সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:২৫:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১
  • / ২৬৯ Time View

বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি গভীর সমুদ্রখাদ। এটি সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মধ্যকার এই গভীর খাদটি ‘গঙ্গা খাদ’ নামে পরিচিত। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর ১১তম গভীর সমুদ্রখাদ। অনেকে দাবি করেন মারিয়ানা ট্রেঞ্জের পর এটিই পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম স্থান।

১৭৩৮০০ হেক্টর নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত এলাকাটি সবার নজরে আসে ২০১৪ সালে। গভীরতম এ উপত্যকাটি প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং গড় গভীরতা প্রায় ২৬০০ মিটার। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্পত্তি নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলেও সাধারণভাবে মনে করা হয় অঞ্চলটি এক লাখ পঁচিশ হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের অর্থ যার কোনো তল নেই। এর নামকরণ নিয়ে রয়েছে বেশ রহস্য। কথিত রয়েছে ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে ২১২ টন ওজন বিশিষ্ট গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া সেই ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের খোঁজে এসেছিল দেশটির আরো কয়েকটি জাহাজ। তাদের সঙ্গে ছিল এক জরিপকারী দল। শেষ পর্যন্ত ডুবে যাওয়া জাহাজের হদিস না পেয়ে এই অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অর্থাত্ যার কোনো তল বা সীমা নেই। স্থানীয় জেলেরা অঞ্চলটিকে বলে ‘নাই বাম’। কারণ জেলেরা ফুট বা মিটারে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ না করে বাম হিসেবে যেমন দশ বাম, বিশ বাম এভাবে পরিমাপ করে থাকে। এই অঞ্চলটি এতোটাই গভীর যার কোনো বাম পাওয়া যায় না, সেজন্য জেলেরা ‘নাই বাম’ বলে থাকে।

সমুদ্রবিজ্ঞানীদের মতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড একটি সামুদ্রিক অভয়ারণ্য। বঙ্গোপসাগরের অন্যতম মত্স্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি বিশাল তিমি, ডলফিন, হাঙ্গর, কচ্ছপ আর বিরল প্রজাতির কিছু জলজপ্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। এই বিস্তীর্ণ এলাকাটি বিরল জীববৈচিত্র্য যেমন তিমি, পপাস ডলফিন, ইরাবতী ডলফিন, ইন্দো প্যাসিফিক ডলফিন, ইমপ্লাইস ডলফিন ইত্যাদির নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র। বিজ্ঞানীদের মতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে ডলফিন, পরপাস ও তিমি—এই তিন প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়। এই সামুদ্রিক অঞ্চলে সী-গালসহ দশ প্রজাতির পাখি, ত্রিশ প্রজাতির মাছ, ব্রিড তিমি এবং মিল্কি তিমিসহ অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড দেশের সম্ভবনাময় ব্লু ইকোনমির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানকার পানির গুণগতমান শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের চেয়েও উন্নত। বিশেষ করে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য ইকোলজিক্যাল ফিল্টার হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া এখানে যে মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

Update Time : ০১:২৫:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১

বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি গভীর সমুদ্রখাদ। এটি সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মধ্যকার এই গভীর খাদটি ‘গঙ্গা খাদ’ নামে পরিচিত। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর ১১তম গভীর সমুদ্রখাদ। অনেকে দাবি করেন মারিয়ানা ট্রেঞ্জের পর এটিই পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম স্থান।

১৭৩৮০০ হেক্টর নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত এলাকাটি সবার নজরে আসে ২০১৪ সালে। গভীরতম এ উপত্যকাটি প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং গড় গভীরতা প্রায় ২৬০০ মিটার। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্পত্তি নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলেও সাধারণভাবে মনে করা হয় অঞ্চলটি এক লাখ পঁচিশ হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের অর্থ যার কোনো তল নেই। এর নামকরণ নিয়ে রয়েছে বেশ রহস্য। কথিত রয়েছে ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে ২১২ টন ওজন বিশিষ্ট গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া সেই ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের খোঁজে এসেছিল দেশটির আরো কয়েকটি জাহাজ। তাদের সঙ্গে ছিল এক জরিপকারী দল। শেষ পর্যন্ত ডুবে যাওয়া জাহাজের হদিস না পেয়ে এই অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অর্থাত্ যার কোনো তল বা সীমা নেই। স্থানীয় জেলেরা অঞ্চলটিকে বলে ‘নাই বাম’। কারণ জেলেরা ফুট বা মিটারে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ না করে বাম হিসেবে যেমন দশ বাম, বিশ বাম এভাবে পরিমাপ করে থাকে। এই অঞ্চলটি এতোটাই গভীর যার কোনো বাম পাওয়া যায় না, সেজন্য জেলেরা ‘নাই বাম’ বলে থাকে।

সমুদ্রবিজ্ঞানীদের মতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড একটি সামুদ্রিক অভয়ারণ্য। বঙ্গোপসাগরের অন্যতম মত্স্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি বিশাল তিমি, ডলফিন, হাঙ্গর, কচ্ছপ আর বিরল প্রজাতির কিছু জলজপ্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। এই বিস্তীর্ণ এলাকাটি বিরল জীববৈচিত্র্য যেমন তিমি, পপাস ডলফিন, ইরাবতী ডলফিন, ইন্দো প্যাসিফিক ডলফিন, ইমপ্লাইস ডলফিন ইত্যাদির নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র। বিজ্ঞানীদের মতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে ডলফিন, পরপাস ও তিমি—এই তিন প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়। এই সামুদ্রিক অঞ্চলে সী-গালসহ দশ প্রজাতির পাখি, ত্রিশ প্রজাতির মাছ, ব্রিড তিমি এবং মিল্কি তিমিসহ অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড দেশের সম্ভবনাময় ব্লু ইকোনমির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানকার পানির গুণগতমান শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের চেয়েও উন্নত। বিশেষ করে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য ইকোলজিক্যাল ফিল্টার হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া এখানে যে মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব।