সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন গড়তে চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:০৭:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৫৭৮ Time View

একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছে বাঙালি জাতি। এ বছর, বাংলাদেশ যখন পদার্পণ করলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, ঠিক তখনই এ দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে গিয়েছে তার শততম বর্ষে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তার সাথে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। তবে এই আনন্দের সময়ের চ্যালেঞ্জও কম নয়। করোনা মহামারীতে একদিকে ভেঙ্গে পড়েছে দুর্বল অর্থ ব্যবস্থা, অন্যদিকে ধর্মের নামে দেখা গেছে কতিপয় নরপিশাচের ঘৃণ্য নিষ্ঠুরতা। শতবর্ষের গৌরবকে ম্লান করতে অন্য সকল বছরের চেয়ে অবনতি দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং -এও ৷ করোনার প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর আবারও শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। এই দোদুদ্যমানতার অধীর সময়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জানতে এবং তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছে নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান, –  “কী ভাবছেন তাঁরা ?”

এ পর্বের অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের (সাবেক) সাহিত্য সম্পাদক কামাল উদ্দীন রানা। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : অন্যরা যেখানে মানুষের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প শুনে থাকেন এবং এখানে পড়ার স্বপ্ন দেখেন, আপনি ঢাকা কলেজে পড়া এবং কলেজের হলে থাকার সুবাদে অত্যন্ত কাছ থেকে স্বচক্ষে দেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল, এখানে ভর্তি হতে?

কামাল উদ্দীন রানা : আমি যখন ২০১০ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই, ঢাকা কলেজে পড়ার সুবাদে আমি প্রায়সময়ই আসতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে বিকাল বেলা বা সন্ধ্যার সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ এটা আমরা সবসময়ই শুনে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে যে হাজারো গল্প, তা আমি সরাসরি দেখতাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে দেখলেও আমি অনুপ্রাণিত হতাম৷ আর ক্যাম্পাসে আসার পর নিজের মধ্যেই একটা আশা জাগতো, – যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। এই স্পৃহা থেকেই আমি এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নেই এবং সাফল্যের সঙ্গে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই৷

জাননাহ : বৈচিত্র্যময় এই ক্যাম্পাস জীবন। বিচিত্রধর্মী স্বপ্ন নিয়ে পদচারণা করে এখানকার শিক্ষার্থীরা। প্রথম বর্ষ থেকে আপনি কী স্বপ্ন দেখতেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : আমি যখন ঢাকা কলেজে পড়ি তখন আমি ইকোনোমিক্স ভালো ভাবে পড়তাম, ভালো ফলাফল করতাম। আমার স্বপ্ন ছিল, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনোমিক্স পড়বো। তবে ভর্তি পরীক্ষায় পজিশন পিছনে থাকায় ইকোনোমিক্স পাই নি। পরে স্বাস্থ্য অর্থনীতি তে ভর্তি হই।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে ;- আমার বড় ভাই রাজনীতি করতো ঢাকা কলেজে, যার কারণে রাজনীতির প্রতি আমার অন্য রকম একটা ভালোবাসা বা টান ছিল। এ কারণে প্রথম বর্ষ থেকেই আমি পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি করাও শুরু করি। পরে রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি৷

এমনকি, আমি যখন প্রথম ক্লাসে যাই – ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে ; তখন আমার একজন শিক্ষক বলেছিলেন,”এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে চাইলে তুমি যেকোনো জায়গায় নেতৃত্ব দিতে পারবে৷ ” তো এই কথাটা আমার খুব ভালো লেগে যায়৷ সেই নেতৃত্বদানের স্বপ্ন নিয়ে আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করি এবং পাশাপাশি আমার শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাচ্ছি।

জাননাহ : ভর্তির আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে যে পূর্ব ধারণা ছিল, ক্যাম্পাসে আসার পরে -যখন নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করলেন, তারপরে সেই পূর্ব ধারণার কোনো পরিবর্তন হয়েছিল কী?

কামাল উদ্দীন রানা : আসলে ভর্তি হওয়ার আগে, শুধু আমার না,  আমার মনে হয়, সবারই –  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে তার মধ্যে যে আশা বা চিন্তাধারা টা থাকে, ভর্তি হওয়ার পরে অনেকাংশেই সেটা আর বিদ্যমান থাকে না। দেখা যায়,  অন্যরকম একটা অনুভূতি চলে আসে। যে উচ্চ আশাটা আমাদের ভর্তি হওয়ার আগে থাকে, সেটা পরে আর থাকে না

এটার পিছনে নিজের কিছু পারিপার্শ্বিক সমস্যা থাকে, এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ কিছু সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায়। যার দরুন সবকিছু মিলিয়ে ঐ উচ্চাকাঙ্ক্ষা টা হারিয়ে গিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। নবীন শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে গণরুমে থাকতে হয়৷ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পরিস্থিতিটি কী?  এখানেও কী গণরুম রয়েছে ?

