শেখ হাসিনার দিগ্বিজয়ী প্রত্যাবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:৪১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২
  • / ১৯১ Time View

বাঙালির স্বাধীন জাতিসত্তা কিংবা পৃথক জাতি রাষ্ট্রের চেতনার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে যদি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে ধরে নেওয়া হয় তাহলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাঙালির রাষ্ট্রভাষা একমাত্র বাংলা। তবে, এর বিরোধীদের মধ্যে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না। তবে পাকিস্তানপন্থীদের ধারণা ছিল, সমগ্র পাকিস্তানে উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে তা ইসলামী রাষ্ট্রকাঠামোর পরিমন্ডলে বিভ্রান্তি নিয়ে সৃষ্ট পাকিস্তানের অখণ্ডতার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।তারা বাংলা ও বাঙালিত্বের মধ্যে হিন্দুয়ানির গন্ধ সবসময়ই পেত। যার ফলে দেখা যায়, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ করা হয় পূর্ব পাকিস্তানে। শোষণ-বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট বাঙালি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিরোধিতাকে পরাজিত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিজয় অর্জন করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পরাজিত হয় ৫২, ৫৪, ৬১, ৬৬, ৬৯, ৭০ এর বাঙালি চেতনার বিরুদ্ধাবলম্বনকারী শক্তি।

সেই ৭১’ থেকে ৭৫’ স্বদেশ নির্মাণের ব্রত আর এক পাহাড়সম পথ পাড়ি দেবার সীমাহীন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশবাসীর লড়াইয়ে ভাটা পড়ে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ট্র‍্যাজেডির মাধ্যমে।বস্তুত সেদিন যারা রাষ্ট্রক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে তারা মূলত আবার সেই পূর্ব পাকিস্তানকেই কায়েম করে। মোশতাক, জিয়ার নেতৃত্বে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন হয় আজীবন বাঙালিত্বের বিরোধিতাকারী অপশক্তি। ইতিহাসের চাকা ঘুরতে থাকে পেছনের দিকে। ১৯৭৬ সালের ৩মে এক ফরমান জারি করে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনর্বাসিত করেন। ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ অর্থনীতির জনক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের ব্যাপক জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনে ২০৭টি আসন পেয়ে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে গঠিত সংসদে আসীন হয় বিএনপি ।প্রথমে মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে সিনিয়র মন্ত্রী এবং পরে ১৯৭৯ সালের ১২ মার্চ তিনি মারা গেলে পাকিস্তানপন্থি মুসলিম লীগ নেতা শাহ্ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।পাক্ষিকভাবে সেসময়ে জাতীয় সংগীতটি পর্যন্ত পরিবর্তন করবার চেষ্টা করেছিলেন তারা।সংসদ চলে গিয়েছিল পাকিস্তানি ভাবধারার লোকেদের দখলে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও সেসময়ে স্রোতের প্রতিকূলতায় বিহ্বল হয়ে নতুনভাবে ফিরে আসবার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল।দলের ক্রান্তিকালে ঐক্যের কারণে সেসময়ে প্রবাসে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে থাকে দলের ১৯৭৮ সালের সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনের সময় থেকেই।আর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তা অনিবার্য হয়ে পড়ে ১৯৮১ সালের ঐতিহাসিক সম্মেলনে।১৯৮১ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত থাকার পর শেষ আবাসস্থল দিল্লীর পান্ডেরা রোড থেকে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।সেদিন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখ লাখ জনতার ঢল নেমেছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে এক পলক দেখবার নিমিত্তে। সেই জনস্রোত ঠেলে মানিক মিয়া এভিনিউতে সেদিনের ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছিলেন: ‘বাংলার জনগণের পাশে থাকার জন্য আমি এসেছি, মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আমি এসেছি; আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি।’শেখ হাসিনাকে পেয়ে বাঙালি তার ‘বাঙালিত্ব’ ও ‘বাংলাদেশকে’ ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধল।সেই থেকে পথচলা শুরু, সামরিক শাসন স্বৈরশাসকের চোখে চোখ রেখে গণতন্ত্রের আগল খুঁজে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজকের চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাঝেও রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামরিক জান্তার বন্দুকের নল কিংবা রাজনৈতিক হত্যার পটপরিকল্পনা বাংলাদেশের এই লৌহ মানবী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।বাংলাদেশে নাগরিক ছায়ানটের পুরনো সংস্কৃতি-ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ, আউল-বাউলদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে শুরু করে দেশের শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জাগরণের মহীরুহ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

শেখ হাসিনা এখন বিশ্বস্বীকৃত একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জনশক্তি রপ্তানী, ব্যাংকিং, প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল সেবা বিস্তৃত ও সহজলভ্য করে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে তিনি এক অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধন করেছেন। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় এক বছরের ব্যবধানে ২৩৩ মার্কিন ডলার বেড়েছে। গত অর্থবছর শেষে এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। যেখানে তিনি ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১০০০ ডলারেরও কম।২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় দফা ভিত্তিক একটি বহুমাত্রিক শান্তির মডেল জাতিসংঘে উপস্থাপন করেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণ, বৈষম্য হ্রাস, বঞ্চনা প্রশমন, বাদপড়া মানুষের অন্তর্ভূক্তি, মানব উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ ও সন্ত্রাস নির্মূলের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই মডেলটি আজকের অস্থির ও বিপদসংকুল বিশ্বে এক তাৎপর্যপূর্ণ দলিল হিসেবে গৃহীত হয়েছে।পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ আজ বাংলার মানুষের সমৃদ্ধির দৃশ্যমান অবয়ব।

১৯৮১ সালের ১৭ই মে জাতির পিতার রক্তেভেজা এই বাংলার মাটিতে পা রেখে অশ্রুভরা ভালোবাসার সাগরে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা সেদিন যে অঙ্গীকার করেছিলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম আর চার দশক ধরে প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব দিয়ে বাংলার মানুষকে নিরলস নিষ্ঠায় সেই পথেই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতা চেতনায় আমাদের ঐক্য, সাহস ও বর্তমান বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক – আশিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ashik.omi.ao@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

শেখ হাসিনার দিগ্বিজয়ী প্রত্যাবর্তন

Update Time : ০৪:৪১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২

বাঙালির স্বাধীন জাতিসত্তা কিংবা পৃথক জাতি রাষ্ট্রের চেতনার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে যদি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে ধরে নেওয়া হয় তাহলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাঙালির রাষ্ট্রভাষা একমাত্র বাংলা। তবে, এর বিরোধীদের মধ্যে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না। তবে পাকিস্তানপন্থীদের ধারণা ছিল, সমগ্র পাকিস্তানে উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে তা ইসলামী রাষ্ট্রকাঠামোর পরিমন্ডলে বিভ্রান্তি নিয়ে সৃষ্ট পাকিস্তানের অখণ্ডতার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।তারা বাংলা ও বাঙালিত্বের মধ্যে হিন্দুয়ানির গন্ধ সবসময়ই পেত। যার ফলে দেখা যায়, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ করা হয় পূর্ব পাকিস্তানে। শোষণ-বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট বাঙালি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিরোধিতাকে পরাজিত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিজয় অর্জন করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পরাজিত হয় ৫২, ৫৪, ৬১, ৬৬, ৬৯, ৭০ এর বাঙালি চেতনার বিরুদ্ধাবলম্বনকারী শক্তি।

