সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরল সেই শিশু হাফসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:২৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১
  • / ১৩৯ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছুটে চলেছে রিকশা। পেছনে বসা এক বাবা ও মা। তাদের কোলে শিশু সন্তান। আর ওই মা শিশুটির মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস প্রবাহের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই দৃশ্যের একমাস বয়সী শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। খেলছেন বড় বোন শ্রেয়ার সঙ্গে, কখনও দাদি আবার কখনও মায়ের কোলে হেসে-খেলেই কাটছে তার সময়। ছেলের হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে মা রুম্পা খাতুনের চোখেমুখেও।

ঘটনা গেল শনিবারের। করোনায় উদ্বেগের শহর রাজশাহীতে শনিবার (২৬ জুন) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শিশু হাফসা অস্থির করে তুলেছিল বাবা-মায়ের মন। রাজশাহী নগরীর হাদিরমোড় বউবাজার এলাকার বাসিন্দা রুম্পা খাতুন ও সজল মনি ওরফে সিজার দম্পতির ছেলে হাফসা। গেল ২৬ জুন প্রতিদিনের মতো তার দাদি স্বাধীনা বেগম গোসল করাচ্ছিলেন।

এক পর্যায়ে গোসল শেষে তার শরীরের পানি মোছানোর সময় খেয়াল করেন শিশু হাফসা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকঠাক চলছে কিনা সেটুকুও বুঝে উঠছিলেন না বাড়ির কেউ। শিশুর মুখে দেখা যায় ফেনা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।

এ সময় তাকে নেয়া হয় বাড়ির পাশের এক হুজুরের কাছে। দোয়া পড়ে ফুঁ-দিলেও তা কোনো কাজে আসে না। এক পর্যায়ে মা রুম্পা খাতুন শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা হন। এর এক পর্যায়ে নিথর হয়ে পড়ে শিশু হাফসা। খবর দেয়া হয় বাবা সজলকেও। পথে ছুটছেন ওই মা। শিশুটির বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে হাসপাতালের পথে কিছুটা রাস্তার মোটরসাইকেলে সহযোগিতা নেন তারা। এরপর শিশু হাফসাকে নিয়ে রিকশাযোগে হাসপাতালের পথে এগোতে থাকেন ওই বাবা-মা।

শিশুটিকে নিয়ে রিকশায় ওঠার সময় একজন তাদের পরামর্শ দেন ‍মুখ দিয়ে বাতাস দিলে শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। একথা শোনার পর থেকেই মা রুম্পা বেগম শিশুটির মুখে-মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন।

শিশু হাফসার মা রুম্পা খুতুন জানান, যখন রিকশা হাসপাতালের কাছে পৌঁছায় তখন তার বাবাকে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে বলেন কেননা, ততক্ষণে তিনি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। রিকশাটি হাসপাতালে পৌঁছলেই হঠাৎ কেঁদে ওঠে শিশুটি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে দেখা মাত্র অক্সিজেন সাপোর্ট দেন। পরে হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান, খিচুনিজনিত কারণে এমনটা হয়েছিল। পরে দুই দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন শিশু হাফসা।

এরইমধ্যে মায়ের মুখের সঙ্গে শিশুটির মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার দৃশ্যটি ক্যামেরা বন্দি হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এখন শিশু হাফসাকে দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন আশেপাশের লোকজন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরল সেই শিশু হাফসা

Update Time : ০১:২৮:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছুটে চলেছে রিকশা। পেছনে বসা এক বাবা ও মা। তাদের কোলে শিশু সন্তান। আর ওই মা শিশুটির মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস প্রবাহের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই দৃশ্যের একমাস বয়সী শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। খেলছেন বড় বোন শ্রেয়ার সঙ্গে, কখনও দাদি আবার কখনও মায়ের কোলে হেসে-খেলেই কাটছে তার সময়। ছেলের হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে মা রুম্পা খাতুনের চোখেমুখেও।

ঘটনা গেল শনিবারের। করোনায় উদ্বেগের শহর রাজশাহীতে শনিবার (২৬ জুন) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শিশু হাফসা অস্থির করে তুলেছিল বাবা-মায়ের মন। রাজশাহী নগরীর হাদিরমোড় বউবাজার এলাকার বাসিন্দা রুম্পা খাতুন ও সজল মনি ওরফে সিজার দম্পতির ছেলে হাফসা। গেল ২৬ জুন প্রতিদিনের মতো তার দাদি স্বাধীনা বেগম গোসল করাচ্ছিলেন।

এক পর্যায়ে গোসল শেষে তার শরীরের পানি মোছানোর সময় খেয়াল করেন শিশু হাফসা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকঠাক চলছে কিনা সেটুকুও বুঝে উঠছিলেন না বাড়ির কেউ। শিশুর মুখে দেখা যায় ফেনা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।

এ সময় তাকে নেয়া হয় বাড়ির পাশের এক হুজুরের কাছে। দোয়া পড়ে ফুঁ-দিলেও তা কোনো কাজে আসে না। এক পর্যায়ে মা রুম্পা খাতুন শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা হন। এর এক পর্যায়ে নিথর হয়ে পড়ে শিশু হাফসা। খবর দেয়া হয় বাবা সজলকেও। পথে ছুটছেন ওই মা। শিশুটির বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে হাসপাতালের পথে কিছুটা রাস্তার মোটরসাইকেলে সহযোগিতা নেন তারা। এরপর শিশু হাফসাকে নিয়ে রিকশাযোগে হাসপাতালের পথে এগোতে থাকেন ওই বাবা-মা।

শিশুটিকে নিয়ে রিকশায় ওঠার সময় একজন তাদের পরামর্শ দেন ‍মুখ দিয়ে বাতাস দিলে শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। একথা শোনার পর থেকেই মা রুম্পা বেগম শিশুটির মুখে-মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন।

শিশু হাফসার মা রুম্পা খুতুন জানান, যখন রিকশা হাসপাতালের কাছে পৌঁছায় তখন তার বাবাকে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে বলেন কেননা, ততক্ষণে তিনি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। রিকশাটি হাসপাতালে পৌঁছলেই হঠাৎ কেঁদে ওঠে শিশুটি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে দেখা মাত্র অক্সিজেন সাপোর্ট দেন। পরে হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান, খিচুনিজনিত কারণে এমনটা হয়েছিল। পরে দুই দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন শিশু হাফসা।

এরইমধ্যে মায়ের মুখের সঙ্গে শিশুটির মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার দৃশ্যটি ক্যামেরা বন্দি হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এখন শিশু হাফসাকে দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন আশেপাশের লোকজন।