কামাল উদ্দীন রানা : প্রথমেই যে কথাটি বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না৷ যদি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হতো তাহলে প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সবাই সিটে থাকতো। আমি যতদূর জানি হল গুলোতে একজন শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষে উঠলে তাকে গ্রিন কার্ড দেওয়া হয়৷ দ্বিতীয় বর্ষে তাকে দ্বৈতাবাসিক, মানে, এক সিটে দুজন থাকবে এরকম,- ইয়োলো কার্ড যেটাকে বলে, সেটা দেওয়া হয়৷

তো,যেহেতু পূর্বাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ স্টুডেন্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের৷ তারা গ্রাম থেকে আসে৷ যার কারণে ঢাকা শহরে থাকা-খাওয়া, তারপর নিজের একটা গাইডলাইন – এটার অভাবটা তাদের সবচেয়ে বেশি থাকে৷ এই অভাবটা পূরণের জন্যও তাকে আসলে হলে থাকতে হয়৷

আর যেহেতু পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, একটা হলে যেখানে তিন হাজার স্টুডেন্ট থাকে, সেখানে সিট দেখা যায় আছে ১৫০০ জনের। বাকি ১৫০০ জন থাকতে পারে না। এজন্য দেখা যায়, গণরুমের সৃষ্টিটা অটো হয়ে গেছে৷ এজন্য গণরুমে থাকতে হয়।

তবে আমাদের হল টা যেহেতু একটু বড়, সেকারণে বেশি দিন গণরুমে স্টে করতে হয় না৷ তবে আমি এটা আশাবাদ ব্যক্ত করবো, যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পদার্পণ করেছে, এই গণরুম সমস্যা সমাধান করা হোক ; এটা খুবই দরকার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন পিছিয়ে থাকবে এটি আমরা মেনে নিতে পারি না৷ আমরা চাই, যে আবাসন সংকটের সমাধান করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যে গণরুম আছে সেগুলোও বিলুপ্ত হবে৷

জাননাহ : তাহলে প্রথম বর্ষে ভর্তির পর আপনাকেও কী গণরুমে থাকতে হয়েছিল ?

কামাল উদ্দীন রানা : হ্যাঁ, প্রথম বর্ষে, আমি না, এখানে যদি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের ছেলেও আসে তারপরেও তার গণরুমেই থাকতে হয়৷ তবে আমি এটা সারাজীবনই বলবো, আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মৃতিময় যদি কিছু থাকে, সবচেয়ে মধুর যে মুহূর্তগুলো, তা আমি গণরুমেই কাটিয়েছি। আর গণরুমে না থাকলে আমার এত বন্ধু বা এত ক্লোজ বড়ভাই  হয়তো হতো না ৷

দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কারও বড়ভাই থাকার কারণে সে গণরুমে না থেকে তার ভাইয়ের সাথে থাকে। এতে করে তার সার্কেলটা বা পরিবেশ টা গড়ে ওঠে না।

জাননাহ : তবে গণরুমে থাকার ফলে যে সার্কেল বা পরিবেশ টি গড়ে ওঠে, তা সারাজীবন কাজে লাগে এটা যেমন সত্য, তেমনি গণরুমে থাকার ফলে পড়াশোনাও কী অনেকাংশে ব্যহত হয় না ?

কামাল উদ্দীন রানা : গণরুমে থাকার ফলে, যেহেতু একসাথে অনেকজন থাকে, চেয়ার টেবিল থাকে না সেহেতু পড়াশোনার ক্ষেত্রে কষ্ট তো হয়ই৷ তবে হলে যেহেতু রিডিং রুম আছে, তাই এই চাপটা কিছুটা লাঘব হয়।

জাননাহ : অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বর্ষে বিভিন্ন হলে থাকা গণরুমের শিক্ষার্থীদেকে গণরুমে থাকার জন্যে,  ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কোনো না কোনো গ্রুপে বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দিতে হয়৷ তাদের এ অভিযোগ কতটা সত্য ?

কামাল উদ্দীন রানা : এটা আমি আগেই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাই হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের যে অ্যালটমেন্ট দেওয়া হয়, দেখা যায় কোনো হলেই সেই ধারণক্ষমতা নেই

যার ফলে এখানে যে ছাত্র সংগঠন গুলো থাকে, তাদের ব্যানারেই তারা উঠে৷ তারাই নবীনদের হলে তোলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের সিট বরাদ্দ পেতে সহায়তা করে। ছাত্র সংগঠন তাদের না তুললে তো প্রশাসন তাদের কখনোই তুলবে না৷ কারণ প্রশাসন তৃতীয় বর্ষের আগে কাউকে সিট দেয় না, গ্রিন কার্ড দেয় না।

জাননাহ : আপনাদের জন্য একটি বড় পাওয়া হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে আপনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক  হিসেবে জয়ী হয়েছেন৷ ডাকসু এবং হল সংসদের নবনির্বাচিত সকল নেতৃবৃন্দকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গণভবনে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কেমন ছিল সে সময়কার অনুভূতি?

কামাল উদ্দীন রানা : আমরা আগে কখনও ডাকসু দেখি নি৷ তাই ডাকসুর প্রতি সবারই অন্য রকম একটা আগ্রহ তো ছিলই৷ ভর্তির আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে আমাদের যে একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল, ডাকসু ঐরকম একটা কিছু। না দেখা জিনিস দেখার জন্য সবারই আগ্রহ থাকে৷

আর আমি হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। তবে করোনার কারণে কাজ করার সুযোগ কম পেয়েছি৷

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে ডাকসু নির্বাচন দিয়েছেন৷এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।  আশা করি উনি নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন দিবেন এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে যে হল সংসদ নির্বাচন সেগুলোও ঠিকমতো হবে৷

আর গণভবনে যে আমাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়,  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া বা কাছ থেকে দেখা এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ছিল। পরবর্তী জীবনে কাছ থেকে দেখার আরও সুযোগ আসতে পারে৷ কিন্তু প্রথম দেখাটাই সবচেয়ে ভালো লাগার মুহুর্ত ছিল।

জাননাহ : করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ দিন ধরে হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা,  ছাত্র রাজনীতির উপরে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলেছে কী ?

