হোটেল বয় থেকে তিনি আজ দেশ সেরা হালিমা টেলিকম কোম্পানির মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:৪১:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩৮৩ Time View

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ,কুমিল্লা

কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলী এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম হাসান টগর। দেশ সেরা হালিমা গ্রুপের চেয়ারম্যান। হোটেল বয় হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা টগর আজ দেশ সেরা ব্যবসায়ীদের একজন। একে একে গড়েছেন নয় নয়টি কোম্পানি। যা দেশের প্রখ্যাত হালিমা টেলিকম লিমিটেড থেকে শুরু হয়ে এখন হালিমা গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত হালিমা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হল- হালিমা টেলিকম, হালিমা ইলেকট্রনিক্স, হালিমা মোবাইল, হালিমা ওয়ার্ল্ড, এইচ টি ই, নিউ ক্লিক গ্লোবাল, টিপ এক্সেসরিজ, এইচজি এবং হালিমা হোম এপ্লায়েন্স।

১৯৭৭ সালে জন্ম নেওয়া টগর ৩ ভাই ১ বোনের মাঝে তিনি মেঝো। শিক্ষা জীবনে ১৯৯৪ সালে কুমিল্লা হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯৯ সালে কুমিল্লা অজিতগুহ কলেজ ডিগ্রি পাস করেন আবুল কালাম হাসান টগর।

কুমিল্লা নগরী থেকে সামান্য পূর্ব পাশে আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁন্দপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন হালিমা হাইটেক পার্ক। সেখান থেকেই হালিমা গ্রুপের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। কুমিল্লা থেকে উৎপাদিত প্রথম কোনো পণ্য যা সারাদেশে মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তা হল- হালিমা টেলিকম। এই কোম্পানির মোবাইল চার্জার, হেডফোন, পাওয়ারব্যাংকসহ অন্যান্য মোবাইল এক্সেসরিজ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম হাসান টগর সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে আসতে পোহাতে হয়েছে নানান প্রতিকূলতা। তার সংগ্রামী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে কথা হয় বিডি সমাচার২৪ এর সাথে।

আবুল কালাম হাসান টগর বলেন, ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে ২১ বছর বয়সে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানো এ জীবনের তাগিদে পাড়ি জমাতে হয় কুমিল্লা ছেড়ে সিরাজগঞ্জ হোটেল এরোস্টকেটে। সেখানে হোটেল বয় হিসাবে কাজ নিয়ে কর্মজীবন শুরু করি। মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নিলেও আমার স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বি। তাই হোটেল বয় থাকা অবস্থায় সেসময় যখন আমার মাত্র তিন হাজার টাকা পুঁজি হয় আমি ওই টাকা নিয়ে পাড়ি জমাই ঢাকা শহরে। ফার্মগেটসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে গ্রামীনফোনের সিম বিক্রি শুরু করি।

আমার সবসময় নিজের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আমি আমার স্বপ্নে পৌঁছুতে পারব। তাই ওই তিন হাজার টাকা দিয়ে সেসময়ের গ্রামীণফোন মোবাইল প্রি-পেইড কার্ড কিনে দোকানে দোকানে হেঁটে হেঁটে বিক্রির মাধ্যমে টেলিকম ব্যবসায় পা রাখি। কার্ড বিক্রি করতে গিয়ে গ্রামীনফোন কোম্পানির একজনের সাথে পরিচয় হয়। তার পরামর্শে গ্রামীনফোনের অথরাইজড সাব ডিলার কুমিল্লাতে নিয়ে আসি ১৯৯৯ সালে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায়। চালু করার প্রথম দিনই গ্রামীনফোনের প্রি-পেইড সিমের ওপর গ্রামীনফোন হতে প্যাকেজ চালু করে, ওই প্যাকেজে কুমিল্লা এবং তার আশেপাশে অনেকেই প্যাকেজের চেয়ে বাড়তি মূল্যে বিক্রি করে কিন্তু আমি নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করায় লোকজন আমার প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় গ্রামীনফোনের সিম এবং প্রি-পেইড কার্ডের অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর হই এবং বেশ কয়েকবার পুরো বাংলাদেশে গ্রামীন ফোনের বেষ্ট ডিস্ট্রিবিউটর হিসাবে পুরস্কৃত হই ।

