শতবর্ষের পরিকল্পনা ও পানি ব্যবস্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:৫১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২
  • / ২৮১ Time View

মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন:

পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এই ব-দ্বীপ ঘিরেই সামগ্রিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে শত বছরের মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা।

পরিকল্পনার প্রথম ধাপে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নদী-সাগর থেকে ভূমি উদ্ধার করে দেশের আয়তন বাড়ানোর মতো তিনটি কর্মসূচী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে কৃষিখাতের উন্নয়ন ঘটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, শিল্প খাতের উন্নয়ন করে সকলের জন্য কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যের প্রসার, সকলের জন্য সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাত বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ডেল্টা প্ল্যানে।

পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মিলনস্থলে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে গতিশীল এই ব-দ্বীপ। বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫ টি(বাপাউবো)। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১০২টি) , উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১১৫টি), উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী (৮৭টি), উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী (৬১টি), পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী (১৬টি) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী (২৪টি) হিসেবে বিভাজন করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি আন্তঃদেশীয় নদী। ৫৪টি ভারতের সঙ্গে ও ৩টি নদী মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের জলসীমায় উৎপত্তি ও সমাপ্ত দুটি নদী হালদা ও সাংগু । বাংলাদেশ জলবায়ুর পরিবর্তনজনীত ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে প্রথম এবং তৃতীয়।

শতবর্ষের পরিকল্পনা ও পানি ব্যবস্থাপনা

আমরা ইচ্ছা করলেই রাতারাতি এ ঝুঁকি মুক্ত হতে পারি না। তবে পরিকল্পিতভাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে জলবায়ুর পরিবর্তনজনীত ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব। প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

পানি এ গ্রহের সকল জীবনের জন্য একটি অপরিহার্য সম্পদ। সারা বিশ্বে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সৃষ্টি হয় পানি সঙ্কট। পৃথিবীতে প্রাপ্ত মিষ্টি পানির প্রায় শতকরা ৭০ ভাগই খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা ব্যবহার করেন। শিল্প-কারখানায় প্রায় ২০ ভাগ এবং শতকরা ১০ ভাগ মিষ্টি পানি ব্যবহার করা হয় ঘরের কাজে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে অপরিশোধিত ও পয়ঃবর্জ্য ফেলে ভয়াবহ পানিদূষণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আছে ভৌত-কাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, এতদসংক্রান্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনা,প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং আইন ও নানারকম বিধিবিধান। বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক কাঠামো এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার নির্মিত অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ এবং ব্যবহারকারীদের জন্য এসবের প্রাপ্যতা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়ে গঠিত।

পানির সঠিক ব্যবহার ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর পানির পরিবেশগত প্রভাব কমাতে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অনেক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। পানিকে বাস্তুসংস্থানের অখণ্ড অঙ্গ হিসেবে পর্যবেক্ষণ একীভূত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তিতে তৈরি, যেখানে বাস্তুসংস্থানের পরিমাণ ও গুণগতমান প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকৃতি নির্ধারণে সহায়তা করে। জোয়ারের প্রাবল্য, লবণাক্ততা বৃদ্ধি বন্যা, নদী ভাঙ্গন, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাসহ উপকূলীয় এলাকার জনগণের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এছাড়াও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকায়ও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের নদীগুলিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিসহ ঘন ঘন বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। আবার দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের শুষ্ক এলাকায় চাষাবাদের জন্য অধিকমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের কারণে পানির স্তর অনেক গভীরে নেমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকায় এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

No description available.