কামাল উদ্দীন রানা : করোনা মহামারীর যে প্রাদুর্ভাব রয়েছে, এটা যে এতদিন স্থায়ী হবে এটা কিন্তু কেউই কল্পনা করে নি। আমরাও যখন হল বন্ধ হয়, তখন দশ দিন বা পনের দিনের প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছি৷ এখনও মহামারী সম্পূর্ণ কাটে নি৷ এটা ছাত্র রাজনীতি না শুধু,  অর্থনীতি, পরিবেশ সবকিছুর উপরই একটা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷

আমি নিজেও এটার ভুক্তভোগী। যেহেতু আমি রাজনীতির সাথে জড়িত,  আমাদের হল কমিটি যেখানে স্বল্প সময়ে হওয়ার কথা, আমরা সেখানে ১৮ মাস পিছিয়ে গিয়েছি – শুধু এই করোনার কারণে।

আর শুধু ছাত্র রাজনীতিই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। এতে অনেক বিরূপ প্রভাব পড়েছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷

জাননাহ : শতবর্ষে পদার্পণ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শততম বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে যে  উচ্চতায় দেখতে চেয়েছিলেন, বাস্তবে তার কতটা পরিলক্ষিত হচ্ছে ?

কামাল উদ্দীন রানা : আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শততম বর্ষে পদার্পণ করেছে, এটা আমাদের জন্য যেমন গৌরবের, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিবেশ বা সমস্যাগুলো আছে, এগুলো নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই৷ শতবর্ষের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নি। বরং শতবর্ষে পা দেওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কে স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপে গড়ে  তোলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা সমাধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন, গবেষণা এগুলোতে অনেক পিছিয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চাই শতবর্ষে এ সমস্যাগুলো সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলুক।

জাননাহ : সৃষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ‘বিকল্প সরকারে’র ভূমিকা পালন করে বিরোধী দল। সরকারের নানা সিদ্ধান্তের গঠনমূলক সমালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আপনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যে ছাত্র সংগঠন ;- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ ক্যাম্পাসে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মসূচি লক্ষ্য করেন কী ?

কামাল উদ্দীন রানা : হ্যাঁ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন সবজায়গায় ই তো বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করছে৷ কেউ তো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না

যেমন যদি আপনি মধুর ক্যান্টিনে দেখেন, টিএসসি তে যদি আপনি দেখেন, এখনও যদি আপনি টিএসসি যান, দেখবেন, ছাত্রদল সহ অন্য যে ছাত্র সংগঠন গুলো আছে সবাই তাদের প্রোগ্রাম করছে৷

জাননাহ : অর্থাৎ তারা বেশ সক্রিয় ভাবেই তাদের কর্মসূচি পালন করছে বলেই আপনার মনে হয়?

কামাল উদ্দীন রানা : হ্যাঁ, তাদেরকে কেউ বাধাগ্রস্থ করছে না। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই সম্ভব

জাননাহ : সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে “গণ অধিকার পরিষদ” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকের এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন বুঝতেছে, তাদের জীবনে যদি চরম একটি ভুল হয়ে থাকে, তা হলো নুরুল হক নুর কে ভোট দিয়ে ভিপি নির্বাচিত করা৷ এটা তারা এখন বুঝতেছে। এখন তারা সবাই নুরু কে বয়কট করে

এখন সে বিকাশ, রকেট, নগদ এসবের দোকান খোলে। বিকাশ নুরু হিসেবেই সবাই তাকে চেনে এখন। এভাবে আসলে রাজনীতি হয় না।সে একবছর ডাকসুর ভিপি ছিল ; দেখিনাই তাকে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু করতে৷ ডাকসুর কোনো সফলতা যদি থাকে,  অন্যান্য সবারই আছে, কিন্তু তার কোনো প্রোগ্রাম আমাদের চোখে পড়ে নাই৷

তার গণ অধিকার পরিষদ বা যাই হোক,  এটা হলো মূলত টাকা কামানোর ধান্ধা৷ জনগণের কাছ থেকে বিশেষত প্রবাসী ভাইদের থেকে তারা কীভাবে বিকাশের মাধ্যমে, ব্ল্যাকমেইল করে  – যারা প্রবাসে থাকে তারা দেশের প্রতি এমনিতেই সফটকর্ণার থাকে, তারা কষ্ট করে কাজ করে, দেশের মায়া কাটিয়ে তারা বিদেশে বাস করে,  যখন তাদের বলা হয় তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠায়, দেশের মানুষের কাছ থেকে তারা টাকা নেয়। তো এগুলা করার জন্য তারা দোকান খুলেছে,  এই দোকান ছাড়া আসলে আর কিছুই না। দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো তাদের কোনো ক্ষমতা নেই ; তাদের সেই জ্ঞান নেই

জাননাহ : অর্থাৎ আপনার মনে হয় না, তারা কোনো সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে দল গঠন করেছে  ?

