ডোমারের চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি রেলওয়ের ইঞ্জিন মহড়া

  • Update Time : ০২:০১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০
  • / 251
মোসাদ্দেকুর রহমান সাজু,ডোমার নিলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি হলদিবাড়ি সীমান্তে বাংলাদেশ রেলওয়ে ইঞ্জিনের মহড়া সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ৬ দশমিক ৭ শত ২৪ কিঃমিঃ বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইঞ্জিনের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
.
বাংলাদেশের ইঞ্জিনটি (নো ম্যানস ল্যান্ড) সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যান ইঞ্জিন চালক (লোক মাষ্টার ) মনিরুল ইসলাম এবং সহকারী চালক আব্দুল মান্নাফ। এর আগে ইঞ্জিনের মহড়ার সূচনাকালে চিলাহাটি স্টেশন থেকে ফিতা কেটে শুভ উদ্বোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, ডোমার থানা অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান।
.
উদ্বোধন শেষে দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। জেলা প্রশাসক সহ ইঞ্জিনের সাথে মহড়ায় অংশ নেন, নীলফামারী ৫৬ বিজিবি অধিনায়ক লেঃকর্ণেল মামুনুল হক,পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাতাহ্ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, পাকশী বানিজ্যিক বিভাগীয় কর্মকর্তা আনন্দ মোহন চক্রবর্তী, পাকশী বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকম প্রকৌশলী রুবাইয়াত শরীফ, রেলপথ নির্মানের প্রকল্পপরিচালক প্রকৌশলী আঃ রহিম, পার্বতীপুর রেলওয়ে চীফ ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম সহ গণমাধ্যম কর্মীরা।
.
ভারতের হলদিবাড়ি সীমানায় পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান ভারতের উওরপূর্ব সীমান্ত রেলের চীফ ইঞ্জিনিয়ার (কনাষ্টা্কশন) এনজেপি ভিকে মিনা, ডি এস টি আই সুভাষ সরকার, এডিএন ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ কুমার ও বিপ্লব ঘোষ প্রমুখ। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের সাথে প্রায় ঘন্টাব্যাপি আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সাফল্যের সাথে ইঞ্জিনের মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি বিজয় দিবসকে সামনে রেখে এই পথে প্রথমে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
.
পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাতাহ্ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, কোন রকম সমস্যা ছাড়া ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিলাহাটি স্টেশন থেকে ২ দশমিক ৩৬ কিঃমিঃ লুপলাইনের কাজ বাকী রয়েছে, তবে এটি ১৬ই ডিসেম্বরের আগেই শেষ হয়ে যাবে। চিলাহাটি হলদিবাড়ি রেলপথ নির্মানের বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক আঃ রহিম জানান, চলতি বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নতুন আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ উদ্বোধন করবেন।
.
এছাড়া আগামী ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।গত ৮ অক্টোবর ভারতীয় উওরপূর্ব সীমান্ত রেলের ইঞ্জিনের মহড়া সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং আজকে ও সাফল্যের সাথে ইঞ্জিনের ট্রায়াল শেষ করলাম।
.
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় সীমান্তের স্থানে যেখানে দুই দেশের রেললাইন সংযুক্ত হয়েছে, সেই স্থানটি বিশেষ ভাবে চিন্হিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অংশে লালা-সবুজ এবং ভারতীয় অংশে লাল-সাদা। তারকাটা কেটে ভারতের পক্ষে নির্মান করা হয়েছে খাঁচার মতো দরজা। দুই দেশের ট্রেন প্রবেশের সময় সেই দরজা খুলে যাবে। তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তান ও ভারতের যোগাযোগ স্থাপনের জন্যে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এই পথেই ট্রেন চলত।
.
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর হলদিবাড়ি চিলাহাটি রুটে ইঞ্জিনের মহড়া দেখতে দুই দেশের বহু মানুষ সীমান্তে হাজির হয়েছিলেন। ইঞ্জিন মহড়ার সময় সীমান্তে কড়া নজরদারিতে ছিলেন দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। দুই দেশের রেল ইঞ্জিনের মহড়া সাফল্যের সাথে শেষ হওয়ায় এখন শুধু বাকী রয়েছে এই রুটে আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা মাত্র।
.
চিলাহাটি স্টেশন থেকে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিঃমিঃ রেলপথ বিছানো হয়, ভারতের হলদিবাড়ি ও শিলিগুড়ি পর্যন্ত ৫৪ কিঃমিঃ রেলপথ রয়েছে। চিলাহাটি থেকে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিঃমিঃ, আর ঢাকা থেকে চিলাহাটির দূরত্ব ৫২৬ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৫৯১ কিলোমিটার।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ডোমারের চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি রেলওয়ের ইঞ্জিন মহড়া

Update Time : ০২:০১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০
মোসাদ্দেকুর রহমান সাজু,ডোমার নিলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি হলদিবাড়ি সীমান্তে বাংলাদেশ রেলওয়ে ইঞ্জিনের মহড়া সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ৬ দশমিক ৭ শত ২৪ কিঃমিঃ বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইঞ্জিনের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
.
বাংলাদেশের ইঞ্জিনটি (নো ম্যানস ল্যান্ড) সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যান ইঞ্জিন চালক (লোক মাষ্টার ) মনিরুল ইসলাম এবং সহকারী চালক আব্দুল মান্নাফ। এর আগে ইঞ্জিনের মহড়ার সূচনাকালে চিলাহাটি স্টেশন থেকে ফিতা কেটে শুভ উদ্বোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, ডোমার থানা অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান।
.
উদ্বোধন শেষে দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। জেলা প্রশাসক সহ ইঞ্জিনের সাথে মহড়ায় অংশ নেন, নীলফামারী ৫৬ বিজিবি অধিনায়ক লেঃকর্ণেল মামুনুল হক,পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাতাহ্ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, পাকশী বানিজ্যিক বিভাগীয় কর্মকর্তা আনন্দ মোহন চক্রবর্তী, পাকশী বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকম প্রকৌশলী রুবাইয়াত শরীফ, রেলপথ নির্মানের প্রকল্পপরিচালক প্রকৌশলী আঃ রহিম, পার্বতীপুর রেলওয়ে চীফ ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম সহ গণমাধ্যম কর্মীরা।
.
ভারতের হলদিবাড়ি সীমানায় পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান ভারতের উওরপূর্ব সীমান্ত রেলের চীফ ইঞ্জিনিয়ার (কনাষ্টা্কশন) এনজেপি ভিকে মিনা, ডি এস টি আই সুভাষ সরকার, এডিএন ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ কুমার ও বিপ্লব ঘোষ প্রমুখ। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের সাথে প্রায় ঘন্টাব্যাপি আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সাফল্যের সাথে ইঞ্জিনের মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি বিজয় দিবসকে সামনে রেখে এই পথে প্রথমে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
.
পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাতাহ্ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, কোন রকম সমস্যা ছাড়া ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিলাহাটি স্টেশন থেকে ২ দশমিক ৩৬ কিঃমিঃ লুপলাইনের কাজ বাকী রয়েছে, তবে এটি ১৬ই ডিসেম্বরের আগেই শেষ হয়ে যাবে। চিলাহাটি হলদিবাড়ি রেলপথ নির্মানের বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক আঃ রহিম জানান, চলতি বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নতুন আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ উদ্বোধন করবেন।
.
এছাড়া আগামী ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।গত ৮ অক্টোবর ভারতীয় উওরপূর্ব সীমান্ত রেলের ইঞ্জিনের মহড়া সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং আজকে ও সাফল্যের সাথে ইঞ্জিনের ট্রায়াল শেষ করলাম।
.
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় সীমান্তের স্থানে যেখানে দুই দেশের রেললাইন সংযুক্ত হয়েছে, সেই স্থানটি বিশেষ ভাবে চিন্হিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অংশে লালা-সবুজ এবং ভারতীয় অংশে লাল-সাদা। তারকাটা কেটে ভারতের পক্ষে নির্মান করা হয়েছে খাঁচার মতো দরজা। দুই দেশের ট্রেন প্রবেশের সময় সেই দরজা খুলে যাবে। তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তান ও ভারতের যোগাযোগ স্থাপনের জন্যে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এই পথেই ট্রেন চলত।
.
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর হলদিবাড়ি চিলাহাটি রুটে ইঞ্জিনের মহড়া দেখতে দুই দেশের বহু মানুষ সীমান্তে হাজির হয়েছিলেন। ইঞ্জিন মহড়ার সময় সীমান্তে কড়া নজরদারিতে ছিলেন দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। দুই দেশের রেল ইঞ্জিনের মহড়া সাফল্যের সাথে শেষ হওয়ায় এখন শুধু বাকী রয়েছে এই রুটে আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা মাত্র।
.
চিলাহাটি স্টেশন থেকে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিঃমিঃ রেলপথ বিছানো হয়, ভারতের হলদিবাড়ি ও শিলিগুড়ি পর্যন্ত ৫৪ কিঃমিঃ রেলপথ রয়েছে। চিলাহাটি থেকে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিঃমিঃ, আর ঢাকা থেকে চিলাহাটির দূরত্ব ৫২৬ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৫৯১ কিলোমিটার।