গ্রামীনফোনের ডিস্ট্রিবিউটর থাকা অবস্থায় কুমিল্লা এবং এর আশাপাশের অনেক ব্যবসায়ী আমাকে সবসময় বলতেন কিছু মোবাইল এক্সেসরিজ পণ্য এনে তাদের কাছে বিক্রি করতে। তাই তাদের পরামর্শে আমি ঢাকা থেকে মোবাইল এক্সেসরিজ পণ্য এনে এক্সেসরিজ ব্যবসা চালু করি। তখন আমার লোকসংখ্যা ছিল আমি, আমার ছোট ভাই এবং একজন কর্মচারী। আমি আমার শো-রুম থেকে এক্সেসরিজ পণ্য বিক্রি করতাম। বিক্রি করার এক পর্যায়ে চিন্তা করলাম লোকজনদের আমার কাছে আসতে দেব না। তাই একটি সাইকেল কিনে নিজেই দোকানে দোকানে গিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করি। তখন চিন্তা আসে অন্যের পণ্য বিক্রি করার চেয়ে নিজের পন্যই বিক্রি করা ভালো।

তাই ২০১০ সালে পাড়ি জমাই সূদূর চীনে এবং শুরু করি নিজের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান হালিমা টেলিকম। চায়নাতে গিয়ে যখন দেখতে পেলাম আমাদের বাংলাদেশে সবাই নোকিয়া এবং স্যামসাং নামে রেডি পণ্যগুলা এনে বিক্রি করে এবং প্রতিযোগি মনোভাবের কারণে মুনাফা কম হয় তখন আমি চাইনিজদের সাথে কথা বলি। তখন ওরা আমাকে তুমি পারবে না বলে নিরুৎসাহিত করে। যেহেতু আমার স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বি, তাই আমি চাইনিজদের সাথে মিশে ওদের ফ্যাক্টরীগুলো পরিদর্শন করি তাদের অজান্তেই, তাদের কাছ থেকে একটু একটু করে শিখি। পরবর্তীতে কিছু সংখ্যক চার্জার এবং ব্যাটারীর কাঁচামাল এনে চারটি ছেলেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমি চার্জার এবং ব্যাটারি বানানো শুরু করি। প্রথম দিকে আমাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় এই জন্য যে, বাংলাদেশে এই টেকনোলজি সম্মন্ধে কারও কোন ধারণা ছিল না। তাই আমাকে অনেকটা লোকসান গুনতে হয়।

কিন্তু আমি ছিলাম স্বপ্নপূরণে বিশ্বাসী তাই নিজের লোকসান উপেক্ষা করে হাল না ছেড়ে পুনরায় বারংবার চেষ্টা করি এবং অবশেষে সফল হই। বর্তমানে আমার ফ্যাক্টরীতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার পিস মোবাইল চার্জার, ২০ হাজার পিস মোবাইল ব্যাটারি এবং ২ হাজার পিস পাওয়ার ব্যাংক উৎপাদন এবং বাজারজাত করি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমার আমাদের ফ্যাক্টরিতে ৩.৪/২.৪/২ MAH চার্জার এবং 1000 MAH হতে শুরু করে 2600 MAH পর্যন্ত ব্যাটারী ও 10000 MAH পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাংক উৎপাদন করছি।

তিনি আরও বলেন, মাত্র ৪ জন দিয়ে শুরু করে বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছে। তাদেরকে আমি নিজেই প্রশিক্ষণ দেই এবং ওদেরকে একজন দক্ষ কর্মী বানাই ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলি ।

মুন্নী আক্তার নামের এক শ্রমিক বলেন, আমি ৭ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি চার্জার সেকশনে। চাকরীর শুরুতে আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথম মাসেই চার্জার সেকশনের কাজ হাত করে ফেলি। এখন আমি সবকাজ জানি। হালিমা টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হওয়ায় এখানে কাজ করে যে রোজগার হয়, তা দিয়ে স্বামীর সাথে সংসার চালাতে সহযোগিতা করছি।

ইমন হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, গত আড়াই বছর ধরে ব্যাটারি সেকশনে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছি এখানে। রোজগারের টাকা বাবার কাছে নিয়ে দেই, বাবা সংসার চালান। সবচেয়ে বড় কথা হল, আমি কোনো কাজই না জানা মানুষটা আজ মোবাইলের ব্যাটারি তৈরির সকল কাজ জানি।

পাখি আক্তার নামের এক শ্রমিক বলেন, হালিমা টেলিকমের ফ্যাক্টরি হওয়াতে আমরা কাজ করে সংসারের সহযোগিতা করতে পারছি।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লা শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর খান বলেন, টগর সাহেব যে সংগ্রাম করে জীবনে সফল হয়েছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে অবদান রাখার পাশাপাশি হাজারের ওপর শ্রমিকের কর্মসংস্থান, এটা আসলে কোনো প্রশংসাতেই শেষ হবে না। ইচ্ছে থাকলেই সফল হওয়া যায় টগর সাহেব সেটা প্রমাণ করলেন। দেশের বেকার যুবকদের তার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়া উচিৎ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