বিশুদ্ধ পানি সব ধরনের মানবাধিকারের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রকে পানির বরাদ্দ সম্পর্কিত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সমস্যাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে যেত । ভবিষ্যতে পানিভিত্তিক সম্পদের জন্য অন্যতম বড়ো একটি সমস্যা হলো বর্তমান ও ভবিষ্যতের পানি সম্পদ বরাদ্দের টেকসইতা। মানুষের প্রয়োজন ও পরিবেশে পানি সম্পদের টেকসইতার মতো প্রয়োজনীয় ধাপের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করে, সবার জন্য উন্নত উৎসের পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষের উন্নত উৎসের পানি পাওয়ার সুযোগ আছে। তবে পুরোপুরি নিরাপদ পানি পানের সুযোগ এখনও সীমিত। অগ্রগতি সত্ত্বেও কিছু কিছু এলাকার মানুষ এখনও সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এছাড়া পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরাইড ও লৌহ দূষণের কারণেও খাওয়ার পানির মান খারাপ থাকে (ইউনিসেফ)।

বাংলাদেশে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার কতকগুলি জটিল ক্ষেত্র রয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও শুষ্ক মৌসুমে খরার সমস্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমবর্ধমান পানি চাহিদার মোকাবিলা, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, আর্সেনিক, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং নদীভাঙন। এছাড়া পানিসম্পদকেন্দ্রিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা বিশেষ করে মৎস্যসম্পদের এলাকাসমূহ এবং জলাভূমি এলাকার পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিভিন্ন বিষয় যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, বহির্দেশীয় নদী বা নদী-অববাহিকায় পরিবর্তন ইত্যাদি বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কাজকে জটিল করে তুলছে।

দেশে প্রতি ৩-৫ বছরে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল বন্যাপ্লাবিত হয়। ফলে জীবন-জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। উন্নত প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক উপকরণ ব্যবহার করে আমাদের নদী ও স্হলবন্দরসমূহের দক্ষতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। নদীগুলোর নাব্যতা বজায় রাখতে ড্রেজিংসহ অন্যন্য কার্যকর পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। হাওরাঞ্চলে পানির রিজার্ভার এর জন্য খাল খনন কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত জলবায়ু (পানি ব্যবস্হাপনা) সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছয়টি অঞ্চল হলো উপকূলীয় অঞ্চল, নদী অঞ্চল ও মোহনা, নগর এলাকাসমূহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, হাওড় এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল এবং ক্রস কাটিং অঞ্চল। এরমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৩ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলো পশ্চিম গোপালগঞ্জ, ভোলা, গোমতি- মহুরি বেসিন, বলেশ্বর-তেঁতুলিয়া বেসিন,গোমতি-মুহুরি বেসিন ও নোয়াখালী জেলায়। নদী অঞ্চল ও মোহনা ক্যাটাগরিতে মোট ৫ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নগর এলাকা ক্যাটাগরিতে মোট ০৫ টি প্রকল্প রয়েছে।

বাংলাদেশের পানি সম্পদের সমন্বিত ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। সরকার পানি সম্পদ খাতে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এডিপি’র অর্থায়নে বাস্তবায়ানাধীন প্রকল্প ৮২ টি প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৯৯০৬৯.৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঢাকা; চট্টগ্রাম-দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল; রংপুর উত্তরাঞ্চল; রাজশাহী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল; ফরিদপুর পশ্চিমাঞ্চল; বরিশাল দক্ষিণাঞ্চল; খুলনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৯৩.৬৬ শতাংশ । বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট ০৭টি প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৫.৭১ শতাংশ। ০৩টি বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৯২২৫.৩ লাখ টাকা, প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৯.৬৬ শতাংশ। এছারাও ১৫৩৪ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প রয়েছে যার অগ্রগতি ৩০ শতাংশ।

এডিবি’র আওতাভুক্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৮৩১১৬.৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৩১ টি প্রকল্প সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারসহ ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ফরিদপুর বরিশাল, খুলনা অঞ্চলের নদী ভাঙ্গন রোধে প্রতিরক্ষা বাধ, বেড়ী বাধ নির্মাণ; সেনা স্থাপনার ভূমি সমতল উচুকরণ; ওয়েভ প্রোটকেশন; নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং, নদী/খাল পুনঃখনন ও ফসল পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন;স্থায়ী নদীর তীর সংরক্ষণ, স্থায়ী সংরক্ষণ; অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা বাধ নির্মাণ; বাধ পুনর্বাসন মেরামত; তীর সংরক্ষণ; নদী ড্রেজিং/পুনঃখনন করা; নদী সেচ ও নিষ্কাশন কার্যক্রম; ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সমূহের পুনঃনির্মান ও প্রতিরক্ষা; ভাঙ্গন হতে রক্ষা; পোল্ডার পুনর্বাসন; নব্যতা বৃদ্ধি; ভাঙ্গন এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা; খাল পুনঃখননসহ এবং ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬৩.৩১শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