সেই ৭১’ থেকে ৭৫’ স্বদেশ নির্মাণের ব্রত আর এক পাহাড়সম পথ পাড়ি দেবার সীমাহীন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশবাসীর লড়াইয়ে ভাটা পড়ে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ট্র‍্যাজেডির মাধ্যমে।বস্তুত সেদিন যারা রাষ্ট্রক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে তারা মূলত আবার সেই পূর্ব পাকিস্তানকেই কায়েম করে। মোশতাক, জিয়ার নেতৃত্বে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন হয় আজীবন বাঙালিত্বের বিরোধিতাকারী অপশক্তি। ইতিহাসের চাকা ঘুরতে থাকে পেছনের দিকে। ১৯৭৬ সালের ৩মে এক ফরমান জারি করে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনর্বাসিত করেন। ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ অর্থনীতির জনক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের ব্যাপক জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনে ২০৭টি আসন পেয়ে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে গঠিত সংসদে আসীন হয় বিএনপি ।প্রথমে মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে সিনিয়র মন্ত্রী এবং পরে ১৯৭৯ সালের ১২ মার্চ তিনি মারা গেলে পাকিস্তানপন্থি মুসলিম লীগ নেতা শাহ্ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।পাক্ষিকভাবে সেসময়ে জাতীয় সংগীতটি পর্যন্ত পরিবর্তন করবার চেষ্টা করেছিলেন তারা।সংসদ চলে গিয়েছিল পাকিস্তানি ভাবধারার লোকেদের দখলে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও সেসময়ে স্রোতের প্রতিকূলতায় বিহ্বল হয়ে নতুনভাবে ফিরে আসবার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল।দলের ক্রান্তিকালে ঐক্যের কারণে সেসময়ে প্রবাসে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে থাকে দলের ১৯৭৮ সালের সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনের সময় থেকেই।আর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তা অনিবার্য হয়ে পড়ে ১৯৮১ সালের ঐতিহাসিক সম্মেলনে।১৯৮১ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত থাকার পর শেষ আবাসস্থল দিল্লীর পান্ডেরা রোড থেকে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।সেদিন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখ লাখ জনতার ঢল নেমেছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে এক পলক দেখবার নিমিত্তে। সেই জনস্রোত ঠেলে মানিক মিয়া এভিনিউতে সেদিনের ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছিলেন: ‘বাংলার জনগণের পাশে থাকার জন্য আমি এসেছি, মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আমি এসেছি; আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি।’শেখ হাসিনাকে পেয়ে বাঙালি তার ‘বাঙালিত্ব’ ও ‘বাংলাদেশকে’ ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধল।সেই থেকে পথচলা শুরু, সামরিক শাসন স্বৈরশাসকের চোখে চোখ রেখে গণতন্ত্রের আগল খুঁজে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজকের চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাঝেও রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামরিক জান্তার বন্দুকের নল কিংবা রাজনৈতিক হত্যার পটপরিকল্পনা বাংলাদেশের এই লৌহ মানবী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।বাংলাদেশে নাগরিক ছায়ানটের পুরনো সংস্কৃতি-ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ, আউল-বাউলদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে শুরু করে দেশের শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জাগরণের মহীরুহ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

শেখ হাসিনা এখন বিশ্বস্বীকৃত একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জনশক্তি রপ্তানী, ব্যাংকিং, প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল সেবা বিস্তৃত ও সহজলভ্য করে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে তিনি এক অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধন করেছেন। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় এক বছরের ব্যবধানে ২৩৩ মার্কিন ডলার বেড়েছে। গত অর্থবছর শেষে এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। যেখানে তিনি ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১০০০ ডলারেরও কম।২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় দফা ভিত্তিক একটি বহুমাত্রিক শান্তির মডেল জাতিসংঘে উপস্থাপন করেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণ, বৈষম্য হ্রাস, বঞ্চনা প্রশমন, বাদপড়া মানুষের অন্তর্ভূক্তি, মানব উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ ও সন্ত্রাস নির্মূলের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই মডেলটি আজকের অস্থির ও বিপদসংকুল বিশ্বে এক তাৎপর্যপূর্ণ দলিল হিসেবে গৃহীত হয়েছে।পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ আজ বাংলার মানুষের সমৃদ্ধির দৃশ্যমান অবয়ব।

১৯৮১ সালের ১৭ই মে জাতির পিতার রক্তেভেজা এই বাংলার মাটিতে পা রেখে অশ্রুভরা ভালোবাসার সাগরে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা সেদিন যে অঙ্গীকার করেছিলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম আর চার দশক ধরে প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব দিয়ে বাংলার মানুষকে নিরলস নিষ্ঠায় সেই পথেই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতা চেতনায় আমাদের ঐক্য, সাহস ও বর্তমান বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক – আশিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ashik.omi.ao@gmail.com