হোটেল বয় থেকে তিনি আজ দেশ সেরা হালিমা টেলিকম কোম্পানির মালিক

Update Time : ১১:৪১:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ,কুমিল্লা

কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলী এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম হাসান টগর। দেশ সেরা হালিমা গ্রুপের চেয়ারম্যান। হোটেল বয় হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা টগর আজ দেশ সেরা ব্যবসায়ীদের একজন। একে একে গড়েছেন নয় নয়টি কোম্পানি। যা দেশের প্রখ্যাত হালিমা টেলিকম লিমিটেড থেকে শুরু হয়ে এখন হালিমা গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত হালিমা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হল- হালিমা টেলিকম, হালিমা ইলেকট্রনিক্স, হালিমা মোবাইল, হালিমা ওয়ার্ল্ড, এইচ টি ই, নিউ ক্লিক গ্লোবাল, টিপ এক্সেসরিজ, এইচজি এবং হালিমা হোম এপ্লায়েন্স।

১৯৭৭ সালে জন্ম নেওয়া টগর ৩ ভাই ১ বোনের মাঝে তিনি মেঝো। শিক্ষা জীবনে ১৯৯৪ সালে কুমিল্লা হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯৯ সালে কুমিল্লা অজিতগুহ কলেজ ডিগ্রি পাস করেন আবুল কালাম হাসান টগর।

কুমিল্লা নগরী থেকে সামান্য পূর্ব পাশে আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁন্দপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন হালিমা হাইটেক পার্ক। সেখান থেকেই হালিমা গ্রুপের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। কুমিল্লা থেকে উৎপাদিত প্রথম কোনো পণ্য যা সারাদেশে মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তা হল- হালিমা টেলিকম। এই কোম্পানির মোবাইল চার্জার, হেডফোন, পাওয়ারব্যাংকসহ অন্যান্য মোবাইল এক্সেসরিজ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম হাসান টগর সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে আসতে পোহাতে হয়েছে নানান প্রতিকূলতা। তার সংগ্রামী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে কথা হয় বিডি সমাচার২৪ এর সাথে।

আবুল কালাম হাসান টগর বলেন, ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে ২১ বছর বয়সে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানো এ জীবনের তাগিদে পাড়ি জমাতে হয় কুমিল্লা ছেড়ে সিরাজগঞ্জ হোটেল এরোস্টকেটে। সেখানে হোটেল বয় হিসাবে কাজ নিয়ে কর্মজীবন শুরু করি। মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নিলেও আমার স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বি। তাই হোটেল বয় থাকা অবস্থায় সেসময় যখন আমার মাত্র তিন হাজার টাকা পুঁজি হয় আমি ওই টাকা নিয়ে পাড়ি জমাই ঢাকা শহরে। ফার্মগেটসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে গ্রামীনফোনের সিম বিক্রি শুরু করি।

আমার সবসময় নিজের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আমি আমার স্বপ্নে পৌঁছুতে পারব। তাই ওই তিন হাজার টাকা দিয়ে সেসময়ের গ্রামীণফোন মোবাইল প্রি-পেইড কার্ড কিনে দোকানে দোকানে হেঁটে হেঁটে বিক্রির মাধ্যমে টেলিকম ব্যবসায় পা রাখি। কার্ড বিক্রি করতে গিয়ে গ্রামীনফোন কোম্পানির একজনের সাথে পরিচয় হয়। তার পরামর্শে গ্রামীনফোনের অথরাইজড সাব ডিলার কুমিল্লাতে নিয়ে আসি ১৯৯৯ সালে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায়। চালু করার প্রথম দিনই গ্রামীনফোনের প্রি-পেইড সিমের ওপর গ্রামীনফোন হতে প্যাকেজ চালু করে, ওই প্যাকেজে কুমিল্লা এবং তার আশেপাশে অনেকেই প্যাকেজের চেয়ে বাড়তি মূল্যে বিক্রি করে কিন্তু আমি নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করায় লোকজন আমার প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় গ্রামীনফোনের সিম এবং প্রি-পেইড কার্ডের অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর হই এবং বেশ কয়েকবার পুরো বাংলাদেশে গ্রামীন ফোনের বেষ্ট ডিস্ট্রিবিউটর হিসাবে পুরস্কৃত হই ।

