শীতের সবজির দামও এখন আকাশচুম্বী

  • Update Time : ০২:৪৮:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২
  • / 237

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভরা মৌসুমেও চড়া দাম শীতের সবজির। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে নাভিশ্বাস মানুষের। চাল, ডাল, ডিম, চিনি ও তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। শীতের সবজিতেও ফেরেনি স্বস্তি। শুধুমাত্র মুলা ও পেঁপের দাম কিছুটা কম। ভরা মৌসুম চললেও এই দুই পদের সবজি ছাড়া অন্য প্রায় সব সবজির দাম চড়া।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে শীতকালীন সবজির প্রচুর আমদানি রয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম কমেনি। এ নিয়ে ক্রেতাদের অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও দোকান ভাড়া, আমদানি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিকে দাম বাড়ার কারণ বলছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

বাজারে সবজির দাম জানতে চাইলে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজারের বিক্রেতা শফিক মিয়া বলেন, পেঁপে ৩০ আর মুলা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন অন্যান্য সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কেনাবেচা চলছে। মৌসুমি সবজি ছাড়া অন্যান্য সবজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই বাজারের অন্যান্য দোকান এবং আরও দুটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। ভরা মৌসুমেও কোনো বাজারে নাগালে নেই সবজির দাম। আবার নতুন করে বাজারে আসায় অনেক সবজির কেজি ১০০ বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বেশি দামে প্রয়োজনীয় সবজি কেনার সাধ্য হচ্ছে না অনেকেরই।

সেগুনবাগিচা বাজারে গিয়ে কথা হয় নির্মাণশ্রমিক আজিজ মিয়ার সঙ্গে। এই ক্রেতা বলেন, কয়েকজন মিলে এখানে একটি ভবনে থাকছি। নির্মাণকাজ চলছে। অতিরিক্ত দামের কারণে মাছ-মাংস তো কেনাই দায়। শীতকালীন নানা পদের সবজি খাবো, সে অবস্থাও নেই। শুধু মুলা আর পেঁপে খেয়ে চলছে।

এদিকে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা মোকাম বা স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দিচ্ছেন। সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিকেও সামনে আনা হচ্ছে।

সকালে একাধিখ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন অধিকাংশ সবজি ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে শিম, পটলের তুলনায় অন্য সবজির দাম বেশি। একটি বড় সাইজের ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও চালকুমড়াও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। অন্যদিকে বরবটি, করলা, বেগুন, কচুর্মুখী, কাকরোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বাজারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা বা আমদানি টমেটোর কেজি ১১০ থেকে ১২০, গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।

এমন অস্বস্তি নিয়ে সবজির বাজার থেকে বেরিয়ে মুদি বাজারে গিয়েও কোনো সুখবর মিলছে না ক্রেতার। বরং বাজারে আরেক দফা বেড়েছে চাল, তেল, আটা, ময়দা ও চিনির দাম। এতে সাধারণ মানুষ আরও বিপাকে পড়েছেন।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে মোটা চালের দাম না বাড়লেও বেড়েছে চিকন চালের দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি চিকন চালের কেজি ৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল ২ টাকা বেড়ে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চালের কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়ে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারের খুচরা ব্যবাসয়ীরা বলছে, টিসিবির তথ্যের থেকে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দায় ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে গত ১৭ নভেম্বর থেকে সয়াবিন তেল ও চিনির দাম আরও বেড়েছে। এখন সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। আগের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়েছে ১০৭ টাকায়। যদিও বাজারে নির্ধারিত দামের তেল পাওয়া গেলেও চিনি কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরবরাহ সংকটের কারণে বাজারভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

Please Share This Post in Your Social Media


শীতের সবজির দামও এখন আকাশচুম্বী

Update Time : ০২:৪৮:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভরা মৌসুমেও চড়া দাম শীতের সবজির। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে নাভিশ্বাস মানুষের। চাল, ডাল, ডিম, চিনি ও তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। শীতের সবজিতেও ফেরেনি স্বস্তি। শুধুমাত্র মুলা ও পেঁপের দাম কিছুটা কম। ভরা মৌসুম চললেও এই দুই পদের সবজি ছাড়া অন্য প্রায় সব সবজির দাম চড়া।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে শীতকালীন সবজির প্রচুর আমদানি রয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম কমেনি। এ নিয়ে ক্রেতাদের অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও দোকান ভাড়া, আমদানি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিকে দাম বাড়ার কারণ বলছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

বাজারে সবজির দাম জানতে চাইলে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজারের বিক্রেতা শফিক মিয়া বলেন, পেঁপে ৩০ আর মুলা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন অন্যান্য সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কেনাবেচা চলছে। মৌসুমি সবজি ছাড়া অন্যান্য সবজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই বাজারের অন্যান্য দোকান এবং আরও দুটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। ভরা মৌসুমেও কোনো বাজারে নাগালে নেই সবজির দাম। আবার নতুন করে বাজারে আসায় অনেক সবজির কেজি ১০০ বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বেশি দামে প্রয়োজনীয় সবজি কেনার সাধ্য হচ্ছে না অনেকেরই।

সেগুনবাগিচা বাজারে গিয়ে কথা হয় নির্মাণশ্রমিক আজিজ মিয়ার সঙ্গে। এই ক্রেতা বলেন, কয়েকজন মিলে এখানে একটি ভবনে থাকছি। নির্মাণকাজ চলছে। অতিরিক্ত দামের কারণে মাছ-মাংস তো কেনাই দায়। শীতকালীন নানা পদের সবজি খাবো, সে অবস্থাও নেই। শুধু মুলা আর পেঁপে খেয়ে চলছে।

এদিকে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা মোকাম বা স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দিচ্ছেন। সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিকেও সামনে আনা হচ্ছে।

সকালে একাধিখ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন অধিকাংশ সবজি ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে শিম, পটলের তুলনায় অন্য সবজির দাম বেশি। একটি বড় সাইজের ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও চালকুমড়াও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। অন্যদিকে বরবটি, করলা, বেগুন, কচুর্মুখী, কাকরোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বাজারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা বা আমদানি টমেটোর কেজি ১১০ থেকে ১২০, গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।

এমন অস্বস্তি নিয়ে সবজির বাজার থেকে বেরিয়ে মুদি বাজারে গিয়েও কোনো সুখবর মিলছে না ক্রেতার। বরং বাজারে আরেক দফা বেড়েছে চাল, তেল, আটা, ময়দা ও চিনির দাম। এতে সাধারণ মানুষ আরও বিপাকে পড়েছেন।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে মোটা চালের দাম না বাড়লেও বেড়েছে চিকন চালের দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি চিকন চালের কেজি ৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল ২ টাকা বেড়ে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চালের কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়ে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারের খুচরা ব্যবাসয়ীরা বলছে, টিসিবির তথ্যের থেকে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দায় ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে গত ১৭ নভেম্বর থেকে সয়াবিন তেল ও চিনির দাম আরও বেড়েছে। এখন সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। আগের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়েছে ১০৭ টাকায়। যদিও বাজারে নির্ধারিত দামের তেল পাওয়া গেলেও চিনি কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরবরাহ সংকটের কারণে বাজারভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।