কামাল উদ্দীন রানা : সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা দল খুলেছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকতো, সে একবছর ডাকসুর ভিপি ছিল, তার অনেক কাজ করার ক্ষমতা ছিল। আমরা দেখেছি বিভিন্ন অ্যাম্বাসি তে গিয়ে সে হাজিরা দিয়েছে৷ টাকার জন্য হাজিরা দিয়েছে৷ সেই টাকা দিয়ে সে বিলাসী জীবন যাপন করছে। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভালো কাজের সাথে আমরা তাকে দেখিনি৷

জাননাহ : অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে জ্বলন্ত মশাল হিসেবে ছাত্রলীগ আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর ছাত্রাবস্থা থেকেই অন্যায়ের সাথে কোনোরূপ আপোষ না করার যে নীতি, যার ফলে জীবনভর তাঁকে যে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছিল, তাঁর যে ত্যাগ-তিতিক্ষা; আজকের ছাত্রলীগের মধ্যে তার কতটা প্রতিফলন লক্ষ্য করছেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : অন্যায়, জুলুম বা নির্যাতন যাই বলেন না কেন, ছাত্রলীগ সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। যেখানেই অন্যায়, নির্যাতন থাকবে সেখানেই ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করবে৷

আপনি হলগুলোতে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখে থাকবেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও যদি কোনো অন্যায় করে সেখানেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

যদি উদাহরণ দিই,  কিছুদিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাধ্যতামূলক পরিবহণ ফি, উন্নয়ন ফি ইত্যাদি ছিল তা অন্যায় মনে করেই কিন্তু ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়িঁয়ে, সুপারিশ করে বা আন্দোলন করে যেভাবেই হোক এটা প্রত্যাহার করিয়েছে। এই সফলতা কিন্তু সবাই ভোগ করেছে৷

জাননাহ : আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলন । সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হলে কী ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিবেন বলে ঠিক করেছেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : প্রথমেই বলি, ডাকসুতে যখন নির্বাচিত হয়েছি, আমরা ছাত্রলীগ থেকে মনোনীত ছিলাম ; ছাত্রলীগ আমাদের সহযোগিতা করেছে,  নির্বাচিত হওয়ার পর,  আমরা ক্যান্টিনের খাবারের মান পর্যবেক্ষণ করেছি। খাবারের মান যাতে উন্নত হয় সেটা নিশ্চিত করেছি। এছাড়া খাবারের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ করেছি।

তারপর সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য,  সাপ্লাইয়ের পানি দেখা যায় ঘোলা থাকে,  তাই প্রতিটি ফ্লোরে দুটি করে ফিল্টার দিয়েছি৷ এছাড়া আমাদের একটি মাঠ এবং একটি পুকুর আছে। আমাদের যে অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক ছিল, তাদের সহযোগিতায় মাঠ সংস্কার করেছি, পুকুর সংস্কার করেছি৷

আর খেলাধুলা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ খেলাধুলার  মাধ্যমে হয়৷ আর বর্তমানে যেহেতু আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে, খেলাধুলার বিকল্প নেই৷ খেলাধুলা করলে, মানুষের সাথে মিশলে মন ফ্রেশ থাকে৷

যেহেতু আমি হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ; আমি হলের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করি,  যদি নেতা নির্বাচিত হই সেক্ষেত্রে আমার জন্য কাজ করা আরও সহজ হবে৷ প্রশাসনের সাথে ডীল করে কাজ করা তখন সহজ হবে৷ আমি বিভিন্ন ধরনের সভা সেমিনারের মাধ্যমে সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন গড়তে চাই

খেলাধুলার প্রসার ঘটানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিব৷ এছাড়া যেহেতু রুমে পড়ার সুযোগ কম থাকে, তাই হলের রিডিং রুম গুলোর উন্নতি করা, এগুলো আরও সম্প্রসারণ করা যায় কি না, পাঠকক্ষ গুলো সম্প্রসারণ করা যায় কি না,  ভালো ভালো বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি কাজ করার চেষ্টা থাকবে।

নেতা নির্বাচিত হলে, আমি আশা করি আমার কাজের সফলতা সকলে ভোগ করবে।

জাননাহ : যেহেতু আপনি নিজে প্রথম বর্ষ থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ‘যেকোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি শ্রেষ্ঠ জায়গা’ -আপনার শিক্ষকের এরূপ অনুপ্রেরণার দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছেন ; তাহলে, একজন নবীন শিক্ষার্থী, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তার রাজনৈতিক মূল্যবোধ এবং ব্যাক্তিত্বের বিকাশের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তার প্রতি আপনার কী পরামর্শ থাকবে?

কামাল উদ্দীন রানা : আমার পরামর্শ থাকবে, প্রথম বর্ষ থেকেই যারা রাজনীতির স্বপ্ন দেখে ;- রাজনীতি এবং পড়াশোনা দুইটাই করবে, পড়াশোনায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে যদি কেউ রাজনীতি করতে চায়, সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, এটা আসলে হয় না৷ পড়াশোনা ঠিক রেখে রাজনীতির যে বইগুলো আছে, ইতিহাস জানতে হবে

সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সবার সাথে যদি সুসম্পর্ক থাকে, সবার সাথে যোগাযোগ যদি থাকে তাহলে সে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে উন্নতি করবে৷

এজন্য আমার পরামর্শ থাকবে, প্রথম বর্ষে আসার পর চেইন বাই চেইন, সব বর্ষের যত পলিটিক্যাল, নন-পলিটিক্যাল বড় ভাই আছে,  হল থেকেই তো রাজনীতি শুরু হয়,  প্রতিটি হল হচ্ছে ছাত্র রাজনীতির ক্যান্টনমেন্ট ; তো, যে রাজনীতি করতে চায়, প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে তার রাজনীতি আস্তে আস্তে এমনিই দীর্ঘায়িত হবে।

জাননাহ : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য বিডি সমাচারের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