গ্রামীনফোনের ডিস্ট্রিবিউটর থাকা অবস্থায় কুমিল্লা এবং এর আশাপাশের অনেক ব্যবসায়ী আমাকে সবসময় বলতেন কিছু মোবাইল এক্সেসরিজ পণ্য এনে তাদের কাছে বিক্রি করতে। তাই তাদের পরামর্শে আমি ঢাকা থেকে মোবাইল এক্সেসরিজ পণ্য এনে এক্সেসরিজ ব্যবসা চালু করি। তখন আমার লোকসংখ্যা ছিল আমি, আমার ছোট ভাই এবং একজন কর্মচারী। আমি আমার শো-রুম থেকে এক্সেসরিজ পণ্য বিক্রি করতাম। বিক্রি করার এক পর্যায়ে চিন্তা করলাম লোকজনদের আমার কাছে আসতে দেব না। তাই একটি সাইকেল কিনে নিজেই দোকানে দোকানে গিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করি। তখন চিন্তা আসে অন্যের পণ্য বিক্রি করার চেয়ে নিজের পন্যই বিক্রি করা ভালো।

তাই ২০১০ সালে পাড়ি জমাই সূদূর চীনে এবং শুরু করি নিজের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান হালিমা টেলিকম। চায়নাতে গিয়ে যখন দেখতে পেলাম আমাদের বাংলাদেশে সবাই নোকিয়া এবং স্যামসাং নামে রেডি পণ্যগুলা এনে বিক্রি করে এবং প্রতিযোগি মনোভাবের কারণে মুনাফা কম হয় তখন আমি চাইনিজদের সাথে কথা বলি। তখন ওরা আমাকে তুমি পারবে না বলে নিরুৎসাহিত করে। যেহেতু আমার স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বি, তাই আমি চাইনিজদের সাথে মিশে ওদের ফ্যাক্টরীগুলো পরিদর্শন করি তাদের অজান্তেই, তাদের কাছ থেকে একটু একটু করে শিখি। পরবর্তীতে কিছু সংখ্যক চার্জার এবং ব্যাটারীর কাঁচামাল এনে চারটি ছেলেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমি চার্জার এবং ব্যাটারি বানানো শুরু করি। প্রথম দিকে আমাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় এই জন্য যে, বাংলাদেশে এই টেকনোলজি সম্মন্ধে কারও কোন ধারণা ছিল না। তাই আমাকে অনেকটা লোকসান গুনতে হয়।

কিন্তু আমি ছিলাম স্বপ্নপূরণে বিশ্বাসী তাই নিজের লোকসান উপেক্ষা করে হাল না ছেড়ে পুনরায় বারংবার চেষ্টা করি এবং অবশেষে সফল হই। বর্তমানে আমার ফ্যাক্টরীতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার পিস মোবাইল চার্জার, ২০ হাজার পিস মোবাইল ব্যাটারি এবং ২ হাজার পিস পাওয়ার ব্যাংক উৎপাদন এবং বাজারজাত করি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমার আমাদের ফ্যাক্টরিতে ৩.৪/২.৪/২ MAH চার্জার এবং 1000 MAH হতে শুরু করে 2600 MAH পর্যন্ত ব্যাটারী ও 10000 MAH পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাংক উৎপাদন করছি।

তিনি আরও বলেন, মাত্র ৪ জন দিয়ে শুরু করে বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছে। তাদেরকে আমি নিজেই প্রশিক্ষণ দেই এবং ওদেরকে একজন দক্ষ কর্মী বানাই ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলি ।

মুন্নী আক্তার নামের এক শ্রমিক বলেন, আমি ৭ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি চার্জার সেকশনে। চাকরীর শুরুতে আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথম মাসেই চার্জার সেকশনের কাজ হাত করে ফেলি। এখন আমি সবকাজ জানি। হালিমা টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হওয়ায় এখানে কাজ করে যে রোজগার হয়, তা দিয়ে স্বামীর সাথে সংসার চালাতে সহযোগিতা করছি।

ইমন হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, গত আড়াই বছর ধরে ব্যাটারি সেকশনে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছি এখানে। রোজগারের টাকা বাবার কাছে নিয়ে দেই, বাবা সংসার চালান। সবচেয়ে বড় কথা হল, আমি কোনো কাজই না জানা মানুষটা আজ মোবাইলের ব্যাটারি তৈরির সকল কাজ জানি।

পাখি আক্তার নামের এক শ্রমিক বলেন, হালিমা টেলিকমের ফ্যাক্টরি হওয়াতে আমরা কাজ করে সংসারের সহযোগিতা করতে পারছি।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লা শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর খান বলেন, টগর সাহেব যে সংগ্রাম করে জীবনে সফল হয়েছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে অবদান রাখার পাশাপাশি হাজারের ওপর শ্রমিকের কর্মসংস্থান, এটা আসলে কোনো প্রশংসাতেই শেষ হবে না। ইচ্ছে থাকলেই সফল হওয়া যায় টগর সাহেব সেটা প্রমাণ করলেন। দেশের বেকার যুবকদের তার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়া উচিৎ।