২ দিনে ১১ হাজার কোটি টাকার মূলধন উধাও

  • Update Time : ০৯:২২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
  • / 8

নতুন সপ্তাহে এসেও দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিব্সেই দর পতন হয়েছে বাজারে। কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দাম। বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার মূলধন। এ নিয়ে গত দুই মাসে বাজার ৪২ হাজার ৫২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার মূলধন হারিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৭ অক্টোবর) এক দিনেই ডিএসই ৫ হাজার ২৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার মূলধন হারিয়েছে। আগেরদিন বাজার মূলধন কমেছিল ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

টানা দর পতনে বিনিয়োগকারী ও মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্বেগ, আতঙ্ক ও হতাশা বাড়ছে। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ধস ও পরবর্তী ১৪ বছরের নিম্নমুখী ধারায় পুঁজিবাজারের সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। এমন অবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের দুঃশাসনের অবসান ঘটলে বিনিয়োগকারীরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তারা আশা করেছিলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন পরিবেশে পুঁজিবাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। কিন্তু ঘটছে তার উল্টো।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর বিএসইসিতে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বাজারে বড় ধরনের সংস্কারের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে সংঘটিত বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটতরাজের নিবিড় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়। বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। তাদের আশা ছিল, লুটেরাদের বিচারের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো, বাজারে স্বাভাবিক গতি সঞ্চারের পরিবেশ সৃষ্টিতে মনোযোগ দেবে কমিশন। কিন্তু কমিশনের গত দুই মাসের কার্যক্রমে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, কমিশন সংস্কারে মনোযোগী হলেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত। এছাড়া কমিশনের কিছু সিদ্ধান্তে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় সেগুলোও আস্থাহীনতা বাড়িয়েছে। এরসঙ্গে ব্যাংক আমানতের উচ্চ সুদ হার এবং একটি গোষ্ঠির ষড়যন্ত্রের প্রভাবও আছে বাজারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃশ্যমান ও কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেয়নি বর্তমান কমিশন। এর পনিবার্য পরিনতি হচ্ছে টানা দর পতন।

সোমবার অসংখ্য বিনিয়োগকারী অর্থসূচকে ফোন করে বাজারে নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বর্তমান কমিশনের প্রতি তাদের হতাশা ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন। তাদের অভিযোগ, কমিশন সংস্কারের ব্যাপারে যতটা আগ্রহী, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর বিষয়ে তার ছিটেফোঁটা মনোযোগও নেই তাদের। এ কারণে বাজারে এভাবে দর পতন হচ্ছে। আর তারা (বিনিয়োগকারী) দিন দিন তাদের পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার দিকে যাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য, সংস্কারের জন্য কিছু পেইন হতে পারে। কিন্তু সব পেইন শুধু বিনিয়োগকারীদের কেন-এমন প্রশ্ন তাদের। তাই সংস্কারের পাশাপাশি বাজারের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

২ দিনে ১১ হাজার কোটি টাকার মূলধন উধাও

Update Time : ০৯:২২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

নতুন সপ্তাহে এসেও দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিব্সেই দর পতন হয়েছে বাজারে। কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দাম। বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার মূলধন। এ নিয়ে গত দুই মাসে বাজার ৪২ হাজার ৫২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার মূলধন হারিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৭ অক্টোবর) এক দিনেই ডিএসই ৫ হাজার ২৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার মূলধন হারিয়েছে। আগেরদিন বাজার মূলধন কমেছিল ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

টানা দর পতনে বিনিয়োগকারী ও মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্বেগ, আতঙ্ক ও হতাশা বাড়ছে। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ধস ও পরবর্তী ১৪ বছরের নিম্নমুখী ধারায় পুঁজিবাজারের সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। এমন অবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের দুঃশাসনের অবসান ঘটলে বিনিয়োগকারীরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তারা আশা করেছিলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন পরিবেশে পুঁজিবাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। কিন্তু ঘটছে তার উল্টো।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর বিএসইসিতে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বাজারে বড় ধরনের সংস্কারের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে সংঘটিত বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটতরাজের নিবিড় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়। বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। তাদের আশা ছিল, লুটেরাদের বিচারের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো, বাজারে স্বাভাবিক গতি সঞ্চারের পরিবেশ সৃষ্টিতে মনোযোগ দেবে কমিশন। কিন্তু কমিশনের গত দুই মাসের কার্যক্রমে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, কমিশন সংস্কারে মনোযোগী হলেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত। এছাড়া কমিশনের কিছু সিদ্ধান্তে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় সেগুলোও আস্থাহীনতা বাড়িয়েছে। এরসঙ্গে ব্যাংক আমানতের উচ্চ সুদ হার এবং একটি গোষ্ঠির ষড়যন্ত্রের প্রভাবও আছে বাজারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃশ্যমান ও কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেয়নি বর্তমান কমিশন। এর পনিবার্য পরিনতি হচ্ছে টানা দর পতন।

সোমবার অসংখ্য বিনিয়োগকারী অর্থসূচকে ফোন করে বাজারে নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বর্তমান কমিশনের প্রতি তাদের হতাশা ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন। তাদের অভিযোগ, কমিশন সংস্কারের ব্যাপারে যতটা আগ্রহী, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর বিষয়ে তার ছিটেফোঁটা মনোযোগও নেই তাদের। এ কারণে বাজারে এভাবে দর পতন হচ্ছে। আর তারা (বিনিয়োগকারী) দিন দিন তাদের পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার দিকে যাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য, সংস্কারের জন্য কিছু পেইন হতে পারে। কিন্তু সব পেইন শুধু বিনিয়োগকারীদের কেন-এমন প্রশ্ন তাদের। তাই সংস্কারের পাশাপাশি বাজারের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।