হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে আসামী গ্রেফতারের ঘটনায় ৪ এসআই সাসপেন্ড ও ২ পুলিশ সদস্য ক্লোজড

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:০১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ মে ২০২২
  • / ২৩২ Time View

এমরান হোসেন, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে ভিক্ষুক, স্ত্রী, পুত্র সহ ৪ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় ৪ এসআই বহিষ্কার ও ২ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করেছে জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (১০ মে) বিডি সমাচার ২৪.কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং একাধিক জাতীয় পত্রিকার অনলাইনে নিউজ ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাতে তাদের প্রত্যাহার করা হয়।

জানা যায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেডে থাকা ভিক্ষুক আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রী লাইলী বেগম, পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক ও ওয়াজকরণী কে সরিষাবাড়ী থানার এসআই মুনতাজ আলী থানায় যেতে বললে ভিক্ষুক আব্দুল জলিল আপত্তি জানানো সত্ত্বেও বারবার জোর প্রয়োগ করে থানায় নিতে চেষ্টা করলে আব্দুল জলিল আত্মচিৎকার দেয়। এ প্রেক্ষিতে পুলিশের পোশাক বিহীন সরিষাবাড়ী থানার এসআই আলতাব হোসেন ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের মুখ চেপে ধরে বলে ভুক্তভোগী পরিবার রাশেদ মিয়া অভিযোগ করেন। গ্রেফতার কালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুনতাজ আলী, সরিষাবাড়ী থানার এস আই সাইফুল ইসলাম, এসআই ওয়াজেদ আলী, পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সদস্য সাথী আক্তার সহ কয়েকজন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে ভিক্ষুক, স্ত্রী, পুত্র সহ ৪ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসী বাজার এলাকার ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের দখলীয় জমি জবর দখলে নিতে একই গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী’র ছেলে মজিবর রহমান ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে বসত বাড়ীতে সোমবার দুপুরে হামলা ভাংচুর সহ মারপিটের ঘটনা ঘটায়। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে এবং আহত ভিক্ষুক আব্দুল জলিল (৬০), আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), ওয়াজকরণী (২৫) ও লাইলী বেগম (৫০), জসিম (৩২) ছালমা (৩৮), শুভ (১৯) ও শাহীদা (৫৫) কে পুলিশী হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারপিটের ঘটনায় আব্দুল জলিলের পক্ষে থানায় মজিবুর রহমান এর লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ না নিয়ে প্রভাবশালী মজিবর রহমানের দায়ের করা মামলায় ভিক্ষুক আব্দুল জলিলকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরোও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত নাম করে সোমবার রাতে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় পুলিশ দ্রুত ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের পরিবারের ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছেন। সরিষাবাড়ী থানার মামলা নং-০৯, তারিখ- ০৯/০৫/২০২২ইং।

এ বিষয়টি বিডি সমাচার ২৪.কম, দৈনিক আলোচিত সকাল অনলাইন পত্রিকা, প্রতিদিনের সংবাদ, দৈনিক জনবানী সহ একাধিক জাতীয় পত্রিকার অনলাইনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুনতাজ আলী, সরিষাবাড়ী থানার এসআই সাইফুল ইসলাম, এসআই ওয়াজেদ আলীকে বরখাস্ত, পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সাথী আক্তারকে ১০ মে রাতে জামালপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ।

এ বিষয়ে জামালপুর সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন সুমন বিডি সমাচার ২৪.কম কে জানান, উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করে সরিষাবাড়ী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বিভাগীয় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ বিডি সমাচার ২৪.কম কে জানান, উক্ত ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের ইতিমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তদন্তপূর্বক সর্বোচ্চ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে আসামী গ্রেফতারের ঘটনায় ৪ এসআই সাসপেন্ড ও ২ পুলিশ সদস্য ক্লোজড

Update Time : ০৯:০১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ মে ২০২২

এমরান হোসেন, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে ভিক্ষুক, স্ত্রী, পুত্র সহ ৪ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় ৪ এসআই বহিষ্কার ও ২ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করেছে জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (১০ মে) বিডি সমাচার ২৪.কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং একাধিক জাতীয় পত্রিকার অনলাইনে নিউজ ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাতে তাদের প্রত্যাহার করা হয়।

জানা যায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেডে থাকা ভিক্ষুক আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রী লাইলী বেগম, পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক ও ওয়াজকরণী কে সরিষাবাড়ী থানার এসআই মুনতাজ আলী থানায় যেতে বললে ভিক্ষুক আব্দুল জলিল আপত্তি জানানো সত্ত্বেও বারবার জোর প্রয়োগ করে থানায় নিতে চেষ্টা করলে আব্দুল জলিল আত্মচিৎকার দেয়। এ প্রেক্ষিতে পুলিশের পোশাক বিহীন সরিষাবাড়ী থানার এসআই আলতাব হোসেন ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের মুখ চেপে ধরে বলে ভুক্তভোগী পরিবার রাশেদ মিয়া অভিযোগ করেন। গ্রেফতার কালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুনতাজ আলী, সরিষাবাড়ী থানার এস আই সাইফুল ইসলাম, এসআই ওয়াজেদ আলী, পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সদস্য সাথী আক্তার সহ কয়েকজন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে টেনে হেচড়ে ভিক্ষুক, স্ত্রী, পুত্র সহ ৪ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসী বাজার এলাকার ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের দখলীয় জমি জবর দখলে নিতে একই গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী’র ছেলে মজিবর রহমান ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে বসত বাড়ীতে সোমবার দুপুরে হামলা ভাংচুর সহ মারপিটের ঘটনা ঘটায়। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে এবং আহত ভিক্ষুক আব্দুল জলিল (৬০), আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), ওয়াজকরণী (২৫) ও লাইলী বেগম (৫০), জসিম (৩২) ছালমা (৩৮), শুভ (১৯) ও শাহীদা (৫৫) কে পুলিশী হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারপিটের ঘটনায় আব্দুল জলিলের পক্ষে থানায় মজিবুর রহমান এর লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ না নিয়ে প্রভাবশালী মজিবর রহমানের দায়ের করা মামলায় ভিক্ষুক আব্দুল জলিলকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরোও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত নাম করে সোমবার রাতে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় পুলিশ দ্রুত ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের পরিবারের ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছেন। সরিষাবাড়ী থানার মামলা নং-০৯, তারিখ- ০৯/০৫/২০২২ইং।

এ বিষয়টি বিডি সমাচার ২৪.কম, দৈনিক আলোচিত সকাল অনলাইন পত্রিকা, প্রতিদিনের সংবাদ, দৈনিক জনবানী সহ একাধিক জাতীয় পত্রিকার অনলাইনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুনতাজ আলী, সরিষাবাড়ী থানার এসআই সাইফুল ইসলাম, এসআই ওয়াজেদ আলীকে বরখাস্ত, পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সাথী আক্তারকে ১০ মে রাতে জামালপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ।

এ বিষয়ে জামালপুর সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন সুমন বিডি সমাচার ২৪.কম কে জানান, উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করে সরিষাবাড়ী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বিভাগীয় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহমেদ বিডি সমাচার ২৪.কম কে জানান, উক্ত ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের ইতিমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তদন্তপূর্বক সর্বোচ্চ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।