শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রশাসন কতটুকু আগ্রহী?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:১৯:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৫০৪ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছে বাঙালি জাতি। এ বছর, বাংলাদেশ যখন পদার্পণ করলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, ঠিক তখনই এ দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে গিয়েছে তার শততম বর্ষে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তার সাথে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। তবে এই আনন্দের সময়ের চ্যালেঞ্জও কম নয়। করোনা মহামারীতে একদিকে ভেঙ্গে পড়েছে দুর্বল অর্থ ব্যবস্থা, অন্যদিকে ধর্মের নামে দেখা গেছে কতিপয় নরপিশাচের ঘৃণ্য নিষ্ঠুরতা। শতবর্ষের গৌরবকে ম্লান করতে অন্য সকল বছরের চেয়ে অবনতি দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং -এও ৷ করোনার প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর আবারও শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। এই দোদুদ্যমানতার অধীর সময়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জানতে এবং তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছে নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান, –  “কী ভাবছেন তাঁরা ?”

এ পর্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের (সাবেক) সাধারণ সম্পাদক মো. তৌফিকুল ইসলাম

সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : শুরুতেই জানতে চাইবো হল সম্মেলনের ব্যাপারে৷ গত ২৮ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও, দীর্ঘ দিন ধরে সম্মেলন হচ্ছে না৷ এর পিছনে কী কারণ রয়েছে ?

তৌফিকুল ইসলাম : প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই। আমরা, বাঙালি জাতি এখন একটি মাহেন্দ্রক্ষণে অবস্থান করছি। এ বছর আমরা একই সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেছি। এ বছরই আমাদের প্রাণের বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্পণ করেছে তার শততম বর্ষে৷

হল সম্মেলন নিয়ে যদি বলি, এটা নিয়ে কাউকে দোষারোপ করার কিছু নেই। আমরা গত ২০২০ সাল থেকে একটি ভয়াবহ মহামারীর মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করেছি।করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হলেও আবারও তা আঘাত হানতে শুরু করেছে৷

আমি মনে করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এ ব্যপারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন।

জাননাহ : তবে এরকম গুঞ্জন রয়েছে যে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের প্রোটোকল হারানোর ভয়ে এবং পদবঞ্চিত নেতাদের উপর কমান্ড হারানোর ভয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কমিটি দিতে বিলম্ব করছেন। এ বিষয়টি কতটা সত্য ?

তৌফিকুল ইসলাম : আমি আমার জায়গা থেকে বলবো, বিষয়টি সত্য নয়। কেননা শীর্ষ পদে যেই থাকুক, কমিটি দিতে বিলম্ব হলে তাদের বিরুদ্ধে এরকম কথা উঠবেই। এটা অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি। তাই আমার মনে হয় না এই জাতীয় কোনো বিষয় জড়িত আছে।

জাননাহ : সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন  হলের গণরুম বন্ধের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে। ২১ শতকে এসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে গণরুম বিলুপ্ত করতে না পারা কে বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব সাদ্দাম হোসেন। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে গণরুম বিলুপ্ত করা কী আদৌ সম্ভব?

তৌফিকুল ইসলাম : এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যেটি দরকার, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা৷ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা যদি থাকে তাহলে, গণরুম ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা না গেলেও, ধীরে ধীরে আমরা এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো৷

আমরা খেয়াল করেছি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা, কর্মচারী সবার জন্যই নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা, নতুনত্ব আসে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান যে সমস্যা ;- গণরুম, অবকাঠামোগত যে সমস্যা,  শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তারা কতটুকু আগ্রহী ?

গণরুম ব্যবস্থা তুলতে হলে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা দরকার। প্রশাসন চাইলে, খুব দ্রুত না হলেও ধীরে ধীরে আমরা এ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো বলে আমি মনে করি।

জাননাহ : সম্প্রতি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সহ বেশ কিছু কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা এক হাজার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এ উদ্যোগ কে কীভাবে দেখছেন ?

তৌফিকুল ইসলাম : কী কারণে আসন কমানো হবে, এ ব্যাপারে আমি এখনো অবগত নই,  শুধু খবর পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা এক হাজার কমানো হতে পারে। যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার মানোন্নয়ন বা শিক্ষার্থীদের যে আবাসন সংকট দূর করার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমি এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

কিন্তু গতানুগতিকভাবে কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই  যদি তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তা হবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রহসন৷

জাননাহ : দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে আপনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক  হিসেবে জয়ী হয়েছেন৷ ডাকসু এবং হল সংসদের নবনির্বাচিত সকল নেতৃবৃন্দকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গণভবনে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কেমন ছিল সে সময়কার অনুভূতি?

তৌফিকুল ইসলাম : প্রথমত আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিবাদন জানাই। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপকার, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা,  আমরা আপার আমন্ত্রণ পেয়ে সত্যিই অনেক আপ্লুত ছিলাম। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল, আপাকে একনজর কাছ থেকে দেখবো। এই দেখার সুযোগটা ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছিল৷

আর নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলাম হলের শিক্ষার্থীদের প্রতি, যারা আমাকে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়ী করেছিল৷

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ছিল বলেই কিন্তু ডাকসু নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল৷ আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার এ দেশের ক্ষমতায় এসেছে৷ তারা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গণতন্ত্র চর্চার মুক্তভূমি। এখানে যেন গণতন্ত্র বিকশিত না হয়, আমরা দেখেছি বিভিন্ন সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ এজন্য আমি আবারও বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই ; আপার সদিচ্ছার জন্যই ডাকসু নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল।

জাননাহ : ২৮ বছর পরের প্রথম নির্বাচিত ডাকসু কমিটি কতটা সফল ছিল বলে মনে করেন?

তৌফিকুল ইসলাম : শতভাগ সফল হিসেবে আসলে কোনো কিছুকেই মূল্যায়ন করা যায় না৷ আর আমি যেহেতু হল সংসদের একজন প্রতিনিধি তাই আমি হল সংসদ নিয়েই বলি, দীর্ঘ ২৮ বছর শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের যে পথটি বন্ধ ছিল, হল প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে দুরত্ব ছিল, এই দুরত্বটা কাটিয়ে উঠাতে পেরেছে আমাদের হল সংসদ৷ আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি যৌক্তিক দাবি আমাদের হল প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছি।

আর সামগ্রিকভাবে আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। কেন্দ্রীয় সংসদ আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করেছে এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আমরা কেন্দ্রীয় সংসদের মাধ্যমে আদায় করতে পেরেছি৷

জাননাহ : ভবিষ্যতে ডাকসু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কি?

তৌফিকুল ইসলাম : হ্যাঁ, অবশ্যই৷ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল প্রশাসনের নিকট থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যে যৌক্তিক দাবি-দাওয়া, তা আদায় করার জন্যও ডাকসু  অপরিহার্য ।

জাননাহ : সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে “গণ অধিকার পরিষদ” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকের এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

তৌফিকুল ইসলাম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে আমি প্রথমেই বলতে চাই, ডাকসু’র সাবেক ভিপি জনাব নুরুল হক নুরকে আমার মানসিক বিকারগ্রস্ত মনে হয়,  কেননা উনার কথা ও কাজকর্মের মধ্যে কোন মিল নেই।প্রতি মাসে মাসে আমরা তাকে নতুন রূপে আবিষ্কার করি।

তিনি শিক্ষার্থীদের ভোটের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কথা না বলে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করেছেন- যা ইতিপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি।

এজন্য আমি তার ঘোষিত নতুন রাজনৈতিক দলকে শুভেচ্ছা না জানিয়ে বরং জনাব নুরুল হক নুরের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন তথা মানসিক চিকিৎসা করার জন্য আহবান জানাই

জাননাহ : অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বর্ষের বিভিন্ন হলের গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কোনো না কোনো গ্রুপে  যোগ দিতে হয় ৷ এ অভিযোগ কতটা সত্য ?

তৌফিকুল ইসলাম : দেখুন, আমিও প্রথম বর্ষ থেকেই হলে আছি,  ডাকসু নির্বাচন করেছি, আমার মনে হয় এটিকে অভিযোগ বলা চলে না। কেননা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে না। আর নিশ্চিত করতে পারে না বিধায় এই গণরুম ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে৷

আমি নিজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আমি বলতে পারি এখানে কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করা হয় না যে -আমাদের সংগঠন করতে হবে৷

বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভালোবাসা থেকে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড দেখে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে নিজেকে মেলে ধরে।

এখানে জোর-জবরদস্তি, এটি আমি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মনে করি৷

জাননাহ : একশ বছর পরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি কী বলে আপনার মনে হয় ?

