যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ রাজ্যের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব

  • Update Time : ০৭:০৭:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০
  • / 228
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ভোট দিচ্ছেন। দেশটির ভোটের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হবেন নাকি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে হটিয়ে হোয়াইট হাউসের দখল নেবেন তাই এখন দেখার বিষয়। আপাতত সবার চোখ নির্বাচনের ফল নির্ধারণী পাঁচ রাজ্যের দিকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজে জয়ের প্রয়োজন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনের নানাভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় থাকলেও দেখা যাচ্ছে যে, ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ঝুলে আছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাগ্য। গত নির্বাচনে এসব রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন তিনি।

উইসকনসিন ও মিশিগানে বড় ব্যবধানে এগিয়ে বাইডেন। ব্যবধান কম হলেও পেনসিলভানিয়ার তার এগিয়ে থাকার বিষয়টিও স্পষ্ট। এই পেনসিলভানিয়া একাই গোটা নির্বাচনের ফল বদলে দিতে পারে। দোদুল্যমান এই রাজ্যে ভোটের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে দেরি হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন গভর্নর।

রিপাবলিকানদের ঘাঁটিগুলো ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটিগুলো ‘নীল রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল লিখেছে, বাইডেন যদি সাবেক ‘নীল ঘাঁটি’ পেনসিলভানিয়া পুনরুদ্ধার করতে পারেন তাহলে তার হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। গত নির্বাচনে ট্রাম্প এই রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন।

নির্বাচনে জিততে হলে ট্রাম্পকে অবশ্যই জয় পেতে হবে এমন কিছু রাজ্য তার সঙ্গে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই রাজ্যগুলো হলো জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, ওহাইও, ফ্লোরিডা, টেক্সাস আইওয়া ও নর্থ ক্যরোলাইনা। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে এসব রাজ্যের সবগুলোতে ভোট গণনা শেষ হবে না বলেই ধারণা।

পেনসিলভানিয়া
নির্বাচনী কৌশলে টাম্প আর বাইডেন উভয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া। ২০১৬ সালের মতো ট্রাম্প যদি পুনরায় উইসকনসিন এবং মিশিগানে নাও জিততে পারেন তাকে অবশ্যই পেনসিলভানিয়ায় জয় পেতে হবে। এই তিন রাজ্যে জয় ধরে রাখা নিয়েই সংকটে পড়েছেন ট্রাম্প।

আর বাইডেন যদি পেনসিলভানিয়ায় হেরে যান তারপরও জয়ের পথ খোলা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাকে ওহাইও,জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইন এমনকি টেক্সাসেও জিততে হবে। বাইডেন যদি তার জন্মভূমি পেনসিলভানিয়ায় হেরে যান তাহলে অন্য রাজ্যের হারার শঙ্কা রয়েছে। কারণ জরিপে এখানে তিনেই এগিয়ে।

ফাইভথার্টিএইট এর জরিপে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবধান কমেছে বাইডেনের। দুই প্রার্থীর ব্যবধান এখন ৪ দশমিক ৮ পয়েন্টে নেমেছে। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেই এই রাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন ৭ দশমিক ৩ পয়েন্ট ছিল। এই রাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাসই পাওয়া যাচ্ছে।

নিজের জয় নিশ্চিত করতে তাই নির্বাচনের একদিন আগেও ফল নির্ধারণী গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন ট্রাম্প এবং বাইডেন। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, সম্ভবত শুক্রবারের আগে এই রাজ্যের আগাম ফল জানা যাবে না। শুক্রবার পর্যন্ত পেনসিলভানিয়ার ভোটাররা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।

গভর্নর টম উলফ বলেছেন, সব ভোট নিখুঁতভাবে গণনা করতে একটু বেশি সময় লেগে যাবে। তাই ফল আসতেও দেরি হতে পারে। রাজ্যে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন তিনি। বিজ্ঞাপনটি চলতি সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত প্রচার করা হবে। তাই নির্বাচনের পরপরই জয়ী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।

ফ্লোরিডা
জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ফ্লোরিডায় দুই প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা সমান সমান। তবে কিছু নির্বাচনী বিশ্লেষকের বিশ্বাস আবারও সামান্য ব্যবধানে এই রাজ্যে জয় পাবেন ট্রাম্প। বিশেষ করে ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের মতো তিনি এবার যদি লাতিন আমেরিকান ভোটারদের ভোটগুলো না পান।

