স্কুল বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাতে যাওয়ার অভিযোগ ৩ উপজেলার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:০৬:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৯৬ Time View

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কুড়িগ্রামের তিনটি উপজেলার ৩ শতাধিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এসব এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকরা বৌভাত অনুষ্ঠানের দাওয়াতে গিয়েছেন।

এই বৌভাত অনুষ্ঠান ঘিরে জেলার রৌমারীর ১১৪টি, রাজিবপুরের ৫৭টি এবং চিলমারী উপজেলার ৯৩টি প্রথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। একই চিত্র ছিল মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। এই তিন উপজেলা প্রতিমন্ত্রীর কুড়িগ্রাম-৪ আসন নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষা কর্মকর্তাদের দাওয়াত দেয়া হয়। তাই পাঠদান বন্ধ রেখে রোববার (৮ জানুয়ারি) বৌভাত অনুষ্ঠানে যান এই তিন উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষক।

এদিন জাকির হোসেনের রৌমারীর বাসভবনে তার একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকিরের বিবাহোত্তর বৌভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রোববার সকালে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উড্ডয়নরত রয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণি ও অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। নেই কোনো শিক্ষক; ছিল না শিক্ষার্থীদের কোলাহল।

চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসিন্দা আব্দুল হাই সরকার বলেন, আজ কোনো সরকারি ছুটি নয়। তারপরও স্কুলে ক্লাস হয়নি। প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে স্কুল বন্ধ রেখে দাওয়াত খেতে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সরকারের তো একটা নিয়ম আছে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মফিজুল ইসলাম বলেন, এভাবে স্কুল কামাই করে শিক্ষকরা বিয়ে খেতে যাওয়া হাস্যকর ছাড়া আর কিছু না। আরেক অভিভাবক নোয়াব আলী বলেন, সকালে থানাহাট ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা তুলে রেখে শিক্ষকরা সবাই প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে গেছে। আজ কোনো ক্লাস হয়নি।

ফকিরেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিপুল, আমির হোসেনসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিমন্ত্রী ছেলের বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়ায় আজ স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।

উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা দাওয়াতে অংশ নেয়ায় আজ পাঠদান বন্ধ রাখা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ্ সরকার বলেন, আমি রৌমারীতে আছি, ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো।

প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকদের হাতে বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তারা বছরের যেকোনো সময় এই ছুটি দিতে পারেন।

Please Share This Post in Your Social Media

স্কুল বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বৌভাতে যাওয়ার অভিযোগ ৩ উপজেলার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে

Update Time : ১১:০৬:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কুড়িগ্রামের তিনটি উপজেলার ৩ শতাধিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এসব এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকরা বৌভাত অনুষ্ঠানের দাওয়াতে গিয়েছেন।

এই বৌভাত অনুষ্ঠান ঘিরে জেলার রৌমারীর ১১৪টি, রাজিবপুরের ৫৭টি এবং চিলমারী উপজেলার ৯৩টি প্রথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। একই চিত্র ছিল মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। এই তিন উপজেলা প্রতিমন্ত্রীর কুড়িগ্রাম-৪ আসন নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষা কর্মকর্তাদের দাওয়াত দেয়া হয়। তাই পাঠদান বন্ধ রেখে রোববার (৮ জানুয়ারি) বৌভাত অনুষ্ঠানে যান এই তিন উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষক।

এদিন জাকির হোসেনের রৌমারীর বাসভবনে তার একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকিরের বিবাহোত্তর বৌভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রোববার সকালে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উড্ডয়নরত রয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণি ও অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। নেই কোনো শিক্ষক; ছিল না শিক্ষার্থীদের কোলাহল।

চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসিন্দা আব্দুল হাই সরকার বলেন, আজ কোনো সরকারি ছুটি নয়। তারপরও স্কুলে ক্লাস হয়নি। প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে স্কুল বন্ধ রেখে দাওয়াত খেতে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সরকারের তো একটা নিয়ম আছে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মফিজুল ইসলাম বলেন, এভাবে স্কুল কামাই করে শিক্ষকরা বিয়ে খেতে যাওয়া হাস্যকর ছাড়া আর কিছু না। আরেক অভিভাবক নোয়াব আলী বলেন, সকালে থানাহাট ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা তুলে রেখে শিক্ষকরা সবাই প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে গেছে। আজ কোনো ক্লাস হয়নি।

ফকিরেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিপুল, আমির হোসেনসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিমন্ত্রী ছেলের বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়ায় আজ স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।

উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা দাওয়াতে অংশ নেয়ায় আজ পাঠদান বন্ধ রাখা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ্ সরকার বলেন, আমি রৌমারীতে আছি, ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো।

প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকদের হাতে বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তারা বছরের যেকোনো সময় এই ছুটি দিতে পারেন।