কামাল উদ্দীন রানা : আপনাকেও ধন্যবাদ।

Please Share This Post in Your Social Media

সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন গড়তে চাই

Update Time : ০৬:০৭:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩

একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছে বাঙালি জাতি। এ বছর, বাংলাদেশ যখন পদার্পণ করলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, ঠিক তখনই এ দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে গিয়েছে তার শততম বর্ষে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তার সাথে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। তবে এই আনন্দের সময়ের চ্যালেঞ্জও কম নয়। করোনা মহামারীতে একদিকে ভেঙ্গে পড়েছে দুর্বল অর্থ ব্যবস্থা, অন্যদিকে ধর্মের নামে দেখা গেছে কতিপয় নরপিশাচের ঘৃণ্য নিষ্ঠুরতা। শতবর্ষের গৌরবকে ম্লান করতে অন্য সকল বছরের চেয়ে অবনতি দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং -এও ৷ করোনার প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর আবারও শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। এই দোদুদ্যমানতার অধীর সময়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জানতে এবং তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছে নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান, –  “কী ভাবছেন তাঁরা ?”

এ পর্বের অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের (সাবেক) সাহিত্য সম্পাদক কামাল উদ্দীন রানা। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : অন্যরা যেখানে মানুষের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প শুনে থাকেন এবং এখানে পড়ার স্বপ্ন দেখেন, আপনি ঢাকা কলেজে পড়া এবং কলেজের হলে থাকার সুবাদে অত্যন্ত কাছ থেকে স্বচক্ষে দেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল, এখানে ভর্তি হতে?

কামাল উদ্দীন রানা : আমি যখন ২০১০ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই, ঢাকা কলেজে পড়ার সুবাদে আমি প্রায়সময়ই আসতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে বিকাল বেলা বা সন্ধ্যার সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ এটা আমরা সবসময়ই শুনে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে যে হাজারো গল্প, তা আমি সরাসরি দেখতাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে দেখলেও আমি অনুপ্রাণিত হতাম৷ আর ক্যাম্পাসে আসার পর নিজের মধ্যেই একটা আশা জাগতো, – যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। এই স্পৃহা থেকেই আমি এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নেই এবং সাফল্যের সঙ্গে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই৷

জাননাহ : বৈচিত্র্যময় এই ক্যাম্পাস জীবন। বিচিত্রধর্মী স্বপ্ন নিয়ে পদচারণা করে এখানকার শিক্ষার্থীরা। প্রথম বর্ষ থেকে আপনি কী স্বপ্ন দেখতেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : আমি যখন ঢাকা কলেজে পড়ি তখন আমি ইকোনোমিক্স ভালো ভাবে পড়তাম, ভালো ফলাফল করতাম। আমার স্বপ্ন ছিল, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনোমিক্স পড়বো। তবে ভর্তি পরীক্ষায় পজিশন পিছনে থাকায় ইকোনোমিক্স পাই নি। পরে স্বাস্থ্য অর্থনীতি তে ভর্তি হই।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে ;- আমার বড় ভাই রাজনীতি করতো ঢাকা কলেজে, যার কারণে রাজনীতির প্রতি আমার অন্য রকম একটা ভালোবাসা বা টান ছিল। এ কারণে প্রথম বর্ষ থেকেই আমি পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি করাও শুরু করি। পরে রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি৷

এমনকি, আমি যখন প্রথম ক্লাসে যাই – ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে ; তখন আমার একজন শিক্ষক বলেছিলেন,”এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে চাইলে তুমি যেকোনো জায়গায় নেতৃত্ব দিতে পারবে৷ ” তো এই কথাটা আমার খুব ভালো লেগে যায়৷ সেই নেতৃত্বদানের স্বপ্ন নিয়ে আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করি এবং পাশাপাশি আমার শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাচ্ছি।

জাননাহ : ভর্তির আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে যে পূর্ব ধারণা ছিল, ক্যাম্পাসে আসার পরে -যখন নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করলেন, তারপরে সেই পূর্ব ধারণার কোনো পরিবর্তন হয়েছিল কী?

কামাল উদ্দীন রানা : আসলে ভর্তি হওয়ার আগে, শুধু আমার না,  আমার মনে হয়, সবারই –  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে তার মধ্যে যে আশা বা চিন্তাধারা টা থাকে, ভর্তি হওয়ার পরে অনেকাংশেই সেটা আর বিদ্যমান থাকে না। দেখা যায়,  অন্যরকম একটা অনুভূতি চলে আসে। যে উচ্চ আশাটা আমাদের ভর্তি হওয়ার আগে থাকে, সেটা পরে আর থাকে না

এটার পিছনে নিজের কিছু পারিপার্শ্বিক সমস্যা থাকে, এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ কিছু সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায়। যার দরুন সবকিছু মিলিয়ে ঐ উচ্চাকাঙ্ক্ষা টা হারিয়ে গিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়

জাননাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। নবীন শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে গণরুমে থাকতে হয়৷ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পরিস্থিতিটি কী?  এখানেও কী গণরুম রয়েছে ?

