গান স্যালুট দিয়ে সৌমিত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন

  • Update Time : ০৮:০৬:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০
  • / 232

কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সন্ধ্যায় তাকে গান স্যালুটে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পূর্ণ মর্যাদায় সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য।

রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার এই প্রবীণ মহাতারকা।

jagonews24

রোববার সন্ধ্যায় কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্নের আগে সৌমিত্রের মরদেদেহ রবীন্দ্র সদনে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় কেওড়াতলায়। হেঁটে শেষ যাত্রায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বসু, রাজ চক্রবর্তী, দেব, কৌশিক সেনসহ অসংখ্য অনেকে।

বেলা আড়াইটার দিকে বেলভিউ হাসপাতাল থেকে শববাহী যানে করে সৌমিত্রের মরদেহ তার গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর বেলা তিনটার দিতে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান স্টুডিও পাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী, টেকনিশিয়ানরা।

দুপুর সাড়ে তিনটা নাগাদ রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাওয়া হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্টরা। এরপরই কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু হয়।

অভিনেতা, অভিনেত্রী, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্তারা ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্তিম যাত্রায় যোগ দেন তার অসংখ্য অনুরাগী। পদযাত্রার প্রতিটি পদে রবীন্দ্রসংগীত ও কবিতায় তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নেয়ার পর সেখানে সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানান। তারপর দেয়া হয় গান স্যালুট। পূর্ণ মর্যাদায় সম্পন্ন হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য।

jagonews24

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্ষীয়ান এই অভিনেতা গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর কয়েক দফায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও উন্নতির খবর পাওয়া যায়। করোনা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন সৌমিত্র। অন্যান্য জটিল রোগের কাছে পরাস্ত হয়ে আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এই কিংবদন্তি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনার সঙ্গে একাধিক রোগে ভুগছিলেন। তিনি প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। এটা নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছিল ফুসফুস ও মস্তিষ্কে। মূত্রথলিতেও সংক্রমণ হয়েছিল তার। এতকিছুর সঙ্গে এই বার্ধক্যে তার শরীর লড়াই করে উঠতে পারছিল না।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে ছিলেন প্রযোজক, গল্পকার, কবি, আবৃত্তিকার। মঞ্চেও দুর্দান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন। পেশাজীবন শুরু করেছেন ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে। পরে সিনেমার জন্য ডাক পান ১৯৫৯ সালে, অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার জন্য। সে ছবি দিয়েই অভিনয় জগতে পা রাখেন। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ২৭টি সিনেমার ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘ফেলুদা’।

jagonews24

সত্যজিৎ ছাড়াও তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো কালজয়ী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, মাধবী মুখার্জি, তনুজাসহ অনেক কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে।

ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই বছরে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


গান স্যালুট দিয়ে সৌমিত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন

Update Time : ০৮:০৬:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০

কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সন্ধ্যায় তাকে গান স্যালুটে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পূর্ণ মর্যাদায় সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য।

রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার এই প্রবীণ মহাতারকা।

jagonews24

রোববার সন্ধ্যায় কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্নের আগে সৌমিত্রের মরদেদেহ রবীন্দ্র সদনে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় কেওড়াতলায়। হেঁটে শেষ যাত্রায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বসু, রাজ চক্রবর্তী, দেব, কৌশিক সেনসহ অসংখ্য অনেকে।

বেলা আড়াইটার দিকে বেলভিউ হাসপাতাল থেকে শববাহী যানে করে সৌমিত্রের মরদেহ তার গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর বেলা তিনটার দিতে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান স্টুডিও পাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী, টেকনিশিয়ানরা।

দুপুর সাড়ে তিনটা নাগাদ রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাওয়া হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্টরা। এরপরই কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু হয়।

অভিনেতা, অভিনেত্রী, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্তারা ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্তিম যাত্রায় যোগ দেন তার অসংখ্য অনুরাগী। পদযাত্রার প্রতিটি পদে রবীন্দ্রসংগীত ও কবিতায় তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নেয়ার পর সেখানে সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানান। তারপর দেয়া হয় গান স্যালুট। পূর্ণ মর্যাদায় সম্পন্ন হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য।

jagonews24

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্ষীয়ান এই অভিনেতা গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর কয়েক দফায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও উন্নতির খবর পাওয়া যায়। করোনা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন সৌমিত্র। অন্যান্য জটিল রোগের কাছে পরাস্ত হয়ে আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এই কিংবদন্তি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনার সঙ্গে একাধিক রোগে ভুগছিলেন। তিনি প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। এটা নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছিল ফুসফুস ও মস্তিষ্কে। মূত্রথলিতেও সংক্রমণ হয়েছিল তার। এতকিছুর সঙ্গে এই বার্ধক্যে তার শরীর লড়াই করে উঠতে পারছিল না।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে ছিলেন প্রযোজক, গল্পকার, কবি, আবৃত্তিকার। মঞ্চেও দুর্দান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন। পেশাজীবন শুরু করেছেন ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে। পরে সিনেমার জন্য ডাক পান ১৯৫৯ সালে, অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার জন্য। সে ছবি দিয়েই অভিনয় জগতে পা রাখেন। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ২৭টি সিনেমার ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘ফেলুদা’।

jagonews24

সত্যজিৎ ছাড়াও তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো কালজয়ী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, মাধবী মুখার্জি, তনুজাসহ অনেক কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে।

ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই বছরে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।