তৌফিকুল ইসলাম : আমার মনে হয় আবাসন সমস্যাটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিয় সময়ে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বাসভবন হচ্ছে, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য বাসভবন হচ্ছে,  কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ডাইনামিক পরিকল্পনা আমরা লক্ষ্য করি নি

জাননাহ : অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে জ্বলন্ত মশাল হিসেবে ছাত্রলীগ আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং সারা জীবনের তার যে ইতিহাস, রাজনৈতিক সংগ্রাম,সমস্ত অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর ছাত্রাবস্থা থেকেই অন্যায়ের সাথে কোনোরূপ আপোষ না করার ফলে জীবনভর যে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তাঁর যে ত্যাগ-তিতিক্ষা; আজকের ছাত্রলীগের মধ্যে তার কতটা প্রতিফলন লক্ষ্য করছেন ?

তৌফিকুল ইসলাম : আমি পূর্বেই বলেছি, রাজনীতির যে পটভূমি, ষাটের দশকের রাজনীতি, আশির দশকের রাজনীতি বা বর্তমান সময়ের রাজনীতি,  রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য এক থাকলেও রাজনীতির ধারায় যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে৷

এক সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলন করেছেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য৷ বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে৷ ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে৷

তাই বর্তমান সময়ের রাজনীতি আর ষাট বা সত্তরের দশকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় গণ মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই করেছেন, আর বর্তমান সময়ে আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্যও তাই – গণ মানুষের অধিকার আদায়,  শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো।

বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে, তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে গণ মানুষের পাশে থাকা, শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা। সে কারণেই বাংলাদেশ কে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে মহৎ পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়নে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা সবসময়ই বদ্ধ পরিকর৷ দেশরত্ন শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে, আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশ কে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হবো,  ইনশাআল্লাহ

জাননাহ : ক্ষমতাসীল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গরূপে ক্রিয়াশীল। কিন্তু নেই তেমন কোনো বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি। হলগুলোতে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে, বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর অনুপস্থিতির বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

তৌফিকুল ইসলাম : প্রথমেই বলে নিই, এই যে বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনের অনুপস্থিতি, এজন্য ছাত্রলীগ কে দোষারোপ করা কিংবা ছাত্রলীগের উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া, এটা আমার মনে হয় সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক। কেননা,  ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।

অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগ যেভাবে সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে, অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন কে আমরা লক্ষ্য করি নি এভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে।

এজন্য ক্যম্পাসে যে অন্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি নেই, এটা তাদের ব্যর্থতা৷ তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ বলেই,  আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে বর্জন করেছে

জাননাহ : হাজারো স্বপ্ন নিয়ে একজন নবীন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসে। আপনি কী স্বপ্ন দেখেন?

তৌফিকুল ইসলাম : একটি দরিদ্র পরিবার থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম। মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি এজন্য কৃতজ্ঞ যে; – ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি।

শুরু থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, নিজেকে মেলে ধরার জন্য।  রাজনীতি, পড়াশোনা দুটাই সমানভাবে চালিয়ে যেতে চেষ্টা করতাম। এবং আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ,  আমার হলের শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা তাদের মূল্যবান ভোটের মাধ্যমে আমাকে তাদের একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল।

সবসময়ই চাইতাম শিক্ষার্থীদের সুখে-দুখে তাদের পাশে যেন দাঁড়াতে পারি, তাদের বিপদে-আপদে যেন সর্বোচ্চটা দিতে পারি। পাশাপাশি পড়াশোনা করে নিজের একটা ভালো ক্যারিয়ার গঠন,  এদিকটাতেও লক্ষ্য রেখেছিলাম।

জাননাহ : একজন নবীন শিক্ষার্থী, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তার রাজনৈতিক মূল্যবোধ এবং ব্যাক্তিত্বের বিকাশের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, তার প্রতি আপনার কী পরামর্শ থাকবে ?

তৌফিকুল ইসলাম : বাংলাদেশের যে অতীত ইতিহাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অতীত ইতিহাস, তা থেকে আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সেক্টরেই আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়ররা, আমাদের সাবেক শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, আমার মনে হয় এটি এজন্য বলা হয় যে, এখান থেকে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি এবং আমাদের স্বপ্নকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় । সেই স্বপ্নের পথে আমাদের নিজেদেরকে মেলে ধরতে হবে৷

নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে,  প্রথমেই পড়াশোনা৷ পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে নিজেকে মেলে ধরা,  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ;- ডিবেট, বাঁধন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

জাননাহ : ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য বিডি সমাচারের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তৌফিকুল ইসলাম : বিডি সমাচারকেও ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

Please Share This Post in Your Social Media

শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রশাসন কতটুকু আগ্রহী?

Update Time : ০১:১৯:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছে বাঙালি জাতি। এ বছর, বাংলাদেশ যখন পদার্পণ করলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, ঠিক তখনই এ দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে গিয়েছে তার শততম বর্ষে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তার সাথে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। তবে এই আনন্দের সময়ের চ্যালেঞ্জও কম নয়। করোনা মহামারীতে একদিকে ভেঙ্গে পড়েছে দুর্বল অর্থ ব্যবস্থা, অন্যদিকে ধর্মের নামে দেখা গেছে কতিপয় নরপিশাচের ঘৃণ্য নিষ্ঠুরতা। শতবর্ষের গৌরবকে ম্লান করতে অন্য সকল বছরের চেয়ে অবনতি দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং -এও ৷ করোনার প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর আবারও শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম। এই দোদুদ্যমানতার অধীর সময়ে বাংলাদেশের ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দের চিন্তা-ভাবনাকে জানতে এবং তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিডি সমাচার আয়োজন করেছে নিয়মিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান, –  “কী ভাবছেন তাঁরা ?”

এ পর্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের (সাবেক) সাধারণ সম্পাদক মো. তৌফিকুল ইসলাম

সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ

জাননাহ : শুরুতেই জানতে চাইবো হল সম্মেলনের ব্যাপারে৷ গত ২৮ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও, দীর্ঘ দিন ধরে সম্মেলন হচ্ছে না৷ এর পিছনে কী কারণ রয়েছে ?

তৌফিকুল ইসলাম : প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই। আমরা, বাঙালি জাতি এখন একটি মাহেন্দ্রক্ষণে অবস্থান করছি। এ বছর আমরা একই সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেছি। এ বছরই আমাদের প্রাণের বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্পণ করেছে তার শততম বর্ষে৷

হল সম্মেলন নিয়ে যদি বলি, এটা নিয়ে কাউকে দোষারোপ করার কিছু নেই। আমরা গত ২০২০ সাল থেকে একটি ভয়াবহ মহামারীর মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করেছি।করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হলেও আবারও তা আঘাত হানতে শুরু করেছে৷

আমি মনে করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এ ব্যপারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন।

জাননাহ : তবে এরকম গুঞ্জন রয়েছে যে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের প্রোটোকল হারানোর ভয়ে এবং পদবঞ্চিত নেতাদের উপর কমান্ড হারানোর ভয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কমিটি দিতে বিলম্ব করছেন। এ বিষয়টি কতটা সত্য ?

তৌফিকুল ইসলাম : আমি আমার জায়গা থেকে বলবো, বিষয়টি সত্য নয়। কেননা শীর্ষ পদে যেই থাকুক, কমিটি দিতে বিলম্ব হলে তাদের বিরুদ্ধে এরকম কথা উঠবেই। এটা অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি। তাই আমার মনে হয় না এই জাতীয় কোনো বিষয় জড়িত আছে।

জাননাহ : সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন  হলের গণরুম বন্ধের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে। ২১ শতকে এসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে গণরুম বিলুপ্ত করতে না পারা কে বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব সাদ্দাম হোসেন। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে গণরুম বিলুপ্ত করা কী আদৌ সম্ভব?

তৌফিকুল ইসলাম : এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যেটি দরকার, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা৷ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা যদি থাকে তাহলে, গণরুম ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা না গেলেও, ধীরে ধীরে আমরা এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো৷

আমরা খেয়াল করেছি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা, কর্মচারী সবার জন্যই নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা, নতুনত্ব আসে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান যে সমস্যা ;- গণরুম, অবকাঠামোগত যে সমস্যা,  শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তারা কতটুকু আগ্রহী ?

গণরুম ব্যবস্থা তুলতে হলে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা দরকার। প্রশাসন চাইলে, খুব দ্রুত না হলেও ধীরে ধীরে আমরা এ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো বলে আমি মনে করি।

জাননাহ : সম্প্রতি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সহ বেশ কিছু কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা এক হাজার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এ উদ্যোগ কে কীভাবে দেখছেন ?

তৌফিকুল ইসলাম : কী কারণে আসন কমানো হবে, এ ব্যাপারে আমি এখনো অবগত নই,  শুধু খবর পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা এক হাজার কমানো হতে পারে। যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার মানোন্নয়ন বা শিক্ষার্থীদের যে আবাসন সংকট দূর করার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমি এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

কিন্তু গতানুগতিকভাবে কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই  যদি তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তা হবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রহসন৷

জাননাহ : দীর্ঘ ২৮ বছর পর, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে আপনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক  হিসেবে জয়ী হয়েছেন৷ ডাকসু এবং হল সংসদের নবনির্বাচিত সকল নেতৃবৃন্দকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গণভবনে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কেমন ছিল সে সময়কার অনুভূতি?

তৌফিকুল ইসলাম : প্রথমত আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিবাদন জানাই। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপকার, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা,  আমরা আপার আমন্ত্রণ পেয়ে সত্যিই অনেক আপ্লুত ছিলাম। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল, আপাকে একনজর কাছ থেকে দেখবো। এই দেখার সুযোগটা ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছিল৷

আর নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলাম হলের শিক্ষার্থীদের প্রতি, যারা আমাকে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়ী করেছিল৷

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ছিল বলেই কিন্তু ডাকসু নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল৷ আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার এ দেশের ক্ষমতায় এসেছে৷ তারা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গণতন্ত্র চর্চার মুক্তভূমি। এখানে যেন গণতন্ত্র বিকশিত না হয়, আমরা দেখেছি বিভিন্ন সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ এজন্য আমি আবারও বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই ; আপার সদিচ্ছার জন্যই ডাকসু নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল।

জাননাহ : ২৮ বছর পরের প্রথম নির্বাচিত ডাকসু কমিটি কতটা সফল ছিল বলে মনে করেন?

তৌফিকুল ইসলাম : শতভাগ সফল হিসেবে আসলে কোনো কিছুকেই মূল্যায়ন করা যায় না৷ আর আমি যেহেতু হল সংসদের একজন প্রতিনিধি তাই আমি হল সংসদ নিয়েই বলি, দীর্ঘ ২৮ বছর শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের যে পথটি বন্ধ ছিল, হল প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে দুরত্ব ছিল, এই দুরত্বটা কাটিয়ে উঠাতে পেরেছে আমাদের হল সংসদ৷ আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি যৌক্তিক দাবি আমাদের হল প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছি।

আর সামগ্রিকভাবে আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। কেন্দ্রীয় সংসদ আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করেছে এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আমরা কেন্দ্রীয় সংসদের মাধ্যমে আদায় করতে পেরেছি৷

জাননাহ : ভবিষ্যতে ডাকসু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কি?

তৌফিকুল ইসলাম : হ্যাঁ, অবশ্যই৷ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল প্রশাসনের নিকট থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যে যৌক্তিক দাবি-দাওয়া, তা আদায় করার জন্যও ডাকসু  অপরিহার্য ।

জাননাহ : সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে “গণ অধিকার পরিষদ” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকের এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

তৌফিকুল ইসলাম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে আমি প্রথমেই বলতে চাই, ডাকসু’র সাবেক ভিপি জনাব নুরুল হক নুরকে আমার মানসিক বিকারগ্রস্ত মনে হয়,  কেননা উনার কথা ও কাজকর্মের মধ্যে কোন মিল নেই।প্রতি মাসে মাসে আমরা তাকে নতুন রূপে আবিষ্কার করি।

তিনি শিক্ষার্থীদের ভোটের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কথা না বলে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করেছেন- যা ইতিপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি।

এজন্য আমি তার ঘোষিত নতুন রাজনৈতিক দলকে শুভেচ্ছা না জানিয়ে বরং জনাব নুরুল হক নুরের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন তথা মানসিক চিকিৎসা করার জন্য আহবান জানাই

জাননাহ : অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বর্ষের বিভিন্ন হলের গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কোনো না কোনো গ্রুপে  যোগ দিতে হয় ৷ এ অভিযোগ কতটা সত্য ?

তৌফিকুল ইসলাম : দেখুন, আমিও প্রথম বর্ষ থেকেই হলে আছি,  ডাকসু নির্বাচন করেছি, আমার মনে হয় এটিকে অভিযোগ বলা চলে না। কেননা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে না। আর নিশ্চিত করতে পারে না বিধায় এই গণরুম ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে৷

আমি নিজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আমি বলতে পারি এখানে কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করা হয় না যে -আমাদের সংগঠন করতে হবে৷

বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভালোবাসা থেকে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড দেখে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে নিজেকে মেলে ধরে।

এখানে জোর-জবরদস্তি, এটি আমি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মনে করি৷

জাননাহ : একশ বছর পরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি কী বলে আপনার মনে হয় ?

তৌফিকুল ইসলাম : আমার মনে হয় আবাসন সমস্যাটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিয় সময়ে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বাসভবন হচ্ছে, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য বাসভবন হচ্ছে,  কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ডাইনামিক পরিকল্পনা আমরা লক্ষ্য করি নি

জাননাহ : অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে জ্বলন্ত মশাল হিসেবে ছাত্রলীগ আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং সারা জীবনের তার যে ইতিহাস, রাজনৈতিক সংগ্রাম,সমস্ত অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর ছাত্রাবস্থা থেকেই অন্যায়ের সাথে কোনোরূপ আপোষ না করার ফলে জীবনভর যে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তাঁর যে ত্যাগ-তিতিক্ষা; আজকের ছাত্রলীগের মধ্যে তার কতটা প্রতিফলন লক্ষ্য করছেন ?

তৌফিকুল ইসলাম : আমি পূর্বেই বলেছি, রাজনীতির যে পটভূমি, ষাটের দশকের রাজনীতি, আশির দশকের রাজনীতি বা বর্তমান সময়ের রাজনীতি,  রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য এক থাকলেও রাজনীতির ধারায় যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে৷

এক সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলন করেছেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য৷ বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে৷ ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে৷

তাই বর্তমান সময়ের রাজনীতি আর ষাট বা সত্তরের দশকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় গণ মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই করেছেন, আর বর্তমান সময়ে আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্যও তাই – গণ মানুষের অধিকার আদায়,  শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো।

বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে, তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে গণ মানুষের পাশে থাকা, শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা। সে কারণেই বাংলাদেশ কে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে মহৎ পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়নে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা সবসময়ই বদ্ধ পরিকর৷ দেশরত্ন শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে, আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশ কে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হবো,  ইনশাআল্লাহ

জাননাহ : ক্ষমতাসীল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গরূপে ক্রিয়াশীল। কিন্তু নেই তেমন কোনো বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি। হলগুলোতে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে, বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর অনুপস্থিতির বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

তৌফিকুল ইসলাম : প্রথমেই বলে নিই, এই যে বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনের অনুপস্থিতি, এজন্য ছাত্রলীগ কে দোষারোপ করা কিংবা ছাত্রলীগের উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া, এটা আমার মনে হয় সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক। কেননা,  ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।

অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগ যেভাবে সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে, অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন কে আমরা লক্ষ্য করি নি এভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে।

এজন্য ক্যম্পাসে যে অন্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি নেই, এটা তাদের ব্যর্থতা৷ তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ বলেই,  আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে বর্জন করেছে

জাননাহ : হাজারো স্বপ্ন নিয়ে একজন নবীন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসে। আপনি কী স্বপ্ন দেখেন?

তৌফিকুল ইসলাম : একটি দরিদ্র পরিবার থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম। মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি এজন্য কৃতজ্ঞ যে; – ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি।

শুরু থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, নিজেকে মেলে ধরার জন্য।  রাজনীতি, পড়াশোনা দুটাই সমানভাবে চালিয়ে যেতে চেষ্টা করতাম। এবং আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ,  আমার হলের শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা তাদের মূল্যবান ভোটের মাধ্যমে আমাকে তাদের একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল।

সবসময়ই চাইতাম শিক্ষার্থীদের সুখে-দুখে তাদের পাশে যেন দাঁড়াতে পারি, তাদের বিপদে-আপদে যেন সর্বোচ্চটা দিতে পারি। পাশাপাশি পড়াশোনা করে নিজের একটা ভালো ক্যারিয়ার গঠন,  এদিকটাতেও লক্ষ্য রেখেছিলাম।

জাননাহ : একজন নবীন শিক্ষার্থী, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তার রাজনৈতিক মূল্যবোধ এবং ব্যাক্তিত্বের বিকাশের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, তার প্রতি আপনার কী পরামর্শ থাকবে ?

তৌফিকুল ইসলাম : বাংলাদেশের যে অতীত ইতিহাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অতীত ইতিহাস, তা থেকে আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সেক্টরেই আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়ররা, আমাদের সাবেক শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, আমার মনে হয় এটি এজন্য বলা হয় যে, এখান থেকে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি এবং আমাদের স্বপ্নকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় । সেই স্বপ্নের পথে আমাদের নিজেদেরকে মেলে ধরতে হবে৷

নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে,  প্রথমেই পড়াশোনা৷ পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে নিজেকে মেলে ধরা,  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ;- ডিবেট, বাঁধন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

জাননাহ : ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য বিডি সমাচারের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তৌফিকুল ইসলাম : বিডি সমাচারকেও ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।