পুনরায় নির্বাচিত হতে হলে ট্রাম্পকে অবশ্যই ফ্লোরিডায় জিততে হবে। বিগত দুই নির্বাচনে মাত্র এক পয়েন্ট বা তারও কম ব্যবধানে এই রাজ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে। জরিপে গড়ে এক থেকে দুই পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। তবে স্বল্প ব্যবধানে যদি ট্রাম্প পুনরায় এখানে জয় পান তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এই রাজ্যে অনুপস্থিতি ভোটারের আগাম ভোট পড়েছে বেশি। ভোট গণনার নিয়মও পরিবর্তন হয়েছে। ডাকযোগে আসা ভোট গণনা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে নির্বাচনের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতেই ফ্লোরিডার ফল জানা যাবে। এ ছাড়া এই রাজ্যে ৩ নভেম্বরের পর ডাকযোগে ভোটগ্রহণ করা হবে না।

ডাকযোগে ও অনুপস্থিত থাকবেন এমন আগাম ভোটারদের ভোট গণনা হবে আগে। ফলে প্রথমদিকে হয়তো বাইডেন এগিয়ে থাকবেন। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ভোটগ্রহণ শেষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যালট গণনার কাজ হয়তো শেষ হবে। তবে আইনি চ্যালেঞ্জ এবং ধীরগতির গণনার কারণে কয়েকটি কাউন্টিতে দেরিও হতে পারে।

জর্জিয়া
বিস্ময়করভাবে কিছু নির্বাচনী বিশ্লেষক বলছেন ফ্লোরিডার চেয়ে জর্জিয়ায় বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এ রাজ্যে বাইডেন যদি জয় পান তাহলে দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার দরজা হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। জরিপে এখানে দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুব সামান্য। ফলে এই রাজ্যেও দুই প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা সমান সমান।

কয়েক সপ্তাহ ধরে জর্জিয়ার নির্বাচনী কর্মীরা ডাকযোগে আসা ভোট গণনার কাজ করছেন। কিন্তু প্রকৃত গণনা নির্বাচনের দিনের আগে শুরু হবে না। এটা হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে নির্বাচনের দিন রাতে কিংবা বুধবার সকালের মধ্যে রাজ্যের ফল দেওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট।

অ্যারিজোনা
অ্যারিজোনাতেও দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শুধু ১৯৭২ সাল ছাড়া প্রতিটি নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী এই রাজ্যে জয় পেয়েছেন। রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্সের জরিপে গড়ে ট্রাম্প এখানে বাইডেনের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। অথচ সেপ্টেম্বরেও বাইডেনের চেয়ে ৫.৭ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প।

তবে ফাইভথার্টিএইটের জরিপে অবশ্য এখানে ট্রাম্পের চেয়ে ২ দশমিক ৯ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। অক্টোবরের শুরুতে এই ব্যবধান ছিল ৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট। ব্যতিক্রম তিনটি ছাড়া প্রতিটি প্রধান জরিপে অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এই তিন জরিপ নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ আছে।

দুই সপ্তাহ ধরে নির্বাচনের দিন অনুপস্থিত থাকবেন এমন ভোটারদের দেয়া আগাম ভোট এবং ডাকযোগে আসা আগাম ভোট গণনা করছে অ্যারিজোনা। এখানে ভোট শেষ হবে রাত ৯টায়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আগাম ভোটের ফল জানা যাবে। আর নির্বাচনের দিনে ভোটের ফল জানা যাবে ওইদিন রাতেই।

ট্রাম্প যদি অ্যারিজোনায় হেরে যান তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার জেতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এর মানে হচ্ছে এটা হলে তার জন্য জেতাটা হয়ে যাবে বড়ই কঠিন।

নর্থ ক্যারোলাইনা
নর্থ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্প যদি জয় পান পান তাহলে পক্ষে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে চার পয়েন্টরও কম ব্যবধানে এই রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন তিনি। জরিপে দেখা যাচ্ছে এই রাজ্যেও দুই প্রার্থীর সমানে সমান লড়াই হবে। জরিপও এমন ইঙ্গিতিই দিচ্ছে।

ফাইভথার্টিএইট জরিপে গড়ে দুই পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এদিকে রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্সের জরিপে ট্রাম্প ০ দশমিক ৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। নির্বাচনী কর্মীরা বলছেন, আশি শতাংশের বেশি ভোট আগাম পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভোট গণনা চলছে। নির্বাচনের রাতেই ফল পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ রাজ্যের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব

Update Time : ০৭:০৭:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ভোট দিচ্ছেন। দেশটির ভোটের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হবেন নাকি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে হটিয়ে হোয়াইট হাউসের দখল নেবেন তাই এখন দেখার বিষয়। আপাতত সবার চোখ নির্বাচনের ফল নির্ধারণী পাঁচ রাজ্যের দিকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজে জয়ের প্রয়োজন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনের নানাভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় থাকলেও দেখা যাচ্ছে যে, ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ঝুলে আছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাগ্য। গত নির্বাচনে এসব রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন তিনি।

উইসকনসিন ও মিশিগানে বড় ব্যবধানে এগিয়ে বাইডেন। ব্যবধান কম হলেও পেনসিলভানিয়ার তার এগিয়ে থাকার বিষয়টিও স্পষ্ট। এই পেনসিলভানিয়া একাই গোটা নির্বাচনের ফল বদলে দিতে পারে। দোদুল্যমান এই রাজ্যে ভোটের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে দেরি হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন গভর্নর।

রিপাবলিকানদের ঘাঁটিগুলো ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটিগুলো ‘নীল রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল লিখেছে, বাইডেন যদি সাবেক ‘নীল ঘাঁটি’ পেনসিলভানিয়া পুনরুদ্ধার করতে পারেন তাহলে তার হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। গত নির্বাচনে ট্রাম্প এই রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন।

নির্বাচনে জিততে হলে ট্রাম্পকে অবশ্যই জয় পেতে হবে এমন কিছু রাজ্য তার সঙ্গে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই রাজ্যগুলো হলো জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, ওহাইও, ফ্লোরিডা, টেক্সাস আইওয়া ও নর্থ ক্যরোলাইনা। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে এসব রাজ্যের সবগুলোতে ভোট গণনা শেষ হবে না বলেই ধারণা।

পেনসিলভানিয়া
নির্বাচনী কৌশলে টাম্প আর বাইডেন উভয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া। ২০১৬ সালের মতো ট্রাম্প যদি পুনরায় উইসকনসিন এবং মিশিগানে নাও জিততে পারেন তাকে অবশ্যই পেনসিলভানিয়ায় জয় পেতে হবে। এই তিন রাজ্যে জয় ধরে রাখা নিয়েই সংকটে পড়েছেন ট্রাম্প।

আর বাইডেন যদি পেনসিলভানিয়ায় হেরে যান তারপরও জয়ের পথ খোলা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাকে ওহাইও,জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইন এমনকি টেক্সাসেও জিততে হবে। বাইডেন যদি তার জন্মভূমি পেনসিলভানিয়ায় হেরে যান তাহলে অন্য রাজ্যের হারার শঙ্কা রয়েছে। কারণ জরিপে এখানে তিনেই এগিয়ে।

ফাইভথার্টিএইট এর জরিপে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবধান কমেছে বাইডেনের। দুই প্রার্থীর ব্যবধান এখন ৪ দশমিক ৮ পয়েন্টে নেমেছে। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেই এই রাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন ৭ দশমিক ৩ পয়েন্ট ছিল। এই রাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাসই পাওয়া যাচ্ছে।

নিজের জয় নিশ্চিত করতে তাই নির্বাচনের একদিন আগেও ফল নির্ধারণী গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন ট্রাম্প এবং বাইডেন। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, সম্ভবত শুক্রবারের আগে এই রাজ্যের আগাম ফল জানা যাবে না। শুক্রবার পর্যন্ত পেনসিলভানিয়ার ভোটাররা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।

গভর্নর টম উলফ বলেছেন, সব ভোট নিখুঁতভাবে গণনা করতে একটু বেশি সময় লেগে যাবে। তাই ফল আসতেও দেরি হতে পারে। রাজ্যে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন তিনি। বিজ্ঞাপনটি চলতি সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত প্রচার করা হবে। তাই নির্বাচনের পরপরই জয়ী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।

ফ্লোরিডা
জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ফ্লোরিডায় দুই প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা সমান সমান। তবে কিছু নির্বাচনী বিশ্লেষকের বিশ্বাস আবারও সামান্য ব্যবধানে এই রাজ্যে জয় পাবেন ট্রাম্প। বিশেষ করে ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের মতো তিনি এবার যদি লাতিন আমেরিকান ভোটারদের ভোটগুলো না পান।

