীতি গ্রহণ করে করেছে। সরকারের এ নীতিটি খুবই প্রশংসনীয়। তবে বাস্তব প্রেক্ষিতে এই নীতি সম্পূর্ণভাবে পালন করা বা মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি ও যাচাই বাছাই করতে হবে।কেননা এখনো মাস্ক ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সেবা মিলছে।বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানা ও যৌথ প্রতিষ্ঠানে এ অভিযোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই সরকারের দায়িত্ব রত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যক্তিবর্গ, হাসপাতাল ও অফিস-আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জোর নজর দিতে হবে।তাহলে ”নো মাস্ক, নো সার্ভিস” নীতির প্রয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
.
এদিকে আমাদের দেশে বায়ু দূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে বিভিন্ন ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় নানান রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আর বায়ু দূষণ ও করোনা পরিস্থিতি মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো জটিল ও ভয়াবহ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বায়ু দূষণ প্রতিরোধে গাড়ি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়ায় সতর্ক করতে হবে এবং বিভিন্ন রাস্তায় ও ভিড় মোড়ে নিয়মিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে যাতে ধুলাবালি উঠতে না পারে। আর গ্রামগঞ্জে মাটির রাস্তার ঘাস না তোলার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।
.
দুষিত বিভিন্ন বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে আর মৃত জীবজন্তুর দেহ মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর গাছ না‌ কাটতেও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।এসব ছাড়াও বায়ুদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপ খুবই জরুরী শীতকালে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সবার অর্থাৎ নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের বেশি যত্ন নিতে হবে আর সচেতন করতে হবে । ভিটামিন ডি যুক্ত ও সুষম পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ঠান্ডা খাবার,ঠান্ডা বাতাস ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে আর ফাস্টফুড,চর্বিযুক্ত ও রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও খাবারের আগে ভাল করে হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে।কেননা শীতকালে বাতাসে বিভিন্ন ভাইরাসের ছড়াছড়ি থাকে যা সহজে আমাদের হাত-পায়ে মুখে লেগে যায়। আর ঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস জীবাণুনাশক পরিষ্কার রাখতে হবে।নিয়মিত গোসল করা কাপড় পরিষ্কার রাখতে হবে। এদিকে করোনা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।তাই জ্বর কিংবা অন্যান্য কোন লক্ষণ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করাতে হবে।
.
আমাদের গ্রাম অঞ্চলের মানুষ গুলো একটু ধর্মভীরু তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ধর্মীয় গুরু কিংবা ইমাম ও পুরোহিতদের নির্দেশ দিতে হবে এতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো যাবে। এছাড়াও শীতকালে গ্রাম অঞ্চলে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব অনেকাংশে বেড়ে যায় তাই স্থানীয় প্রশাসনের উচিত তা নজরদারিতে রাখা। অন্যদিকে আবার আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রবাসী প্রতিদিন বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন।
.
এক্ষেত্রে তাদের কোয়ারেন্টাইন ও করোনা টেস্টের ওপর সংযুক্ত কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। এছাড়াও ঠান্ডা জনিত ও ভাইরাস সংক্রমণের বিভিন্ন ওষুধের মজুদ ও বৃদ্ধি করতে হবে। অবশেষে মনে রাখতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের একার পক্ষে এটি ঠেকানো বা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার জনসাধারণ তথা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। করোনা মোকাবেলায় আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। আর ব্যক্তিগত পরিছন্নতা ও সাবধানতা আপাতত সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রাথমিক উপায়। নিজের পরিবার পরিজনদের সুরক্ষিত রাখতে নিজ থেকে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং অন্যকে সচেতন হতে উৎসাহিত করতে হবে।আতঙ্ক নয় সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এ ঝুঁকি সামাল দেওয়ার মতো আমাদের প্রতিরোধেযোগ্য প্রস্তুতি জোরদার করতে হবে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ এবং আমাদের জনগণের সচেতনতা আর সবার সর্বাধিক সাবধানতা অবলম্বন ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় করোনার দ্বিতীয় ওয়েব ঠেকাতে এবং এর ঝুঁকি কমাতে পারবে বলে এমনটা আমাদের প্রত্যাশা।
.
লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ,চট্টগ্রাম কলেজ।