কামাল উদ্দীন রানা : প্রথমেই যে কথাটি বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না৷ যদি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হতো তাহলে প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সবাই সিটে থাকতো। আমি যতদূর জানি হল গুলোতে একজন শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষে উঠলে তাকে গ্রিন কার্ড দেওয়া হয়৷ দ্বিতীয় বর্ষে তাকে দ্বৈতাবাসিক, মানে, এক সিটে দুজন থাকবে এরকম,- ইয়োলো কার্ড যেটাকে বলে, সেটা দেওয়া হয়৷

তো,যেহেতু পূর্বাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ স্টুডেন্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের৷ তারা গ্রাম থেকে আসে৷ যার কারণে ঢাকা শহরে থাকা-খাওয়া, তারপর নিজের একটা গাইডলাইন – এটার অভাবটা তাদের সবচেয়ে বেশি থাকে৷ এই অভাবটা পূরণের জন্যও তাকে আসলে হলে থাকতে হয়৷

আর যেহেতু পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, একটা হলে যেখানে তিন হাজার স্টুডেন্ট থাকে, সেখানে সিট দেখা যায় আছে ১৫০০ জনের। বাকি ১৫০০ জন থাকতে পারে না। এজন্য দেখা যায়, গণরুমের সৃষ্টিটা অটো হয়ে গেছে৷ এজন্য গণরুমে থাকতে হয়।

তবে আমাদের হল টা যেহেতু একটু বড়, সেকারণে বেশি দিন গণরুমে স্টে করতে হয় না৷ তবে আমি এটা আশাবাদ ব্যক্ত করবো, যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পদার্পণ করেছে, এই গণরুম সমস্যা সমাধান করা হোক ; এটা খুবই দরকার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন পিছিয়ে থাকবে এটি আমরা মেনে নিতে পারি না৷ আমরা চাই, যে আবাসন সংকটের সমাধান করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যে গণরুম আছে সেগুলোও বিলুপ্ত হবে৷

জাননাহ : তাহলে প্রথম বর্ষে ভর্তির পর আপনাকেও কী গণরুমে থাকতে হয়েছিল ?

কামাল উদ্দীন রানা : হ্যাঁ, প্রথম বর্ষে, আমি না, এখানে যদি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের ছেলেও আসে তারপরেও তার গণরুমেই থাকতে হয়৷ তবে আমি এটা সারাজীবনই বলবো, আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মৃতিময় যদি কিছু থাকে, সবচেয়ে মধুর যে মুহূর্তগুলো, তা আমি গণরুমেই কাটিয়েছি। আর গণরুমে না থাকলে আমার এত বন্ধু বা এত ক্লোজ বড়ভাই  হয়তো হতো না ৷

দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কারও বড়ভাই থাকার কারণে সে গণরুমে না থেকে তার ভাইয়ের সাথে থাকে। এতে করে তার সার্কেলটা বা পরিবেশ টা গড়ে ওঠে না।

জাননাহ : তবে গণরুমে থাকার ফলে যে সার্কেল বা পরিবেশ টি গড়ে ওঠে, তা সারাজীবন কাজে লাগে এটা যেমন সত্য, তেমনি গণরুমে থাকার ফলে পড়াশোনাও কী অনেকাংশে ব্যহত হয় না ?

কামাল উদ্দীন রানা : গণরুমে থাকার ফলে, যেহেতু একসাথে অনেকজন থাকে, চেয়ার টেবিল থাকে না সেহেতু পড়াশোনার ক্ষেত্রে কষ্ট তো হয়ই৷ তবে হলে যেহেতু রিডিং রুম আছে, তাই এই চাপটা কিছুটা লাঘব হয়।

জাননাহ : অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বর্ষে বিভিন্ন হলে থাকা গণরুমের শিক্ষার্থীদেকে গণরুমে থাকার জন্যে,  ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কোনো না কোনো গ্রুপে বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দিতে হয়৷ তাদের এ অভিযোগ কতটা সত্য ?

কামাল উদ্দীন রানা : এটা আমি আগেই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাই হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের যে অ্যালটমেন্ট দেওয়া হয়, দেখা যায় কোনো হলেই সেই ধারণক্ষমতা নেই

যার ফলে এখানে যে ছাত্র সংগঠন গুলো থাকে, তাদের ব্যানারেই তারা উঠে৷ তারাই নবীনদের হলে তোলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের সিট বরাদ্দ পেতে সহায়তা করে। ছাত্র সংগঠন তাদের না তুললে তো প্রশাসন তাদের কখনোই তুলবে না৷ কারণ প্রশাসন তৃতীয় বর্ষের আগে কাউকে সিট দেয় না, গ্রিন কার্ড দেয় না।

জাননাহ : আপনাদের জন্য একটি বড় পাওয়া হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে আপনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক  হিসেবে জয়ী হয়েছেন৷ ডাকসু এবং হল সংসদের নবনির্বাচিত সকল নেতৃবৃন্দকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গণভবনে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কেমন ছিল সে সময়কার অনুভূতি?

কামাল উদ্দীন রানা : আমরা আগে কখনও ডাকসু দেখি নি৷ তাই ডাকসুর প্রতি সবারই অন্য রকম একটা আগ্রহ তো ছিলই৷ ভর্তির আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে আমাদের যে একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল, ডাকসু ঐরকম একটা কিছু। না দেখা জিনিস দেখার জন্য সবারই আগ্রহ থাকে৷

আর আমি হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। তবে করোনার কারণে কাজ করার সুযোগ কম পেয়েছি৷

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে ডাকসু নির্বাচন দিয়েছেন৷এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।  আশা করি উনি নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন দিবেন এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে যে হল সংসদ নির্বাচন সেগুলোও ঠিকমতো হবে৷

আর গণভবনে যে আমাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়,  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া বা কাছ থেকে দেখা এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ছিল। পরবর্তী জীবনে কাছ থেকে দেখার আরও সুযোগ আসতে পারে৷ কিন্তু প্রথম দেখাটাই সবচেয়ে ভালো লাগার মুহুর্ত ছিল।

জাননাহ : করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ দিন ধরে হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা,  ছাত্র রাজনীতির উপরে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলেছে কী ?