পুনরায় নির্বাচিত হতে হলে ট্রাম্পকে অবশ্যই ফ্লোরিডায় জিততে হবে। বিগত দুই নির্বাচনে মাত্র এক পয়েন্ট বা তারও কম ব্যবধানে এই রাজ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে। জরিপে গড়ে এক থেকে দুই পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। তবে স্বল্প ব্যবধানে যদি ট্রাম্প পুনরায় এখানে জয় পান তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এই রাজ্যে অনুপস্থিতি ভোটারের আগাম ভোট পড়েছে বেশি। ভোট গণনার নিয়মও পরিবর্তন হয়েছে। ডাকযোগে আসা ভোট গণনা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে নির্বাচনের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতেই ফ্লোরিডার ফল জানা যাবে। এ ছাড়া এই রাজ্যে ৩ নভেম্বরের পর ডাকযোগে ভোটগ্রহণ করা হবে না।

ডাকযোগে ও অনুপস্থিত থাকবেন এমন আগাম ভোটারদের ভোট গণনা হবে আগে। ফলে প্রথমদিকে হয়তো বাইডেন এগিয়ে থাকবেন। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ভোটগ্রহণ শেষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যালট গণনার কাজ হয়তো শেষ হবে। তবে আইনি চ্যালেঞ্জ এবং ধীরগতির গণনার কারণে কয়েকটি কাউন্টিতে দেরিও হতে পারে।

জর্জিয়া
বিস্ময়করভাবে কিছু নির্বাচনী বিশ্লেষক বলছেন ফ্লোরিডার চেয়ে জর্জিয়ায় বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এ রাজ্যে বাইডেন যদি জয় পান তাহলে দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার দরজা হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। জরিপে এখানে দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুব সামান্য। ফলে এই রাজ্যেও দুই প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা সমান সমান।

কয়েক সপ্তাহ ধরে জর্জিয়ার নির্বাচনী কর্মীরা ডাকযোগে আসা ভোট গণনার কাজ করছেন। কিন্তু প্রকৃত গণনা নির্বাচনের দিনের আগে শুরু হবে না। এটা হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে নির্বাচনের দিন রাতে কিংবা বুধবার সকালের মধ্যে রাজ্যের ফল দেওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট।

অ্যারিজোনা
অ্যারিজোনাতেও দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শুধু ১৯৭২ সাল ছাড়া প্রতিটি নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী এই রাজ্যে জয় পেয়েছেন। রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্সের জরিপে গড়ে ট্রাম্প এখানে বাইডেনের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। অথচ সেপ্টেম্বরেও বাইডেনের চেয়ে ৫.৭ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প।

তবে ফাইভথার্টিএইটের জরিপে অবশ্য এখানে ট্রাম্পের চেয়ে ২ দশমিক ৯ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। অক্টোবরের শুরুতে এই ব্যবধান ছিল ৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট। ব্যতিক্রম তিনটি ছাড়া প্রতিটি প্রধান জরিপে অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এই তিন জরিপ নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ আছে।

দুই সপ্তাহ ধরে নির্বাচনের দিন অনুপস্থিত থাকবেন এমন ভোটারদের দেয়া আগাম ভোট এবং ডাকযোগে আসা আগাম ভোট গণনা করছে অ্যারিজোনা। এখানে ভোট শেষ হবে রাত ৯টায়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আগাম ভোটের ফল জানা যাবে। আর নির্বাচনের দিনে ভোটের ফল জানা যাবে ওইদিন রাতেই।

ট্রাম্প যদি অ্যারিজোনায় হেরে যান তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার জেতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এর মানে হচ্ছে এটা হলে তার জন্য জেতাটা হয়ে যাবে বড়ই কঠিন।

নর্থ ক্যারোলাইনা
নর্থ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্প যদি জয় পান পান তাহলে পক্ষে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে চার পয়েন্টরও কম ব্যবধানে এই রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন তিনি। জরিপে দেখা যাচ্ছে এই রাজ্যেও দুই প্রার্থীর সমানে সমান লড়াই হবে। জরিপও এমন ইঙ্গিতিই দিচ্ছে।

ফাইভথার্টিএইট জরিপে গড়ে দুই পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এদিকে রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্সের জরিপে ট্রাম্প ০ দশমিক ৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। নির্বাচনী কর্মীরা বলছেন, আশি শতাংশের বেশি ভোট আগাম পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভোট গণনা চলছে। নির্বাচনের রাতেই ফল পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা।