এএসপি আনিসুলকে গাজীপুরে দাফন

- Update Time : ০৫:২৩:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০২০
- / 174
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥
রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মচারীদের মারধরে নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের লাশ গাজীপুরে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুর জেলা শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে মঙ্গলবার সকালে জানাজার নামাজ শেষে স্বজন ও বন্ধুদের আহাজারির মধ্য দিয়ে তাকে সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়েছে।
গাজীপুর শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অনুষ্ঠিত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের জানাজার নামাজে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আজাদ মিয়া, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, গাজীপুর মেট্টো পলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার শরিফুল ইসলামসহ বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা, নিহতের স্বজন ও বন্ধুরাসহ এলাকাবাসী অংশ নেন। পরে তাকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে নিহতের স্বজন, বন্ধু বান্ধব ও এলাকাবাসি নিহতের গাজীপুর মহানগরীর জোড়পুকুরপাড় বরুদা এলাকার বাসায় ভীড় জমাতে থাকে। তাদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মঙ্গলবার সকালে বাসায় গিয়ে দেখা গেছে পুত্রকে হারানোর শোকে নিহতের বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
এসময় তার স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনরা তাদের শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। নিহতের একমাত্র সন্তান চার বছরের শিশু সাফরান স্বজনদের জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করছে তার বাবা কখন ঘুম থেকে উঠবে, কখন বাবা বলে তাকে জড়িয়ে কোলে তুলে নিবে। এসময় শিশু সাফরানের নানা প্রশ্নে উপস্থিত সবার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে।
নিহতের বড় ভাই রেজাউল করিম জানান, আনিসুল করিম শিপন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে বরিশাল মহানগর পুলিশে (বিএমপি) কর্মরত ছিলেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আনিসুল। বাবা ফাইজুদ্দিন আহমেদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সম্মানিয়া ইউনিয়নের আড়াল গ্রামে তাদের গ্রামের বাড়ি।
তবে তারা সিটি কর্পোরেশনের বরুদা এলাকায় প্রায় ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করছেন। জেলা শহরের রাণী বিলাশ মনি সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করেন। তিনি কাজী আজিম উদ্দীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৩তম ব্যাচে লেখাপড়া করে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। আনিসুল ছিলেন মেধাবী ও সদালাপী এবং বন্ধুবৎসল। তিনি ৩১তম বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশের চাকুরীতে যোগদান করেন।
তিনি জানান, ২০১১ সালে আনিসুল করিম শিপন বিয়ে করেন শারমিন সুলতানাকে। এ দম্পতির চার বছর বয়সী সাফরান নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। শিপন খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন। মানসিকভাবে অনেক চাপ নিলেও তিনি কখনো কাউকে কিছু বলতেন না। গত কয়েকদিন ধরে তার কিছুটা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে নিয়ে ঢাকার আদাবর এলাকার মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান তিনি (রেজাউল করিম) ও তার বোন।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কাউন্টারে যখন ভর্তির ফরম পূরণ করা হচ্ছিল তখন কয়েকজন কর্মচারী তাঁকে টেনে হিঁচড়ে দোতলার একটি রুমে নিয়ে যান। সেখানেই সেখানে তারা তাকে হত্যা করা হয়। অথচ এর কিছুক্ষণ পর তাঁদের জানানো হয় আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এরপর স্বজনরা তাকে দ্রুত হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক আনিসুলকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় ওই হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেখানে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। তাঁকে হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এরপর নীল পোশাক পরা আরও দু’জন কর্মচারী তাঁর পা চেপে ধরেন।
এ সময় মাথার দিকে থাকা দু’জন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে তাঁকে আঘাত করছিলেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর আনিসুলকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই তাঁর শরীর নিস্তেজ ছিল। এসময় একজন কর্মচারী তাঁর মুখে পানি ছিটালেও আনিসুল নড়াচড়া করছিলেন না। শিপন হত্যার ঘটনায় বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাইজুদ্দিন আহমেদ বাদি হয়ে রাজধানীর আদাবর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশের মেধাবী কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করে তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নিহতের ভাই রেজাউল করিম।
এদিকে কাওসার আহমেদসহ নিহতের কয়েক বন্ধু ও স্থানীয়রা জানান, সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যার এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বুধবার সকালে শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।