কামাল উদ্দীন রানা : করোনা মহামারীর যে প্রাদুর্ভাব রয়েছে, এটা যে এতদিন স্থায়ী হবে এটা কিন্তু কেউই কল্পনা করে নি। আমরাও যখন হল বন্ধ হয়, তখন দশ দিন বা পনের দিনের প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছি৷ এখনও মহামারী সম্পূর্ণ কাটে নি৷ এটা ছাত্র রাজনীতি না শুধু,  অর্থনীতি, পরিবেশ সবকিছুর উপরই একটা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷

আমি নিজেও এটার ভুক্তভোগী। যেহেতু আমি রাজনীতির সাথে জড়িত,  আমাদের হল কমিটি যেখানে স্বল্প সময়ে হওয়ার কথা, আমরা সেখানে ১৮ মাস পিছিয়ে গিয়েছি – শুধু এই করোনার কারণে।

আর শুধু ছাত্র রাজনীতিই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। এতে অনেক বিরূপ প্রভাব পড়েছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷

জাননাহ : শতবর্ষে পদার্পণ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শততম বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে যে  উচ্চতায় দেখতে চেয়েছিলেন, বাস্তবে তার কতটা পরিলক্ষিত হচ্ছে ?

কামাল উদ্দীন রানা : আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শততম বর্ষে পদার্পণ করেছে, এটা আমাদের জন্য যেমন গৌরবের, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিবেশ বা সমস্যাগুলো আছে, এগুলো নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই৷ শতবর্ষের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নি। বরং শতবর্ষে পা দেওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কে স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপে গড়ে  তোলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা সমাধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন, গবেষণা এগুলোতে অনেক পিছিয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চাই শতবর্ষে এ সমস্যাগুলো সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলুক।

জাননাহ : সৃষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ‘বিকল্প সরকারে’র ভূমিকা পালন করে বিরোধী দল। সরকারের নানা সিদ্ধান্তের গঠনমূলক সমালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আপনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যে ছাত্র সংগঠন ;- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ ক্যাম্পাসে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মসূচি লক্ষ্য করেন কী ?

কামাল উদ্দীন রানা : হ্যাঁ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন সবজায়গায় ই তো বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করছে৷ কেউ তো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না

যেমন যদি আপনি মধুর ক্যান্টিনে দেখেন, টিএসসি তে যদি আপনি দেখেন, এখনও যদি আপনি টিএসসি যান, দেখবেন, ছাত্রদল সহ অন্য যে ছাত্র সংগঠন গুলো আছে সবাই তাদের প্রোগ্রাম করছে৷

জাননাহ : অর্থাৎ তারা বেশ সক্রিয় ভাবেই তাদের কর্মসূচি পালন করছে বলেই আপনার মনে হয়?

কামাল উদ্দীন রানা : হ্যাঁ, তাদেরকে কেউ বাধাগ্রস্থ করছে না। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই সম্ভব

জাননাহ : সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে “গণ অধিকার পরিষদ” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকের এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন বুঝতেছে, তাদের জীবনে যদি চরম একটি ভুল হয়ে থাকে, তা হলো নুরুল হক নুর কে ভোট দিয়ে ভিপি নির্বাচিত করা৷ এটা তারা এখন বুঝতেছে। এখন তারা সবাই নুরু কে বয়কট করে

এখন সে বিকাশ, রকেট, নগদ এসবের দোকান খোলে। বিকাশ নুরু হিসেবেই সবাই তাকে চেনে এখন। এভাবে আসলে রাজনীতি হয় না।সে একবছর ডাকসুর ভিপি ছিল ; দেখিনাই তাকে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু করতে৷ ডাকসুর কোনো সফলতা যদি থাকে,  অন্যান্য সবারই আছে, কিন্তু তার কোনো প্রোগ্রাম আমাদের চোখে পড়ে নাই৷

তার গণ অধিকার পরিষদ বা যাই হোক,  এটা হলো মূলত টাকা কামানোর ধান্ধা৷ জনগণের কাছ থেকে বিশেষত প্রবাসী ভাইদের থেকে তারা কীভাবে বিকাশের মাধ্যমে, ব্ল্যাকমেইল করে  – যারা প্রবাসে থাকে তারা দেশের প্রতি এমনিতেই সফটকর্ণার থাকে, তারা কষ্ট করে কাজ করে, দেশের মায়া কাটিয়ে তারা বিদেশে বাস করে,  যখন তাদের বলা হয় তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠায়, দেশের মানুষের কাছ থেকে তারা টাকা নেয়। তো এগুলা করার জন্য তারা দোকান খুলেছে,  এই দোকান ছাড়া আসলে আর কিছুই না। দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো তাদের কোনো ক্ষমতা নেই ; তাদের সেই জ্ঞান নেই

জাননাহ : অর্থাৎ আপনার মনে হয় না, তারা কোনো সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে দল গঠন করেছে  ?

কামাল উদ্দীন রানা : সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা দল খুলেছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকতো, সে একবছর ডাকসুর ভিপি ছিল, তার অনেক কাজ করার ক্ষমতা ছিল। আমরা দেখেছি বিভিন্ন অ্যাম্বাসি তে গিয়ে সে হাজিরা দিয়েছে৷ টাকার জন্য হাজিরা দিয়েছে৷ সেই টাকা দিয়ে সে বিলাসী জীবন যাপন করছে। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভালো কাজের সাথে আমরা তাকে দেখিনি৷

জাননাহ : অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে জ্বলন্ত মশাল হিসেবে ছাত্রলীগ আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর ছাত্রাবস্থা থেকেই অন্যায়ের সাথে কোনোরূপ আপোষ না করার যে নীতি, যার ফলে জীবনভর তাঁকে যে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছিল, তাঁর যে ত্যাগ-তিতিক্ষা; আজকের ছাত্রলীগের মধ্যে তার কতটা প্রতিফলন লক্ষ্য করছেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : অন্যায়, জুলুম বা নির্যাতন যাই বলেন না কেন, ছাত্রলীগ সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। যেখানেই অন্যায়, নির্যাতন থাকবে সেখানেই ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করবে৷

আপনি হলগুলোতে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখে থাকবেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও যদি কোনো অন্যায় করে সেখানেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

যদি উদাহরণ দিই,  কিছুদিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাধ্যতামূলক পরিবহণ ফি, উন্নয়ন ফি ইত্যাদি ছিল তা অন্যায় মনে করেই কিন্তু ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়িঁয়ে, সুপারিশ করে বা আন্দোলন করে যেভাবেই হোক এটা প্রত্যাহার করিয়েছে। এই সফলতা কিন্তু সবাই ভোগ করেছে৷

জাননাহ : আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলন । সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হলে কী ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিবেন বলে ঠিক করেছেন ?

কামাল উদ্দীন রানা : প্রথমেই বলি, ডাকসুতে যখন নির্বাচিত হয়েছি, আমরা ছাত্রলীগ থেকে মনোনীত ছিলাম ; ছাত্রলীগ আমাদের সহযোগিতা করেছে,  নির্বাচিত হওয়ার পর,  আমরা ক্যান্টিনের খাবারের মান পর্যবেক্ষণ করেছি। খাবারের মান যাতে উন্নত হয় সেটা নিশ্চিত করেছি। এছাড়া খাবারের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ করেছি।

তারপর সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য,  সাপ্লাইয়ের পানি দেখা যায় ঘোলা থাকে,  তাই প্রতিটি ফ্লোরে দুটি করে ফিল্টার দিয়েছি৷ এছাড়া আমাদের একটি মাঠ এবং একটি পুকুর আছে। আমাদের যে অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক ছিল, তাদের সহযোগিতায় মাঠ সংস্কার করেছি, পুকুর সংস্কার করেছি৷

আর খেলাধুলা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ খেলাধুলার  মাধ্যমে হয়৷ আর বর্তমানে যেহেতু আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে, খেলাধুলার বিকল্প নেই৷ খেলাধুলা করলে, মানুষের সাথে মিশলে মন ফ্রেশ থাকে৷

যেহেতু আমি হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ; আমি হলের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করি,  যদি নেতা নির্বাচিত হই সেক্ষেত্রে আমার জন্য কাজ করা আরও সহজ হবে৷ প্রশাসনের সাথে ডীল করে কাজ করা তখন সহজ হবে৷ আমি বিভিন্ন ধরনের সভা সেমিনারের মাধ্যমে সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন গড়তে চাই

খেলাধুলার প্রসার ঘটানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিব৷ এছাড়া যেহেতু রুমে পড়ার সুযোগ কম থাকে, তাই হলের রিডিং রুম গুলোর উন্নতি করা, এগুলো আরও সম্প্রসারণ করা যায় কি না, পাঠকক্ষ গুলো সম্প্রসারণ করা যায় কি না,  ভালো ভালো বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি কাজ করার চেষ্টা থাকবে।

নেতা নির্বাচিত হলে, আমি আশা করি আমার কাজের সফলতা সকলে ভোগ করবে।

জাননাহ : যেহেতু আপনি নিজে প্রথম বর্ষ থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ‘যেকোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি শ্রেষ্ঠ জায়গা’ -আপনার শিক্ষকের এরূপ অনুপ্রেরণার দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছেন ; তাহলে, একজন নবীন শিক্ষার্থী, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তার রাজনৈতিক মূল্যবোধ এবং ব্যাক্তিত্বের বিকাশের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তার প্রতি আপনার কী পরামর্শ থাকবে?

কামাল উদ্দীন রানা : আমার পরামর্শ থাকবে, প্রথম বর্ষ থেকেই যারা রাজনীতির স্বপ্ন দেখে ;- রাজনীতি এবং পড়াশোনা দুইটাই করবে, পড়াশোনায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে যদি কেউ রাজনীতি করতে চায়, সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, এটা আসলে হয় না৷ পড়াশোনা ঠিক রেখে রাজনীতির যে বইগুলো আছে, ইতিহাস জানতে হবে

সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সবার সাথে যদি সুসম্পর্ক থাকে, সবার সাথে যোগাযোগ যদি থাকে তাহলে সে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে উন্নতি করবে৷

এজন্য আমার পরামর্শ থাকবে, প্রথম বর্ষে আসার পর চেইন বাই চেইন, সব বর্ষের যত পলিটিক্যাল, নন-পলিটিক্যাল বড় ভাই আছে,  হল থেকেই তো রাজনীতি শুরু হয়,  প্রতিটি হল হচ্ছে ছাত্র রাজনীতির ক্যান্টনমেন্ট ; তো, যে রাজনীতি করতে চায়, প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে তার রাজনীতি আস্তে আস্তে এমনিই দীর্ঘায়িত হবে।

জাননাহ : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য বিডি সমাচারের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

কামাল উদ্দীন রানা : আপনাকেও ধন্যবাদ।