বন্যার জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ফলে বন্যা অববাহিকা অঞ্চলে যে পানি শাসন প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়, তা বিভিন্নভাবে প্রাকৃতি পানি প্রবাহের ভারসাম্যের জন্য নেতিবাচক রূপে প্রত্যাবর্তন করছে। বর্ষা মৌসুমে একাধারে বন্যার কারণে যেমন নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলো পলিসমৃদ্ধ হচ্ছে, তেমনি অনেক নদী অববাহিকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের জন্য চাই উন্নত ও সুবিবেচিত পানি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। এজন্যই অর্থনৈতিক উন্নয়নে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা হতে হবে সমন্বিত, সুসংহত ও বিজ্ঞানসম্মত। পানি সম্পদের পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা, উন্নয়ন, বণ্টন ও পরিচালনা সম্পর্কিত কার্যক্রমই হচ্ছে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা । এটি পানিচক্র ব্যবস্থাপনার একটি দিক।

দেশে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পানি সম্পদের সামষ্টিক পরিকল্পনা প্রণয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯, জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা-২০০১, বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩; বাংলাদেশ পানি বিধিমালা-২০১৮; জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন-২০২০; শিল্পখাতে পানি ব্যবহার নীতি-২০২০ ইত্যাদি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশে পানি খাতে সমন্বয়, শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগামী দিনে পানির বিকেন্দ্রীকরণসহ পানির প্রাপ্যতা, চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে মন্ত্রণালয়ে’র সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘমেয়াদি শতবর্ষী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করে সমন্বিত পানি ব্যবস্হাপনাকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

শতবর্ষের পরিকল্পনা ও পানি ব্যবস্থাপনা

Update Time : ০৫:৫১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২

মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন:

পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এই ব-দ্বীপ ঘিরেই সামগ্রিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে শত বছরের মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা।

পরিকল্পনার প্রথম ধাপে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নদী-সাগর থেকে ভূমি উদ্ধার করে দেশের আয়তন বাড়ানোর মতো তিনটি কর্মসূচী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে কৃষিখাতের উন্নয়ন ঘটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, শিল্প খাতের উন্নয়ন করে সকলের জন্য কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যের প্রসার, সকলের জন্য সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাত বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ডেল্টা প্ল্যানে।

পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মিলনস্থলে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে গতিশীল এই ব-দ্বীপ। বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫ টি(বাপাউবো)। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১০২টি) , উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১১৫টি), উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী (৮৭টি), উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী (৬১টি), পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী (১৬টি) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী (২৪টি) হিসেবে বিভাজন করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি আন্তঃদেশীয় নদী। ৫৪টি ভারতের সঙ্গে ও ৩টি নদী মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের জলসীমায় উৎপত্তি ও সমাপ্ত দুটি নদী হালদা ও সাংগু । বাংলাদেশ জলবায়ুর পরিবর্তনজনীত ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে প্রথম এবং তৃতীয়।

শতবর্ষের পরিকল্পনা ও পানি ব্যবস্থাপনা

আমরা ইচ্ছা করলেই রাতারাতি এ ঝুঁকি মুক্ত হতে পারি না। তবে পরিকল্পিতভাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে জলবায়ুর পরিবর্তনজনীত ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব। প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

