ঢাবির ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা

  • Update Time : ০৬:১১:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
  • / 43

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। এ সময় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯৭৩ কোটি ৫ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটেরও অনুমোদন করা হয়। সে হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অর্থবছরে বাজেটের আকার কমেছে। তবে নতুন এই বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ২ দশমিক ১২ শতাংশ)। গত দুই বছরের তুলনায় সেটি বাড়লেও যৎসামান্য বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আলাদাভাবে উদ্ভাবন ও শিক্ষা উন্নয়ন প্রভৃতি খাতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এই বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। সভায় বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন সিনেট চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা ছিল ১১৩১ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু ইউজিসি বরাদ্দ করেছে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ ৩২৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা কম। গত ১১ জুন এই অর্থবছরের জন্য সিন্ডিকেট ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার প্রস্তাবিত পরিচালন বাজেট অনুমোদন করে।

বাজেটে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন-ভাতায় বরাদ্দ বেড়েছে। বেতনে খরচ দেখানো হয়েছে ২৯৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা যা মোট বাজেটের ৩১.৬৫ শতাংশ। বিভিন্ন ভাতাবাবদ ২১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, পণ্য ও সেবা খাতে ২২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে যা যথাক্রমে বাজেটের ২৩.১২ শতাংশ ও ২৩.৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাজেটের ৭৮ শতাংশই এই খাতগুলোতে ব্যয় হবে। গত বছর এসব খাতে ৭৬ শতাংশ খরচ দেখানো হয়েছিল।  

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫  হাজার টাকার বাজেটে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা আয় হবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুদান থেকে যা মোট আয়ের ৮৫.১১ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় দেখানো হয়েছে ৯০ কোটি টাকা (বাজেটের ৯.৫২ শতাংশ), যা গতবার ছিল ৮৫ কোটি টাকা। ফলে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬০ কোটি ৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা যা মোট বাজেটের ৬.৫৮ শতাংশ। এবার ঘাটতি ৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা যা মোট বাজেটের ৫.৩৭ শতাংশ।

বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ২ দশমিক ১২ শতাংশ)। গত দুই অর্থবছরে যা ছিল ১৫ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ)। আলোচনা-সমালোচনার পর ৫ কোটি টাকা বাড়ালেও শিক্ষক-গবেষকদের সংখ্যানুপাতে যা যৎসামান্যই। উদ্ভাবনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা।

এরূপ বাজেটের জন্য সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বরাদ্দ কম থাকাকে দায়ী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আমরা যে চাহিদা বিমক-এর নিকট প্রেরণ করি তা ছিল ১১৩১১৭.১৪ লাখ টাকা। বিমক আমাদেরকে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় ৩২৬৭৬.১৪ লাখ টাকা কম বরাদ্দ দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়কে কাল্পনিকভাবে বেশি করে ধরে দিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থী পূর্বের তুলনায় কম সংখ্যক ভর্তি করা হচ্ছে।ছাত্রদের টিউশন ফি বৃদ্ধি করা হয় নি। ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে নিজস্ব আয় হিসেবে দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। বছর শেষে সংশোধিত বাজেটে দেখানো হল ৯০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা আরো বৃদ্ধি করে দেখানো হল ৯৪ কোটি টাকা। আয়ের এই প্রবৃদ্ধি বিমক কিভাবে নির্ণয় করলেন তা আমাদের নিকট বোধগম্য নয়।

সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা ক্রমশ এই বিদ্যাপীঠকে গবেষণাপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছি। উন্নত দেশে গবেষণাপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ফেলোশিপ প্রোগ্রামও চালু থাকে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ডক্টরাল ফেলোশিপ প্রোগ্রাম’ চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি এবং একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঢাবির ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা

Update Time : ০৬:১১:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। এ সময় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯৭৩ কোটি ৫ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটেরও অনুমোদন করা হয়। সে হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অর্থবছরে বাজেটের আকার কমেছে। তবে নতুন এই বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ২ দশমিক ১২ শতাংশ)। গত দুই বছরের তুলনায় সেটি বাড়লেও যৎসামান্য বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আলাদাভাবে উদ্ভাবন ও শিক্ষা উন্নয়ন প্রভৃতি খাতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এই বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। সভায় বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন সিনেট চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা ছিল ১১৩১ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু ইউজিসি বরাদ্দ করেছে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ ৩২৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা কম। গত ১১ জুন এই অর্থবছরের জন্য সিন্ডিকেট ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার প্রস্তাবিত পরিচালন বাজেট অনুমোদন করে।

বাজেটে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন-ভাতায় বরাদ্দ বেড়েছে। বেতনে খরচ দেখানো হয়েছে ২৯৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা যা মোট বাজেটের ৩১.৬৫ শতাংশ। বিভিন্ন ভাতাবাবদ ২১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, পণ্য ও সেবা খাতে ২২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে যা যথাক্রমে বাজেটের ২৩.১২ শতাংশ ও ২৩.৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাজেটের ৭৮ শতাংশই এই খাতগুলোতে ব্যয় হবে। গত বছর এসব খাতে ৭৬ শতাংশ খরচ দেখানো হয়েছিল।  

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫  হাজার টাকার বাজেটে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা আয় হবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুদান থেকে যা মোট আয়ের ৮৫.১১ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় দেখানো হয়েছে ৯০ কোটি টাকা (বাজেটের ৯.৫২ শতাংশ), যা গতবার ছিল ৮৫ কোটি টাকা। ফলে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬০ কোটি ৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা যা মোট বাজেটের ৬.৫৮ শতাংশ। এবার ঘাটতি ৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা যা মোট বাজেটের ৫.৩৭ শতাংশ।

বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ২ দশমিক ১২ শতাংশ)। গত দুই অর্থবছরে যা ছিল ১৫ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ)। আলোচনা-সমালোচনার পর ৫ কোটি টাকা বাড়ালেও শিক্ষক-গবেষকদের সংখ্যানুপাতে যা যৎসামান্যই। উদ্ভাবনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা।

এরূপ বাজেটের জন্য সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বরাদ্দ কম থাকাকে দায়ী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আমরা যে চাহিদা বিমক-এর নিকট প্রেরণ করি তা ছিল ১১৩১১৭.১৪ লাখ টাকা। বিমক আমাদেরকে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় ৩২৬৭৬.১৪ লাখ টাকা কম বরাদ্দ দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়কে কাল্পনিকভাবে বেশি করে ধরে দিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থী পূর্বের তুলনায় কম সংখ্যক ভর্তি করা হচ্ছে।ছাত্রদের টিউশন ফি বৃদ্ধি করা হয় নি। ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে নিজস্ব আয় হিসেবে দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। বছর শেষে সংশোধিত বাজেটে দেখানো হল ৯০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা আরো বৃদ্ধি করে দেখানো হল ৯৪ কোটি টাকা। আয়ের এই প্রবৃদ্ধি বিমক কিভাবে নির্ণয় করলেন তা আমাদের নিকট বোধগম্য নয়।

সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা ক্রমশ এই বিদ্যাপীঠকে গবেষণাপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছি। উন্নত দেশে গবেষণাপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ফেলোশিপ প্রোগ্রামও চালু থাকে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ডক্টরাল ফেলোশিপ প্রোগ্রাম’ চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি এবং একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করা হবে।