পানি এ গ্রহের সকল জীবনের জন্য একটি অপরিহার্য সম্পদ। সারা বিশ্বে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সৃষ্টি হয় পানি সঙ্কট। পৃথিবীতে প্রাপ্ত মিষ্টি পানির প্রায় শতকরা ৭০ ভাগই খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা ব্যবহার করেন। শিল্প-কারখানায় প্রায় ২০ ভাগ এবং শতকরা ১০ ভাগ মিষ্টি পানি ব্যবহার করা হয় ঘরের কাজে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে অপরিশোধিত ও পয়ঃবর্জ্য ফেলে ভয়াবহ পানিদূষণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আছে ভৌত-কাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, এতদসংক্রান্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনা,প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং আইন ও নানারকম বিধিবিধান। বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক কাঠামো এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার নির্মিত অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ এবং ব্যবহারকারীদের জন্য এসবের প্রাপ্যতা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়ে গঠিত।

পানির সঠিক ব্যবহার ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর পানির পরিবেশগত প্রভাব কমাতে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অনেক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। পানিকে বাস্তুসংস্থানের অখণ্ড অঙ্গ হিসেবে পর্যবেক্ষণ একীভূত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তিতে তৈরি, যেখানে বাস্তুসংস্থানের পরিমাণ ও গুণগতমান প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকৃতি নির্ধারণে সহায়তা করে। জোয়ারের প্রাবল্য, লবণাক্ততা বৃদ্ধি বন্যা, নদী ভাঙ্গন, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাসহ উপকূলীয় এলাকার জনগণের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এছাড়াও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকায়ও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের নদীগুলিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিসহ ঘন ঘন বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। আবার দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের শুষ্ক এলাকায় চাষাবাদের জন্য অধিকমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের কারণে পানির স্তর অনেক গভীরে নেমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকায় এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

No description available.

বিশুদ্ধ পানি সব ধরনের মানবাধিকারের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রকে পানির বরাদ্দ সম্পর্কিত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সমস্যাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে যেত । ভবিষ্যতে পানিভিত্তিক সম্পদের জন্য অন্যতম বড়ো একটি সমস্যা হলো বর্তমান ও ভবিষ্যতের পানি সম্পদ বরাদ্দের টেকসইতা। মানুষের প্রয়োজন ও পরিবেশে পানি সম্পদের টেকসইতার মতো প্রয়োজনীয় ধাপের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করে, সবার জন্য উন্নত উৎসের পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষের উন্নত উৎসের পানি পাওয়ার সুযোগ আছে। তবে পুরোপুরি নিরাপদ পানি পানের সুযোগ এখনও সীমিত। অগ্রগতি সত্ত্বেও কিছু কিছু এলাকার মানুষ এখনও সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এছাড়া পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরাইড ও লৌহ দূষণের কারণেও খাওয়ার পানির মান খারাপ থাকে (ইউনিসেফ)।

বাংলাদেশে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার কতকগুলি জটিল ক্ষেত্র রয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও শুষ্ক মৌসুমে খরার সমস্যা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমবর্ধমান পানি চাহিদার মোকাবিলা, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, আর্সেনিক, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং নদীভাঙন। এছাড়া পানিসম্পদকেন্দ্রিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা বিশেষ করে মৎস্যসম্পদের এলাকাসমূহ এবং জলাভূমি এলাকার পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিভিন্ন বিষয় যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, বহির্দেশীয় নদী বা নদী-অববাহিকায় পরিবর্তন ইত্যাদি বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কাজকে জটিল করে তুলছে।

দেশে প্রতি ৩-৫ বছরে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল বন্যাপ্লাবিত হয়। ফলে জীবন-জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। উন্নত প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক উপকরণ ব্যবহার করে আমাদের নদী ও স্হলবন্দরসমূহের দক্ষতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। নদীগুলোর নাব্যতা বজায় রাখতে ড্রেজিংসহ অন্যন্য কার্যকর পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। হাওরাঞ্চলে পানির রিজার্ভার এর জন্য খাল খনন কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত জলবায়ু (পানি ব্যবস্হাপনা) সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছয়টি অঞ্চল হলো উপকূলীয় অঞ্চল, নদী অঞ্চল ও মোহনা, নগর এলাকাসমূহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, হাওড় এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল এবং ক্রস কাটিং অঞ্চল। এরমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৩ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলো পশ্চিম গোপালগঞ্জ, ভোলা, গোমতি- মহুরি বেসিন, বলেশ্বর-তেঁতুলিয়া বেসিন,গোমতি-মুহুরি বেসিন ও নোয়াখালী জেলায়। নদী অঞ্চল ও মোহনা ক্যাটাগরিতে মোট ৫ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নগর এলাকা ক্যাটাগরিতে মোট ০৫ টি প্রকল্প রয়েছে।

বাংলাদেশের পানি সম্পদের সমন্বিত ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। সরকার পানি সম্পদ খাতে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এডিপি’র অর্থায়নে বাস্তবায়ানাধীন প্রকল্প ৮২ টি প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৯৯০৬৯.৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঢাকা; চট্টগ্রাম-দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল; রংপুর উত্তরাঞ্চল; রাজশাহী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল; ফরিদপুর পশ্চিমাঞ্চল; বরিশাল দক্ষিণাঞ্চল; খুলনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৯৩.৬৬ শতাংশ । বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট ০৭টি প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৫.৭১ শতাংশ। ০৩টি বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৯২২৫.৩ লাখ টাকা, প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৯.৬৬ শতাংশ। এছারাও ১৫৩৪ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প রয়েছে যার অগ্রগতি ৩০ শতাংশ।

এডিবি’র আওতাভুক্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৮৩১১৬.৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৩১ টি প্রকল্প সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারসহ ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ফরিদপুর বরিশাল, খুলনা অঞ্চলের নদী ভাঙ্গন রোধে প্রতিরক্ষা বাধ, বেড়ী বাধ নির্মাণ; সেনা স্থাপনার ভূমি সমতল উচুকরণ; ওয়েভ প্রোটকেশন; নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং, নদী/খাল পুনঃখনন ও ফসল পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন;স্থায়ী নদীর তীর সংরক্ষণ, স্থায়ী সংরক্ষণ; অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা বাধ নির্মাণ; বাধ পুনর্বাসন মেরামত; তীর সংরক্ষণ; নদী ড্রেজিং/পুনঃখনন করা; নদী সেচ ও নিষ্কাশন কার্যক্রম; ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সমূহের পুনঃনির্মান ও প্রতিরক্ষা; ভাঙ্গন হতে রক্ষা; পোল্ডার পুনর্বাসন; নব্যতা বৃদ্ধি; ভাঙ্গন এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা; খাল পুনঃখননসহ এবং ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬৩.৩১শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

বন্যার জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ফলে বন্যা অববাহিকা অঞ্চলে যে পানি শাসন প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়, তা বিভিন্নভাবে প্রাকৃতি পানি প্রবাহের ভারসাম্যের জন্য নেতিবাচক রূপে প্রত্যাবর্তন করছে। বর্ষা মৌসুমে একাধারে বন্যার কারণে যেমন নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলো পলিসমৃদ্ধ হচ্ছে, তেমনি অনেক নদী অববাহিকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের জন্য চাই উন্নত ও সুবিবেচিত পানি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। এজন্যই অর্থনৈতিক উন্নয়নে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা হতে হবে সমন্বিত, সুসংহত ও বিজ্ঞানসম্মত। পানি সম্পদের পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা, উন্নয়ন, বণ্টন ও পরিচালনা সম্পর্কিত কার্যক্রমই হচ্ছে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা । এটি পানিচক্র ব্যবস্থাপনার একটি দিক।

দেশে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পানি সম্পদের সামষ্টিক পরিকল্পনা প্রণয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯, জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা-২০০১, বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩; বাংলাদেশ পানি বিধিমালা-২০১৮; জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন-২০২০; শিল্পখাতে পানি ব্যবহার নীতি-২০২০ ইত্যাদি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশে পানি খাতে সমন্বয়, শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগামী দিনে পানির বিকেন্দ্রীকরণসহ পানির প্রাপ্যতা, চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে মন্ত্রণালয়ে’র সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘমেয়াদি শতবর্ষী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করে সমন্বিত পানি ব্যবস্হাপনাকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।